somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আঁধার বিলাস_পর্ব(২)

২৫ শে জুন, ২০০৮ দুপুর ২:৩৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

পর্ব-(১) Click This Link
"ডেভিড কি চলে গিয়েছিলো?"
"না মরে গিয়েছিলো। একদল জনতা তাকে জ্যান্ত আগুনে পোড়ায় আমার সামনে।"
শুনে জামিল আর রাহাত চমকে যায়। জামিল বলে, "কেন?"
লোকটা জামিলের দিকে তীক্ষ্ণ চোখে তাকালো যা দেখে হঠাৎ জামিলের বুক কঁপে উঠে। খালেকুজ্জামান উঠে ভিতরে চলে গেল। রাহাত জামিলকে বলল, "দোস্ত তুই আমারে ভালো বিপদে ফেলছিস! তোরা নিজেরা নিজেরা জ্বীন ভূত প্রেত নামা। আমাকে এবার ছাড়।"
"কীভাবে যাবি? বাইরে বৃষ্টি পড়ে। আসল মজাতো রাত ১২ টার পর।"
"এখন কয়টা বাজে?"
"মনে হয় পৌনে ১১ টা।"
রাহাত পকেট হাতড়ালো মোবাইলের জন্য। সে অবাক হয়ে আবিষ্কার করলো যে সে আজকে মোবাইল আনতে ভুলে গেছে, এই ভুল সে কখনও করেনা। সে জামিলকে বলল,"জামিল মোবাইল আনছিস?"
"নারে দোস্ত। ভুলে গেছি। রাস্তায় বের হয়ে মনে পড়ছিলো।"
এই ঘরেও কোন ঘড়ি নাই। রাহাতের মনে হঠাৎ খটকা লাগলো। তার ষষ্ঠ ইন্দ্রীয় যেন তাকে বারবার বলছে, "চলে যাও, চলে যাও।"

লোকটা একটা মোটাসোটা বোতল নিয়ে ঘরে ঢুকলো। রাহাত মনে মনে ভাবলো "এই লোক কি মদ খায়? এ তো জামিলের ১২ টা বাজাবে!"
লোকটা বোতলের তরলটুকু একটা ঝকঝকে গ্লাসে ঢেলে বলতে লাগলো, "এটা শ্যাম্পেন বা হুইস্কি না, এটা জীবনরস.........লিকুইড অফ লাইফ। প্রের্ত্রাক নামক একপ্রকার গাছের শিকড়কে প্রসেস করে বানানো তরল। খেলে অনেকদিন নির্ঘুম কাটানো যায়....সাধনায় সবচেয়ে বড় ব্যাঘাত ঘটায় ঘুম। চেখে দেখবে একটু?"
তারা দুজনই সজোরে মাথা নেড়ে না করলো। জামিলের অবশ্য আফসোস থেকে গেল সে একা থাকলে চেখে দেখত।

খালেকুজ্জামান আবার বলতে শুরু করলো...."ডেভিড খুব হেঁয়ালী করে কথা বলত। আমার ছুটি শেষে আমি যখন কানাডায় ফেরত যাব তখন তাকে বললাম, "ডেভিড আমি এবার যেতে চাই। হাইতিতে দারিদ্র ছাড়া কিছু দেখলামনা....তুমি কি থাকবে?"
সে বললো, "আমাকে আমার নিয়তিই এখানে টেনে এনেছে, ঠিক যেমন তোমাকে এনেছে তোমার নিয়তি"। এর কিছুদিন পর সে আমাকে একটা গ্রামে নিয়ে গেল যেখানে কিছু ভুডুচর্চাকারী থাকতো। তারা জীবনযাপন করত স্বাভাবিকভাবেই। কিন্তু কেউ যদি জানত তারা প্রেতসাধক তাহলে পুড়িয়ে মেরে ফেলত। আমি প্রথমে ব্যাপারটাকে উড়িয়ে দিয়ে তার সাথে সেখানে গেলাম। ডেভিড আমাকে নিয়ে গেল এক ডাইনীর কাছে.....তার নাম ছিলো আইডা। আমার দেখা পৃথিবীর কুৎসিততম মানবী। সেই যে গেলাম তার কাছে আর ফেরা হলোনা। তার কাছেই ১৮ বছর ছিলাম।"

