আয়না থেকে খসিয়ে নিয়েছি পারা; মৃত আয়নায় গলিত মুখ দেখা যায়! জানি, সন্ধ্যা হওয়ার আগেই আমাদের পুষ্পবালিকারা রক্ত ও স্বেদবিন্দু দিয়ে ঝকঝকে করে ফেলবে দর্পন। তখন স্বচ্ছ কাচের ভেতর রক্ত গোলাপের বন দেখবো আমি; দেখবো আমার গোপন!
দ্যাখো, আজ আমাদের বঙ্গদেশে চাঁদ উঠেছে। শূন্য দশকের মেঘ ভেদ করে রক্তিম চাঁদ দেখা যায়।
সুপারমুন! ব্লাড মুনও!
আষাঢ়ের প্রথম পক্ষে এমন চন্দ্রপ্রভা আগে কি কখনো দেখেছি আমি! গোটা আকাশ ভেসে যাচ্ছে যেন রজঃশলা চাঁদের প্রবাহে। আর জ্যোৎস্নার দাপটে পুড়ে যাচ্ছে স্কাইস্ক্রেপার, পুড়ে যাচ্ছে ছাতিম, পুড়ে যাচ্ছি আমিসমেত পঙ্খীরাজ রিক্সাটাও! এমনই আগ্রাসী চাঁদ আজ। ‘যেন পুড়ে যাচ্ছি আমূল, নিজেরই জোছনায়!’
- কী লিখলে এটা, শাঁওলী?
- কেন? কি হয়েছে? ভালো হয়নি লেখাটা!
- জোছনা লিখেছ কেন? কখনো জোছনা লিখবে না। লিখবে জ্যোৎস্না!
-আচ্ছা।
-কেন লিখবে?
-তুমিও বলো।
- কারণ, এইভাবে জ্যোৎস্না লেখায় যে আলো খুঁজে পাবে, তা জোছনায় পাবে না। লিখতে গেলে শব্দের রঙ চিনতে হয় বুঝেছ! যেন তেন একটা শব্দ লিখে দিলে, আর অমনি ভাব হয়ে যাবে! যাবে না। জোছনা একটি মধ্যবিত্ত বারোয়ারি শব্দ। তুমি লিখবে জ্যোৎস্না!
- আচ্ছা। জ্যোৎস্না লিখব। পণ করলাম, শব্দ দিয়েই ঝলসে দেবো জগৎ! কিন্তু, এতো এতো অক্ষর দিয়ে যে পাতার পর পাতা ভরিয়ে ফেলছি, তারা আবার অভিশাপ দেবে না তো!
- দেবে তো বটেই। অক্ষরের প্রতি অবিচার করলে অক্ষর তো অভিশাপ দেবেই। কেননা শব্দই ব্রহ্ম! অক্ষরকে শ্রদ্ধা করবে সবসময়।
- জ্বী! গুরুবাক্য শিরোধার্য্য! যেন নিজেকেই বলি আমি। কেননা আমার গুরু আমি নিজেই। আমার শিষ্য আমি নিজেই।
আহা! ব্লাডি আত্মরতি!
নিমের আখরে আমি হরিণ বানাই। মার্বেল মেঝেতে নগ্নিকা হয়ে লিখে যাই। জন্মশ্লেষায় ভেজা ভেজা অক্ষরগুলো শুয়ে থাকে সাদা পৃষ্ঠায়। কাহারে দেই আমার অক্ষরের নৈবেদ্য! একেকটা চরণ রচনার পর আমার কাম জাগে, আমার মরে যেতে ইচ্ছে হয়। মরে যাই। আবার বেঁচে উঠি প্রমিথিউসের মতো। অক্ষর আমাকে খুবলে খায়, নিঃশেষ করে। আবার বাঁচিয়েও রাখে। এ এক দুরারোগ্য অসুখ। এ এক মোহন নিরাময়! এক শীতকালের আলো আধারি সন্ধ্যায় আধো ঘুমে আধো জাগরণে আমার বুকের মধ্যে একটা রাঙা বাছুর ঘাই মারে। তখন সে মহাপথ ধরে অনন্তযাত্রা শুরু করেছে। পাহাড়ের পাদদেশে বরফের ওমে শুয়ে শুয়ে আমাকে টেক্সট পাঠিয়েছে এক বন্ধু,
শুয়ে থাকতে মন্দ লাগছে না। অনেক ক্লান্ত ছিলাম শাঁওলী। বাজারে বাজারে তেজারতি করতে করতে হারিয়ে ফেলেছিলাম নিজেকে। এখন কফিনে শুয়ে শুয়ে নানা ভঙিমায় ছবি উঠাই, তোমাকে পাঠাই। তুমিও কফিনের ভেতর বসে বসে নানা ডাইমেনশনে ছবি তোলার প্র্যাকটিস করো। আখেরে কাজে লাগবে কিন্তু। আহারে আমার আখের! কিছুই তো গোছানো হলো না। না জীবন না কবিতা। দণ্ডকলস ফুলের মধুর মতো চুষে চুষে খাওয়া হলো না জীবনকে। কিংবা নিমের বীজের মতো মিষ্টি-তেতো স্বাদের জীবনকে গিলে ফেলেছি!
আহা! ভেসে যায়
খলবল জ্যোৎস্নায় আমাদের পানসি ভেসে যায়
ভেসে যায় পৃথিবীর প্রাচীন নাবিক যতো
ওইখানে ডুবে গেছে সকল জাহাজ...
লাবণ্য প্রভা
১২/১২/২০২৩