somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

জামাতী মৌলবাদ আর বাংলাদেশী পুঁজিবাদ

২৮ শে আগস্ট, ২০২২ রাত ২:৩৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

পুঁজিবাদের সারমর্ম হলো মুদ্রার গতিশীলতা দ্বারা চালিত ঋণ সৃষ্টি করা; আর ধর্মের সারাংশ হলো বিশ্বাসকে শুদ্ধ করা। পুঁজিবাদ বিশ্বজুড়ে বহু মানুষের বিশ্বাস হিসাবে সনাতন ধর্মগুলোকে প্রতিস্থাপন করেছে। ১৯২১ সালের ‘ধর্ম হিসাবে পুঁজিবাদ’ নামে পরিচিত ওয়াল্টার বেঞ্জামিনের সমালোচনার দিন থেকে আজ পর্যন্ত কিছু কিছু পরিবর্তন আসলেও রূপরেখাটি অনেকাংশে একই রকম। পুঁজিবাদের জন্য একজন সর্বশক্তিমান সত্ত্বাকে বিশ্বাস করতে হবে। এই ভয় দেখিয়েই দোকান খোলা হয় ঢাকায়, বোরকা'র, আবায়া'র। আবহাওয়া খারাপ, আমাদের গণপ্রজাতান্ত্রিক-সাংষ্কৃতিক পশ্চাদদেশটা অটুট নেই — সমাজবিজ্ঞানী ম্যাক্স ওয়েবার বলে থাকলেও, পুঁজিবাদী ধর্ম আসলে বিভ্রান্তি দূর করেনি — বরং এটি বিভ্রান্ত করেছে। বিশ্বকে তার অন্তর্নিহিত পবিত্রতা থেকে বঞ্চিত করার পরিবর্তে, পুঁজিবাদ সেটাকে বিকৃত করেছে।

কেউ কেউ বলে টাকাপয়সাই সব, যা একজনকে অন্যের উপর ক্ষমতা দিতে পারে, যতক্ষণ না কে মরে এবং কে বাঁচে তা নির্ধারণ করাটা বিবেচ্য বিষয়। অন্যরা অ্যাডাম স্মিথের মত ‘অদৃশ্য হাত’-এর উপর আঁকেন এক কাল্পনিক-পৌরাণিক ‘বাজার’, যা আসলে এমন এক সবজান্তা-সর্বজ্ঞানী অলৌকিক স্বত্ত্বা যেটা মানুষের হস্তক্ষেপ ছাড়াই সর্বোত্তমভাবে সয়ংক্রিয়। এখানে লক্ষণীয় বিষয় যে, স্মিথের অদৃশ্য হাত ধর্ম এবং ধর্মনিরপেক্ষ মতবাদের মধ্যবর্তী সংযোগস্থলে বিরাজ করে, যে কারণে এটাকে উভয় উপায়েই মর্মার্থ করা সম্ভব— বাজার অর্থনীতি প্রাচুর্য্যের স্বর্গে নেওয়ার লোভ দেখিয়েই বোকা সমাজে প্রজাতিকে লক্ষ্মী নামাজে নামায়...

পুঁজিবাদকে ধর্ম হিসাবে প্রতিমান করার আরেকটি কারণ হলো: বর্তমানের অর্থনৈতিক বিশেষজ্ঞদের ‘ধর্মতত্ত্ববিদদের’ অনুরূপ ভূমিকা পালন করা। তারা শুধু পুঁজিবাদের মূল মতবাদ নিয়েই বিতর্ক করে না, এবং তারা শুধু নতুন প্রশাখা বা ঘরাণা তৈরি করেই ক্ষ্যান্ত হয় না, বরং তারা সরকারকেও একইভাবে পরামর্শ দেয় যেভাবে পুরোহিত, যাজক, ইমাম এবং ধর্মতাত্ত্বিকরা অতীতের সরকারগুলিকে পরামর্শ দিতেন বা এখনো কোনো কোনো জায়গায় দিয়ে থাকেন। অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠানগুলো এদের উপাসনালয়। একটা রাষ্ট্রকাঠামো আর তার রাজনৈতিক প্রথাগুলো যদি এতটাই কোনো একক ধর্ম দ্বারা প্রভাবিত হতে থাকে, তাহলে সংবিধিবদ্ধ ধর্মনিরপেক্ষতারও আসলে কোনো কার্যকারিতা বা প্রয়োজনীয়তা কোনোটাই থাকে না।

