somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ধর্মের দেয়াল-০৪

০৮ ই অক্টোবর, ২০১৮ সন্ধ্যা ৬:০১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমি কখন? কেনো? কীভাবে? জাহিদকে পছন্দ করে ফেলেছি বুঝিনি।পরিস্থিতি শান্ত রাখতে আর জাহিদের পাগলামি বন্ধ করতে ইন্ডিয়া যাওয়ার আগের দিন পর্যন্ত আমি জাহিদের সাথে দিনগুলো একসাথে কাটাই।বলা যায় প্রেমের প্রস্তাব ঝুলিয়ে রাখার মতো শুধুই ওর ভালো লাগা আর ভালোবাসার কথাগুলো শুনতাম।এই দিনগুলোতে একবারও আমি জাহিদকে বলিনি 'আমি তোমাকে ভালোবাসি'।জাহিদ এতোই পাগল হয়ে গেছিলো যে ধরেই নিয়েছে আমিও তাকে ভালোবাসি।
মনের কথাগুলো আমার মতো বদমেজাজি মেয়ে মুখে বলতে পারতো না।তাই সাদা কাগজ আর কালো কলম হাতে নিয়ে লিখতে বসলাম,

"হে আমার চরিত্রহীন বন্ধু,
আমি জানি আপনি চিঠির প্রথমেই চরিত্রহীন বলাতে রাগ করেননি কিন্তু বন্ধু বলাতে খুব রাগ করেছেন।কি করবো বলুন? আপনার আর আমার সম্পর্ক শুধু এটুকুর মাঝেই যে সীমাবদ্ধ।
আপনার মসজিদ আর আমার মন্দির আমাদের দীর্ঘদিনের বন্ধুত্বের সাক্ষী।সেই বন্ধুত্বের দাবি নিয়ে বলছি,আপনি আমাকে ভুলে যান।
আপনি মুসলিম বলে নয়, কিংবা দিদির ভুলের কারনেও নয়।আমি আপনাকে ঠিক প্রেমিক হিসেবে কখনো ভালোবাসিনি।তবে হ্যা একথা সত্যি 'আপনার আর আমার মাঝে বিশাল এক ধর্মের দেয়াল আছে।যে দেয়াল জিহান ভাই আর লাবণ্য দিদিও ভাঙতে পারেনি।
খুব কষ্ট পেয়েছিলাম জানেন সেদিন মিশুর স্কুলে যেয়েও দেখি বন্ধুরা ওকে আঙ্গুল তুলে বলছে,"ওই দেখ অর্ধেক হিন্দু অর্ধেক মুসলিম ছেলেটা যাচ্ছে।"মিশু আমাকে জড়িয়ে ধরে খুব কেঁদেছিলো।আপনি কি চান সেরকম নতুন আবারো মিশুর জন্ম হোক?
জানি এই কথা আমি আপনার সামনে বললে আপনি কোন না কোন যুক্তি দ্বার করাতেন।কিন্তু বাস্তবতা খুব কঠিন আর যন্ত্রণাদায়ক।জাহিদ সাহেব,আমাকে আপনি ক্ষমা করে দিবেন।
আমি আপনার সাথে কখনো সুখি হতে পারতাম না,দিদিও পারেনি জাহিন ভাইয়ের সাথে সুখি হতে।কিন্তু আমি চাই আপনি একজন মুসলিম মেয়েকে বিয়ে করে সুখি হন।ভাববেন না,আমিও মায়ের পছন্দমতো কাউকে না কাউকে বিয়ে করে নিবো।তবে আমি আর দেশে ফিরতে চাইনা।
আপনাকে ইন্ডিয়া আসার কথা যখনই বলেছি দেখেছি আপনার চোখে জল।তাই কোনদিন আপনার সামনে আর পড়তে চাইনা,যদি এই জল আমাকে দূর্বল করে দেয়।
সবকথার শেষ কথা,আমি গায়ে হাত দেয়ার জন্য আপনাকে ক্ষমা করে দিলাম।আপনি আমার জন্য দু'ফোটা জল ফেলেছেন।আমি আপনার
কথা দূর থেকে মনে করে সারাজীবন চোখের জল ফেলবো।

