somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

নাস্তিকতা-মুর্দাবাদ, বিজ্ঞানচেতনা-জিন্দাবাদ

৩০ শে এপ্রিল, ২০১৫ রাত ২:৫৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

যতীন সরকার

নাস্তিকতা-মুর্দাবাদ, বিজ্ঞানচেতনা-জিন্দাবাদ

বাংলা ভাষায় ব্যবহৃত ‘ আস্তিক ও নাস্তিক’- দুটো শব্দই জাতে তৎসম, অর্থাৎ সোজাসুজি সংস্কৃত ভাষা থেকে বাংলায় গৃহীত। কিন্তু জন্মক্ষণে শব্দ দুটো যে তাৎপর্য বহন করত, কালক্রমে সে তাৎপর্য তারা হারিয়ে ফেলেছে। বলা উচিত: সে তাৎপর্যকে ভুলিয়ে দেয়া হয়েছে। অনেক শব্দেরই আদি তাৎপর্য নানাভাবে ভুলিয়ে দেয়া হয়েছে। অনেক শব্দেরই আদি তাৎপর্য নানাভাবে ভুলিয়ে দেয়া হয়ে থাকে, কিংবা পারিপার্শ্বিক নানা পরিস্থিতির প্রভাবে মানুষ আপনা-আপনিই ক্ষেত্রেই তা ভুলে গিয়ে শব্দের ভেতর নতুন তাৎপর্যের সঞ্চার ঘটায়। এতে যে সব ক্ষতি হয়, তেমন বলতে পারি না। ‘ গবেষণা’র মতো শব্দ তার জন্মক্ষণের ‘গরুখোঁজা’র মধ্যে আবদ্ধ না থেকে অর্থের সম্প্রসারণ ঘটিয়ে একে সর্ববিধ অনুসন্ধানের ক্ষেত্র পর্যন্ত প্রসারিত করে দিয়েছে। তেমনটি ঘটেছে ‘তৈল’ বা ‘তেল’ শব্দটির বেলাতেও। যাকে শুরুতে কেবল তিলের নির্যাস বোঝাতো, সেটিই এখন সর্ষের তেল, নারকেল তেল থেকে ডিজেল পেট্রোল পর্যন্ত সম্প্রসারিত। আবার উল্টোদিকে ‘মৃগ’ শব্দটি ব্যুৎপত্তিগত বিচারে সকল প্রকার পশুকে বোঝালেও এক সময়ে এর অর্থ সংকোচ ঘটে গেল কেবল ‘ হরিণ’ । অর্থের প্রসারণ ও সংকোচনের পাশাপাশি অনেক শব্দের অর্থ একেবারে পুরোপুরি পাল্টেও গেছে। যেমন- ‘সন্দেশ’ শব্দটির মূল ও ব্যুৎপত্তিগত অর্থ যে সংবাদ সে কথা তো আমরা ভুলেই গিয়েছি। এখন আমাদের কাছে সন্দেশ হয়ে গেছে কেবলই মিষ্টদ্রব্য।

এরকম বহু শব্দের অর্থের সম্প্রসারণ সংকোচন-পরিবর্তনের কথা বলা যায়। শব্দের অর্থের বহুমুখী রূপ বদল নিয়ে তো ‘সিমান্টকস’ নামে ভাষা-বিজ্ঞানের একটি বিশেষ শাখাই গড়ে উঠেছে।
আমার আজকের কথা সিমান্টকস কিংবা ভাষা বিজ্ঞান নিয়ে নয়- আস্তিক ও নাস্তিক নিয়ে। তবে এ সম্পর্কে বলতে গিয়েই আমাকে ভাষা বিজ্ঞানের ( অন্তত শব্দের ব্যুৎপত্তিগত অর্থ বিষয়ক জ্ঞানের) শরণ নিতে হচ্ছে।
সংস্কৃত ভাষায় প্রায় সকল শব্দের মূলে আছে কোনো-না-কোনো ধাতু বা ক্রিয়ামূল। সেই ক্রিয়ামূলটির অর্থ অঙ্গে ধারণ করেই এর সঙ্গে উপসর্গ বা প্রত্যয় যুক্ত হয়ে তৈরি হয় এক বা একাধিক শব্দ। ‘ আস্তিক’ এবং ‘ নাস্তিক ’ -ও এভাবেই তৈরি হয়েছে। দুটো শব্দেরই মূলে আছে ‘ অস ’ ধাতু, যার অর্থ থাকা’ (to exist)। অস ধাতু থেকেই হয়েছে অস্তি -অর্থাৎ ‘ আছে’ । যা ‘আছে’ তাতে বিশ্বাস স্থাপন করে যে মানুষ, সেই মানুষই হচ্ছে ‘আস্তিক’। আর যা আছে তাতে যার বিশ্বাস নেই, সে-ই ‘নাস্তিক’। এ রকম অর্থ-সমন্বিত করেই ‘ আস্তিক’ ও ‘নাস্তিক’ শব্দ দুটো গঠন করা হয়েছিল।
কিন্তু তারপর কী হলো? কর্তৃত্বশীল ব্রাহ্মণ্যবাদী শক্তি শব্দ দুটোর আসল অর্থকে চাপা দিয়ে সমপূর্ণ উল্টো অর্থে প্রয়োগ করতে শুরু করলো। যা আছে সেই বস্তু ও বস্তুর শক্তিতে যার বিশ্বাস , ‘বস্তুই বাস্তব’ – এ কথা যারা মানে, লৌকিকে ও প্রত্যক্ষেই যাদের আস্থা, ব্রাহ্মণ্যবাদীরা তাদেরকেই বলল নাস্তিক’ । এর বিপরীতে অস্তিত্বহীন ও অ-বাস্তব অলৌকিকে তথা অবিশ্বাস্যকেই যারা বিশ্বাস করে, যার অস্তিত্ব কোনো মতে প্রমাণ বা প্রত্যক্ষ করানো যায় না সে রকম কল্পনাসৃষ্ট এক বা একাধিক বিধাতা কিংবা তেত্রিশ কোটি দেবতা বা অপদেবতার প্রতি যাদের নিশ্ছিদ্র বিশ্বাস- ব্রাহ্মণ্যবাদের ধারক-বাহকদের কাছে তারাই হয়ে গেল ‘আস্তিক’ । অর্থাৎ যারা প্রকৃতই আস্তিক তাদেরকে নাস্তিক আখ্যা দিয়ে লোকসমক্ষে হেয় প্রতিপন্ন করার ধূর্ততাই প্রদর্শন করল ওই ব্রাহ্মণ্যবাদীরা।

