somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমার স্বপ্নবেলা - ২ (১৮+)

০৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০১০ রাত ১২:০৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আমার স্বপ্নবেলা - ১


ঐ বয়সেই, যখন আমি কিছুই বুঝিনা, বাধ্য হয়ে বুঝতে হয়েছে অনেক পঙ্কিল চরিত্র, অনেক অন্ধকার সময়..

উপরতলার দুই বড় আপু প্রায়ই পুতুল খেলতো ছাদে। আমাদেরও ডাক পড়তো। আমরা মহা সমারোহে বিয়ে দিতাম পুতুলদের। ইট, সুরকি আর বিভিন্ন ফার্ণের পাতা হতো আমাদের খাদ্য। এক ধরনের ফার্ণ ছিলো, একটু ঘসলেই এর পাতা স্বচ্ছ হয়ে যেতো। সেগুলোকে বলতাম পরোটা, তেলে ভাজা (স্বচ্ছ হবার পর তেলে ভাজা মতোই দেখা যেতো)। আপুরা আমাদের বিয়ের পর একটা বিশেষ ঘটনা কিছুতেই দেখতে দিতো না। বলতো দুই হাত দিয়ে চোখ বন্ধ কর। তারপর ফিস ফিস করে কি য্যানো সব বলতো। হাতের আঙ্গুলের ফাঁক দিয়ে দেখে ফেলেছিলাম একদিন বিবাহিত নব দম্পতির মেয়ে পুতুলটার উপর আপুরা পুরুষ পুতুলটাকে শুইয়ে দিচ্ছে। মনে মনে অবাক হতাম, এগুলি কি?

আমার মার্বেল কালেক্টের শখ ছিলো। হরেক রকমের মার্বেল কালেক্ট করতাম। নতুন ডিজাইনের কোন মার্বেল দেখলেই মাথা খারাপ হয়ে যেতো! তো উপরের দুই আপুর মাঝে যে ছোট ছিলো, তার কাছে একদিন দুইটা মার্বেল দেখলাম। উনি আমার ১ বা ২ বছরের বড়ো ছিলেন। আমার তো মাথা নষ্ট! ঐ মার্বেল আমার চাই ই চাই! সকাল থেকে আমার মার্বেলের ঝুলি হাতে আপুর পিছন ঘ্যান ঘ্যান করে বেড়াচ্ছি। আপু কিছুতেই মার্বেল দেয় না! দুপুর হয়ে গেলো, সবাই অফিসে আর বড় দুই আপুর বড়টা স্কুলে চলে গেলো। আমি তখনো তার পেছন পেছন ঘুরছি। দোতলায় সিঁড়ির মাঝে বসে আপুর কাছ থেকে কিভাবে বাগিয়ে নেয়া যায় সেই ধান্দা করতেছি! আপু হঠাৎ বললো, আচ্ছা দিবো, তবে আমার সাথে নতন একটা খেলা খেলতে হবে। আমিতো চোখ বুজে রাজি! আপু বললো ঘরে চল। গেলাম পিছন পিছন। দোতলায় কেউ নেই। ড্রয়িংরুমের সোফায় বসে আপু বললো, আমরা বর বৌ খেলি আয়। আমি কিন্চিৎ কনফিউজড হয়ে দাঁড়িয়ে আছি। এইটা আবার ক্যামন খেলা! আপু দেখি হঠাৎ আমার হাফপ্যান্ট ধরে টানাটানি শুরু করছে! আমি এক হাতে মার্বেলের ঝুলি আর আরেক হাতে প্যান্ট টেনে ধরে ইজ্জত রক্ষায় ব্যস্ত হয়ে পড়লাম! চরম অসস্তিকর পরিবেশ! আমি বলতেছি, না, আমি খেলবো না, প্যান্ট খুলতে পারবো না। আপু বলে আরে অনেক মজা, খুলে দেখ! আচ্ছা, আমিই আগে খুলতেছি... বলে .... আমি একটা ঢোক গিলে বললাম, না, আমার মার্বেল লাগবে না। আপু তখনো আমার ইজ্জত নিয়ে টানাটানি করতেছে আর ফিস ফিস করে বলতেছে, বোকা, দেখবি তো ক্যামন খেলা! আমি যখন প্রায় নিমরাজি, তখনই আম্মু নিচে থেকে আমার নাম ধরে ডাক দিলো। আপু চমকে উঠে আমার প্যান্ট ছেড়ে দিলো আর আমি আপুর মার্বেল দুইটা নিয়ে একছুটে আম্মুর কাছে। যাক! ইজ্জত তো বাঁচলো! মেয়েরা আসলে এমনই, কিছু দিতে গেলে আপনার কাছ থেকে আপনার সবচেয়ে মূল্যবান জিনিসটিই চেয়ে বসে!

