somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

কুঙ্গ থাঙ
আমার মাতৃভাষার নাম বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরি । পৃথিবীর মাত্র তিন লক্ষ মানুষ এই ভাষায় কথা বলে । ভাষাটিকে ইউনেস্কো এনডেঞ্জার্ড ল্যাঙ্গুয়েজ হিসাবে ঘোষনা করেছে ।

আপোকপা

০৯ ই জানুয়ারি, ২০১১ রাত ১২:৩৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


মণিপুরি ধর্মে সর্ব্বোচ্চ গুরুত্ব পাওয়া বিষয়টি হলো আপোকপা উপাসনা। এজন্য মণিপুরীদের আদিধর্মকে অনেকে 'আপোকপা ধর্ম' হিসাবেও চিনে থাকেন। আপোকপা শব্দটি এসেছে মণিপুরি মৈতৈ ভাষার 'পোকপা' শব্দ থেকে, যার আক্ষরিক অর্থ হলো ‘যিনি জন্ম দিয়েছেন’ বা ‘যার কাছ থেকে আমি সৃস্ট হয়েছি’। আদিধর্মে স্পস্ট ভাষায় পুর্বপুরুষকে দেবতা জ্ঞানে আরাধনা করার কথা বলা হয়েছে [১]।

মানবসভ্যতার ইতিহাস থেকে আমরা জানতে পারি প্রাক-শ্রেনীসমাজে পৃথিবীর অনেক জাতির মধ্যেও পুর্বপুরুষকে দেবতা জ্ঞানে পুজা করার এই সংস্কৃতিটি (Ancestor Worship) প্রচলিত ছিল। বিষু বা বছরের শেষ দিনটিতে রাস্তায় পুর্বপুরুষের স্মরণে খাবারের ভোগ দেয়ার রীতিটির মুলে রয়েছে আপোকপা সংস্কৃতি। বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরিদের মধ্যে আপোকপা পুজা প্রায় অবশ্যকর্তব্য। গোষ্ঠি বা শিংলুপগুলো বছরে কমপক্ষে একবার হলেও আপোকপা পুজার আয়োজন করে থাকে। মণিপুরী পুরাণগুলোতে তিন ধরনের আপোকপার উল্লেখ পাওয়া যায়[২]-

ইমুঙপোকপা (Family Ancestors):
ঘরের আপোকপা। মৃত পুর্ব্বতন তিনপুরুষকে ইমুঙপোকপা বা গরর দৌ বলে ধরা হয়। সাধারনত নতুন ধান ঘরে তোলার সময় এর পুজা দেয়া হয়। পুজার উপকরন হচ্ছে চিনিমাখা খই, মুড়ি/চিড়া/তিলের তৈরী মোয়া, কলা, মিস্টিআলু, পেঁপে, কাঁঠাল ইত্যাদি।

সাগেইপোকপা (Group Ancestors):
গোষ্ঠির আপোকপা বা কুলদেবতা। কোন সাগেই/গোষ্ঠির পুর্বপুরুষকে ঐ গোষ্ঠির আপোকপা বলা হয়। গোষ্ঠিভেদে এরা ভিন্ন তাই, এক গোষ্ঠির আপোকপা পুজায় অন্য গোষ্ঠি অংশ নেয় না। সাধারনত ফাল্গুন-চৈত্র মাসে বড় পরিসরে কুলদেবতা আপোকপার পুজা হয়ে থাকে। পুজার উপকরন গোষ্ঠিভেদে নিরামিষ-ভাত, টাকিমাছ, শোলমাছ, বোয়ালমাছ ইত্যাদি।

