বিছানায় আধশোয়া হইয়া 'রস+আলো' পড়িতেছিলাম। এমন সময় গোধূলি আসিয়া বলিল, "কি পড়িতেছ? চটি?" তারপর আমি উত্তর করিবার আগেই কপালে হাত দিয়া বলিল, "আমাকে লাইভ দেখিয়াও সাধ মিটে না? এসব পড়া লাগে!"
আমি বলিলাম, "দেখ, বাজে বকিবে না, আমি ওসব ছাইপাশ পড়ি না।"
-"কি পড় তাহলে? প্লেবয়?" আমি বিরক্ত হইলাম। সারাদিনের ক্লান্তি শেষে একখানা রঙ্গ-ক্রোড়পত্র পড়িতেছিলাম বিনোদনের জন্য, তাহার মাঝে গোধূলির এই অযৌক্তিক বাক্যবাণ। "তোমার কি প্রতিদিন যাচিয়া ঝগড়া না করিলে শান্তি হয় না?"
ততক্ষণে গোধূলি বিছানায় আসিয়া বসিয়াছে। কেশবন্ধনী খুলিতে খুলিতে বলিল,"ঝগড়া না করিলে মিষ্ট্যাধিক্যে দাম্পত্যে ডায়াবেটি দেখা দিবে। তখন বারবার সালিশে যাইতে হইবে দাম্পত্য সমস্যা ত্যাগ করিবার জন্যে।" তারপর আমার গাল টিপিয়া বলিল, "চটি পড়িয়া অন্য রমণীর মূর্তি কল্পনা অনেক হইয়াছে, এখন ঘুম যাও। তোমাকে সকাল বেলা ডাকিয়া তোলা রীতিমত যুদ্ধ জয়ের মত। তোমার নাম ক্রান্তিলগ্ন কে রাখিয়াছে কে জানে! তোমার নাম রাত্রি দ্বিপ্রহর রাখিলে বেশ মানাইত। মধ্যরাত্রির ঘুম হইতে কাউকে ডাকিয়া তোলা, আর ভোরবেলা তোমাকে ডাকিয়া তুলিবার মধ্যে কোন পার্থক্য নাই।" বলিয়া চক্ষু মুদিল। আমি বাতি নিভাইলাম।
সর্ববিদিত যে অন্ধকারে শয়তান মাথাচাড়া দিয়া ওঠে। আমি তাহাকে জড়াইয়া ধরিয়া বলিলাম, "কিন্তু ডায়াবেটিসের ভয়ে মনুষ্য তো মিষ্টি খাওয়া ছাড়ে নাই, একটু মিষ্টিরও তো প্রয়োজন আছে।"
গোধূলি আমার বেষ্টনমুক্ত হইবার বৃথা চেষ্টা করিয়া বলিল, "এই, এইসব হইতেছে কি? তুমি আমার উপর জোর করিতেছ, আমি কালই নারী নির্যাতন মামলা করিব।"
এর আগেও সে মামলার প্রসঙ্গ আনিয়াছে। জিজ্ঞাসিলাম, "এত মামলা মামলা কর কেন?"
-"বাঙালি অধিকার আদায় করিতে ভুলিয়াছে, মামলা করিতে ভুলিয়াছে,আমি তাহাদিগকে মামলা করিতে শিখাইব।"
-"ও তাই? ভাল কথা। কিন্তু নারী নির্যাতন কেন? তোমার কথা বলার ভঙ্গি দেখিয়া যে কেহ তোমাকে নর বলিবে।"
গোধূলি আমার দিকে ফিরিয়া মুচকি হাসি দিয়া বলিল, "তবে আমায় বিবাহ করিয়াছ কেন? তুমি কি সমকামী?"
কথাটা যে এইভাবে বুমেরাং হইয়া ফিরিয়া আসিবে তাহা কল্পনাও করি নাই। আমতা আমতা করিয়া বলিলাম, "না, তা হবে কেন? মনে হয় বিবাহের পরে এই পরিবর্তন হইয়াছে।"
গোধূলি পুনরায় পাশ ফিরিয়া বলিল, "তাহাই হইবে হয়ত। বানরের সহিত থাকিতে থাকিতে নরস্বভাব হইয়াছি। সঙ্গদোষে লোহা ভাসে।"
এহেন অপমান কিছুতেই সহ্য করা যায় না। বলিলাম, "দেখ সম্মান করিয়া কথা বলিবে।"
- "ওমা! তোমাকে সম্মান করার কি আছে? তুমি কি মেয়ে? মেয়েরা হইল মায়ের জাত, ছেলেরা মেয়েদের সম্মান করিবে।"
- "পুরুষরা কি দোষ করিল? তাহারা কি পিতার জাত নয়? আর মেয়েরা মা হয়, মেয়েরা পতিতাও হয়। কখনো কোন পুরুষকে পত্নীতা হইতে শুনিয়াছ?"
- "না তা শুনি নাই এবং শুনিবও না। কারণ পুরুষরা হইল জাত পত্নীতা। যুবতী নারী দেখিলেই যেরকম ছোঁক ছোঁক কর তোমরা! বিবাহের পড়েও স্বভাব বদলায় না।"
আমি দেখিলাম, আমি আমার দর্পণ প্রতিবিম্বের সাথেই তর্ক করিতেছি; একে হারানো সম্ভব নহে। একটি কুকুর তাহার প্রতিবিম্বের সহিত যুদ্ধ করিতে যাইয়া আহরিত খাদ্য হারাইয়াছিল সেই গল্পটি আমার বেশ মনে আছে। আমি শান্তি এবং তাহার সহিত আমার মধুর সম্পর্ক ক্ষণকালের জন্যেও হারাইতে রাজি নই। সুতরাং কথা বাড়াইলাম না। ঘুমাইতে যাওয়ার পূর্বে তাহাকে চুম্বন করার অভিপ্রায়ে তাহার মুখ আমার দিকে ফিরাইলাম। চুম্বন করিতে যাইব, এমন সময় আমাদের শিশুপুত্র তাহার শিশুশয্যা (না দর্শকশয্যা?) হইতে 'ওয়া ওয়া' করিয়া হাঁক ছাড়িল। গোধূলি আমার দিকে তাকাইয়া মিটিমিটি হাসিতে হাসিতে তাহার প্রতি মনযোগী হইল। আমি আমাদের পুত্রকে প্রবল চপেটাঘাত করার তীব্র বাসনা চাপিয়া গেলাম।
প্রথম প্রকাশ: প্রথম-আলো ব্লগ
আলোচিত ব্লগ
মব সন্ত্রাস, আগুন ও ব্লাসফেমি: হেরে যাচ্ছে বাংলাদেশ?

