somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অতিথি

০২ রা জানুয়ারি, ২০১২ সন্ধ্যা ৭:৫৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সকালটা শুরুই হল তুমুল হট্টগোলে। ঘর থেকে বেরুতেই দেখি বসার ঘরে চার থেকে আট বছর বয়েসি চার পাঁচটে বিচ্ছুর গলা দিয়ে বিকট আওয়াজ বেরোচ্ছে। ব্যাপার ঘোরতর; একজনের পায়ের ওপর দিয়ে আরেকজন ট্রাইসাইকেল চালিয়ে ইচ্ছে করে 'আকসিটেন' করায় এই শোরগোল। বিচার সালিশ শুরু করার আগেই ক্রন্দনরত অত্যাচারিত উঠে এসে অত্যাচারীর প্যান্ট টেনে নামিয়ে দিয়ে প্রতিশোধ নিয়ে নিল। এইবার অত্যাচারীর আঁতে বিষম চোট লাগায় সে রেগে লাল হয়ে ঘোষণা দিল, এর প্রতিবাদ হিসেবে সে আজ সারাদিন প্যান্টই পড়বে না। কোন দিকেই কুল করতে না পেরে জরুরী অধ্যাদেশ জারি করলাম, সবাই শান্ত হয়ে বস, এখন আমরা নতুন গ্লাসে করে জুস খাব। জুস খাওয়া শেষ হতেই একজন ঠং করে গ্লাস মাটিতে ছুঁড়ে দিয়ে বলল, আমার শেষ। সাথে সাথে বাকিরাও ছুঁড়ে দিয়ে কোরাসে বললে, আমারও শেষ। সদ্য কেনা গ্লাস সেটের চুরমার চেহারা দেখে দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললাম, আমিও শেষ !

এই ক্ষুদে বিচ্ছুগুলো আমাদের অতিথি। কিন্তু এক দিনেই এরা ঘরের যে হাল করেছে তাতে নিজের বাড়ি আর নিজের বলে চেনার যো নেই। অবস্থা আয়ত্তে আনতে তাই দ্রুত ফন্দি এঁটে ফেলি। রূপকথা ! হ্যাঁ ! রূপকথার গল্প শোনালে নিশ্চয় ঘন্টাখানেক আটকে রাখা যাবে। তাড়াতাড়ি ঠাকুমার ঝুলিখানা টেনে এনে সবাইকে জড়ো করে বসি। বেড়ালছানার মত শান্ত টুকটুকে মুখে ওরাও কৌতূহলী হয়ে গা ঘেঁষে বসে।

-এক ছিল রাজা...
-কোন দেশের রাজা ? রাজা কেন ? প্রেসিডেন্ট না কেন ? রাজা কি করে ?
-সেকি তা-ও জানিস না ? রাজা খালি চেয়ারে বসে থাকে আর আঙ্গুর খায়!
-আহা, হট্টগোল করেনা। শোনই না... তার ছিল সাত রানি...
-ওও, রানি মানে ওয়াইফ ? কিন্তু সাআতটা ? রানিরা কেস করেনি ?
-আহ্‌, এমন কল্লে কিন্তু গল্প বলব না।
-আচ্ছা আচ্ছা বল...

...তারপর তো সেই সাত পারুল ফুলের ভেতর থেকে সাতটি রাজপুত্র বেরিয়ে এসে ঝাঁপিয়ে পড়ল রানীর বুকে...

হা হা হা হি হি হি...এইটা কেমন গল্প ? ইউ আর ইম্পসিবল হি হি হি...

এরপর আর কথা চলেনা। নিজেকে কেমন বেকুব বেকুব লাগে। যে বলেছিল শিশুরা ফুলের মত সে বোধ করি ক্যাকটাসের ফুলের কথাই বলেছিল মনে হতে থাকে।