এমন তুলনার প্রধান সমস্যা হলো যে তা সাদৃশ্যতার ভিত্তিতে যুক্তি প্রণয়ন করে: আসলে পুঁজিবাদ যে কিছু ক্ষেত্রে ধর্মব্যবস্থার সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ বা সমআচরণ করে তা-ই এমনতর ধারণা দেয়। তবে কেন এটা কোনো সমস্যা? প্রথমত, সাদৃশ্যতা বা প্রায়সমতা থেকে একই বা পুরোপুরি সমান হওয়ার ধাপটি স্পষ্ট নয়। দ্বিতীয়ত, এটি ধর্মকে অগ্রাধিকার দেয়। এটি ঐতিহাসিক বাস্তবতা দিয়ে শুরু হওয়া ধারণা যে, ধর্ম পুঁজিবাদের চেয়ে অনেক পুরানো — নিজস্ব অধিকারে সত্য — আর এই সমস্যাযুক্ত ধারণা মতে, ধর্মই নির্ধারণ করে পরবর্তীতে কী আসবে। তৃতীয়ত, এটি ভাবনাতেই আনে না যে, পুঁজিবাদ ও ধর্ম কিছু উপায়ে একে অপরের মতো বলে মনে হতে পারে কারণ দু্টোই বৃহৎ মাপের সংগঠন, আন্দোলন এবং সমাজব্যবস্থার কিছু সাধারণ বৈশিষ্ট্যকে ধারণ করে নেয়। আমাদের পুঁজিবাদী বিভ্রান্তির প্রকারভেদে আমরা বাজারকে ঐশ্বরিক অনুগ্রহের লক্ষণ হিসেবে বিবেচনা করি, উদ্যোক্তাদেরকে ঈশ্বরের অভিষিক্ত হিসাবে এবং অর্থনীতিবিদদেরকে বিবেচনা করি ভাববাদী হিসেবে যারা ঈশ্বরের ইচ্ছা প্রকাশ করে।

প্রতীক বা প্রতিমা'র দ্বারা কীভাবে ক্ষমতা স্থানান্তরিত হয় তা বুঝতে পারাটা অলীক, কল্পনার একটি বিষয়; কিন্তু পণ্য দ্বারা অর্জিত হওয়া ক্ষমতা, অতিবাস্তব। যাইহোক, ধর্মের অর্থনৈতিক প্রয়োগ ও এই সম্পর্কিত দৃষ্টিভঙ্গি অর্থনীতি'র একসারি পূর্বানুমান ও বিশ্লেষণের উপর সম্পূর্ণরূপে নির্ভরশীল। অর্থনৈতিকসাম্রাজ্যবাদসমৃদ্ধ বাংলাদেশে এই ধরনের বিশ্লেষণ পুঁজিবাদের ধ্রুপদী অর্থনৈতিক তত্ত্ব দিয়ে শুরু হয় এবং এটিকে অনুসরণ করে নব-শাস্ত্রীয় অর্থনীতির বিকাশ পর্যন্ত। এমতাবস্থায় পূর্ববর্তী ধ্রুপদী তত্ত্বের নৈতিক ও রাজনৈতিক কাঠামো ‘বিজ্ঞানের’ নামে বাদ দেওয়া হয়। গণিত প্রয়োগ করা হয়, সংখ্যাগুলি হিসাব করা হয়, ছক তৈরি করা হয় এবং আপাতদৃষ্টি'র বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা তৈরি করা হয়। উন্নয়নের নামে আমরা গণতন্ত্রের থেকে ছাড় দেই। বিডিআর-এর বড়ভাইবাহিনীকেও দেই আনসারের সমকক্ষ ভাড়াটে মর্যাদা। ফলাফল হলো এমন এক অনৈতিকরাজসামাজিক বিশৃঙ্খলা যা মানবিক ধর্মনিরপেক্ষতার জায়গা থেকে সরে আসে, বা অন্তত ভুলদাবি করতে থাকে যে, সরে আসেনি। এমন দেশব্যবস্থায় বিশ্বকে অনুধাবনের চেয়ে গ্রহটাকে ব্যাখ্যা করা হয় নিজস্ব স্বার্থান্বেষী চাহিদায়। তাই বাংলাদেশে ধর্মও একটা পণ্য।