ওদের ধূর্ততা শুধু ওইটুকুর মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকেনি। ‘আস্তিক’ ও ‘নাস্তিক’ এর মতো আরও অনেক শব্দের মূল অর্থকে লোপাট করে দিয়ে ওরা ওদের নিজেদের স্বার্থসাধক অর্থের অধীন করে নেয়। এভাবেই ওরা ‘বস্তু’ শব্দটিরও অর্থ বিপর্যয় ঘটিয়ে ফেলে। ব্যুৎপত্তিগত বিচারে ‘বস্তু’ বলতেও ‘যার অস্তিত্ব আছে’ তাকেই বোঝায়। ব্রাহ্মণ্যবাদীরা যাদের ‘নাস্তিক’ আখ্যা দেয় তারা তো আসলে বস্তবাদী। কারণ তারা জানে: লৌকিক ও ইন্দ্রিয়প্রত্যক্ষ অস্তিত্বশীল ‘বস্তু’ই বিশ্বের মূল সত্তা, অতীন্দ্রিয় কোনো কিছুরই অস্তিত্ব থাকতে পারে না, তাই তা নিতান্তই ‘ অবস্তু’ । বস্তুবাদীদের এ রকম প্রত্যয়ের মোকাবেলায় ব্রাহ্মণবাদীরা বস্তু শব্দটির অর্থ উল্টিয়ে দিয়ে অবস্তুকেই বস্তু বলে প্রচার করে, এবং প্রাকৃতজন বা সাধারণ মানুষের বিশ্বাস-প্রবণতায় সুড়সুড়ি দিয়ে বলতে থাকে‘ বিশ্বাসে মিলায় বস্তু, তর্কে বহুদূর’। অর্থাৎ অতিপ্রাকৃত দেবতা বা ঈশ্বরই হচ্ছে আসল বস্তু', এবং যুক্তিতর্কের বদলে কেবল বিশ্বাসের সাহায্যেই সে বস্তুকে জানা যায়- সাধারণের মনে এ রকম প্রতীতিরই শিকড় গেড়ে দেয় তারা। ‘বেদান্ত সার’ নামক দার্শনিক গ্রন্থে ‘বস্তু’র সংজ্ঞা দেয়া হয় এভাবে- ‘সচ্চিদানন্দ অদ্বয় ব্রহ্মই বস্তু’। অর্থাৎ ‘বস্তু'কে ‘বস্তু’র বদলে তারা একটা ‘হিংটিং ছট’-এ পরিণত করে ফেলে। শুধু ব্রহ্ম বা ঈশ্বর বা দেবতা নয়, অপদেবতা বা ভুত-প্রেত-দত্যি-দানো-পিশাচ এমন সব ‘অবস্তু’র প্রতি প্রাকৃতজনের বিশ্বাসের গোড়াতেও তারা প্রতিনিয়ত জল সিঞ্চন করে চলে।
কিন্তু যাঁরা জ্ঞানের সাধনা করেন, দর্শনচর্চা করেন, তাঁদের তো আর এভাবে সরল বিশ্বাসের বৃত্তে আটকে রাখা যায় না। তাই দর্শনের আলোচনায় যখন দেখা যায় যে যুক্তিতর্ক দিয়ে প্রমাণ করা যায় না, তখন ওরা অন্য পথ ধরে।

