তিন মাস আগে থেকে শুরু করি ! এক বন্ধু গত তিন মাস আগে দেশে গেছে ,যাওয়ার সময় তার বড় ভাই এর সাথে আমাকে পরিচয় করিয়ে দিয়ে গেছে এবং বলেছে তার কোন সমস্যা হলে যেন সহায়তা করি । হুম আমি ব্যাপারটা খুবই স্বাভাবিক ভাবে নিলাম ।বন্ধুর বড় ভাই মানে আমারও বড় ভাই তবে বয়স একটু বেশি ৪০-৪৫ হবে ।আগে বন্ধু আর আমি একই রুমে থাকতাম , কিন্তু সে দেশে চলে যাওয়া এতো বড় বাসা ছেড়ে আমি একটা ছোট বাসা নেই থাকার জন্য , খুব ভালই গেলো কিছুদিন । আসলে একা থাকার মজাই আলাদা । আর আমি একা থাকতে খুবই পছন্দ করি ।
তো কয় দিন পর সেই বন্ধুর বড় ভাই আমার কাছে এসে বললো এখানে কয় দিন থাকবে ! তাই আমি আমার বাসায় নিয়ে তাকে বিছানা করে দিলাম ঘুম যাওয়ার জন্য । বন্ধু বলে গেছে তার ভাই এর যেই কোন বিপদে যেন পাশে দাড়াই ! আর এই টুকু সহায়তা করা তো আর এমন কঠিন কোন কাজ নয় । তো চলছে , আমি ১২-১৩ ঘন্টা কাজ করে বাসায় এসে রান্না-বান্না করি আর উনি বসে বসে খান !ভালো সমস্যা নেই চলছে দিন , এইভাবে প্রায় কেটে গেলো ১৫-২০ দিন ধৈর্য বাধ ভেঙ্গে যাওয়ার অবস্থা কষ্ট লাগে এই লোকের জন্য সারা দিন না খেয়ে বসে থাকে আমি বাসায় কখন যাবো কখন রান্না করবো আর উনি খাবেন দুঃখে কান্দন আহে এই লোকের অবস্থা দেখে , আরে ভাই সারা দিন এইভাবে বসে না থেকে রান্না বসাইয়া দিলেই তো পারো।আমিও কাজ করে ক্লান্ত হয়ে এসে চারটা খাইতাম আমারও একটু ভালো লাগতো । আমি আগে হোটেলে খেয়ে নিতাম । কিন্তু বন্ধুর বড় ভাই এসেছে দুই দিন থাকবে তাই ভালো মন্দ রান্না করে খাওয়াই যাতে বন্ধুর কাছে আমার প্রশংসা করে ! কিন্তু কিয়ের কি ২০ দিনে বেশি হয়ে গেলো এই লোকের যাওয়ার কোন নাম নাই !!
নাহ ধৈর্যে আর কত কুলায় তাই বলেই বসলাম ভাইজান আপনি কবে যাবেন ? উনি বললেন আমার চাকরি চলে গেছে নতুন একটা চাকরির খোজে আছি পেলেই চলে যাবো ।
তার এই কথা শুনে বললাম আপনি তো সারা দিন ঘরেই বসে থাকেন চাকরি কি করে পাবেন ? উনি উওরে বললেন তার দুই তিন জন বন্ধুকে বলে রেখেছে ,তারা তার জন্য চাকরি খোজছে ।
তার পরেও তিন চার দিন গেলো যাওয়ার নাম নাই , আমি তার উপর চর্ম বিরক্ত হয়ে আছি, কিন্তু মুখ ফুটে কিছুই বলতে পারছিনা । তো আর কোন বুদ্ধি না পেয়ে আমি বাইরে গিয়ে হোটেলে খাওয়া শুরু করলাম বাইরে খেয়ে দেয়ে বাসায় গিয়ে দিতাম ঘুম আবার ঘুম থেকে উঠে কাজে চলে আসতাম । এইভাবে কয় দিন যাওয়ার পর দেখি হঠাট একদিন তিনি নাই যাক বাবা অলস মানুষ একটা বিদাই হলো । আমি আর ফোন করে তাকে জিজ্ঞাসও করিনি ভাইজান আপনি কই ?
