somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পবিত্র ঈদে মীলাদুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সম্পর্কে ভ্রান্ত আক্বীদাঃ বিলাদত শরীফ এর তারিখ নিয়ে মতভেদ!

০৮ ই জানুয়ারি, ২০১৪ বিকাল ৩:০৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

অনেকে বলে থাকে যে, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, উনার বিলাদত শরীফ (জন্ম তারিখ) এর তারিখ নিয়ে মতভেদ আছে তাই পবিত্র ঈদে মীলাদুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পালন করা ঠিক নয়।

জবাবঃ কুরআন শরীফ ও সুন্নাহ শরীফ-এর নির্দেশ হলো যে, মতভেদ সম্পর্কিত বিষয় পালন বা আমল করা অবশ্যই সঠিক।
এ প্রসঙ্গে আল্লাহ পাক ইরশাদ করেন- “হে মু’মিনগণ! তোমরা আল্লাহ পাক- উনার ইতায়াত করো এবং হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম- উনার ইতায়াত করো এবং তোমাদের মধ্যে যারা উলিল আমর- উনাদের ইতায়াত করো। অতঃপর যখন কোন বিষয়ে উলিল আমরগণের মাঝে ইখতিলাফ দেখতে পাবে, তখন (সে বিষয়টি ফায়সালার জন্য) তোমরা আল্লাহ পাক এবং উনার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম- উনার দিকে প্রত্যাবর্তন করো, অর্র্থাৎ যে উলিল-আমরের কুরআন-সুন্নাহর দলীল বেশি হবে- উনারটিই গ্রহণ করো।” (সূরা নিসা-৫৯)
প্রকাশ থাকে যে, ইখতিলাফ বা মতভেদ দু’ রকমের হয়ে থাকে।
(১) শুধু হক্বের জন্য হক্ব তালাশীগণের ইখতিলাফ। যেমন- ঈমানের শর্ত হিসেবে কেউ উল্লেখ করেছেন- “অন্তরে বিশ্বাস ও মৌখিক স্বীকৃতি।”
আবার কেউ উল্লেখিত দু’টি শর্তের সাথে তৃতীয় শর্ত হিসেবে “ফরযসমূহ আমল করা”- উল্লেখ করেছেন।
অনুরূপ নামায, রোযা, হজ্জ, যাকাত ইত্যাদি প্রায় প্রতিটি বিষয় বা আমলের ক্ষেত্রে মাসয়ালা-মাসায়িল, হুকুম-আহকাম বর্ণনার ব্যাপারে ইখতিলাফ পরিলক্ষিত হয়।
এ প্রসঙ্গে কিতাবে বর্ণিত রয়েছে “হক্কানী-রব্বানী আলিমগণের ইখতিলাফ রহমতের কারণ।”
যেমন, হক্কানী-রব্বানী আলিমগণ ইখতিলাফ করে হানাফী, মালিকী, শাফিয়ী, হাম্বলী- ৪টি মাযহাবকেই হক্ব বলে স্বীকার করে নিয়েছেন এবং এর উপরই উম্মতের ইজমা বা ঐকমত্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
(২) হক্ব তালাশীগণের সাথে নাহক্বপন্থীদের ইখতিলাফ বা মতবিরোধ। যেমন- হক্বপন্থীদের আক্বীদা হলো- আল্লাহ পাক এক এবং অদ্বিতীয়। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি শেষ নবী ও রসূল। তিনি নূরের সৃষ্টি। তিনি ইলমে গইবের অধিকারী ইত্যাদি। কিন্তু এসবের বিপরীত হলো বাতিলপন্থীদের আক্বীদা। যেমন- তাদের কারো আক্বীদা হলো, আল্লাহ পাক তিনজন অর্র্থাৎ তারা ত্রিত্ববাদ বা তিন খোদায় বিশ্বাসী। নাঊযুবিল্লাহ! কারো আক্বীদা হলো- আল্লাহ পাক, উনার হাবীব শেষ নবী ও রসূল নন। নাঊযুবিল্লাহ। কারো আক্বীদা হলো, তিনি নূরের সৃষ্টি নন। নাঊযুবিল্লাহ! তিনি ইলমে গইবের অধিকারী নন। নাঊযুবিল্লাহ! ইত্যাদি।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে, মতভেদ সম্পর্কিত বিষয় যদি পালন করা ঠিক না হয় তাহলে কি আল্লাহ পাক, আল্লাহ পাক- উনার হাবীব, ঈমান-ইসলাম সব বাদ দিতে হবে? কস্মিনকালেও নয়। বরং আল্লাহ পাক যে নির্দেশ দিয়েছেন, সে নির্দেশ অনুযায়ী যেখানে মতভেদ হবে সেখানে যে উলিল আমরের সপক্ষে কুরআন শরীফ ও সুন্নাহ শরীফ-এর দলীল বেশি হবে, উনারটিই গ্রহণ করতে হবে। সুতরাং, যে ব্যক্তি বলবে মতভেদপূর্ণ বিষয় পালন করা ঠিক নয়, সে ব্যক্তি নিঃসন্দেহে মুরতাদ ও কাফিরের অন্তর্ভুক্ত।
আর কোন বিষয়ে যখন একাধিক মত থাকবে, তখন যে মতটি অত্যধিক ছহীহ ও নির্ভরযোগ্য হবে, তা আমল করতে হবে। মতভেদ আছে বলে মূল বিষয়টির আমলই ছেড়ে দিতে হবে- এ বক্তব্য চরম শ্রেণীর জাহিলদের উক্তি বৈ কিছুই নয়। এ বক্তব্যও কুরআন-সুন্নাহ’র সম্পূর্ণ বিপরীত।
স্মরণীয় যে, ১২ই রবীউল আউয়াল শরীফ নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম- উনার বিলাদত শরীফ-এর দিন। এটাই সবচেয়ে ছহীহ ও মশহূর মত।
যেমন, এ প্রসঙ্গে হাফিয আবূ বকর ইবনে আবী শায়বাহ রহমতুল্লাহি আলাইহি ছহীহ সনদ সহকারে বর্ণনা করেছেন- “হযরত আফফান রহমতুল্লাহি আলাইহি হতে বর্ণিত। তিনি হযরত সাঈদ ইবনে মীনা রহমতুল্লাহি আলাইহি থেকে বর্ণনা করেছেন যে, হযরত জাবির ও হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমা বলেন, রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম- উনার বিলাদত শরীফ ‘হস্তি বাহিনী বর্ষের ১২ই রবীউল আউয়াল সোমবার শরীফ হয়েছিল।” (বুলুগুল আমানী শরহিল ফাতহির রব্বানী, আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া)
উক্ত হাদীছ শরীফ বর্ণনার সনদের মধ্যে প্রথম বর্ণনাকারী হযরত আফফান রহমতুল্লাহি আলাইহি সম্পর্কে মুহাদ্দিছগণ বলেছেন, “তিনি একজন উচ্চ পর্যায়ের নির্ভরযোগ্য ইমাম, প্রবল স্মরণশক্তি ও দৃঢ়প্রত্যয় সম্পন্ন ব্যক্তি।” (খুলাছাতুত তাহযীব)
“দ্বিতীয় বর্ণনাকারী সাঈদ ইবনে মীনা রহমতুল্লাহি আলাইহি। তিনিও অত্যন্ত নির্ভরযোগ্য।” (খুলাছাহ,তাক্বরীব)
আর তৃতীয় হযরত জাবির রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু এবং হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু। এ দু’জন উচ্চ পর্যায়ের ফক্বীহ ছাহাবীর বিশুদ্ধ সনদ সহকারে বর্ণনা থেকে প্রমাণিত হলো যে, “১২ই রবীউল আউয়াল শরীফ হচ্ছে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম- উনার পবিত্র বিলাদত দিবস।” এ ছহীহ ও নির্ভরযোগ্য বর্ণনার উপরই ইমামগণের ইজমা (ঐকমত্য) প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। (সীরাত-ই-হালবিয়াহ, যুরক্বানী আলাল মাওয়াহিব, মাসাবাতা বিস সুন্নাহ ইত্যাদি)
উপরোক্ত বিশুদ্ধ বর্ণনা মুতাবিক ১২ই রবীউল আউয়াল শরীফই হচ্ছে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম- উনার পবিত্র বিলাদত দিবস। এটাই ছহীহ ও মশহূর মত। এর বিপরীতে যেসব মত ঐতিহাসিকগণ থেকে বর্ণিত রয়েছে তা অনুমান ভিত্তিক ও দুর্বল। অতএব, তা আদৌ গ্রহণযোগ্য নয়।
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

