গরুর হাটের এবারের চীত্র কেমন হচ্ছে সেটা বুঝতে চোখ রেখে চলেছি বিভিন্ন ইলেকট্রনিক মিডিয়ার উপর। গত রাত পর্যন্ত যেটুকু রিফ্লেকশন পেলাম তাতে বুঝলাম গরুর হাট বা পশুর হাট এখনো অব্দি আশানুরুপ জমে ওঠেনি। বিক্রেতা ও ক্রেতা উভয়ের মধ্যে এক ধরণের হতাশা বিরাজমান।
বিক্রেতাদের চোখে মুখে হাসি খুশির কোন ছাপ লক্ষ্য করিনি। ক্রেতা গনও তেমন সম্তুষ্ট চিত্তে কোন মন্তব্য করছেন না। তবে সাংবাদিকদের সূ্ত্রে জানা যায় যে, বড় গরুর ক্রেতা বা চাহিদা বেশ কম। মাঝারি বা ছোট গরুর প্রতি ক্রেতাগনের আগ্রহ বেশী।
বিক্রেতাগন বলছেন পশু খাদ্যের যে আকাশ ছোঁয়া দাম, তাতে তাদের লালন পালনে অনেক খরচ পড়েছে। এর পাশাপাশি রাস্তায় রাস্তার চাঁদাবাজির প্রভাব গরুর মূল্যকে বাড়িয়ে দিচ্ছে। অপরদিক ক্রেতাগনের বক্তব্য তাদের বাজেটের চেয়ে অনেক বেশী দাম চাচ্ছেন বেপরীরা। তাই তারা পছন্দ মতো কিনতে পারছেন না। চট্টগ্রামের একজন ক্রেতা বল্লেন কেনো যেনো তার কাছে মনে হচ্ছে পর্যাপ্ত গরু হাটে উঠাচ্ছেন না বেপারীরা। হয়তো অন্য কোথাও গুরু গুলোকে রেখে একটা কৃত্রিম সংকট সৃষ্টির পায়তারা চলতে পারে।
আমার মতে আমাদের দেশে কোরবানীদাতার সংখ্যা হ্রাস পেয়েছে। অনেকের জমি জিরাত বাড়ি বা ফ্ল্যাট বা অন্যান্য সম্পদ থাকলেও নগদ অর্থের যোগান নাই। হুজুরদের কড়া মাসলা মাসায়েলও কাজে আসছে না। নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসের মূল্য সহ লিভিং কস্ট দিন দিন লাগামহীন উর্ধ গামী হওয়ায় তারা কোরবানীর সক্ষমতা ও আগ্রহ হারাচ্ছেন। যেমন লক্ষ্য করলে দেখা যায় হজ্জ যাত্রীর তুলনায় ওমরাহ যাত্রীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়া। হজ্জ্বে যেতে খরচ আকাশ ছোঁয়া, তাই ঝুকছেন অনেকেই হজ্জ্বের পরিবর্তে ওমরাহ র পথে। রাসুল (সাঃ) এঁর দেশ ও রওজা দেখার সারা জীবনের স্বপ্ন বাস্তবায়নে আর কি বা উপায়!
পশুর লাইভ ওজন এখনকার যুগে পশু ক্রয়ের ক্ষেত্রে বিরাট একটি ক্রাইটেরিয়া। গোশ্ত কতখানি পাচ্ছি সেটা একটা মূখ্য বিষয়। ত্যগের মহিমা ছাপিয়ে ভোগের মহিমা বড় হলে যা হয় আর কি! তবে একজন ক্রেতার বক্তব্য কানে খুব প্রশান্তি দিলো। কোন এক চ্যানেলে একজন ক্রেতা একজন সাংবাদিকের প্রশ্নের উত্তরে বলেন " .. .. কোরবানীর জন্য পশু কিনেছি, ওয়েট বা ওজন কোন বিষয় না।" যারা কোরবানীর পশু কিনতে গিয়ে গোশ্তের হিসাব করেন, আমার মতে তাদের পশু না কিনে ওজন করে কসাই থেকে মন মন গোশ্ত কিনলেই পারে। কষ্ট করে পশুর হাটে ঘোরাঘুরি করা তাদের জন্য শুধুই বিলাসিতা। রোজার মাসে তরমুজ ওজনে বিক্রি করলে যারা ক্ষেপে যান, সেই ক্রেতাগনই কোরবারীতে এসে লাইভ ওজনে কোরবানীর পশু কেনেন। কি আমাদের মানসিক উন্নয়ন!!
বেপারীগন সারা বছর কষ্ট করে পশু লালন পালন করে এই একটি বিশেষ সময়ের দিকে তাকিয়ে। আর এক শ্রেনীর দালাল চক্র তাদের সারা বছরের পরিশ্রমকে পুঁজি করে নিজেদের আখের গোছান। এসব যেনো চিরাচরিত নিয়মে দাড়িয়ে গেছে। দালাল মুক্ত পশুর হাট সকল বেপারীদের স্বপ্ন, তবে সেই স্বপ্ন স্বপ্নই থেকে যায়......
সবার ঈদ ভালো কাটুক, শুভ কামনা। ঈদ মোবারক!