বেশ কিছু দিন পর হঠাত দেখি তিনি আবার এসে উপস্থিত জিজ্ঞাসা করলাম কই গেছিলেন ?
- তিনি বললেন একটা চাকরি পেয়েছি তাই ওখানে গেছিলাম ।
আমি -ওখানে কোন খানে ?
উনি -আরে ওখানে , চাকরি যেইখানে পেয়েছি !
আমি -আরে যেইখানটা কোন খানে ?
উনি -জায়গার নাম বললেন আর আমি চিন্তা করে দেখলাম আমার এখান থেকে প্রায় ১৬০ মাইল দূরে যাক যত দূরে থাকবে ততই নিরাপদে থাকুম মনে মনে কইলাম তাই তাকে বললাম ভাইজান চাকরি পাইছে এখন কি মিষ্ট খাওয়াতে আইছেন নাকি ?
তিনি আমার এই কথা শুনে বলে না ভাই আর ৫ দিন পর চাকরিতে যোগ দিবো ,তাই এসে গেলাম এখানে কয় দিন থেকে যাই ।
তার এই কথা শুনে কি আর কমু চিৎকার করে কানতে ইচ্ছা করছিল । তার পর ৫ দিন বহুত জ্বালাতন করলেন । তার পর চলে গেলেন । আমিও হাফ ছেড়ে বাচলাম ।
তার পর এক মাসে দুইবার এসে ৫-৬ দিন করে থেকে গেছে একটা বিরক্তিকর মানুষ , সকালে আমি যখন ঘুম যাই তখন তার শত কাজ শুরু হয় কতোক্ষন টয়লেটে যাবে আবার কতক্ষন বাইরে যাবে , মানে যতোক্ষন আমার ঘুম না ভাঙ্গে ততোক্ষন তিনি তাড়ানাড়া করতেই থাকেন । গোসল করে টয়লেটের বালতিতে ময়লা পানি রেখে চলে যাবেন , দুইটা বালতি তার জামাকাপর ভিজিয়ে রাখবেন , চার দিন পর সেই জামাকাপর পরিস্কার করবে !! মানে এতো এতো বিরক্ত করে যায় বলে বুঝানো যাবেনা ।
তার মধ্যে বিরাট এক জামেলা পাকিয়ে বসেছিলেন এক লোক আমাকে বেশ কিছু দিন ধরে ব্লাকমেইল করে যাচ্ছে , আমার ভিসার কিছু জরুরি কাগজ পত্র আটক রেখে আমার কাছে থেকে অনেক অনেক টাকা নিয়েছে ! তিনি যখনই আমাকে ফোন করে তখনই আমার জন্য বড় বিপদ অপেক্ষা করে ।তাই আমি তার মুবাইল রিসিভ করিনা এবং তাকে অনেক দিন আগে বলেছিলাম আমি দেশে চলে যাচ্ছি ! তাই এই সব কাগজ পত্র আর লাগবেনা । এই বলে গত দুই মাস ধরে আমি তার কল রিসিভ করিনা এবং অপরিচিত নাম্বারে কোন কল আসলেও রিসিভ করিনাই গত দুইমাস থেকেই । কিন্তু একদিন আমি ঘুমে ছিলাম আর তখনই সেই লোক আমাকে ফোন দেয় আর বন্ধু বড় ভাই রিসিভ করে কথা বলে আমাকে ঘুম থেকে জাগিয়ে সুন্দর করে ধরা খাওয়ার ব্যবস্থা করে দেয় !!
যাক গেলো সেই কথা । তার পর আবার তার কোন খবর নেই , সুখেই যাচ্ছে আমার দিনকাল কিন্তু গত ৭ রোজায় বাসায় এসে উপস্থিত ! ওমরা হজ্জে যাবে তাই এসেছে । রাত ১০ টার গাড়িতে করে যাবে , কিন্তু এখন ঘুম যাবে তাই রুমের চাবি চাচ্ছে !
