somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ইতিবাচক শৃংখলা চর্চার মধ্যে দিয়ে শিশুবান্ধব পরিবেশ নিশ্চিত করুন

০৯ ই জানুয়ারি, ২০১২ সকাল ১০:১৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

০১. ইতিবাচক শৃংখলা হলো এক ধরনের অংশগ্রহনমূলক প্রক্রিয়া। এটা কখনও নির্দেশ প্রদান করে না। নিয়মকানুনগুলো সবার সম্মিলিতক্রমে তৈরি হয়। বিভিন্ন পরিপ্রেক্ষিত বিবেচনা করে সমস্যার সমাধানের উপর গুরুত্বারোপ করে। খেলা ও বিভিন্ন ধরনের কৌশল ব্যবহারের মাধ্যমে শিশুদের আগ্রহ ও উদ্দীপনাকে সঠিকভাবে কাজে লাগানো যায় যা শিশুদের দায়িত্বশীল ও দায়বদ্ধ নাগরিক হিসেবে গড়ে তোলে। শিশুবান্ধব পরিবেশ শিশুদের নিজস্ব সমস্যা সমাধানের ক্ষমতাকে বাড়িয়ে দেয়। শিশুদের শিক্ষা দেওয়া ও তাদেরকে লালন-পালন করতে ইতিবাচক শৃংখলা অতীব প্রয়োজন কারন এটা তাদেরকে রক্ষা করবে ও বিকাশে সহায়তা করবে। এছাড়াও এটা একটি শিক্ষামূলক কৌশল হিসেবে কাজ করে।

০২. ইতিবাচক শৃংখলা এমন একটি পরিকল্পিত প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে ছাত্র-শিক্ষকগণ স্বত:স্ফুর্ত উদ্যোগে অংশগ্রহণমূলকভাবে শ্রেণী কার্যক্রম পরিচালনা করে।

০৩. ইতিবাচক শৃংখলা এমন একটি শিক্ষা প্রক্রিয়া যেখানে যে কোন কাজের সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য অর্জন করতে, কার্যকরী দৃষ্টিভঙ্গি/মূল্যবোধ সম্পর্কিত পরিকল্পনা তৈরি করতে এবং সমাধানসমূহ খোঁজার উপর ভিত্তি করে শিক্ষাকার্যক্রম পরিচালিত হয়ে থাকে। জাতিসংঘ শিশু অধিকার সনদ শিশুদেরকে সব ধরণের শারিরীক ও মানসিক নির্যাতন হতে রক্ষার অঙ্গীকার ব্যক্ত করে। এই সনদ শিশুদের সম্মান ও মর্যাদার অধিকারকে স্বীকৃতি দেয়।
”ইতিবাচক শৃংখলা” মূলতঃ শিশুকে যে কোন ধরণের নির্যাতন না করে এবং সম্মান প্রদর্শন করে শিখতে সহায়তা করা হয়। ইহা এক ধরনের শিক্ষামূলক দৃষ্টিভঙ্গি যা শিশুদেরকে যে কোন কাজে সফল হতে, বিভিন্ন তথ্য দিতে এবং তাদেরকে শারিরীক ও মানসিক বৃদ্ধিসাধনে সহায়তা করে।

সকল ধরনের নির্যাতন হতে শিশুর রক্ষা পাওয়ার অধিকার আছে
---- আর্টিকেল- ১৯ (সিআরসি)

ইতিবাচক শৃংখলার মাধ্যমে শিশুদের কার্যকরভাবে প্রতিপালন করা সম্ভব, শিশুর পরিপূর্ণ বিকাশ সম্ভব এবং এর মাধ্যমেই শিশু অধিকার নীতিসমূহ বাস্তবায়ন করা সম্ভব ।

বিদ্যালয় এবং পরিবারে ইতিবাচক শৃংখলা প্রণয়নের টিপস

নিম্নে ইতিবাচক শৃংখলা প্রণয়নের টিপসগুলো আলোচনা করা হলো:

