somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ভুলের মাশুল.....( ছোটগল্প)

১৯ শে জুলাই, ২০১৮ দুপুর ২:৫৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

মাথার উপরে সূর্যটা সমানে উত্তাপ ঢেলে যাচ্ছে।বাতাসে যেন আগুনের হল্কা।তিনদিনের ভ্যাপসা গরমে মানুষজন কেমন অস্থির হয়ে উঠেছে।এই সময় যদি আকাশটা ঘন কালো মেঘে আচ্ছাদিত হয়ে; হঠাৎ বিদ্যুৎতের ঝলকানি দিয়ে; প্রবল বর্ষণে উত্তপ্ত প্রকৃতিকে ভিজিয়ে শীতল করে দিতো।চতুর্থ বর্ষের শেষ পরীক্ষা ছিলো আজ।টানা চার ঘন্টার পরীক্ষা শেষে কলেজ গেটের সামনে তিথির জন্য দাঁড়িয়ে আছি।

আফা! ওর শীর্ন হাতটি বাড়িয়ে দিলো ছয়-সাত বছরের ছেলেটি।চেহারায় প্রচন্ড মায়া।আমার খারাপ লাগছিলো না করতে।তবু বললাম,হবে না।
কিছু দ্যান না,আফা!

বাসা থেকে বেরোনোর সময় পার্সে একশ পঞ্চাশ টাকা ছিলো।আসার সময় পঞ্চাশ টাকা তিথি আর আমার দুজনের বাস ভাড়া দিয়েছি।এখন আমার কাছে একশ টাকার একটা নোটই অবশিষ্ট আছে।যাওয়ার ভাড়া বাদে বাকি টাকায় আমি আর তিথি দুজনে আইসক্রিম খাবো।খুচরা না থাকায় মহা মুশকিলে পড়া গেল।

আফা! সকাল থেকে কিছু খাইনি।শরীলডা ভালা না, কিছু দ্যান।

রাস্তার অপজিটে একটি ছোট বেকারির দোকান।আমি ছেলেটাকে বললাম," আমার কাছে খুচরা নেই; চল ওই দোকান থেকে খুচরা করে দিচ্ছি।" ছেলেটাকে পঞ্চাশ টাকা দিলাম; পঁচিশ টাকায় নিজের জন্য একটা আইসক্রিম কিনলাম।গরমে গলাটা ভীষণ শুকিয়ে গেছে।

স্যরি,একটু দেরি হয়ে গেল।

একটু! পুরা তিরিশ মিনিট তোর জন্য দাঁড়িয়ে আছি।

পরীক্ষা শেষ করে বেরিয়েছি; তখনি চন্দ্রাদের সাথে দেখা আর কথা বলতে বলতে দেরি হয়ে গেল।

তিথির জন্য আর একটা আইসক্রিম নিয়ে ওর হাতে দিলাম।ফরসা দোহারা গড়নের একটি মেয়ে আমাদের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে।আমাদেরই ক্লাসমেট।প্রথম বর্ষে কিছুদিন ক্লাস করেছিলো।তারপর আর কখনও ক্লাসে দেখিনি।পরীক্ষার সময়ে পরীক্ষা দেয়।প্রথম বর্ষের শুরুর দিকে একদিন আলাপ হয়েছিলো।নাম মোহনা।বেশ হাসি খুশি চঞ্চল মনে হয়েছিল সেদিন মেয়েটিকে।কিন্তু তারপর থেকে পরীক্ষার দিনগুলোতে যতবার দেখেছি ওকে কেমন যেন গুটিয়ে রাখে নিজেকে।কারোর সাথেই তেমন কথা বলে না।

এই উত্তপ্ত দুপুরে সিঙ্গাড়া খাচ্ছে ও।খাওয়া শেষ করে পানি খেতে গিয়েই মোহনা বমি করে দিলো।

আরে কি করলেন আপনি! বিরক্ত মুখে বলল, দোকানের কর্মচারী।ক্যাশে বসে থাকা লোকটি বলল,"আপু আপনারা একটু সরে দাঁড়ান।" কর্মচারীর উদ্দেশ্যে বলল,এই জায়গাটা জলদি পরিস্কার কর।আমার হাতে থাকা পানির বোতলটা মোহনার দিকে এগিয়ে দিয়ে বললাম,তোমার চোখে মুখে একটু পানির ছিটা দাও।

আমাদের তিনজনের গন্তব্য এক না হলেও একই রুটে হওয়ায় একই বাসে উঠলাম।মোহনাকে জানালার পাশে বসতে দিয়ে আমি আর তিথি ওর পাশের সিটে বসলাম।ও শূন্য দৃষ্টিতে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে।এতক্ষন পর্যন্ত ও আমাদের সাথে একটা ও কথা বলেনি।

তোমাদের পরীক্ষা কেমন হলো? মোহনা জিজ্ঞেস করল।

ভালোই।তোমার? আমি বললাম।

মোটামুটি।শেষদিকে এসে শরীরটা ভীষণ খারাপ লাগছিলো।গতকাল একটা চাকরির পরীক্ষা ছিলো।পরশু রাতের ট্রেনে ঢাকায় যায়।পরীক্ষা শেষে গতকাল রাতের ট্রেনে আবার ফিরে আসি।সকালে বাসায় পৌঁছে কিছুক্ষণ বাদেই আবার পরীক্ষা দিতে ছুটে আসলাম।দুইদিন ধরে ঠিক মতো খাওয়া দাওয়া হয়নি।তার উপর ঢাকায় যাওয়া আসার সময়ে সাথে ছোট বাচ্চা থাকায় বাড়তি একটা পেরেশানি।

তুমি পরীক্ষার মধ্যে চাকরির পরীক্ষা কেন দিতে গেলে? আর বাচ্চা! কার বাচ্চা?