দিলাম রুমের চাবি । রাত ৮টার দিকে এসে বলে চাবি হারিয়ে ফেলেছে এইবার কেমন লাগে ! যাক আল্লায় বাচাইতে আরেকটা চাবি আমার কাছে ছিল । তো সেই যে ওমরা হজ্জ করতে গেলো আর আমার সাথে তার দেখা হয়নি ।
উপরের এতো গুলা বিরক্ত গত তিন মাস সহ্য করেছি কিন্তু গতকাল রাতে যা হয়েছে তা বলে বুঝানো যাবেনা । দুপুরে ডিউটিতে এসেই শুনি কোম্পানির কয়েক জন ওমরা হজ্জে যাচ্ছে তাই আজকে আমাকে ১৬ ঘন্টা এক টানা ডিউটি করতে হবে এমনেতেই রোজা তার উপর কাজ করতে অনেক কষ্ট আর তার মধ্যে ১৬ ঘন্টা ডিউটি করতে হবে ! তাও আবার একটানা ! যাক তার পরেও কাজ যেহেতু সহজ সারাদিন বসে বসে ইন্টারনেট গুতানো তো সারা যায় ।
সারা দিন কাজ করলাম ।রাত ৯ টা বাজে আবার বন্ধুর বড় ভাই এসে উপস্থি !! এসে বলে রুমের চাবি দেও যেন তার বাপে রুম ভাড়া করে রেখে গেছে তাই চাবি চাচ্ছে ।
আমি ছোট বেলা থেকেই এই ধরনের অলস লোক খুবই অপছন্দ করি । আর এই জন্যই কোন নেপালি আমাদের কোম্পানিতে আসতে পারেনা , কারন তারা প্রচণ্ড অলস !! বার বার কোম্পানির মালিল নেপালি শ্রমিক আনেতে চায় কিন্তু আমার বাধার কারণে তায় আর হয়ে উঠেনি । যাক তাকে বললাম এর আগে রুমের চাবি নিয়ে হারিয়ে ফেলেছেন এইটা যদি হারাইয়া ফালান তাইলে আমি কিন্তু আজকা ঘুমাইতে পারুমনা । যাক তার পরেও একটু রাগ দেখিয়ে চাবি দিলাম । দাত কামড়িয়ে জিদটা নিজের মাঝেই চাপা দিলাম । তিনি আমার দিকে তাকিয়ে কিছুটা মন খারাপ করে চাবিটা প্যান্টের হুকের সাথে ভালো করে বেধে নিলেন আর বললেন এইবার আর হারাইবোনা
রাত ১২টা বাজে কিন্তু তার কোন খরব নাই , তাই ফোন দিতে নিয়াও দিলামনা । মনে করলাম বেচারা মনে হয় ঘুম যায় আমি ডিউটি শেষ করলাম তখন রাত ২-৪০ মিনিট । হোটেলে বসে বসে হাসের মাংস দিয়ে ভাত খেলাম।খাওয়ার পর মনে হলো মুরব্বি মানুষ আবার হোটেলে এসে ভাত খাবে তাই তার জন্য একটা পার্সেল নিয়ে যাই । তাই তার জন্য একটা পার্সেল নিয়ে গেলাম যাতে খেয়ে রোজা থাকতে পারে !
কিন্তু বাসায় গিয়ে গেট পিটাচ্ছি কোন খবর নাই ! তাই মুরব্বি কে ফোন দিয়া বললাম ভাইজান দরজা খোলেন ,এই বলে লাইন কেটে দিলাম। কিন্তু দরজা তো খোলার নামগন্ধ নাই উলটা উনি আমাকে ফোন দিয়ে বলে ভাইয়া.... আমি তো চাবি সাথে নিয়ে চলে এসেছি , আপনাকে চাবি দিতে মনেছিলনা !!