রাহাত হঠাৎ কথার মাঝখানে বললো......"এসবতো এখন বিলুপ্ত হয়ে গেছে। হাইতিতে এখন যাদেরকে ভুডুচর্চাকারী হিসেবে দেখা হয় তারাতো আসলে আমাদের দেশের কবিরাজের মত।"
লোকটা বাঁধা পেয়ে বিরক্ত হলো। সে বললো....."তুমি কি সব জান? যারা সত্যিকারের ডাইনী তারা কখনও সেটা প্রকাশ করেনা।"
বাইরে হঠাৎ কুকুরের ডাক শোনা গেল। লোকটা ফিসফিসিয়ে রাহাতের দিকে ঝুঁকে বললো...."আমাকে দেখলে মনে হয় আমি প্রেতসাধক? হা হা হা....."
গা হিম করা হাসি শুনে রাহাত আর জামিল ভয় পেয়ে যায়।
খালেকুজ্জামান আবার বলতে লাগলো.."আমি যতবারই ফিরে যেতে চাইতাম ততবারই কোন এক যাদু আমাকে আরও শক্ত করে আটকে রাখতো। আইডা আমাকে প্রথম প্রথম কিছু মন্ত্র শিখালো। তারপর শিখালো কুকুর, বিড়াল, সদ্য মৃত মানুষের রক্ত কিভাবে পান করতে হয়।"
রাহাতের গা গুলিয়ে উঠে। তবুও সে ধৈর্য্য সহকারে শুনতে লাগলো।
লোকটা বলতে থাকল...."কিভাবে জীবনরস বানানো হয় সেটাও শিখলাম আমি। তবে তখনও কোন মৃত মানুষের দেখা পাইনি। এরপর একদিন আইডা আমাকে ডেকে নিয়ে বলল..."আমার দিন শেষ হয়ে যাচ্ছে। তোমার হাতটা আমার হাতে রাখ"। আমি হাত রাখলাম.......আমার সারা শরীর হঠাৎ ঝাঁকি খেয়ে উপরে উঠে গেল....আমার চারপাশ ঘুরতে লাগল...চারপাশে কালো ধোঁয়া আর কিসব অশরীরী নাচতে লাগলো...আর চাপা হাসির শব্দ.....এরপর সব অন্ধকার।"
রাহাত আর জামিলের নিঃশ্বাস প্রায় বন্ধ হয়ে যাওয়ার অবস্থা।
লোকটা কিছুক্ষন চোখ বন্ধ করে বললো......"এখন ১২টা বাজে....তোমরা প্রস্তুত?"


চলবে........





৩টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কষ্ট থেকে আত্মরক্ষা করতে চাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৯



দেহটা মনের সাথে দৌড়ে পারে না
মন উড়ে চলে যায় বহু দূর স্থানে
ক্লান্ত দেহ পড়ে থাকে বিশ্রামে
একরাশ হতাশায় মন দেহে ফিরে।

সময়ের চাকা ঘুরতে থাকে অবিরত
কি অর্জন হলো হিসাব... ...বাকিটুকু পড়ুন

রম্য : মদ্যপান !

লিখেছেন গেছো দাদা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫৩

প্রখ্যাত শায়র মীর্জা গালিব একদিন তাঁর বোতল নিয়ে মসজিদে বসে মদ্যপান করছিলেন। বেশ মৌতাতে রয়েছেন তিনি। এদিকে মুসল্লিদের নজরে পড়েছে এই ঘটনা। তখন মুসল্লীরা রে রে করে এসে তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মেঘ ভাসে - বৃষ্টি নামে

লিখেছেন লাইলী আরজুমান খানম লায়লা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩১

সেই ছোট বেলার কথা। চৈত্রের দাবানলে আমাদের বিরাট পুকুর প্রায় শুকিয়ে যায় যায় অবস্থা। আশেপাশের জমিজমা শুকিয়ে ফেটে চৌচির। গরমে আমাদের শীতল কুয়া হঠাৎই অশীতল হয়ে উঠলো। আম, জাম, কাঁঠাল,... ...বাকিটুকু পড়ুন

= নিরস জীবনের প্রতিচ্ছবি=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৪১



এখন সময় নেই আর ভালোবাসার
ব্যস্ততার ঘাড়ে পা ঝুলিয়ে নিথর বসেছি,
চাইলেও ফেরত আসা যাবে না এখানে
সময় অল্প, গুছাতে হবে জমে যাওয়া কাজ।

বাতাসে সময় কুঁড়িয়েছি মুঠো ভরে
অবসরের বুকে শুয়ে বসে... ...বাকিটুকু পড়ুন

Instrumentation & Control (INC) সাবজেক্ট বাংলাদেশে নেই

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৫




শিক্ষা ব্যবস্থার মান যে বাংলাদেশে এক্কেবারেই খারাপ তা বলার কোনো সুযোগ নেই। সারাদিন শিক্ষার মান নিয়ে চেঁচামেচি করলেও বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরাই বিশ্বের অনেক উন্নত দেশে সার্ভিস দিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×