ভারতীয় অভিনেত্রী যাদের কখনো দেখা যায় সত্যের সন্ধানে পুলিশ অফিসার আবার কখনো পুলিশ অফিসারের বৌ। কিন্তু সেই অভিনেতা অভিনেত্রীরা যখন বাংলাদেশে এসে আবার সরকারকে কর ফাকি দিয়ে চলে যায় তখন এর মাধ্যমে নিখুঁতভাবেই তাদের নোংরামীর একটি সুন্দর নমুনা পাওয়া যায়। তারা মুখে বিভিন্ন বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে যতই তাদের সততার নমুনা দেখাক না কেন। তারা যে কতটা অসভ্য আর মিথ্যাবাদী জাাতি তা আমরা বেশ ভালভাবেই জানি। কেননা তাদের মুখে এক কথা আর অন্তরে আছে আরেক কথা।
অভিনেত্রী ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত ঢাকায় এসেছিলেন গত জুলাই মাসে। জার্মান কসমেটিকস লিমিটেড নামের একটি প্রতিষ্ঠান এই শিল্পীকে তাদের পণ্যের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর বা শুভেচ্ছা দূত করার জন্য ঢাকা এনেছিলেন। রাজধানীর এক অভিজাত হোটেলে ২০ জুলাই জাঁকজমকপূর্ণ অনুষ্ঠানে ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত ও বাংলাদেশের অভিনেতা ফেরদৌসকে শুভেচ্ছা দূত হিসেবে ঘোষণা দেওয়া হয়। আর এতে করে সে সম্মানী বাবদ প্রায় ৫ লক্ষ টাকা। কিন্তু বাণিজ্যিক কারণে ঢাকায় এলেও ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত মূলত পর্যটক ভিসায় ঢাকায় এসেছিলেন। তাই জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) থেকে অনুমতি নিতে হয়নি। আর সেজন্য করের অর্থও কেটে রাখার যৌক্তিকতা তৈরি হয়নি তখন।
অন্যদিকে কয়েক মাস আগে একটি জুয়েলারি পণ্যের শুভেচ্ছা দূত হয়ে ঢাকা এসেছিলেন ভারতের আরেক অভিনেত্রী পাওলি দাম। তিনিও পর্যটক ভিসায় ঢাকা আসেন। কিন্তু সেই অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে তিন লাখ টাকা সম্মানী হিসেবে নেন। পযর্টক ভিসায় পাওলি দাম ঢাকায় আসায় তাঁর জন্য এনবিআর থেকে অনুমতি নেওয়া হয়নি।
সুতরাং এখানে স্পষ্ট যে তাদের চরিত্র এমনই। তারা খারাপ মানলাম কিন্তু আমাদের সরকারের তরফ থেকে এ নিয়ে কোন ধরনের উচ্চবাচ্চ নেই কেন? সুতরাং আমাদের অসীম ধৈর্য্য শক্তির কি এক বিড়াট ফায়দা লুটছে এই ভারতীয়রা ? আমার মনে এখন প্রশ্ন একটাই কবে বন্ধ হবে আমাদের সরকারের ভারতীয় দাদাদের পা লেহন?
একটু ভাবুন যদি আমাদের দেশের কোন শিল্পী যাদি এমনটি করত তাহলে তাদের মিডিয়াগুলো আমাদের কি করত? তারা এমনিতেই ছিনিয়ে নিতে পছন্দ করে তাই এমনটি করলে নিশ্চই তারা আমাদের পুরো দেশকেই তুলোধুনা করে দিতে একটুও দ্বিধাবোধ করতো না। কিন্তু কি আশ্চর্য আমরা যাদের মাধ্যমে এইসব খবর পাওয়ার আশা করি সেই সব জাতীয় দৈনিকগুলো কতদিন পর এই সংবাদ পরিবেশন করল। তাহলে কি আমাদের মিডিয়াগুলো কি শক্তিশালী নয়? নাকি তারাও কিছুটা দ্বিধাদন্দে ভুগছে যে এইসব সংবাদ দ্রুত প্রকাশ করা হবেনা পাছে দাদাদের অসম্মান করা হয়ে যায়।
ঋতুপর্ণা ও পাওলির সেই দুটি অনুষ্ঠানের খবরই সংবাদপত্রে প্রকাশিত হয়। তার সূত্র ধরেই এনবিআরের কর্মকর্তারা তাদের অনুষ্ঠানে সম্মানী নিয়েছেন কি না খোঁজখবর নেওয়া শুরু করেন। অন্যদিকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় একটি গোয়েন্দা সংস্থার মাধ্যমে পুরো বিষয়টি তদন্ত করে। আর সেই তদন্ত প্রতিবেদনও এনবিআর সংগ্রহ করে।