১. শিশুকে মারবেন না
২. শিশুকে পুরষ্কার দিন
৩. বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করুন ( যেমন: ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতা, পিকনিক ইত্যাদির আয়োজন করুন)
৪. নিজস্বতাবোধ সৃষ্টি করুন
৫. শিশুর সাথে সহজ সম্পর্ক তৈরী করুন
৬. শিশুদের কথা মনোযোগ দিয়ে শুনলে তারাও মনোযোগী হয়। তাই তাদের কথা গুরুত্ব সহকারে শুনুন।
৭. শিশুর প্রতি জেন্ডার সংবেদনশীল ভাষা ব্যবহার, আচরন ও পরিবেশ নিশ্চিত করুন
৮. যেকোন পরিস্থিতিতে শিশুর প্রতি ইতিবাচক মনোভাব পোষণ করুন
৯. ছোট হলেও তার মস্তিষ্ক কিছু জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা অর্জন করেছে, সেটাকে সম্মান করুন।
১০. শিশুকে সুযোগ দিন
১১. শিক্ষার্থীদের প্রশ্ন করতে উদ্বুদ্ধ করুন। এতে শিশুরা অনুসন্ধিৎসু হয়ে ওঠে এবং যৌক্তিক আচরণ শেখে।
১২. শিশুর প্রতি শিশুবান্ধব ভাষা ব্যবহার করুন
১৩. শিশুর প্রতি ভাষা পরিবর্তন করুর
১৪. শিশুকে অংশগ্রহনের সুযোগ করে দিন
১৫. শিশুকে নিরাপত্তা বোধ দিন
১৬. সকল শিশুর প্রতি সমান গুরুত্ব প্রদাণ করুন
১৭. মানসিক বৈশিষ্ট অনুযায়ী প্রতিটি শিশুর সাথে ভিন্ন ভিন্ন আচরণ করুন
১৮. শিশুর সাথে বিস্তারিত কথা বলুন
১৯. শিশুর কাজের প্রশংসা করুন
২০. শিশুদের নিয়ে স্বপ্ন দেখুন এবং তা শিশুদের মধ্যেও প্রবাহিত করুন
২১. শিশুকে প্রশ্নোত্তরের মাধ্যমে জেনে নিন যে আপনার কথা সে বুঝতে পেরেছে কি না
২২. শিশুকে ছোট খাট দায়িত্ব দিন
২৩. শিশু যেখানে থাকবে বা শিশুর শ্রেণী কক্ষ শিশুবান্ধব উপকরণ দিয়ে সাজিয়ে দিন
২৪. ফলোআপ প্রক্রিয়া চালু করুন

ইতিবাচক শৃংখলার ফলাফল :

সামাজিক ফলাফল :
০১. শিশুর অধিকার রক্ষিত হয়।
০২. বয়স্কদের প্রতি বিশ্বাস বৃদ্ধি পায়।
০৩. শিশুদের নাগরিক হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
০৪. কর্তৃত্বপরায়ণতা ও সম্মানবোধের মধ্যে একটা যোগসূত্র বিদ্যমান থাকে।
০৫. সহযোগিতামূলক মনোভাব তৈরি হয়।
০৬. সম্পর্কের মধ্যে সহিংসতা থাকে না।
০৭. যোগাযোগের দক্ষতা বৃদ্ধি পায় (যেমন-শোনা, প্রকাশ করা, ক্ষমা করা)।
০৮. সমঝোতার কৌশল বৃদ্ধি পায়।
০৯. শিশুদের মধ্যে সমস্যা সমাধানের দক্ষতা বৃদ্ধি করে।
১০. বিশ্লেষণাত্মক ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।
১১. সামাজিক বিষয়সমূহ সমন্বয় করার ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।

শারীরিক ফলাফল :

