somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমার স্বপ্নবেলা - ৩

২৮ শে সেপ্টেম্বর, ২০১০ রাত ১০:৫৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমার স্বপ্নবেলা - ১

আমার স্বপ্নবেলা - ২ (১৮+)

ধারাবাহিকতা রক্ষা করে লেখা আমার জন্য একটা পেইন। আদৌ ঠিক রাখতে পারবও কিনা জানিনা... যাইহোক। শুরু করি।

এক্সিডেন্টের পর যশোর পলি ক্লিনিকে ছিলাম আড়াই মাস মতো। ছটফটে চন্চল আমার কাছে তা খাঁচায় বন্দীত্বেরই মতো। ডাক্তার প্রতিদিন ওয়াস করতে আসতো আমার ছিন্ন-ভিন্ন হওয়া হাত। ওয়াস করার সময় গলা ফাটিয়ে কাঁদতাম, ডাক্তারকে গালাগাল করতাম। খুব ব্যাথা লাগতো... ডাক্তারকে বলতাম, দাঁড়া, আমি বড় হয়ে তোর হাতেও এমন ব্যাথা দেবো। ৪ বছরের অবুঝ বালক আমি, বুঝতাম না ডাক্তার আসলে আমাকে ব্যাথা দিতে চান না। আমার মুখের উপর কাপড় দিয়ে ঢেকে রেখে কাজ করতেন ডাক্তার, যাতে সেই বীভৎস ক্ষত আমাকে দেখতে না হয়, আর ঝরঝর করে কাঁদতেন। বলতেন অস্ফুট স্বরে, বড় হও বাবা, তুমিও ডাক্তার হয়ে আমাকে ব্যাথা দিও।

আব্বু, আম্মুর তখন করুন দশা। চিকিৎসার খরচ মেটাতে হিমশিম অবস্থা। আমাকে না বললেও কিভাবি জানি বুঝে ফেলেছিলাম। যারা আমাকে দেখত আসতো তাদের কাছে তাদের কাছ থেকে দুই টেকা করে আদায় করতাম, আর আম্মুকে বলতাম, তোমার টাকা লাগলে আমার কাছ থেকে নিও। একবার একজন ১০ টাকা দেয়াতে খুব খুশি হয়েছিলাম। বাইরে বের হতে পারতাম না। চোখে বোমার স্প্লীন্টার থাকায় রোদে তাকাতে পারতাম না, ঝর ঝর করে পানি পড়তো। এরই মাঝে এলো জন্মদিন। আব্বু ছোত্ট একটা কেক নিয়ে এলো। কেবিনের মাঝে আমি আম্মু আর আব্বু মিলে আমার জীবনের সবচেয়ে স্মরনীয় জন্মদিন পালন করলাম।

যশোরে আমার চিকিৎসা ভালোভাবে হচ্ছিলো না। চোখে অপারেশন ও হাতের বেটার ট্রিটমেন্টের জন্য একদিন আব্বু ও আমি চড়ে বসলাম প্লেনে, ঢাকায় আসলাম। সড়ক পথে নিয়ে আসা সম্ভব ছিলো না। ঢাকায় এসে পঙ্গু হাসপাতালে ট্রিটমেন্ট নেই আরো দুই মাস। এরই মাঝে দুই চোখে অপারেশন করা হয়। তার ছয় বছর পর আরো একবার অপারেশন করা লাগে, স্প্লীন্টার রয়ে গেছিলো। মনে পড়ে পঙ্গু হাসপাতালের এক ভাইয়ার কথা, নাম ভুলে গেছি... কম্পাউন্ডার হিসেবে কাজ করতেন। আমাকে অনেক আদর করতেন। আমার দুই আত্মীয়া তখন ওখানকার ডাক্তার। সুতরাং চিকিৎসা ভালো মতই হতো। খুব মজায় কেটেছিলো দুই মাস। মামা গাড়ী দিয়ে দিতেন, আর আমরা ঘুরে বেড়াতাম। ঢাকার সবগুলো দর্শনীয় স্থান তখন ই প্রথম দেখেছিলাম।

ট্রিটমেন্ট শেষে ফিরে এলাম বাড়ী। স্কুলে যাওয়ার বয়স হয়ে গেছে। দাদা ছিলেন তাবলীগ জামাতের লোক। তিনি চাইলেন আমি যেনো ইসলামীক ইস্কুলে ভর্তি হই। শিশু শ্রেণীতে ভর্তি হৈলাম। ততদিনে শেষ হয়ে গেছে ১ম সাময়িক পরীক্ষা। অন্যান্য সাবজেক্টের পাশাপাশি দুই দুই খান আরবীর সাবজেক্ট পড়ানো হতো। সাথে শেখানো হতো হামদ, না'ত, গজল, আজান দেয়া, সূরা-ক্বেরাত পড়া। বিভিন্ন প্রতিযোগীতা হতো আজান দেয়া, হামদ না'ত ও গজল গাওয়ার। প্রথম পুরস্কারটা আমার যেনো বাঁধা ধরা! দাদা খুব গর্বিত হতেন। বাড়ীর কাছে যে মসজিদটা তৈরে করে দিয়েছেন, সেখানে নিয়ে গিয়ে মিম্বরের উপর দাঁড় করিয়ে দিতেন, আর আমাকে গজল, হামদ, না'ত গাইতে হতো। বাড়ীতে টেলিভিশন নিষিদ্ধ ছিলো। মনে পড়ে, সেজো ফুপুরা টেলিভিষন কিনে এনে বৃহস্পতিবার রাতে নাটক দেখতেন সাউন্ড কমিয়ে দিয়ে। দাদার পায়ের শব্দ পেলেই টেলিভিষন প্যাকেট হয়ে খাটের তলে চলে যেতো।