তা সত্ত্বেও, স্বাধীন বাংলাদেশের যাত্রা শুরু হয়েছিল কিছুটা আশাবাদ ও স্পষ্টতার মধ্যে। ১৯৭২ সালের সংবিধান দ্ব্যর্থহীনভাবে সম্পূর্ণ প্রত্যাশিত ধর্মনিরপেক্ষতাকে রাষ্ট্রের চারটি ভিত্তিস্তম্ভের একটি হিসেবে গ্রহণ করেছিল। ৭২ থেকে বিকৃত হওয়া বাংলাদেশের বর্তমান সংবিধান অনুযায়ী: ‟রাষ্ট্র হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান এবং অন্যান্য ধর্ম পালনে সমান মর্যাদা ও সমান অধিকার নিশ্চিত করবে।” যাইহোক, সমস্ত ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের জন্য দেশের পরিবেশ আরও কঠিন হয়ে উঠেছে। একটি ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রের মূল ধারণাটি রাজনৈতিক ইসলামপন্থীদের দ্বারা আক্রমণের মুখে আর ক্ষমতাসীনরাও উদাসীনভাবে আগ্রহী এবিষয়ে, যারা হিংসাত্মক শাসন না হলেও অন্তত ইসলামী শরিয়া শাসন চায়। এইসব চরমপন্থীরাই অন্য ধর্মকে নিঃশেষ করে দেবে।

বাংলাদেশের ক্রমবর্ধমান মৌলবাদ অনেক কারণকেই প্রতিফলিত করে। বিশেষ করে শিক্ষা একটি গুরুতর সমস্যা। ইসলামপন্থী সমর্থন চেয়ে, সরকার স্কুলের পাঠ্যপুস্তককে ইসলামীকরণ করেছে এবং মাদ্রাসাগুলি থেকে শিক্ষাগত মর্যাদা উন্নীত করেছে, যা রাষ্ট্রীয় নির্দেশিকা অনুসরণ করেনি। রাষ্ট্রীয় শিক্ষা ব্যবস্থার ব্যর্থতার কারণে আরও বেশি সংখ্যক শিশুকে ইসলামিক ধর্মীয় বিদ্যালয়ে পাঠানো হচ্ছে, যার অনেকগুলোই সৌদি আরব এবং পশ্চিম এশিয়া থেকে অর্থ ও বুদ্ধি দ্বারা সমর্থিত। যা আফগানিস্তানের তালেবানের পথ ধরে বাংলাদেশকে ‘শুদ্ধ করার’ নাম করে সংস্কারপন্থী সুন্নি মুসলমানদের অসহিষ্ণু, আগ্রাসী এবং উগ্রপন্থী প্রান্তের দিকে পরিচালিত করেছে।

এছাড়াও দায়ী কমবয়সী জনসংখ্যা'র বৃদ্ধি ও কর্মসংস্থানের অভাব, নগরায়ন এবং তিক্ত রাজনৈতিক বিভাজন। প্রকৃতপক্ষে, অনেক বাংলাদেশি বিদেশে কাজ করে, বিশেষ করে পশ্চিম এশিয়া এবং পারস্য উপসাগরে। অনেকেই যারা কর্মরত ছিল সেখানে, স্থানীয় সংস্কৃতিকে দত্তক নিয়ে ফিরে আসে। তারা স্বীকৃতির বাইরে প্রায় পুরোপুরি পরিবর্তিত হয়ে দেশে ফেরে, এক অসহিষ্ণু ওহাবি ধরনের ইসলামকে সমর্থন করে যা বেশিরভাগ বাংলাদেশির কাছে বিজাতীয়।