বৈশেষিক, সাংখ্য, যোগ, ন্যায়, মীমাংসা ও বেদান্ত- প্রাচীন ভারতের এই ছয়টি দর্শনকেই ব্রাহ্মণ্যরা আস্তিক দর্শনের স্বীকৃতি দেয়। অথচ, এক ‘ বেদান্ত’ ছাড়া অন্য পাঁচটি দর্শনেই ঈশ্বরের অসিত্মত্ব সম্পর্কে প্রায় কিছুই বলা হয়নি। বেদান্ত দর্শনও কোনো ব্যক্তিক বা ব্যক্তিত্ব মণ্ডিত ঈশ্বরের অস্তিত্ব( যে ঈশ্বরের উদ্দেশে মানুষ স্তবস্তুতি পূজা অর্চনা করে) প্রমাণ করতে পারেনি। সে দর্শন বলেছে যে এক নৈর্ব্যক্তিক মহাশক্তিই বিশ্বব্রহ্মাণ্ড রূপে বিকশিত হয়েছে, এর বাইরে কোনো ঈশ্বর নেই। সাংখ্য দর্শন তো স্পষ্টই বলে দিয়েছে যে, ঈশ্বর নেই, কারণ তার থাকার কোনো প্রমাণ পাওয়া যায় না’ (ঈশ্বরাসিদ্ধে প্রমাণাভাবাৎ)। তবু সাংখ্যদর্শন আস্তিক দর্শন হলো কী করে?
হলো ‘গরজ বড় বালাই’ বলে। সে সময়কার বস্তুবাদী দার্শনিক লোকায়তিকরা যখন চোখা চোখা যুক্তি দিয়ে দেব-দেবতা-ঈশ্বর, তথা সমস্ত প্রকার অতীন্দ্রিয় বা অলৌকিক ভাবনাকে উড়িয়ে দিচ্ছিলেন, তখন ওঁদের সঙ্গে তর্ক করে ব্রাহ্মণ্যতন্ত্রী দার্শনিকরা কিছুতেই হালে পানি পাচ্ছিলেন না। আর তা না পেয়েই ঈশ্বর থাকা না থাকার বিষয়টি নিয়ে তাঁরা জেদ ধরে থাকলেন না। আসলে ঈশ্বরের অস্তিত্ব আছে কি নেই এ নিয়ে কোনো যুগের কোনো দেশের কর্তৃত্বশীল শক্তিরই তেমন কোনো মাথাব্যথা থাকে না। তবে জনসাধারণের ভেতর ঈশ্বর তথা অলৌকিকতায় বিশ্বাস থাকলে যে শাসন-শোষণ চালাতে খুব সুবিধা হয়- এ কথা সব দেশের ও সব যুগের কর্তৃত্বশীলরাই বিলক্ষণ অবগত ছিলেন ও আছেন। তাই নিজেরা ঈশ্বরে বা অলৌকিকে বিশ্বাস করুন আর নাই করুন, নিম্নবর্গের জনসাধারণের ভেতর এসব বিশ্বাসকে বাঁচিয়ে রাখার সব রকম উপায়ই তাঁরা খুঁজে বার করেন। আর উচ্চবর্গের মানুষদের মধ্যে যাঁরা জ্ঞানচর্চার আনন্দে ঈশ্বর বা অলৌকিকতার পক্ষে-বিপক্ষে নানা যুক্তির খেলা খেলেন, সেসব খেলায় কর্তৃত্বশীল শাসক গোষ্ঠীর হর্তাকর্তারা সাধারণভাবে কোনো বাধার সৃষ্টি করেন না; তাঁরা কেবল সমাজে ও রাষ্ট্রে নিজেদের কর্তৃত্বটি নিরঙ্কুশ থাকে কিনা- সেদিকটিতেই নজর রাখেন। কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর জ্ঞানচর্চার ফলে কর্তৃত্বশীলদের কর্তৃত্ব যখন সামান্য মাত্রায়ও চ্যালেঞ্জের সামনে পড়ে যায়, তখন তারা সঙ্গে সঙ্গে উদারতার মুখোশ খুলে ফেলে, সেরকম জ্ঞান চর্চাকে ‘নাস্তিকতার চর্চা’ বা এ রকম অন্য কোনো অপবাদ দিয়ে সবলে দমন করে। যে মতবাদ শাসকদের কর্তৃত্ব তথা স্থিতাবস্থা বজায় রাখতে সাহায্য করে সেটিই তাদের বিবেচনায় আস্তিকতা, আর যে মতবাদ এর বিপরীতটি করে সেটিই নাস্তিকতা। কর্তৃত্বশীল গোষ্ঠী সর্বত্র ও সর্বদাই চিন্তায় ও কর্মে এ রকম ‘প্র্যাগমাটিক’।
এ রকম প্র্যাগমাটিক দৃষ্টিকোণ থেকেই সেকালের ভারতবর্ষের কর্তৃত্বশীল গোষ্ঠীর ঈশ্বরে অবিশ্বাসী মানুষদেরও আস্তিক ও নাস্তিক- এ দু’ভাগে ভাগ করে নিয়েছিল। যাঁরা ঈশ্বরে বিশ্বাস করেন না, কিংবা ঈশ্বরের অস্তিত্ব-অনস্তিত্ব নিয়ে নানা সন্দেহ-সংশয় পোষণ করেন, অথবা ঈশ্বর নিয়ে মোটেই মাথা ঘামান না, তেমন লোকেরাও যদি কর্তৃত্বশীল ব্রাহ্মণ্যবিধানের প্রতি থাকেন অনুগত, সে বিধানের বৈধতাকে মেনে নেন বিনা প্রশ্নে, জন্মগত বর্ণাশ্রম ধর্মে থাকে তাঁদের অটুট আস্থা, তাহলেই তাঁরা সবাই ‘ আস্তিক’। এই আস্তিকতায় ঈশ্বরে বিশ্বাস স্থাপনের ব্যাপারটা আবশ্যিক নয়, আবশ্যিক হলো ‘ বেদ’ -এর কর্তৃত্বের ওপর নিরঙ্কুশ আস্থা। বেদের ওপর আস্থা মানে ব্রাহ্মণের ওপর আস্থা, ব্রাহ্মণ্যবিধানের ওপর আস্থা। ‘বেদ’ তো আসলে গ্রন্থবিশেষের নাম নয়। ব্রাহ্মণদের দ্বারা প্রচারিত, ব্রাহ্মণদের দ্বারা কুক্ষিগত, ব্রাহ্মণদের একচেটিয়া অধিকারে প্রতিষ্ঠিত বিদ্যার নামই বেদ। ব্রাহ্মণ গুরুর মুখ থেকে কানে কানে শুনে বেদবিদ্যা রপ্ত করতে হতো বলে এর আরেক নাম শ্রুতি। সমাজের সকল শ্রেণীর লোকের অধিকার ছিল না এই শ্রুতি বা বেদবিদ্যাচর্চার। বিশেষ করে সমাজের যে সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষেরা ছিল শূদ্রবর্ণ বা নিম্নবর্ণের অন্তর্গত- অর্থাৎ যারা ছিল ‘সবার পিছে সবার নিচে’ সর্বহারার দলে- তাদের কানে কখনও ‘শ্রুতি’কে পৌঁছতে দেয়া হতো না। শূদ্ররা যদি কোনো রকমে সেই শ্রুতির সঙ্গে পরিচিত হয়ে পড়ত, এমনকি পরিচিত হওয়ার চেষ্টাও করত, তাহলেই তাদের ওপর কঠিন শাস্তি নেমে আসত।