০১. সুরক্ষা নিশ্চিত হয়
০২. সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত হয়।

মানসিক ফলাফল :
০১. আত্ম-বিশ্বাস বৃদ্ধি পায়।
০২. আত্ম-সম্মান ও আত্ম-উপলব্ধি বৃদ্ধি পায়।
০৩. উত্তম সম্পর্ক তৈরি হয়।
০৪. নিরাপত্তার অনুভূতি তৈরি হয়।
০৫. আবেগ নিয়ন্ত্রন করার ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।
০৬. আত্ম-নিয়ন্ত্রিত হবার সম্ভাবনা বৃদ্ধি পায়।
০৭. শিখনের গতি বাড়ে।

বিদ্যালয়ে ইতিবাচক শৃংখলার ফলাফল:

০১. মনোযোগী থাকে
০২. শিখন স্থায়ী হয়
০৩. ইতিবাচক মূল্যবোধ তৈরি হয়
০৪. শিখন অর্জন সহজ হয়
০৫. সক্রিয় অংশগ্রহণ বৃদ্ধি পায়
০৬. বিদ্যালয়ের প্রতি আগ্রহী হয়
০৭. শিশুর আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধি পায়
০৮. শিশুরা নিরাপদ বোধ করে ও শিশুবান্ধব পরিবেশ তৈরী হয়
০৯. কাজ করতে উৎসাহী হয়
১০. উদার প্রকৃতির হয়
১১. ছাত্র/ছাত্রী ও শিক্ষকের মধ্যে সুসম্পর্ক গড়ে ওঠে। এর ফলে ভয়ের সম্পর্ক থাকে না

সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই জানুয়ারি, ২০১২ বিকাল ৩:১১
২২টি মন্তব্য ২২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বিসিএস দিতে না পেরে রাস্তায় গড়াগড়ি যুবকের

লিখেছেন নাহল তরকারি, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৫৫

আমাদের দেশে সরকারি চাকরি কে বেশ সম্মান দেওয়া হয়। আমি যদি কোটি টাকার মালিক হলেও সুন্দরী মেয়ের বাপ আমাকে জামাই হিসেবে মেনে নিবে না। কিন্তু সেই বাপ আবার ২০... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। আমের খাট্টা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫৪



তাতানো গরমে কাল দুপুরে কাচা আমের খাট্টা দেখে ব্যাপারটা স্বর্গীয় মনে হল । আহা কি স্বাদ তার । অন্যান্য জিনিসের মত কাচা আমের দাম বাড়াতে ভুল করেনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ডাক্তার ডেথঃ হ্যারল্ড শিপম্যান

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:০৪



উপরওয়ালার পরে আমরা আমাদের জীবনের ডাক্তারদের উপর ভরশা করি । যারা অবিশ্বাসী তারা তো এক নম্বরেই ডাক্তারের ভরশা করে । এটা ছাড়া অবশ্য আমাদের আর কোন উপায়ই থাকে না... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার ইতং বিতং কিচ্ছার একটা দিন!!!

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:০৩



এলার্ম এর যন্ত্রণায় প্রতিদিন সকালে ঘুম ভাঙ্গে আমার। পুরাপুরি সজাগ হওয়ার আগেই আমার প্রথম কাজ হয় মোবাইলের এলার্ম বন্ধ করা, আর স্ক্রীণে এক ঝলক ব্লগের চেহারা দেখা। পরে কিছু মনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

কে কাকে বিশ্বাস করবে?

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৩৯


করোনার সময় এক লোক ৯৯৯ এ ফোন করে সাহায্য চেয়েছিল। খবরটা স্থানীয় চেয়ারম্যানের কানে গেলে ওনি লোকটাকে ধরে এনে পিটিয়েছিলেন। কারণ, ৯৯৯ এ ফোন দেওয়ায় তার সম্মানহানি হয়েছে।

সমাজে এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×