আর দুই নেতৃস্থানীয় দলের মধ্যে তিক্ত রাজনৈতিক লড়াই, যা বাংলাদেশের অতীতের বিবাদমান পারিবারিক-রাজবংশীয়-মনোভাবের সাথে যুক্ত; গণতন্ত্রের প্রতি কোনো দায়িত্ব ও প্রতিশ্রুতি ছাড়াই রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা তৈরি করেছে। এটি কট্টর-ইসলামপন্থী দলগুলোর ভূমিকা বাড়িয়েছে, যাদের মধ্যে বেশকিছু আবার সহিংসতায় লিপ্ত ছিল এবং এখনো আছে। এমনকি নামমাত্র ধর্মনিরপেক্ষতাবাদীরাও ইসলামিক উগ্রবাদকে উৎসাহিত করছে। বর্তমান সরকার, যারা খাতাকলমে ধর্মীয় চরমপন্থাকে অস্বীকার করে, তারাও সহিংসতার এই প্রবণতাকে ব্যবহার করছে নিজেদের শাসন ও রাজনৈতিক ক্ষমতাকে আরও বৃদ্ধি করতে। প্রকৃতপক্ষে, পেশাদারভাবে ধর্মনিরপেক্ষ এবং গণতান্ত্রিক প্রমাণপত্রাদি সত্ত্বেও, বর্তমান বাংলাদেশের শাসনযন্ত্র অন্তত নির্মোহভাবে মৌলবাদী উদ্যমের বিকাশ ঘটতে দিচ্ছে। সাম্প্রতিক সহিংসতার পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ সরকারের বাস্তব-প্রতিক্রিয়া'র ইতিহাস খুব একটা স্বস্তি দেয় না।

বাংলাদেশে সম্প্রতি জামাতী ও হিজাবী'র সংখ্যা বেড়ে যাওয়াটা আসলে একদিনে ঘটেনি। মুক্ত-বাজার অর্থনীতি এবং মৌলবাদ সর্বদাই এই অনন্য বাংলাদেশের জমজ স্তম্ভ ছিল না। ইসলামিক পণ্যের বিক্রি বাড়ানোর জন্য দেশটায় ঘটছে অনেকদিনের ষড়যন্ত্র-প্রচেষ্টা। চার শতাব্দী জুড়ে চলমান অর্থনীতি এবং ধর্মের ধারণা এবং ঘটনাগুলির অগ্রগতি এবং মিথস্ক্রিয়াকে একসাথে চিত্রিত করা জটিল পটচিত্র আজকের এই জামাতী পুঁজিবাদ। আর বর্তমান গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ রাষ্ট্র হিসাবে একটি নৃশংস দৈত্য যে দশকের পর দশক পদ্ধতিগতভাবে ধর্ম ও জাতিগত পরিচয়ের উপর ভিত্তি করে হাজার হাজার সংখ্যক, অসংখ্য মানুষকে প্রাণবন্তভাবে হত্যা, ধ্বংস করেছে— এবং তা করেছে ব্যাপক অর্থনৈতিক এবং সামরিক মাধ্যমে, পন্থায়, অর্থনৈতিক চিন্তাধারার বিবর্তনে ধর্মের ভূমিকাকে লক্ষ্যবিন্দু ধরে। আর এই দালালের ভূমিকা পালন করাটা সাহায্য করেছে দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ায় যুক্তরাষ্ট্র আর ভারতীয় সাম্রাজ্যবাদের বিস্তার। বাংলাদেশের ইসলামী মৌলবাদ আর ভারতের হিন্দু জাতীয়তাবাদ আসলে পিঠ চুলকাচুলকিকরা পুঁজিবাদের ফসল।

আমার সমাজতান্ত্রিক দৃষ্টিকোণ থেকে, ডোনাল্ড ট্রাম্প বা বরিস জনসন অথবা তাদের ক্ষুদ্র সংস্করণ মোদী বা ধন্যবাদমাননীয়, অনেক বড় এক অস্থিরতার লক্ষণ মাত্র। সাম্প্রতিক বাজার পতনের পর এই এতগুলো বছরে, পুঁজিবাদ এখনও সমৃদ্ধির আরেকটি জনপ্রিয় কাঠামো বা রূপরেখা উপস্থাপন করতে পারেনি। লোভ পূরণের অভাব থেকে তৈরি শূন্যতা ফ্যাসিবাদকে অবলম্বন করে। এবং এই সংকটটি বিশ্বব্যাপী দেখা যায়, কেবল আমেরিকান বা ইউরোপীয় না, এই বালছাল ঝামেলা এমনকি আমাদের দেশেও রয়েছে। এই রাজনীতিবিদরা পেশাদার বানোয়াট শিল্পী হতে পারে কিন্তু আমরাই ছিন্নমূল। এরা শ্রমিক শ্রেণীর স্থবির আর্থিক সম্ভাবনার চূড়ান্ত পরিণতি। ক্রমবর্ধমান উৎপাদন বনাম কৃষি কর্মের ক্ষতি এবং মধ্যবিত্ত মর্যাদা হিসাবে পরিচিত আনুপাতিক অংশীদারিত্বের পতনের দ্বারা শ্রমিক শ্রেণীর দারিদ্র্য গত ৪০ বছরে একই সাথে সমান্তরালে ঘটেছে। পরিহাসের বিষয় হল, এইসব অনুষঙ্গের প্রাথমিক সংমিশ্রণই ১৯৩০-এর দশকের পর থেকে ইউরোপে ফ্যাসিবাদের ফসল সংগ্রহ ও বিকাশের ক্ষেত্রে প্রধান অবদানকারী ভূমিকা পালন করেছিল।

