০১
আমার কবিতাগুলো কখনো কবিতা হয়ে উঠেনি। রয়ে গেছে বিষয় ভাবনার ছাঁচে। কাওরানবাজারেই থাকি আটঘণ্টা। দেখি, রোদে ও অন্ধকারে কালো কালো ঘাম ঝরে তাহাদের। বেদনার ঝুড়ির ভেতর ঘুমেরা কুণ্ডুলি পাকায়। খিদের নামে তবে খেয়ে ফেলে আঁঠার ঘ্রাণ। কবিতাগুলো থেকে তাই বেলি ফুল ঝরে না। নেই নয়নতারার বিভাও। বিবর্ণ সকালে ঘৃতকুমারির রসের সঙ্গে তারা কথা বলে প্রান্তিক ভাষায়। কবিতার নামগুলো হয়ে যায় ‘মফিজ’।...মফিজ, মফিজ বলে বাসগুলো ডাকে। কবিতা ও মফিজ সমগ্র বাংলাদেশ ভ্রমণ করে।
০২
তুমি বলো, অতোদূর থেকে কথা বলো না। ছুঁতে পারি না। যখন কাছে ছিলে তখন সূর্যাস্তে ঠিকই দেখতাম দূর পাহাড়ের গায়ে পেখম মেলেছে একগুচ্ছ রোদ। তখন আমি আর বাতাস ভাষাবদল করতাম। গাছেরা আমার কথা আর আমি বাতাসের কথা বুঝতে পারতাম। সারাদিন অজস্র কথার বুননে একটা নকশীকাঁথা টানিয়ে দিতাম আকাশে। তুমি চলে গেছো। নগরীর বৃষ্টিবৃক্ষরা কাঁদতেও ভুলে গেলো। যেন একটা অন্ধকার, একটা আলো-আঁধারি ভোর তোমায় নিয়ে গেলো চিরতরে; দূরের নগরে। সেই থেকে কেবল মৃত্যু আমায় ডাকে। বাসে, শপিংমলে, চুড়িহাট্টার আগুনে আমি কংকাল হয়ে যাই। পোড়া মানুষের সঙ্গে গল্প করি। তাদের সঙ্গে আলাপ করতে করতে আমার জ্বিহ্বা খসে গেছে। তাই তুমি আমার কথা শুনতে পাওনা।
০৩
পৃষ্ঠাগুলো উল্টাতে ভুলে গেছি। আমার হাতের তালুতে কোনো রেখা নাই। তোমার সঙ্গে জীবন বদল করে কিছুটা ভাগ্য কিনেছিলাম। এখন চলে যাচ্ছি শূন্য হাতে। এ হাতে আর কোনো চোখ ছুঁয়ে দেখবো না। চোখের কথা বলতেই মনে পড়ল, পাথরের একজোড়া চক্ষু ছিলো আমার। মানুষের কদর্যমুখ দেখতে হবে বলে তুমি, কর্ডোভা নগরীর পাথরের মূর্তি থেকে খুলে এনেছিলে। তুমি বলতে, অপরিষ্কার মনুষ্য সমাজে চক্ষু রেখো না, মুনা।
০৪
পৃষ্ঠাগুলো খুলে দিয়েছি
বই থেকে পৃষ্ঠা খুলে জানালা দিয়ে বাইরে ফেলে দিয়েছি। খোলা জানালা দিয়ে পশুর গন্ধ ভেসে আসে। মনে পড়ে, বাবার প্রিয় ছিলাম বলে তিনি আমায় কোরবানি দিয়েছিলেন, অট্টাশির বন্যায়। নারী বলে, বাবার কোরবানি জায়েজ করেনি মহল্লার ইমাম। তাতে কিছুই যায় আসে না। বাবা আমায়, কোরবানি করে ফেলেছেন। তখন থেকে আমি আর মানুষ থাকি না। একভোরে জবাফুল হয়ে ফুটে উঠলাম। তুমি তো জানই, জবা আর মৃত্যু কেমন করে এক হয়ে যায়
আদতে আমি মরেই যাই।
তবু, হাঁটি ফিরি, বাজার করি।
সবজি ও কচুশাক কিনি
কিংবা বাজারে বাজারে ফেরি করি ঠাণ্ডা মৃত্যু...
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে মে, ২০২২ বিকাল ৩:১০