আমার এক আত্মীয়া প্রায়ই বেড়াতে আসতেন। তিনি তখন ক্লাস এইট নাইনে পড়তেন। আমার সাথে খুব ভালো ভাব ছিলো। আমাকে মুখে তুলে খাইয়ে দিতেন আর সুন্দর সুন্দর অনেক গল্প বলতেন। আমি বিমুগ্ধ হয়ে গল্প শুনতাম। রাতে তাকে জড়িয়ে ধরে গল্প শুনতে শুনতে ঘুমিয়ে যেতাম। এমনই এক রাতে প্রচন্ড ব্যাথায় আমার ঘুম ভেঙ্গে গেলো। দেখি আমার বিশেষ জিনিসটি নিয়ে উনি খেলা করছেন, উনার গায়ে কিছুই নেই! একটু পর উনার গায়ের উপর আমাকে উঠিয়ে নিলেন। আমি ব্যাথায় কেঁদে দিলে উনি আমার মুখ চেপে ধরেন, আর বলেন আর একটু, কেদোনা, অনেক আদর করে দিবো!
তিনটা দিন তারপর আমি হাঁটতে গিয়ে কষ্ট পেয়েছি। তার ধারে কাছেও আর যেতাম না। তখন বুঝিনি, এখন বুঝি চাইল্ড মলেষ্টেষন কাকে বলে, পেডোফেলিয়া কি জিনিস!

আপনার শিশুকে যত বিশ্বাসযোগ্যই হোক, বড় না হওয়া পর্যন্ত কোন আত্মীয়ের কাছে দিবেন না, চোখে চোখে রাখুন। আমার কোন সমস্যা হয়নি, কে বলতে পারে আপনার শিশুটি হয়তো এমন ঘটনার সম্মুখিন হয়ে মানসিক ভারসাম্যই হারিয়ে ফেলতে পারে!


একটি দূর্ঘটনাঃ

আমরা তখন ভাড়াবাড়ী ছেড়ে দাদাবাড়ী এসে উঠেছি। বিশাল বাড়ী, প্রচুর আত্মীয় স্বজন। সমবয়সী অনেক ভাই বোন। আমি তো আনন্দে আত্মহারা। একটা ছোট লাল বল নিয়ে খেলে বেড়াই বাড়ীর মাঝে উঠানে, বারান্দায় কিংবা বাড়ীর পেছনে বাগানে। বারান্দায় খেলতে খেলতে একটা বড় বাক্সের নিচে বল চলে গেলো। উঁকি দিয়ে দেখি বিড়ালে অর্ধেক খাওয়া একটা ইঁদুর। রক্তে লাল হয়ে আছে। আমি আম্মুকে ডেকে নিয়ে আসাতে আম্মু ওটা ফেলে দিলো। পরের দিন বেড়াতে গেলাম নানাবাড়ী। আরো মজা! আমার ৮ মামা তিন খালা। সবাই আমাকে খুব আদর করে। নানাভাই রিটায়ার্ড তখন, অসুস্থ। তারপরও বাজারে চলে যান চুপিচুপি, গোপনে আমার জন্য বিস্কুট আর চকলেট কিনে আনেন। সেদিন ছিলো শুক্রবার। সবাই টিভিতে "নষ্টনীড়" নাটক দেখছে। আমার ভালো না লাগাতে দৌড়ে বের হয়ে আসলাম। আব্বু পিছন পিছন বের হয়ে আসলো, বললো বাবু একটা চুমু দাও তো। আমি বিরক্ত হয়ে একটা চুমু দিয়েই দে ছুট। নানাবাড়ীর পাশেই এম এম কলেজ। একা একা খেলছি। সবার নাটক দেখা শেষ হলে বেড়াতে যাবো আরেক আত্মীয়ের বাসায়। আমাকে কমপ্লিট স্যুট পরিয়ে রেডি করে দিয়েছে আম্মু। চন্চল আমি সেটা পরেই ঘুরে বেড়াচ্ছি। মাঠের একপাশে সাইজকাঠ গাদা করে রাখা। ইট দিয়ে উঁচু করা, যাতে কাঠে পানি না লাগে। কি মনে হতে আমি উঁকি দিলাম কাঠের গাদার নিচে, দেখি কোন আধা খাওয়া ইঁদুর টিদুর আছে কিনা!