ময়মনসিংহে হিন্দু সম্প্রদায়ের একজন মানুষকে ধর্মীয় কটূক্তির অভিযোগে পুড়িয়ে মারা হয়েছে। মধ্যযুগীয় এই ঘটনা এই বার্তা দেয় যে, জঙ্গিরা মবতন্ত্রের মাধ্যমে ব্লাসফেমি ও শরিয়া কার্যকর করে ফেলেছে। এখন তারই... ...বাকিটুকু পড়ুন
আরো একটি সফলতা যুক্ত হোলো আধা নোবেল জয়ীর একাউন্টে‼️

সেদিন প্রথম আলো-র সম্পাদক বলেছিলেন—
“আজ শেখ হাসিনা পালিয়েছে, প্রথম আলো এখনো আছে।”
একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে আজ আমি পাল্টা প্রশ্ন রাখতে চাই—
প্রথম আলোর সম্পাদক সাহেব, আপনারা কি সত্যিই আছেন?
যেদিন... ...বাকিটুকু পড়ুন
হামলা ভাংচুর অগ্নিসংযোগ নয়, আমরা শান্তি চাই
হামলা ভাংচুর অগ্নিসংযোগ নয়, আমরা শান্তি চাই

হামলা ভাংচুর অগ্নিসংযোগ প্রতিবাদের ভাষা নয় কখনোই
আমরা এসব আর দেখতে চাই না কোনভাবেই
আততায়ীর বুলেট কেড়ে নিয়েছে আমাদের হাদিকে
হাদিকে ফিরে পাব না... ...বাকিটুকু পড়ুন
তৌহিদি জনতার নামে মব সন্ত্রাস

ছবিঃ অনলাইন থেকে সংগৃহীত।
দেশের বিভিন্ন স্থানে সাম্প্রতিক সময়ে ধর্মের নাম ব্যবহার করে সংঘটিত দলবদ্ধ সহিংসতার ঘটনা নতুন করে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। বিশেষ করে তৌহিদি জনতা পরিচয়ে সংঘবদ্ধ হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন
মুখ গুজে রাখা সুশীল সমাজের তরে ,,,,,,,,

দুর্যোগ যখন নামে আকাশে বাতাশে আগুনের ধোঁয়া জমে
রাস্তা জুড়ে কখনো নীরবতা কখনো উত্তাল প্রতিবাদের ঢেউ
এই শহরের শিক্ষিত হৃদয়গুলো কি তখনও নিশ্চুপ থাকে
নাকি জ্বলে ওঠে তাদের চোখের ভেতর নাগরিক বজ্র
কেউ কেও... ...বাকিটুকু পড়ুন

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।