এই শ্রুতির ব্যাখ্যাভাষ্য তথা প্রায়োগিক রূপই হলো‌ ‌‌‘স্মৃতি’। ‘স্মৃতি’রই আরেক নাম ‘ধর্মশাস্ত্র’। ধর্মশ্রাস্ত্রের কঠোর বিধানে শূদ্র তথা সংখ্যাগরিষ্ঠ নিম্নবর্গের শ্রমনিষ্ঠ মানুষ ছিল শ্রমের ফল থেকে বঞ্চিত-সর্বপ্রকার মানবিক অধিকার থেকেই বঞ্চিত। ধর্মশাস্ত্রের বিধানেই ব্রাহ্মণ-ক্ষত্রিয়রা ছিল সর্বপ্রকার সুবিধাভোগী। ওদের ওই সুবিধাভোগকে নিরঙ্কুশ রাখার লক্ষ্যেই অত্যন্ত কঠোরভাবে ধর্মশাস্ত্রের বিধানকে মেনে চলাই, ব্রাহ্মণদের মতে, বেদকে মান্য করা। এভাবে বেদকে মান্য করেন যে দার্শনিকরা, তাঁরা ঈশ্বরকে না মানলেও ‌ ‘আস্তিক’। কারণ ঈশ্বর না মেনেও তাঁরা তো ক্ষমতাসীনদের ক্ষমতাকে চ্যালেঞ্জ করেন না, তাঁরা তো স্থিতাবস্থা বজায় রাখতে সর্বোতভাবে সহায়তা করেন। ঈশ্বরকে তাঁরা হাজারবার অমান্য করলেও তাতে ব্রাহ্মণ-ক্ষত্রিয়দের কোনো ক্ষতি হবার নয়। বেদকে প্রামাণ্য বলে স্বীকার করার নামে তাঁরা ব্রাহ্মণ-ক্ষত্রিয়দের অথরিটিকে মানেন, তাই তাঁরা আস্তিক।

কিন্তু বেদ মান্য না করলে( অর্থাৎ ব্রাহ্মণ্য বিধান না মানলে) ব্রাহ্মণ্যবাদীদের বিচারে কেউ আস্তিক বলে বিবেচিত হবে না, তারা সবাই নাস্তিক। কারণ ওই বেদ-অমান্যকারীরা তো আসলে ব্রাহ্মণদের কর্তৃত্বকেই অস্বীকার করেন। যেমন- চার্বাক বা লোকায়তিক নামে পরিচিত দার্শনিকরা। ব্রাহ্মণরা যে বেদের দোহাই দিয়ে সকলকে নিজেদের তাঁবে রাখতে চাইত, লোকায়তিকদের মতে সেই বেদ একেবারেই ভুয়া, ‘বেদ’ কোনো মতেই প্রামাণ্য কিছু নয়, ভণ্ড ও ধূর্ত ব্রাহ্মণরাই লোক ঠকানোর জন্য ‘বেদ’ নাম দিয়ে একটা তথাকথিত বিদ্যার পত্তন করেছে। লোকায়তিক দার্শনিকরা দেহাতিরিক্ত কোনো আত্মার অস্তিত্ব স্বীকার করতেন না; তাঁরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করতেন যে দেহের বিনাশের সঙ্গে সঙ্গে জীবনের বিনাশ ঘটে যায়, মৃত্যুর পর মানুষের পুনরায় জন্মগ্রহণ করা কিংবা স্বর্গ-নরক ভোগ করা নিতান্তই কল্পকথা মাত্র। সমাজে চিরকালের জন্য নিজেদের কর্তৃত্বকে নিরঙ্কুশ করে রাখার জন্যই ওইসব কল্পকথা সৃষ্টি করেছে।