পানির অপচয় রোধ: ইসলামের চিরন্তন শিক্ষা এবং সমকালীন বিশ্বের গভীর সংকট

লিখেছেন নতুন নকিব, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৮:৪৬

পানির অপচয় রোধ: ইসলামের চিরন্তন শিক্ষা এবং সমকালীন বিশ্বের গভীর সংকট



পানি জীবনের মূল উৎস। এটি ছাড়া কোনো প্রাণের অস্তিত্ব সম্ভব নয়। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তা'আলা ইরশাদ করেন:

وَجَعَلۡنَا... ...বাকিটুকু পড়ুন

মায়াময় স্মৃতি, পবিত্র হজ্জ্ব- ২০২৫….(৭)

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৭

ষষ্ঠ পর্বের লিঙ্কঃ মায়াময় স্মৃতি, পবিত্র হজ্জ্ব- ২০২৫-….(৬)

০৬ জুন ২০২৫ তারিখে সূর্যোদয়ের পরে পরেই আমাদেরকে বাসে করে আরাফাতের ময়দানে নিয়ে আসা হলো। এই দিনটি বছরের পবিত্রতম দিন।... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদিকে shoot করে লাভবান হলো কে?

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:২৪


শরিফ ওসমান হাদি যিনি সাধারণত ওসমান হাদি নামে পরিচিত একজন বাংলাদেশি রাজনৈতিক কর্মী ও বক্তা, যিনি জুলাই গণঅভ্যুত্থান-পরবর্তী সময়ে গঠিত রাজনৈতিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র হিসেবে পরিচিত। তিনি ত্রয়োদশ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আধা রাজাকারি পোষ্ট ......

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:৫৬


আমি স্বাধীন বাংলাদেশে জন্মগ্রহণ করেছি। আমার কাছে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতা, বা পূর্ব পাকিস্তানের সঙ্গে আজকের বাংলাদেশের তুলনা—এসব নিয়ে কোনো আবেগ বা নস্টালজিয়া নেই। আমি জন্মগতভাবেই স্বাধীন দেশের নাগরিক, কিন্তু... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইন্দিরা কেন ভারতীয় বাহিনীকে বাংলাদেশে দীর্ঘদিন রাখেনি?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:২০



কারণ, কোল্ডওয়ারের সেই যুগে (১৯৭১সাল ), আমেরিকা ও চীন পাকিস্তানের পক্ষে ছিলো; ইন্দিরা বাংলাদেশে সৈন্য রেখে বিশ্বের বড় শক্তিগুলোর সাথে বিতন্ডায় জড়াতে চাহেনি।

ব্লগে নতুন পাগলের উদ্ভব ঘটেছে;... ...বাকিটুকু পড়ুন

×