somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

হেমন্তপালক কিংবা কুয়াশাকথন

২১ শে নভেম্বর, ২০১৮ ভোর ৫:১৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

গ্রামের প্রান্তসীমায় মাঠভর্তি কুয়াশা
আমার কোনো অস্তিত্ব নেই
ওই কুয়াশাগ্রামে কখনো কি বাস ছিলো আমার!
মনে নেই
মনে নেই
পালক ঝরে গেছে কবেই
পথে পথে পড়ে আছে আমার পরাণ



হেমন্তের এই বিকেলে তুমি দাঁড়িয়ে আছো গ্রামের প্রান্তসীমায়। তোমার সম্মুখে নদী। নদী পেরিয়ে তোমার দৃষ্টি দূরে আরো দূরে নিবদ্ধ, ওই পাড়ে- ধূ ধূ বিস্তৃত ফসলের মাঠের দিকে। ধানকাটা হয়ে গেছে। তোমার চোখের সামনে এখন রিক্ত ফসলের ক্ষেত বুঝি! শূন্য মাঠ পেরিয়ে তুমি আরো দূরে চেয়ে থাকো। তোমার দৃষ্টি ধাক্কা খায় সবুজ দেয়ালে। দূর গ্রামে সারি সারি গাছ সবুজের প্রাচীর তৈরি করেছে। সমস্ত গাছ হাত ধরাধরি করে দাঁড়িয়ে আছে। ওইখানে কলাবতী আছে। আম, জাম, কাঁঠাল, লিচু, বহেরা, হরিতকি, আমলকি আছে। আছে ফলসাও। কোনো বিভেদ নেই। সমদূরত্বে দাঁড়িয়ে তারা প্রকৃতির জয়গান করছে। তুমি চাও, মানুষও এমন করে সমদূরত্বে হাত ধরাধরি করে দাঁড়াক। নিজ নিজ স্থান থেকে জয়ধ্বজা তুলে ধরুক। প্রকৃতির বন্দনা করুক।

তুমি জানো, চাইলেই তা হবে না। তাই দৃষ্টি ফিরিয়ে রাখো জাগতিক কর্মকাণ্ড থেকে। গুটিয়ে যেতে থাকো নিজের ভেতর। ধীরে ধীরে শামুক হয়ে যেতে চাও। অথচ তুমি বলতে চাও, তোমার শৈশব-কৈশোরের সেই ব্যাঙমা-ব্যাঙমির গল্প। শোনাতে চাও রাক্ষসপূরীর কথা, ডালিম কুমারের অভিযানের কথা। বলতে চাও কাজলরেখার দুঃখের কথা। বলতে চাও একটা কাচপোকা কিংবা পাহাড়ের ধারে লতিয়ে থাকা বর্ণিল ঘাসের কথা, তোমার আনন্দের কথা। কিন্তু কেউ তোমার কথা শোনেনা, কেউ তোমার ভাষা বোঝে না। তখন তুমি আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকো। দূর নক্ষত্রবীথির দিকে তাকিয়ে ভাবতে থাকো, তবে কি তুমি ভিনগ্রহের ভাষায় কথা বলো? নাকি আদৌ তুমি কিছু বলতে পারো না! যে ভাষায় কথা বলতে হয় তা তোমার জানা নেই, কিংবা তা তুমি শেখোনি।

তুমি আরো পেছনে যাও-
একে চন্দ্র, দুয়ে পক্ষ, তিনে নেত্র, চারে বেদ।
তুমি পাঠ করো দুলে দুলে। তোমার চোখ বন্ধ। মুখ অলৌকিক আলোয় উদ্ভাসিত। তুমি শেখো বারো মাসের নাম। আষাঢ়-শ্রাবণ-ভাদ্র-আশ্বিন-কার্তিক। কার্তিক-অগ্রাহায়ণ দুই মাস হেমন্তকাল। এইখানে এসে তুমি থেমে যাও। হালকা হিম, জলজ ঘ্রাণ তুমি টের পাও। খুব ভোরে ঘুম থেকে ওঠে তুমি দেখতে পাও ধানের পাতার ধার ঘেঁষে শিশির। পরম যত্নে যেন তাকে বেষ্টন করে আছে। যদিও সূর্য উঠলেই সে ঝরে যাবে। তবু যতক্ষণ সূর্য না আসে ততক্ষণ পাতাটিকে জলজ আদর দিয়ে সে আগলে রাখে।
তুমি হেমন্তের সকাল ভালোবাসো।
তুমি হেমন্তের দুপুর ভালোবাসো।
হেমন্তের দুপুরে তোমার গ্রামের শাদা মাটির ওপর পা ফেলে ফেলে তুমি বাড়ির পেছনের জঙ্গলে ঢুকে পড়ো। গাছের নিচে পড়ে থাকা নীলপালক দেখে তাকে অনুসরণ করো । পেয়ে যাও কালো নীল ছোপের ছোট্ট ছোট্ট ডিম।

প্রতিদিন তুমি পালক জমাতে থাকো...