ব্রাহ্মণ্যবাদের বিরুদ্ধে এ রকম চাঁছাছোলা যাদের কথাবার্তা, ব্রাহ্মণরা যে তাদের নাস্তিক বলে গাল দেবে সে তো খুবই স্বাভাবিক। কিন্তু জৈন ও বৌদ্ধরা লোকায়তিকদের চেয়ে অনেক নরম কথা বললেও ‘নাস্তিক’ অপবাদের হাত থেকে মুক্তি পায় না। কারণ তারাও ছিল বেদ কে প্রামাণ্য বলে মানার- অর্থাৎ ব্রাহ্মণ্যবিধানকে স্বীকার করে নেয়ার বিরোধী। তাই চার্বাক, জৈন, বৌদ্ধ- এই তিন ব্রাহ্মণ্যবাদী এস্টাব্লশিমেন্টের বিচারে ‘নাস্তিক দর্শন’ এবং এর বিপরীতে অন্য ছ’টি দর্শনই ‘আস্তিক দর্শন’।

এভাবেই ব্রাহ্মণ্যবাদ আস্তিক ও নাস্তিক দুটো শব্দেরই অর্থ বিপর্যয় ঘটিয়ে ফেলে। ‘যা আছে’, ‘যা থেকে’ ও ‘যা দিয়ে’ এই বিশ্বব্রহ্মাণ্ড সৃষ্ট ও পরিচালিত, সেই ‘‌বস্তু’র অস্তিত্বে যাদের দৃঢ় আস্থা, সে রকম প্রকৃত আস্তিককে ‍ নাস্তিক বলা তো প্রকৃত সত্যকেই বিকৃত করা। এই বিকৃতিকে আমরা কেন মেনে নেব? আমরা যারা বস্তুবাদী, তাদের বরং জোরগলায় বলা উচিত- ‘আমরাই হচ্ছি আসল আস্তিক, তোমরা যারা বস্তুর বদলে অবস্তুর প্রতি আস্থা রাখো, ‘যা নাই’ তাকেই ‘আছে’ বলে বিশ্বাস করো, যারা নানা রঙের ভাববাদী, এ রকম সবাই তোমরা নাস্তিক’।

বাস্তবে কিন্তু এমন কথা আমরা বলি না। ‘নাস্তিক’ কথাটা যে একটা গালি, সে কথাটাই আমরা ভুলে বসে আছি। শুধু তাই নয়। কেউ কেউ তো নিজেদের ‘নাস্তিক’ পরিচয় দিয়ে মূর্খের মতো বড়াই করতেও পছন্দ করি। আমরা অমুকটা মানি না কিংবা তমুকটা বিশ্বাস করি না- এ রকম বুলি কপচিয়েই চলে আমাদের নাস্তিকতার আস্ফালন। কখনো কখনো এ রকম আস্ফালনকেই আমরা ‘মুক্তবুদ্ধির চর্চা’ বলে প্রচার করি।

এরকম করে লাভ কিছুই হয় না, বরং ক্ষতির বোঝাটাই ভারী হতে থাকে কেবল। নাস্তিকতার আস্ফালন করে আমরা নিজেরাই আমাদের আসল পরিচয় ভুলে যাই, অন্যকেও ভুল বুঝবার সুযোগ করে দিই। আমরা যাদেরকে সাধারণভাবে বলি ‘জনসাধারণ’ বা ‘ লোক সাধারণ’ তারা কিন্তু মোটেই নাস্তিক নয়। নাস্তিকতা তো নেতিবাচকতা বা নঞর্থকতারই আরেক নাম। যে জনসাধারণ শ্রমের সূত্রে উৎপাদন প্রক্রিয়ার সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে সংযুক্ত থেকে বিদ্যমান বস্তু বা বাস্তবের পরিবর্তন ঘটায়, সমাজরথের চাকাটি সর্বত্র ও সর্বদা সচল রাখে, এবং মানবসংস্কৃতির সৃজন পোষণ ও প্রতিনিয়ত প্রসারণ করে চলে যারা, সেই জনসাধারণ কি নেতিবাচক বা নঞর্থক হতে পারে কখনও? উৎপাদনের বিষয়টাই একান্ত ইতিবাচক বা সদর্থক এবং ইতিবাচকতা ও সদর্থকতাতাই আস্তিকতা। তাই উৎপাদন সংশ্লিষ্ট জনসাধারণ অবশ্যই আস্তিক। আর উৎপাদনের কাজ যেহেতু বস্তু এবং বাস্তবকে নিয়েই, তাই তারা বস্তুবাদী ও বাস্তববাদী।