ইঁদুর ছিলো না, ছিলো তিনটা কৌটা লাল আর নীল টেপ দিয়ে মোড়ানো। দিনটি ছিলো ১৯৯০ সালের ২৮ শে ডিসেম্বর, এরশাদ পতনের আন্দোলন তখন তু্ঙ্গে। কৌতুহলী আমি বসে পড়লাম, একটা কৌটা নিলাম হাতে। ডান হাত দিয়ে ধরে বাম হাত দিয়ে টেপ খুললাম। গায়ে আরবি আর হিন্দী লেখা। কৌটার মুখ সীসা গলিয়ে আটকানো। খুঁটতে শুরু করলাম। কাছের এক আমগাছে একটা কাক ডাকছিলো, কা কা কা... হঠাৎ খুঁটতে গিয়ে নখ পিছলে যাওয়ায় ঝাকি খেলো কৌটা সহ আমার ডান হাত। বিকট এক শব্দে কেঁপে উঠলো নিস্তব্ধ দুপুর। ধোঁয়ায় ভরে গেলো চারপাশ। আমি চোখে ধোঁয়া দেখছি, স্লো মোশনে বসা থেকে দাঁড়িয়ে পিছন দিকে উল্টে পড়ে যেতে যেতে দেখলাম আব্বু ধোঁয়ার মাঝ দিয়ে ছুটে আসছে। আমি শুধু একবার অস্ফুটে আম্মু বলে জ্ঞান হারালাম। আব্বু আমাকে কোলে নিয়ে আমার ছোটখালামনির কোলে দিয়ে রাস্তায় কোন রিক্সা না দেখে এক বালী ভর্তি ভ্যান উল্টে দিয়ে বালি ফেলে দিলো। ভ্যান ওয়ালা কে দ্রুত চালাতে বলে উঠে বসলো আব্বু আম্মু সহ আরো দুইজন। ঝাঁকিতে আমার জ্ঞান ফিরে এলো, আব্বুকে বললাম আব্বু হাতে খুব ব্যাথা। হাও মাও করে কাঁদছে আম্মু সহ অন্যেরা। আব্বু কাঁন্না চেপে বললো তোমার হাত ধরে আছিতো তাই ব্যাথা লাগছে। আমি বললাম হাত ছেড়ে দাও, আব্বু ব্লিডিং এর ভয়ে হাতের রগগুলো চেপে ধরে বসে ছিলো। আব্বু বললো আচ্ছা। তাও তো ব্যাথা কমেনা! আমি আবার আব্বুকে বললাম হাত ছেড়ে দাও, আব্বু বললো দিয়েছি তো। আমি বললাম কই? আব্বু হাত তুলে ধরে বললো এই দ্যাখো... দেখলাম রগ ঝুলছে কয়েকটা, তার সাথে ছেঁড়া রক্তাক্ত মাংস।কোন আঙুল নেই। আমি আব্বুকে বললাম, আব্বু আমার হাত কই? আব্বু কিছু বলতে না পেরে আমাকে চেপে ধরে হু হু করে কেঁদে উঠলো। ততক্ষণে পৌঁছে গেছি যশোর পলি ক্লিনিকে। চারপাশে ভিড় করে মানুষ দেখছে, এরই মাঝে আবার আমি জ্ঞান হারালাম।