যেনো এক দীর্ঘ জীবন। যেনো এক সুবর্ণ অতীতকথা। যেনো অনন্তকাল বাসকপাতার নিরাময় ধরে আছো বুকের উষ্ণতায়। তোমাদের বাড়ির পাশে নদীটির পাড়ে এখনও ছিটকি-পাঙ্খই আর স্বর্ণলতার ঝোঁপ। জলডুমুর গাছে টুনটুনির বাসা। খসখসে দুটো পাতাকে ঠোঁটের কারুকার্যে কী করে যেন আটকে দিয়েছে তারা! অনিন্দ্য বাতাসে দোল খায় ছোট্ট নীড়খানি। পিছলে পড়ে বৃষ্টির জল পাতার মসৃণ দেয়াল ঘেষে। এতো মসৃণ! ঠিক সেই আদমসূরতের মতো। তোমার চোখের সামনে ভেসে ওঠে তার মসৃণ পৃষ্ঠদেশ। তুমি সেখানে মুখ রেখে নিরাময় চাও। শুনতে চাও সেই সব অমৃতবচন, যা তোমার কর্ণ জুড়িয়ে দেবে।
তোমার মন পড়ে থাকে আমগাছে ঝুলে থাকা অর্কিডের কাছে। যার ফল দুআঙুলে চেপে একধরনের আঠালো রস বের করে তোমরা কানের দুল , নাকের ফুল বানাতে। মনে পড়ে, সেদ্ধধানের গন্ধ! সারারাত মাটির চাড়িতে ভিজিয়ে রাখা ধান। সেদ্ধ হচ্ছে অন্ধকার থাকতে। সূর্য ওঠার আগে। রোদ উঠলে মেলে দেয়া হবে গোবর লেপা ঠনঠনে উঠোনে। শুকনো আমকাঠ দিয়ে চুলা ধরিয়েছে তোমার বাড়ির বয়োজ্যেষ্ঠ নারী। গাঢ় লালবর্ণ আগুন উঠছে ডেকচি বেয়ে। আগুন থেকে ভেসে আসছে মাতাল করা ঘ্রাণ! নীল শাড়ি পরিহিতা নারীটির নাকে নীল পাথরের ফুল। দাঁতে কেটে দেখছেন ধান সেদ্ধ হলো কিনা।

তুমি ডুবে যেতে থাকো সময়ের অতলে...
পুরনো ক্যাথিড্রাল থেকে ঘণ্টাধ্বনি ভেসে আসে

হায়!
উনুনের পাশে পড়ে থাকে অর্ধদগ্ধ কাঠ কিংবা জীবন। আর তোমার চেতনার মাঝে হড়বড় করে ঢুকে পড়ে প্রেত-হুল্লোর, তুমি ইচ্ছে করলেও বন্ধ করতে পারো না যান্ত্রিক কোলাহল। তোমার প্রিয় মুখগুলো এক এক করে সরে যাচ্ছে দূরে। তুমি মুঠো করে ধরতে চাও। কিছুই ধরতে পারো না। তুমি তাকে একশ চব্বিশ দিন ধরে জীবন বলে যতে চাও। তাও পারোনা। দিনমান তার আঙিনায় দাঁড়িয়ে কেবল দুঃখের পাথর চুম্বন করো।


লাবণ্য প্রভা
২০।১১।২০১৮
কুয়াশা পালক

সর্বশেষ এডিট : ২১ শে নভেম্বর, ২০১৮ রাত ১০:৪৭
৮টি মন্তব্য ৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জামায়াত শিবির রাজাকারদের ফাসির প্রতিশোধ নিতে সামু ব্লগকে ব্লগার ও পাঠক শূন্য করার ষড়যন্ত্র করতে পারে।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৪৯


সামু ব্লগের সাথে রাজাকার এর সম্পর্ক বেজি আর সাপের মধ্যে। সামু ব্লগে রাজাকার জামায়াত শিবির নিষিদ্ধ। তাদের ছাগু নামকরণ করা হয় এই ব্লগ থেকেই। শুধু তাই নয় জারজ বেজন্মা... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাওরের রাস্তার সেই আলপনা ক্ষতিকর

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৫৯

বাংলা বর্ষবরণ উদযাপন উপলক্ষে দেশের ইতিহাসে দীর্ঘতম আলপনা আঁকা হয়েছে কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রাম হাওরের ‘অলওয়েদার’ রাস্তায়। মিঠামইন জিরো পয়েন্ট থেকে অষ্টগ্রাম জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত ১৪ কিলোমিটার দীর্ঘ এই আলপনার রং পানিতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছবির গল্প, গল্পের ছবি

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৩:১৫



সজিনা বিক্রি করছে ছোট্ট বিক্রেতা। এতো ছোট বিক্রেতা ও আমাদের ক্যামেরা দেখে যখন আশেপাশের মানুষ জমা হয়েছিল তখন বাচ্চাটি খুবই লজ্জায় পড়ে যায়। পরে আমরা তাকে আর বিরক্ত না করে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×