সন্ধ্যায় ঠিক হল সবাই মিলে ভূত দেখতে যাব। মানে সত্যিকারের ভূত নয়। রেস্টুরেন্ট ভুত। সেখানে গা ছমছমে অন্ধকারে খাবার দেয়া হয়, সাথে একটু পরপর ভূত এসে হাঁউমাঁউখাঁউ বলে ভয় দেখায়। হইহই করে সব বেরোলাম। রেস্টুরেন্টে গিয়ে সবার তুমুল উত্তেজনা। কিন্তু আলো আঁধারি আর ভয় ধরানো মিউজিকের জন্যেই বোধ হয় কেউই তেমন ট্যাঁ ফোঁ করছে না। মনে মনে হাসলাম, সারাদিনে একটুও যদি চুপ হয়ে বসে এগুলো ! এইবার ঠিক হয়েছে ! একটু পরেই খাটো মাঝারি আর লম্বা মাপের তিনটে 'ভূত' কালো কাপড় আর বিদঘুটে চেহারা বানিয়ে সামনে এসে হাউহাউ করে ভয় দেখাতে শুরু করল। হটাত কি থেকে যেন কি হয়ে গেল। দেখি সামনের ছোট দুইজন তড়াক করে লাফিয়ে একটা ভূতের ঘাড়ে চেপে বসে গদাম গদাম কিল চড় ঘুষি। কিছু বুঝে ওঠার আগেই বাকিগুলোও 'আক্রোমঅঅন্‌' বলে তেড়ে এসে ভূতেদের মুখোশ টুখোশ কেড়ে নিয়ে লাথি ঘুষি দিয়ে একদম ধরাশায়ী করে ফেললে। লম্বা আর মেজো ভূত একপাশে আড়ষ্ট হয়ে দাঁড়িয়ে গেল। আর ছোটভূত সবকটাকে নিয়ে জড়ামড়ি করে মাটিতে পড়ে কোঁকোঁ করতে লাগলো । হাঁ হাঁ করে সবাই ছুটে এসে কোনরকমে ক্ষুদে দানোদের হাত থেকে ভূতদের ছাড়িয়ে আনতেই তারা অবশিষ্ট কাপড় সামলে একদম চোঁ চাঁ দৌড়। একটু ধাতস্থ হয়ে বসে বাকি খাবারটা শেষ করে বিল মিটিয়ে বেরোতে বেরোতে পাশ থেকে একজন বললে, আপা, এই বাচ্চাগুলা কী খায় ?

হতাশ চোখে ওদের দিকে তাকিয়ে বললাম, আমার মাথা।
৪টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

পানি জলে ধর্ম দ্বন্দ

লিখেছেন প্রামানিক, ০৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৫২


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

জল পানিতে দ্বন্দ লেগে
ভাগ হলোরে বঙ্গ দেশ
এপার ওপার দুই পারেতে
বাঙালিদের জীবন শেষ।

পানি বললে জাত থাকে না
ঈমান থাকে না জলে
এইটা নিয়েই দুই বাংলাতে
রেষারেষি চলে।

জল বললে কয় নাউযুবিল্লাহ
পানি বললে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সমস্যা মিয়ার সমস্যা

লিখেছেন রিয়াদ( শেষ রাতের আঁধার ), ০৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৭

সমস্যা মিয়ার সিঙ্গারা সমুচার দোকানে প্রতিদিন আমরা এসে জমায়েত হই, যখন বিকালের বিষণ্ন রোদ গড়িয়ে গড়িয়ে সন্ধ্যা নামে, সন্ধ্যা পেরিয়ে আকাশের রঙিন আলোর আভা মিলিয়ে যেতে শুরু করে। সন্ধ্যা সাড়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

এই মুহূর্তে তারেক জিয়ার দরকার নিজেকে আরও উন্মুক্ত করে দেওয়া।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ০৬ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:২৬


তারেক জিয়া ও বিএনপির নেতৃত্ব নিয়ে আমি ব্লগে অনেকবারই পোস্ট দিয়েছি এবং বিএনপি'র নেতৃত্ব সংকটের কথা খুব স্পষ্টভাবে দেখিয়েছি ও বলেছি। এটার জন্য বিএনপিকে সমর্থন করে কিংবা বিএনপি'র প্রতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

হামাস বিজয় উৎসব শুরু করেছে, ইসরায়েল বলছে, "না"

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৭ ই মে, ২০২৪ রাত ১২:০৮



গতকাল অবধি হামাস যুদ্ধবিরতী মেনে নেয়নি; আজ সকালে রাফাতে কয়েকটা বোমা পড়েছে ও মানুষ উত্তর পশ্চিম দিকে পালাচ্ছে। আজকে , জেরুসালেম সময় সন্ধ্যা ৮:০০টার দিকে হামাস ঘোষণা করেছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

খুন হয়ে বসে আছি সেই কবে

লিখেছেন জিএম হারুন -অর -রশিদ, ০৭ ই মে, ২০২৪ রাত ২:৩১


আশেপাশের কেউই টের পাইনি
খুন হয়ে বসে আছি সেই কবে ।

প্রথমবার যখন খুন হলাম
সেই কি কষ্ট!
সেই কষ্ট একবারের জন্যও ভুলতে পারিনি এখনো।

ছয় বছর বয়সে মহল্লায় চড়ুইভাতি খেলতে গিয়ে প্রায় দ্বিগুন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×