দারুন দুরন্ত ছিলাম। স্কুলে প্রায়ই মারামারি করে এর নাক ফাটাতাম, ওর দাঁত ফেলে দিতাম। কেউ পারতো না আমার সাথে। আমার সাথে কেউ মিশতেও চাইতো না। আমার হাত দেখে সবাই ভয় পেতো। আমিও মজা পেতাম ভয় দেখিয়ে। স্যাররা অন্যদের বলতো, ওর গায়ে বাঘের রক্ত আছে, ওর সাথে মারামারি করতে যাবানা। ২য় সাময়িক পরীক্ষায় ২য় হয়ে স্যারদের প্রিয়পাত্র হয়ে গেছিলাম, তাই তাঁরা আমাকে কিছু বলতেন না। মাঝে মাঝে ক্লাস ক্যাপ্টেন নির্বাচন হতো। আমার এক বান্ধবী ছিলো নাজিয়া নাম। সে এসে বলতো চুপি চুপি, আমি না তোমাকে ভোট দিয়েছি। তার চোখের মাঝে জন্মগত জড়ুলের দিকে তাকিয়ে ক্যামন জেনো খুশি হয়ে যেতাম। :#> ঐ জড়ুলের জন্য ওকে খুব সুন্দর লাগতো। বড় হয়ে ও আর আমারে পাত্তা দিতো না। :(( আমার আরেকটা বান্ধবী ছিলো, জেনি নাম। ওর চোখের দিকে তাকালে ভয় করতো। চশমার ভেতর দিয়ে চোখদুটোকে খুব বড়ো বড়ো মনে হতো। পরে জেনেছিলাম চশমার পাওয়ারের জন্য অমন মনে হতো।

ক্লাস শেষ হৈলেই এক দৌড় দিয়ে স্কুলের মাঠে পেয়ারা গাছের ডাল দখলের জন্য দৌড় দিতাম আমরা সবাই। যে ডাল দখল করতো, সে হতো ঐ দিনের রাজা। তাকে সবাই তোষামোদ করতাম দুচারটা পেয়ারা পেড়ে দিতে। এমন নয় যে কারো বাসায় পেয়ারা গাছ নেই। কিন্তু ঐ গাছের কষ্টা পেয়ারা না খেলে আমাদের যেনো দিনটাই মাটি হয়ে যেতো। স্কুল থেকে বাসায় ফিরে হুজুরের কাছে পড়তে বসতে হতো। চিৎকার করে করে আমপারা মুখস্ত করতাম। হুজুর বয়সে ইকটু ইয়াং ছিলো। মাস শেষ হবার আগেই আমাকে বলতো তোমার আম্মুর কাছে থেকে ইকটু বেতন চেয়ে এনে দাও না! তো সেই হুজুর একদিন কি করলো শোনেন! আমার রুমে এরোসল এর একটা ক্যান ছিলো। আমার অভ্যাস ছিলো পড়তে পড়তে যখন ভালো লাগবে না, পানি খাবার নাম করে ইকটু উঠে গিয়ে ঘুরে আসা। সেদিনও গেলাম। পানি খেয়ে রান্নাঘরে গিয়ে আম্মু কি রান্না করে সেটা দেখে এসে রুমে ঢুকেছি, দেখি সারা রুমে এরোসল এর গন্ধ! ব্যাপার কি? দেখি হুজুর ক্যান টা হাতে নিয়ে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখছেন। তার সারা শরীর দিয়ে এরোসল এর গন্ধ আসতেছে। হুজুর ইকটু ইতস্তত করে আমাকে জিজ্ঞাসা করেন, বাঁধন, এইটা কি বিষ? এর গায়ে তো বিষ লেখা আছে! আমার মাথায় খেলে গেলো দুষ্ট বুদ্ধি। কৈলাম, হুজুর এইটা তো মারাত্মক বিষ! আপনি কি গায়ে মেখেছেন? হুজুর আমতা আমতা করে বলে হু। দেখি পান্জাবি পুরা ভিজা! আবার কয়, এইটা কি মুখে গেলে সমস্যা? দেখি হুজুরের দাঁড়ি ও ভেজা ভেজা! আমি কৈলাম, মুখে গেছে নাকি? সর্বনাস! আপনি তো এখুনি মারা যাবেন! B-):P হুজুর পড়ি কি মরি করে উঠে সাইকেল নিয়ে ভোঁ দৌড়! আর কোনদিন আমার বাসার দিকে আসেন নি। B-))
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে আগস্ট, ২০১৫ রাত ২:০৭
৪৯টি মন্তব্য ৪৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মিশন: কাঁসার থালা–বাটি

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:২৭

বড় ভাই–ভাবীর ম্যারেজ ডে। কিছু একটা উপহার দেওয়া দরকার। কিন্তু সমস্যা হলো—ভাই আমার পোশাক–আশাক বা লাইফস্টাইল নিয়ে খুবই উদাসীন। এসব কিনে দেওয়া মানে পুরো টাকা জ্বলে ঠালা! আগের দেওয়া অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×