এইবার কন ম্যাজাজটা কেমন খারাপ হয় ১৬ ঘন্টা ডিউটি করে এসে যদি একটু ঘুমাতে না পারি তাহলে কেমতে হইবো আবার আমি ফোন দিয়ে বললাম আমি এখন ১৬ ঘন্টা ডিউটি করে এলাম এখন যদি ঘুম না যাইতে পারি তাইলে মইরাই যামু আমি অনেক ক্লান্ত উনি চাবি নিয়ে উনার চাকরি স্থলে চলে গেছেন, আমার বাসা থেকে প্রায় ১৬০ মাইল দূরে , ১৫০ রিয়াল গাড়ির ভালা লাগে যাইতে !! তাই আর কি করার ইচ্ছা মতন বকাবকি করলাম বুইড়ারে হালায় এই তিন মাসে জ্বালাইয়া জীবনডা ভাজা ভাজা কইরা হালাইছে ।
এখন কি করে বাসায় ঢুকি সেই চিন্তা মাথায় ফজরের আজান দিচ্ছে রাত ৩.৩৫ মিনিট ! তাই দেওয়াল বেয়ে ছাদে গিয়ে জীবনের ঝুকি নিয়ে টয়লেটের একজেস্ট ফ্যান এর সাথে গ্যালাস ছিল সেইটা ভাঙলাম ছাদ থেকেই , তার পর আস্তে আস্তে পা দুইটা টয়লেটের ভিতরে দিয়ে বিড়াট ঝুকি নিয়ে টয়লেটে ঢুকলাম । কিন্তু টয়লেটে ঢুকে দেখি টয়লেটের দরজা ঘরের ভিতর থেকে ছিটকারি মারা এইবার কি করা যায় মেজাজ আরো খারাপ হইয়া গেলো ,আমি কখনই এই দরজা ভিতর থেকে বন্ধ করিনা । কিন্তু এই বুইড়া বন্ধ করে গেছে ! তাই চিন্তা করলাম দরজা ভেঙ্গে ফেলবো ! প্রায় আধা ঘন্টা মুচড়া মুচরি করে দরজার এক পাশের কব্জা খুলে ফেললাম এবং অবশেষে রুমে ঢুকতে পারলাম
রুমে ঢুকে এসি চালু করে বিছানায় শুয়ে পরলাম । প্রায় ঘুম লেগে এসেছে তখন মনে হলো ছাদ থেকে যখন টয়লেটের ভিতরে ঢুকেছি তখন তো প্যান্ট , শার্ট , জুতা ছাদের খুলে রেখে শুরু জাহাঙ্গীর আলম পরে টয়লেটে ঢুকেছি ছাদ বেয়ে এখন কি করা যায় প্যান্টের পকেটে মানিব্যাগ আর মানিব্যাগে প্রায় বাংলার টাকার ১ লাখের বেশি টাকা আছে ! এখন কি করা যায় প্যান্ট শার্ট কেউ নিয়ে গেলে ব্যাপার নয় কিন্তু এতো গুলা টাকা !!
আহা কি আর করার আবার ছাদের উঠলাম এবং প্যান্ট শার্ট জুতা নিয়ে এলাম । আর বুড়ার জন্য একটা পার্সেল এনেছিলাম অইটা ছাদ রেখেই চলে এলাম । জীবনে Attttto gulo কষ্ট খুবই কম করেছি !!! তার পর রুমে গিয়ে ঘুম দিলাম তখন ভোর ৫ টা । চ্রম একটা ঘুম হচ্ছে কিন্তু হঠাত করে কে জেনে দরজার থাপড় মারলো ! আর আমার ঘুম ভেঙ্গে গেলো চোখ মেলে দেখি বুইড়া দরজা খুলে রুমে ঢুকতেছে ! হাক করে তাকিয়ে থাকলাম
চোখে প্রচুর ঘুম কিন্তু বুইড়া চাবিটা আমার চোখের সামনে এনে বলে এই নেন চাবি !! তখন বললাম আপনি না চলে গেছেন ?
উনি বলে হ্যা চলে গেছিলাম কিন্তু ! কিন্তু কি ? তোমার বকা শুনে আবার গাড়ি ভাড়া করে এসেগেছি চাবি দিতে !!
আমার চোখে প্রচুর ঘুম ! তখন বললাম আইচ্ছা ভালা করচেন এখন কি চালে যাবেন না থাকবেন ?
এই কথা শুনে উনি বললেন না চলে যাবো । এই বলে তিনি বসে রইলেন আর আমি ঘুম দিলাম । তার আধা ঘন্টা পর আমাকে আবার ঘুম থেকে ডেকে তুলে বলে ভাই আমি চলে যাচ্ছি
মেজাজটা কেমন লাগে ! তখন আর ধৈর্যে বাধ মানলোনা বলে দিলাম যাউয়ান আর কোন দিন আমার বাসায় আসবেননা আল্লার দোহাই লাগে !!!!! জিন্দেগী পুরাই তেচ পাতা বানাইয়া হালাইছে এইলোক ।
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা আগস্ট, ২০১৩ রাত ৯:১২