তখন আমার দাদি বেঁচে ছিলেন। মোবাইলের খুব একটা প্রচলন ঘটেনি। আমাকে একটা নতুন মোবাইল কিনে দিয়েছিল মামা বিদেশ থেকে যাতে ৩০ সেকেন্ডের মত রেকর্ডিং করা যেত। সেই আমলের জন্য যা ছিল বিরাট কিছু।
একবার দাদির ভিশন অসুখ হল। দাদাকে দেখলাম পাগলের মত হয়ে গেল। কিন্তু দাদার সাথে আমার সম্পর্ক আগে থেকেই ছিল বন্ধুর মত। তাই দাদি যখন হালকা সুস্থ হতে থাকলো তখন দাদার সাথে ভাবলাম একটু মজা করা যাক না।
মোবাইলে নির্দিষ্ট বিরতিতে রেকর্ডিং করলাম। যেটা ছিল অনেকটা এমন যে দাদাকে মোবাইলে একজন জ্বীন বলছে যে সে তার স্ত্রীর অসুখের সমাধান দ্রুত করে দিতে পারবে। আর দাদা ভাবলো যে তার সাথে সত্যি সত্যিই নাকি জ্বীন কথা বলছে কারন সে যা প্রশ্ন করছে তার উত্তরও দিচ্ছে যে। প্রসংগত দাদার বয়স তখনই ৯৫+ ছিল। ফলে মোবাইল ফোন সম্পর্কে ধারণা তার শুন্য ছিল। যা বুঝালাম তাই বুঝল।
তো মোবাইলের জ্বীন দাদাকে নির্দেশনা দিল যে যোহরের নামাজের পর তাকে যেতে হবে এলাকা থেকে কিছুটা দুরে একটা নির্জন স্থানে একটা তাল গাছের নিচে। সে দাদার সাথে সেখানে একটা কিছু উপায় বের করে দেবে।
আমি ছেলেমানুষির ছলে দুষ্টোমিটা করেছিলাম। ভেবেছিলাম দাদা এত কষ্ট করে যাবে না। কিন্তু দাদা তারপর দিন সত্যিই নাকি অনেকটা দুর এই বয়সেও হেটে সেই জ্বীন সন্ধানে বের হয়েছিলেন! যা শুনে নিজের উপরই নিজের যথেষ্ট রাগ হয়েছিলাম।
দাদা আর দাদির সম্পর্ক ছিল প্রায় দীর্ঘ ৫৮ বছরের। অর্থাৎ একজন মানুষের জীবনের চাইতেও খানিকটা বেশি মনে হয়। কিন্তু সেই সম্পর্কেও শেষ দিনটি পর্যন্ত অর্থাৎ দাদি মারা যাওয়ার আগ পর্যন্ত সেই ভালবাসাই দেখি আমি যা আদিকাল থেকেই চলে আসছে। আর এই পবিত্র ভালবাসার একমাত্র ভিত্তিই হচ্ছে আল্লাহ তায়ালা কতৃক প্রদত্ত বিধান বিবাহের মাধ্যমে।
কিন্তু আগামীকাল আসছে বিশ্ব ভালবাসা দিবসের নামে যা হতে যাচ্ছে তা স্রেফ নোংরামি ছাড়া আর কিছুই বলতে পারি না আমি। কারন এই ভালবাসার নেই প্রতিষ্ঠিত সম্পর্ক। তাই আমার দাদা-দাদির সম্পর্ক যেখানে ৫৮টি বছর ছিল প্রথম প্রেমের মতই মধুর সেখানে এই ধরনের সম্পর্ক ৫৮দিন চলে কিনা তাও সন্দেহ।
আমার ঘনিষ্ট বন্ধুটি সেদিন বলছিল নীলক্ষেতে নাকি ওর পরিচিত কোন এক ঔষধ ব্যবসায়ীর ভাল সম্পর্ক আছে। সে নাকি কখায় কথায় বলছে ওর কাছে, এবার তাদের টার্গেট আজকের দিনের জন্য ১.৫ লক্ষ টাকার কনডম+পিল বিক্রি করার। এই হচ্ছে পর্দার আড়ালের ভ্যালেন্টাইনস। শুধু একটা দোকনের চিত্রই এটি। আর সমগ্র বাংলাদেশের কথা বাদই দিলাম।
ও বোন তুমি যে মানুষটিকে কোন ধরনের ভিত্তিহীন সম্পর্কের জন্য সবকিছুই বিকিয়ে দিচ্ছ তোমার সে কি আসলেই তোমাকে এমন ৫৮বছর ভালবাসতে পারবে নাকি ৫৮ঘন্টাতেই শেষ কেরে দেবে তা কেবল তোমরা বুঝতে পার সব শেষ হওয়ার পরেই।
বর্তমানে মিডিয়া যা যা রং দেখাচ্ছে তার সবই আসলে সাদাকালো। রঙ্গিন সম্পর্ক কেবল হতে পারে পবিত্র বিয়ের সম্পর্কই। মিডিয়া যেভাবে যা দেখাচ্ছে তাতে করে সামাজিক চিত্র শুধু খারাপ দিকেই ধাবিত হতে পারে, ভাল দিকে নয়। একটা পরিসংখ্যান ধর্ষনের চিত্রই বলে দিচ্ছে আমাদের কি করে সমাজ খারাপ হয়ে যাচ্ছে দিন দিন। আর এর দায়ভার মিডিয়া কোন ভাবেই শাক দিয়ে এড়াতে পারে না।
কাজেই আসুন আমরা এই ধরনের ভিত্তিহীন সম্পর্কে না করি। পবিত্র সম্পর্ক বিয়েকে হ্যাঁ বলি। আর এই ধরনের পাপাচার থেকে মু্ক্ত জীবন যাপন করে নিজেকে জাহান্নাম থেকে মুক্ত রাখি।