এরপর ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত ও পাওলি দামকে যে দুটি প্রতিষ্ঠান ঢাকায় এনেছে, তাদের কর-নথি যাচাই-বাছাই করার উদ্যোগ নেয় এনবিআর। গত সেপ্টেম্বর মাসে এনবিআর কর অঞ্চল-৮, কর অঞ্চল-৯ ও কর অঞ্চল-১১-এর কমিশনার বরাবর চিঠি দেওয়া হয়। প্রসঙ্গত, কর অঞ্চল-৮-এ উত্তরা ও কর অঞ্চল-৯-এ গুলশানের প্রতিষ্ঠানগুলোর কর নথি রয়েছে। আর কর অঞ্চল-১১-এ সব ধরনের উৎসে করের হিসাব থাকে। এদিক থেকে এনবিআরকে অবশ্যই ধন্যবাদ দিতে হয়।
জানা গেছে, নিয়ম অনুসারে এই দুই শিল্পীর পরিশোধিত সম্মানী থেকে ২৫ শতাংশ হারে দুই লাখ টাকা কর হিসেবে কেটে রাখার কথা ওই দুটি প্রতিষ্ঠানের। কিন্তু তা হয় নি। এ প্রসঙ্গে এনবিআরের সদস্য (কর প্রশাসন ও তদারকি) এম এ কাদের সরকার বলেন, ‘বিদেশি শিল্পীদের যে প্রতিষ্ঠান আনবে তাদের কাছ থেকেই কর কেটে রাখা হবে। কেননা অনুষ্ঠান করে চলে গেলে সেই শিল্পীকে আর পাওয়া যাবে না। এ জন্য সর্বোচ্চ ২৫ শতাংশ হারে কর কেটে রাখা হয়।’ তিনি আরও জানান, পযর্টক ভিসায় আসা বিদেশি তারকারা এসে কোনো অনুষ্ঠান করছেন কি না তাও নজরদারিতে রাখা হচ্ছে।
একই ভাবে গত বছর ঢাকায় কনসার্ট করতে আসা ভারতের অভিনেতা শাহরুখ খানের আয়ের ওপর কর কাটতে গিয়ে বেশ কিছু অনিয়ম ধরা পড়ে। কনসার্ট করতে শাহরুখ খান সাধারণত যে পরিমাণ সম্মানী নিয়ে থাকেন, কাগজে-কলমে তারচেয়ে অনেক কম দেখানো হয়। বিষয়টি খতিয়ে দেখতে সে সময় এনবিআর বিশেষ কমিটি গঠন করেছিল। এর পর থেকেই বিদেশি শিল্পীদের অনুষ্ঠানের ওপর বিশেষ নজর রাখছে এনবিআর। কিন্তু এতকিছুর পরও কিভাবে ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত এবং পাওলিদাম কিভাবে এই ধরনের ভুয়া পাসপোর্ট নিয়ে এদেশে এসেছিল সে বিষয়ে প্রশ্ন থেকেই যায়। কেননা যারা একবার চুরি করে ধরা না পরে তার পরবর্তীতে আবার তা করার পায়াতারা করে থাকে। আর তখনি তাদের হাতে নাতে ধরার সুবর্ণ সুজোগ তৈরী হয়।
এনবিআর সূত্রে জানা গেছে, গত দেড় বছরে (মার্চ ২০১১-সেপ্টেম্বর ২০১২) শতাধিক বিদেশি তারকা ও তাঁদের দলবল ঢাকা এসেছে। তাদের প্রায় সাড়ে চার কোটি টাকা সম্মানী দিতে হয়েছে। এর বিপরীতে এনবিআর প্রায় এক কোটি ১২ লাখ টাকা আয়কর পেয়েছে।
বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান মূলত ভারত থেকে কণ্ঠশিল্পী, অভিনেত্রী, মডেলসহ বিভিন্ন ধরনের শিল্প এনে অনুষ্ঠান করে। কোনো অনুষ্ঠান বাণিজ্যিক ভিত্তিতে, আবার কোনোটা বাণিজ্যিক ভিত্তিতে নয়। তবে সম্মানী দিলেই ২৫ শতাংশ আয়কর দিতে হবে।
যেখানে ভারত আমাদের কোন ধরনের সুবিধা দিতে গেলে একশ একটা বিষয়ে ঝামেলা করে সেখানে ভারতীয় নাগরিকদের অবৈধভাবে সবিধা প্রদান করার কোন মানে হয় না। এখনি সময় ওরা আমাদের নিরীহ বাঙ্গালীদের অকারনে হত্যা করে তার বিপরীতে এদের এই ধরনের অবৈধ সুবিধা প্রদান বন্ধ করা। তা না হলে ওদের মন মানসিকতা এমন হবে যে আমরা ওদের ছাড়া অচল জাতী। যা একজন দেশপ্রেমিক কখনই চায় না।
ধন্যবাদ সবাইকে।