আমার তিন বছরের একটা মেয়ে আছে।যার দায়ভার বহন করার জন্য আমি ছাড়া এই পৃথিবীতে আর কেউ নেই।বাচ্চার প্রতি দায়িত্ব পালন আর নিজের জীবন চলার জন্য একটা চাকরি আমার বড় প্রয়োজন।তাই ক্লাস পরীক্ষার মধ্যে চাকরির পরীক্ষা দিতে যাওয়া।মোহনা শূন্য দৃষ্টিতে পুনরায় জানালা দিয়ে বাইরের দিকে তাকালো।

আমি মনে মনে ভাবছিলাম হয়তো ওর হ্যাজবেন্ড বেঁচে নেই।কিন্তু ওর বাবা-মা! তাদের কাছে তো কিংবা ওর অন্য কোন আত্মীয়ের কাছে তো ছোট মেয়েটাকে রেখে যেতে পারতো।তুমি খুলনা থেকে ঢাকায় এত দূরে পরীক্ষা দিতে গেলে; কারোর কাছে মেয়েটাকে রেখে যেতে পারতে।

এমন কেউ নেই যার কাছে রেখে যেতাম।একদিন নিজের ইচ্ছায় ঘর ছেড়ে বেরিয়ে এসে যে ভুল করেছিলাম; তার জন্য আজও আপনজনদের কাছ থেকে দূরে সরে আছি।সেদিন বুঝিনি যার হাত ধরে ঘর ছাড়লাম; সেই একদিন আমায় ছেড়ে চলে যাবে।নিজের আসল আপনজনদের অসম্মতিতে একটি অজানা অচেনা মানুষকে আপন করার শাস্তি ভোগ করে চলেছি প্রতিটা মুহূর্ত।

আজ কার কাছে রেখে এসোছো ওকে?

ঘরে তালাবন্দি করে রেখে এসেছি।হয়তো এতক্ষণে কাঁদতে কাঁদতে ক্লান্ত হয়ে ক্ষুধা পেটে নিয়েই ঘুমিয়ে পড়েছে মেয়েটা।

হেল্পার চিৎকার করে বলছে, কেউ নামার থাকলে জলদি নামেন।এখানেই নামতে হবে মোহনাকে।আমাদের বিদায় জানিয়ে ও চলে গেল।আমি তাকিয়ে ছিলাম ততক্ষণ অবধি; যতক্ষণ পর্যন্ত ও আমার দৃষ্টি সীমানার মধ্যে ছিলো।
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে জুলাই, ২০১৮ বিকাল ৩:০০
২৯টি মন্তব্য ২৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কর কাজ নাহি লাজ

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ১৬ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৪


রাফসান দা ছোট ভাই
ছোট সে আর নাই
গাড়ি বাড়ি কিনে সে হয়ে গেছে ধন্য
অনন্য, সে এখন অনন্য।

হিংসেয় পুড়ে কার?
পুড়েপুড়ে ছারখার
কেন পুড়ে গা জুড়ে
পুড়ে কী জন্য?

নেমে পড় সাধনায়
মিছে মর... ...বাকিটুকু পড়ুন

তাঁর বোতলে আটকে আছে বিরোধী দল

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:০৭



সেই ২০০৯ সালে তিনি যে ক্ষমতার মসনদে বসলেন তারপর থেকে কেউ তাঁকে মসনদ থেকে ঠেলে ফেলতে পারেনি। যারা তাঁকে ঠেলে ফেলবে তাদের বড়টাকে তিনি বোতল বন্দ্বি করেছেন।... ...বাকিটুকু পড়ুন

নতুন গঙ্গা পানি চুক্তি- কখন হবে, গ্যারান্টি ক্লজহীন চুক্তি নবায়ন হবে কিংবা তিস্তার মোট ঝুলে যাবে?

লিখেছেন এক নিরুদ্দেশ পথিক, ১৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:২৬


১৬ মে ঐতিহাসিক ফারাক্কা দিবস। ফারাক্কা বাঁধ শুষ্ক মৌসুমে বাংলাদেশে খরা ও মরুকরণ তীব্র করে, বর্ষায় হঠাৎ বন্যা তৈরি করে কৃষক ও পরিবেশের মরণফাঁদ হয়ে উঠেছে। পানি বঞ্চনা এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন

কেউ কি আমার বন্ধু শাহেদের ঠিকানা জানেন?

লিখেছেন জিএম হারুন -অর -রশিদ, ১৬ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:৩৪



কেউ কি আমার বন্ধু শাহেদের ঠিকানা জানেন?
আমার খুবই জরুরি তার ঠিকানাটা জানা,
আমি অনেক চেষ্টা করেও ওর ঠিকানা জোগাড় করতে পারছিনা।

আমি অনেক দিন যাবত ওকে খুঁজে বেড়াচ্ছি,
এই ধরুণ, বিশ-একুশ বছর।
আশ্চর্য্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

আজকের ব্লগার ভাবনা:কথায় কথায় বয়কট এর ডাক দেয়া পিনাকীদের আইডি/পেইজ/চ্যানেল বাংলাদেশে হাইড করা উচিত কি? ব্লগাররা কি ভাবছেন?

লিখেছেন লেখার খাতা, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ১২:১৩



অপূর্ব একজন চমৎকার অভিনেতা। ছোট পর্দার এই জনপ্রিয় মুখকে চেনেনা এমন কেউ নেই। সাধারণত অভিনেতা অভিনেত্রীদের রুজিরোজগার এর একটি মাধ্যম হইল বিজ্ঞাপনে মডেল হওয়া। বাংলাদেশের কোন তারকা যদি বিদেশী... ...বাকিটুকু পড়ুন

×