কিন্তু জনসাধারণের এই একান্ত স্বাভাবিক আস্তিকতা ও বস্তুবাদ বিকাশ ও বিস্তারের স্বাভাবিক পথ খুঁজে পায় না। পথ রোধ করে দাঁড়ায় তারাই যারা উৎপাদক নয়, অথচ উৎপাদনের ফলভোগকারী, পরিশ্রম যাদের জীবিকা নয়, পরিশ্রমের ফল অপহরণ করেই যারা জীবন নির্বাহ করে। এই পরশ্রমজীবী সংখ্যাগুরু জনগণের শ্রমফলই শুধু অপহরণ করে না, তাদের চেতনাকেও নিয়ন্ত্রণ করে, তাদের স্বাভাবিক আস্তিকতার নির্বাসটিকেও কেড়ে নেয়, পুরোপুরি কেড়ে নিতে না পারলেও একে বিকৃত ও বিভ্রান্ত করে ফেলে। এভাবেই তারা জনসাধারণের স্বাভাবিক আস্তিকতা ও বস্তুবাদিকতাকেও বিকৃতি ও বিভ্রান্তির দিকে ঠেলে দেয়, নানা কায়দায় জনসাধারণের মনে অলৌকিকতা বিশ্বাস ও অদৃষ্ট নির্ভরতার সঞ্চার ঘটায়, ধর্মতন্ত্রের আফিমের নেশায় তাদের বুঁদ করে রাখে। সমাজের কর্তৃত্বশীলদের এ রকম ধূর্ত ষড়যন্ত্রের ফলে বিপুল সংখ্যক জনসাধারণ ধর্মতন্ত্রকে আশ্রয় করেই বাঁচার পথের সন্ধান করে, ধর্মতন্ত্র নির্দেশিত এক ঈশ্বর বা একাধিক দেবতার প্রতি আস্থায় ও ভক্তিতে অবনত থাকে, হৃদয়হীন ও আত্মাহীন বাস্তব পরিপার্শ্বে ধর্মতন্ত্রই তাদের জন্য কল্পিত হৃদয় ও কল্পিত আত্মায় বিশ্বাসের জোগান দেয়। এ রকম আশ্রয়, বিশ্বাস, আস্থা ও ভক্তির ওপর ভর করেই গড়ে ওঠে বিপুল সংখ্যক জনসাধারণের অভিনব আস্তিকতা। তাদের এই ধর্মতন্ত্র ও আস্তিকতা আপাতদৃষ্টিতে যে রকমই হোক, উচ্চবর্গের কর্তৃত্বশীলদের ধর্মতন্ত্র ও আস্তিকতা থেকে স্বরূপত তা অবশ্যই পৃথক। এ রকম আস্তিকতায় অবশ্যই ভুল-ভ্রান্তি আছে প্রচুর। কিন্তু যেহেতু অভ্রান্ত ও যথার্থ আস্তিক হয়ে ওঠার সুযোগ থেকে তাদের বঞ্চিত করে রাখা হয়েছে, তাই যে ধরনের বিশ্বাস তাদের কাছে আস্তিকতা বলে প্রতিভাত সেটিই হয় তাদের মানসিক আশ্রয়; সেই আশ্রয়টুকু ছাড়তে তারা কোনোমতেই রাজি হতে পারে না। নাস্তিক বলে যারা আত্মপরিচয় দেয়, কিংবা সমাজে যাদের আস্তিক পরিচয় প্রতিষ্ঠিত হয়ে গেছে, জনসাধারণ তেমন লোককে বিশ্বাস বা শ্রদ্ধা তো করেই না, এদের সম্পর্কে বরং তারা সীমাহীন ভীতি ও অশ্রদ্ধাই পোষণ করে, এদের সঙ্গও তারা পরিহার করে চলে। এর ফলে সংখ্যা গরিষ্ঠ সাধারণ জনগণের সঙ্গে বিজ্ঞানমনস্ক ও বস্তুবাদী বুদ্ধিজীবীদের বিচ্ছিন্নতার বিস্তারই ঘটতে থাকে প্রতিনিয়ত।
এ রকম একটি অবাঞ্ছিত পরিস্থিতির মোকাবেলায় প্রকৃত আস্তিক বা বস্তুবাদীদের অবশ্যই অনেক বেশি দায়িত্ববান ও ধৈর্যশীল হতে হবে, নাস্তিকতার আস্ফালন দেখিয়ে জনসাধারণকে দূরে ঠেলে দেয়ার বদলে তাদের আস্থা অর্জনে সচেষ্ট হতে হবে। সে রকম আস্থা অর্জনের জন্য প্রথমেই প্রয়োজন লোকসাধারণের বিশ্বাস ও আস্থার প্রকৃতিটিকে সহৃদয়তার সঙ্গে বুঝে নেয়া। তখন দেখা যাবে যে লোকসাধারণ যে ধর্মতন্ত্র মেনে চলে তাকে যতই প্রচলিত শাস্ত্রনুসারী বলে মনে করা হোক না কেন, এর ভেতরে ধিকি ধিকি করে জ্বলছে প্রতিবাদের অগ্নিকুসুম। পুরুত মোল্লা-যাজকরা ধর্মতন্ত্রের যে রকম ব্যাখ্যা দিয়ে থাকে, আপাতদৃষ্টে মনে হয় যে লোকসাধারণ বুঝি তাকেই বিনা প্রতিবাদে মেনে নেয়। অথচ আসল ব্যাপার সম্পূর্ণ অন্যরকম। প্রাচীন ভারতে ব্রাহ্মণ-ক্ষত্রিয়রা সমাজ ও রাষ্ট্রের ওপর কর্তৃত্ব স্থাপন করে লোকসমাজের স্বাভাবিক বস্তুবাদ তথা লোকায়তিক দার্শনিকদের বস্তুবাদী মতকে ছলে-বলে-কৌশলে অবদমিত করেছিল। দেশের প্রাকৃতজন বা লোকসাধারণ তখন ব্রাহ্মণ্যবাদী এস্টাব্লিশমেন্টর কাছে আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হয়ে দৃশ্যত শাস্ত্রীয় ধর্মতন্ত্রকে মেনে নিয়েছিল বটে, কিন্তু ভেতরে ভেতরে তারা লোকায়ত বস্তুবাদকেই অনুসরণ করে চলছিল। এরকমটি শুধু ব্রাহ্মণ্যবাদী ধর্মতন্ত্রের বেলাতেই ঘটেনি, বৌদ্ধ কিংবা ইসলাম গ্রহণকারী লোকসাধারণেরও যাত্রা ছিল একই পথ ধরে। এই পথ ধরেই জন্ম নেয় সহজিয়া ও বাউলসহ নানা ধরনের লৌকিক ধর্মতন্ত্র। দেহাত্মবাদই এইসব ধর্মতন্ত্রের অত্ন:সার। ‘যা আছে ব্রহ্মাণ্ডে, তাই আছে ভাণ্ডে’-লৌকিক ধর্মতন্ত্রগুলোর এই প্রত্যয় তো আসলে একান্ত বস্তুবাদীই। এসব ধর্মতন্ত্রের আস্তিকতাও বস্তুবাদী আস্তিকতাই।