রাষ্ট্র কর্তৃক নিপীড়িত কোন একজনের মানদন্ডে জনগনের প্রজাতন্ত্রকে জনসংখ্যার বাকি অংশের সাথে সমতুল্য করার প্রবণতা থাকে, থাকতে পারে — এটা স্বাভাবিক-প্রাকৃতিক, কিন্তু সম্পূর্ণরূপে ভুল আর বিপর্যয়কারী। জনগণ কেবল সংকীর্ণভাবে সংজ্ঞায়িত অর্থনৈতিক ব্যক্তিস্বার্থের অনুসরণকারী নয়, কখনও কখনও তারা আত্ম-ধ্বংস পর্যন্ত চলে যায়। ধর্ম এবং পুঁজিবাদের একযোগে উত্থান এইসব অযৌক্তিকভাবে বাছাইকৃত পছন্দগুলিকে আত্মসম্মান এবং অন্তর্দৃষ্টির সাথে উপলব্ধি করার কল্পচিন্তা জাগায় তাদের মনে। চরিত্র গঠনের জন্য ধর্মীয় ধারণার শক্তি প্রদর্শন করে তারা এবং ফলস্বরূপ ভেলকিবাজ নীতিনির্ধারকদের ফাঁকাবুলিতে সমর্থন দেয়। যদি মানবসম্প্রদায় তাদের আকাঙ্ক্ষাগুলিকে সঠিকভাবে সাজাতে পারে, তাহলে দেখতে পাবে যে অবাধ এবং শান্তি-ই পৃথিবীর প্রকৃত রূপ, পুঁজিবাদী অর্থনীতির সৃষ্টিতত্ত্বকে গাঁজন করে এমন মানসিক অভাব এবং তার থেকে সৃষ্ট সহিংসতা নয়।

পৃথিবীর কোন দেশই ধর্মীয় রাষ্ট্র হওয়ার অধিকার রাখে না। না বাংলাদেশ, না ইজরায়েল, ইরান, ফাকিস্তান, উগান্ডা... কোথাও কেউ না। স্বনির্ধারণের অধিকার মানেই সীমানার ভিতরে যে কোনও ব্যক্তির বিরুদ্ধে জাতি, বর্ণ, ধর্ম, লিঙ্গ, যৌনতা ভিত্তিক বৈষম্য করার অধিকার নয়। রাষ্ট্রীয় অন্যায়ের বিরুদ্ধে যেকোনো ধরনের লড়াইয়ের জন্য যা একেবারে অপরিহার্য তা হলো প্রতিটি ধর্মান্ধতার বিরুদ্ধেও লড়াই করা। যদি এই পৃথিবীর জন্য কোনো আশা বাকি থাকে, তাহলে আমাদের প্রত্যেকেরই নিষ্ঠুরতার বিরুদ্ধে এরকমভাবে লড়াই করা উচিত যেমনটা আমাদের নিজেদের জন্যও হতে পারতো অথবা হবে ভাবতে চাই...
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে আগস্ট, ২০২২ রাত ৮:৫২
১১টি মন্তব্য ১১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ডালাসবাসীর নিউ ইয়র্ক ভ্রমণ

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ২:৪৪

গত পাঁচ ছয় বছর ধরেই নানান কারণে প্রতিবছর আমার নিউইয়র্ক যাওয়া হয়। বিশ্ব অর্থনীতির রাজধানী, ব্রডওয়ে থিয়েটারের রাজধানী ইত্যাদি নানান পরিচয় থাকলেও আমার কাছে নিউইয়র্ককে আমার মত করেই ভাল ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×