সেই জ্ঞান ফিরেছিলো দিন তিনেক পর। মুখ ঝলসে গিয়েছিলো, হাতের কব্জি বোমে উড়ে গিয়েছিলো, দুই চোখে বোমের স্প্লীন্টার ছিলো দশ বারোটা। জানতাম না বোম কি জিনিস, রাজনিতী কি জিনিস... তবুও বেঁচে ছিলাম। তোমাদের রাজনিতীর এক নোংরা উদাহরন হয়ে। শুধু স্থানীয় রানার পত্রিকায় ছবি সহ একটা খবর এসেছিলো, আমার আত্মীয়রা বাদে রাজনিতীর হোমরা চোমরা কেউ দেখতেও আসেনি...


[ চলবে ]
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে আগস্ট, ২০১৫ রাত ২:১১
১৩৪টি মন্তব্য ১৩২টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বরিষ ধরা-মাঝে শান্তির বারি

লিখেছেন বিষাদ সময়, ০৬ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:১৬





মাসের আধিক কাল ধরে দাবদাহে মানব প্রাণ ওষ্ঠাগত। সেই যে অগ্নি স্নানে ধরা শুচি হওয়া শুরু হলো, তো হলোই। ধরা ম্লান হয়ে, শুষ্ক হয়, মুমূর্ষ হয়ে গেল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=নীল আকাশের প্রান্ত ছুঁয়ে-৭ (আকাশ ভালোবেসে)=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৬ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:১৯

০১।



=আকাশের মন খারাপ আজ, অথচ ফুলেরা হাসে=
আকাশের মন খারাপ, মেঘ কাজল চোখ তার,
কেঁদে দিলেই লেপ্টে যাবে চোখের কাজল,
আকাশের বুকে বিষাদের ছাউনি,
ধ্বস নামলেই ডুবে যাবে মাটি!
================================================
অনেক দিন পর আকাশের ছবি নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

পানি জলে ধর্ম দ্বন্দ

লিখেছেন প্রামানিক, ০৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৫২


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

জল পানিতে দ্বন্দ লেগে
ভাগ হলোরে বঙ্গ দেশ
এপার ওপার দুই পারেতে
বাঙালিদের জীবন শেষ।

পানি বললে জাত থাকে না
ঈমান থাকে না জলে
এইটা নিয়েই দুই বাংলাতে
রেষারেষি চলে।

জল বললে কয় নাউযুবিল্লাহ
পানি বললে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সমস্যা মিয়ার সমস্যা

লিখেছেন রিয়াদ( শেষ রাতের আঁধার ), ০৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৭

সমস্যা মিয়ার সিঙ্গারা সমুচার দোকানে প্রতিদিন আমরা এসে জমায়েত হই, যখন বিকালের বিষণ্ন রোদ গড়িয়ে গড়িয়ে সন্ধ্যা নামে, সন্ধ্যা পেরিয়ে আকাশের রঙিন আলোর আভা মিলিয়ে যেতে শুরু করে। সন্ধ্যা সাড়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

এই মুহূর্তে তারেক জিয়ার দরকার নিজেকে আরও উন্মুক্ত করে দেওয়া।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ০৬ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:২৬


তারেক জিয়া ও বিএনপির নেতৃত্ব নিয়ে আমি ব্লগে অনেকবারই পোস্ট দিয়েছি এবং বিএনপি'র নেতৃত্ব সংকটের কথা খুব স্পষ্টভাবে দেখিয়েছি ও বলেছি। এটার জন্য বিএনপিকে সমর্থন করে কিংবা বিএনপি'র প্রতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×