অনক্ষর বা প্রায়-অনক্ষর বা সাধারণভাবে যাদের ‘অশিক্ষিত’ বলে বিবেচনা করা হয়, সেই লোকসাধারণের বস্তুবাদী আস্তিকতার স্বরূপটি ভালো করে বুঝে নিলেই একজন আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত ‘বৈজ্ঞানিক বস্তুবাদী’ মানুষ দায়িত্ব সচেতন হয়ে উঠবেন। সাধারণের সঙ্গে তাঁর বিচ্ছিন্নতা ঘোচাতেও তিনি সচেষ্ট হবেন। তখন তিনি আর নিজেকে’ নাস্তিক’ বলবেন না। বরং একজন বৈজ্ঞানিক বস্তুবাদী বা প্রকৃত আস্তিক বলে আত্মপরিচয় প্রদান করবেন। লোকসাধারণের বস্তুবাদী চিন্তার মূল মর্মের সঙ্গ তাঁর বস্তুবাদী দর্শনের ঐক্যও যেমন তিনি অনুভব করবেন, তেমনই সে দর্শনের অসম্পূর্ণতা ও স্থুলতা অপনোদন করতেও তাদের সাহায্যকারী হবেন। নাস্তিকতার আস্ফালনের বদলে প্রকৃত আস্তিকতার প্রত্যয়ে তিনি নিজেও উদ্বুদ্ধ হবেন, অন্যকেও উদ্বুদ্ধ করে তুলবেন।
কিন্তু দু:খ এই, আমাদের আশেপাশে এ রকম দায়িত্বশীল বস্তুবাদী আস্তিকদের খুব বেশি সংখ্যায় আমরা দেখতে পাই না। বরং খুব কম সংখ্যায় হলেও দেখা পাই এমন কিছু স্বঘোষিত নাস্তিকের যাঁদের বৈদগ্ধর ও অবিশ্বাসের অহঙ্কার আছে, কিন্তু বৈজ্ঞানিক বস্তুবাদে বিশ্বাস ও স্থির প্রত্যয় নেই, লোকসাধারণের ভাব-ভাবনার সঙ্গে গভীর যোগাযোগ নেই, এবং কোনোরূপ সামাজিক দায়িত্ববোধও নেই। এঁদের দেখাদেখি যাঁরা নাস্তিকতার ফ্যাশনে আক্রান্ত হন তাঁরা তো আরও ভয়ংকর। এই ভয়ংকরেরাই দায়িত্বহীন কথাবার্তা ও আচরণ দিয়ে ধর্মান্ধ ও মৌলবাদীদের পথচলাকে সুগম করে দেন। ফ্যাশনদুরস্ত নাস্তিকদের স্থুল যুক্তি ও বাহ্যিক আচরণগুলিকেই ধর্মীয় সাম্প্রদায়িকতাবাদী ও মৌলবাদীরা আরও স্থুলভাবে লোকসাধারণের কাছে উপস্থাপন করে এবং তার ফলে লোকসাধারণ ধর্মধ্বজীদেরই মিত্র বলে গ্রহণ করে বিজ্ঞানসম্মত ধ্যান-ধারণার দিক থেকে চোখ ফিরিয়ে রাখে।
এ রকম অবাঞ্ছিত পরিস্থিতির পরিবর্তন ঘটানোর দায়িত্ব গ্রহণ করতে হবে বিজ্ঞানচেতন ও বৈজ্ঞানিক বস্তুবাদী মানুষদেরই। বিষয়টাকে দেখতে হবে ইতিবাচক দৃষ্টিকোণ থেকে। আমি কী মানি- সেটাকেই বড় করে তুলে ধরতে হবে, কী মানি না তা নিয়ে হাওয়ায় বন্দুক ঘোরানোর কোনো অর্থ নেই। ‘মানি না’র নাস্তিকতা তো অন্ধকার, সেই অন্ধকারের তো শেষ নেই। ‘বস্তুকে মানি, বিশ্বব্রহ্মাণ্ড বস্তু দিয়ে তৈরি, বস্তুর নিয়মেই চলে বিশ্ব, বস্তুই বিধাতা’_ এই হচ্ছে বিজ্ঞানচেতন আর এই বিজ্ঞানচেতনাই আস্তিকতা।
আমাদের প্রাকৃতজন যেসব লৌকিক ধর্মতন্ত্রের অনুসরণ করে থাকে, তার সবগুলোতেই এই প্রাথমিক স্তরের বিজ্ঞানচেতনা ও বস্তুবাদী আস্তিকতা বিদ্যমান। এ রকম বিজ্ঞানচেতনা ও বস্তুবাদ তারা প্রাচীনকালের লোকায়ত দর্শনের উত্তরাধিকাররূপেই লাভ করেছে। কিন্তু সমাজের কর্তৃত্বশীল শক্তির প্রতিকূলতা ও দমন-পীড়ণের দরুন লোকসাধারণ লোকায়ত দর্শনের উত্তরাধিকারকে আধুনিক ও বৈজ্ঞানিক বস্তুবাদে পরিণত করে নিতে পারে নি। বরং পূর্বতন লোকায়তিক বস্তুবাদের মধ্যেও ভাববাদের ভেজাল মিশিয়ে ফেলতে বাধ্য হয়েছে। যাঁরা বৈজ্ঞানিক বস্তুবাদী, তাঁদের উচিত নাস্তিকতার বড়ফট্টাই না দেখিয়ে লৌকিক ধর্মতন্ত্র অনুসারী ওইসব লোকসাধারণের বিশ্বাস ও আচরণের প্রতি যথার্থ দরদ ও সহানুভূতি ব্যক্ত করা, দরদ ও সহানুভূতির সঙ্গেই তাদের সঙ্গে মিশে তাদের লোকায়ত বস্তুবাদকে বৈজ্ঞানিক বস্তুবাদে উন্নীত করা।
আসলে বৈজ্ঞানিক বস্তুবাদী যিনি, তিনি তো কেবল আপনাকে নিয়ে আপনি মত্ত হয়ে থাকতে পারেন না, কিংবা পারেন না নাস্তিত্বে লীন হয়ে যেতে। তাকেঁ একান্তভাবেই অস্তির বা আস্তিকতার সদর্থকতার সাধনায় নামতে হয়। সে সাধনায় সিদ্ধিলাভও একা একা করা যায় না, জোট বাঁধতে হয় আস্তিক লোকসাধারণের সঙ্গে, সেই জোট বেঁধেই পরিপার্শ্বের সব নাস্তিকে অস্তিতে পরিণত করার প্রয়াসে প্রবৃত্ত হতে হয়- অর্থাৎ বিরূপ ও অধীন বিশ্বকে বদলে ফেলার অঙ্গীকার গ্রহণ করতে হয়। এমন বিজ্ঞান-সচেতন মানুষ কী করে নিজের বা তার প্রিয় মানুষদের জন্য ‘নাস্তিক’ আখ্যাটিকে মেনে নেবে? তার রণধ্বনি হবে- ‘ নাস্তিকতা মুর্দাবাদ, বিজ্ঞানচেতনা-জিন্দাবাদ’।


সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে নভেম্বর, ২০১৮ সকাল ৯:১৮
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। কালবৈশাখী

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৭ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:২৪



গত পরশু এমনটি ঘটেছিল , আজও ঘটলো । ৩৮ / ৩৯ সে, গরমে পুড়ে বিকেলে হটাৎ কালবৈশাখী রুদ্র বেশে হানা দিল । খুশি হলাম বেদম । রূপনগর... ...বাকিটুকু পড়ুন

একজন খাঁটি ব্যবসায়ী ও তার গ্রাহক ভিক্ষুকের গল্প!

লিখেছেন শেরজা তপন, ১৭ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:০৪


ভারতের রাজস্থানী ও মাড়ওয়ার সম্প্রদায়ের লোকজনকে মূলত মাড়ওয়ারি বলে আমরা জানি। এরা মূলত ভারতবর্ষের সবচাইতে সফল ব্যবসায়িক সম্প্রদায়- মাড়ওয়ারি ব্যবসায়ীরা ঐতিহাসিকভাবে অভ্যাসগতভাবে পরিযায়ী। বাংলাদেশ-ভারত নেপাল পাকিস্তান থেকে শুরু করে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইরান-ইজরায়েল যুদ্ধ

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ১৭ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:০৮

আমরা সবাই জানি, ইরানের সাথে ইজরায়েলের সম্পর্ক সাপে নেউলে বললেও কম বলা হবে। ইরান ইজরায়েলকে দুচোখে দেখতে পারেনা, এবং ওর ক্ষমতা থাকলে সে আজই এর অস্তিত্ব বিলীন করে দেয়।
ইজরায়েল ভাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

নগ্ন রাজা কর্তৃক LGBTQ নামক লজ্জা নিবারনকারী গাছের পাতা আবিষ্কার

লিখেছেন মুহাম্মদ মামুনূর রশীদ, ১৭ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৪০

LGBTQ কমিউনিটি নিয়ে বা এর নরমালাইজেশনের বিরুদ্ধে শোরগোল যারা তুলছেন, তারা যে হিপোক্রেট নন, তার কি নিশ্চয়তা? কয়েক দশক ধরে গোটা সমাজটাই তো অধঃপতনে। পরিস্থিতি এখন এরকম যে "সর্বাঙ্গে ব্যথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে...

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে,
পড়তো তারা প্লে গ্রুপে এক প্রিপারেটরি স্কুলে।
রোজ সকালে মা তাদের বিছানা থেকে তুলে,
টেনে টুনে রেডি করাতেন মহা হুলস্থূলে।

মেয়ের মুখে থাকতো হাসি, ছেলের চোখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×