য়েকপোকপা (Clan Ancerstor )
গোত্রের আপোকপা। মুলগোত্র বা আদিম কৌমদের ভিন্ন ভিন্ন আপোকপা রয়েছে। মণিপুরিদের সাতটি গোত্রের সাতজন ভিন্ন আপোকপা আছেন। যেমন- আঙম গোত্রের আপোকপা হলেন পুরেইরঙবা, লুয়াঙ গোত্রের আপোকপার নাম পৈরৈতন, খুমন গোত্রের থাঙগরেন ইত্যাদি [৩]। পুজার অন্যান্য উপকরন হলো ফুল, ধূপ, সরিষার দানা, চাল, চালের গুড়া, পানপাতা, সুপারি, মাটির কলস, কাপড়, তামার পয়সা ইত্যাদি।



আপোকপা উপাসনার মূল উদ্দেশ্য কেবল পুর্বপুরুষকে স্মরন নয়। এই সংস্কৃতি থেকে বুঝা যায় মনিপুরিরা আত্মার অমরত্বে বিশ্বাস করে থাকে। তাদের বিশ্বাস করে মানুষ মারা গেলে কেবল শরীরটাই ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়, তার আত্মা বেঁচে থাকে। মৃত্যুর পরেও পুর্বপুরষেরা কাছে কাছে থেকে আগের মতোই বংশধরদের প্রতিপালন ও রক্ষার দ্বায়িত্ব পালন করে চলেন। তাই দেবতা জ্ঞানে তাদেরকে উপাসনা করে তাদের সন্তুষ্টি বিধান করা সবারই দ্বায়িত্ব।



তথ্যনির্দেশ:
১. Saroj Nalini Parratt, Religion of Manipur, 1980. p 69
২. এন কুলচন্দ্র, আপোকপা থৌনিরল, ইম্ফল ১৯৩৭, পৃ ১৩
৩. T.C. Hudson, The Meitheis, Reprinted Edn 1989, p 100

আগের পর্বগুলো পড়ুন:
* মণিপুরি ধর্মের উৎস ও বিবর্তন
* বাংলাদেশের মণিপুরি সমাজ: তাদের আদিধর্ম ও ক্ষয়িষ্ণু সংস্কৃতি

পরবর্তী পর্ব: মণিপুরি মিথলজির দেবতারা
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই জানুয়ারি, ২০১১ রাত ১:১৮
৬টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বাংলাদেশের লোকসংস্কৃতিঃ ব্যাঙের বিয়েতে নামবে বৃষ্টি ...

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:০০



অনেক দিন আগে একটা গল্প পড়েছিলাম। গল্পটা ছিল অনেক এই রকম যে চারিদিকে প্রচন্ড গরম। বৃষ্টির নাম নিশানা নেই। ফসলের মাঠ পানি নেই খাল বিল শুকিয়ে যাচ্ছে। এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশি ভাবনা ও একটা সত্য ঘটনা

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:১৭


আমার জীবনের একাংশ জুড়ে আছে; আমি চলচ্চিত্রাভিনেতা। বাংলাদেশেই প্রায় ৩০০-র মত ছবিতে অভিনয় করেছি। আমি খুব বেছে বেছে ভাল গল্পের ভাল ছবিতে কাজ করার চেষ্টা করতাম। বাংলাদেশের প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাকি চাহিয়া লজ্জা দিবেন না ********************

লিখেছেন মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:৩৫

যখন প্রথম পড়তে শিখেছি তখন যেখানেই কোন লেখা পেতাম পড়ার চেষ্টা করতাম। সেই সময় দোকানে কোন কিছু কিনতে গেলে সেই দোকানের লেখাগুলো মনোযোগ দিয়ে পড়তাম। সচরাচর দোকানে যে তিনটি বাক্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

=এই গরমে সবুজে রাখুন চোখ=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১

০১।



চোখ তোমার জ্বলে যায় রোদের আগুনে?
তুমি চোখ রাখো সবুজে এবেলা
আমায় নিয়ে ঘুরে আসো সবুজ অরণ্যে, সবুজ মাঠে;
না বলো না আজ, ফিরিয়ো না মুখ উল্টো।
====================================
এই গরমে একটু সবুজ ছবি দেয়ার চেষ্টা... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×