ইতি
পূজা দেবী

দিদির সাথে দেখা করতে যেয়ে দেখি দিদি আগে থেকেই কাঁদতে কাঁদতে চোখ লাল করে ফেলেছে।আমি চোখ মুছে দিতে দিতে বললাম,
এতো কীভাবে কাঁদিস তুই দিদি।
যারা ভালোবাসতে জানে তারা কাঁদতে ও জানে।মা এতো পাষান কি করে হলো,একবারও আসলো না?
আগে এমন ছিলোনা বাবার মৃত্যুর পর হয়ে গেছে।তুই যেমন স্বামীর জন্য ঘর ছেড়েছিস,সেও তেমনি স্বামী হারিয়েছে।
জাহিদের সাথে দেখা করে যাবিনা?
কই সে?
বিয়ে বাড়ির ফটোশুটের কাজে গেছে।তুই বললি বিকেলে আসবি,সকাল সকাল আসলি যে?
থাক, তোর আর মিশুর সাথেতো দেখা হয়েছে।
মিশুকে কাছে টেনে আদর করে চিঠিটা ওর কাছে দিয়ে বললাম,
এটা চাচ্চু আসলে দিবি,আর স্কুলের পচা বন্ধুদের সাথে একদম মিশবি না।মাসি ফোন করে খোঁজ নেবে কেমন?
মিশু 'হু' বলে মাথা নাড়লো।
আমি মাকে দেওয়া কথা রেখেছি তাই আমার স্বাভাবিক আচরনে মা খুব খুশি ছিলেন।বিমানে পা দেয়ার আগে বুকের বাম দিকটা ব্যথা করছে।চারদিক ঝাপসা লাগছে।আমার,জ্বরটা বোধ হয় আবার আসছে।

'সমাপ্ত'
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই অক্টোবর, ২০১৮ সন্ধ্যা ৬:০২
৫টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বিসিএস দিতে না পেরে রাস্তায় গড়াগড়ি যুবকের

লিখেছেন নাহল তরকারি, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৫৫

আমাদের দেশে সরকারি চাকরি কে বেশ সম্মান দেওয়া হয়। আমি যদি কোটি টাকার মালিক হলেও সুন্দরী মেয়ের বাপ আমাকে জামাই হিসেবে মেনে নিবে না। কিন্তু সেই বাপ আবার ২০... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। আমের খাট্টা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫৪



তাতানো গরমে কাল দুপুরে কাচা আমের খাট্টা দেখে ব্যাপারটা স্বর্গীয় মনে হল । আহা কি স্বাদ তার । অন্যান্য জিনিসের মত কাচা আমের দাম বাড়াতে ভুল করেনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ডাক্তার ডেথঃ হ্যারল্ড শিপম্যান

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:০৪



উপরওয়ালার পরে আমরা আমাদের জীবনের ডাক্তারদের উপর ভরশা করি । যারা অবিশ্বাসী তারা তো এক নম্বরেই ডাক্তারের ভরশা করে । এটা ছাড়া অবশ্য আমাদের আর কোন উপায়ই থাকে না... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার ইতং বিতং কিচ্ছার একটা দিন!!!

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:০৩



এলার্ম এর যন্ত্রণায় প্রতিদিন সকালে ঘুম ভাঙ্গে আমার। পুরাপুরি সজাগ হওয়ার আগেই আমার প্রথম কাজ হয় মোবাইলের এলার্ম বন্ধ করা, আর স্ক্রীণে এক ঝলক ব্লগের চেহারা দেখা। পরে কিছু মনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

কে কাকে বিশ্বাস করবে?

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৩৯


করোনার সময় এক লোক ৯৯৯ এ ফোন করে সাহায্য চেয়েছিল। খবরটা স্থানীয় চেয়ারম্যানের কানে গেলে ওনি লোকটাকে ধরে এনে পিটিয়েছিলেন। কারণ, ৯৯৯ এ ফোন দেওয়ায় তার সম্মানহানি হয়েছে।

সমাজে এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×