মহানবী হজরত মোহাম্মদকে (সাঃ) নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য সংবলিত যুক্তরাষ্ট্রে নির্মিত একটি চলচ্চিত্রের প্রতিবাদে লিবিয়ায় মার্কিন দূতাবাসে রকেট হামলায় মার্কিন রাষ্ট্রদূত সহ ৪ জন মার্কিন নাগরিক নিহত হয়েছেন। মিশরেও মার্কিন দূতাবাসে হামলা হয়েছে। এই ঘটনার প্রতিবাদ হিসাবে অনেক গুলো মুসলিম দেশে বিক্ষোভ চলছে।
এই ঘটনা গুলো এমন এক সময়ে ঘটল যখন সামনে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের জন্য বর্তমান ডেমোক্রেট প্রেসিডেন্ট ওবামা এবং রিপাবলিকান দলের একজন কট্টর পন্থী প্রার্থী মিট রমণীর মধ্যে প্রাক নির্বাচনী তুমুল প্রতিযোগিতা চলছে। মিট রমনি যিনি খুব প্রকাশ্যেই আমেরিকা-ইসরাইল সম্পর্ক কে নির্বাচনী প্রতিদ্বন্দ্বিতার হাতিয়ার হিসাবে ব্যবহার করে চলছেন। ইসরাইলের সমর্থনের বিনিময়ে তিনি নির্বাচনে জয়ী হতে পারলে ইরান আক্রমণের মত অনেক কঠিন শর্ত মেনে নিবেন তাদের সাথে তার অতি আগ্রহ থেকেই ইংগিত পাওয়া যায়।
অন্যদিকে ওবামা সরকারের সাথে ইরানের পরমাণু ইস্যুকে কেন্দ্র করে ইসরাইল ও আমেরিকার মধ্যে টানাপোড়েন এখন চরমে পৌঁছেছে। শোনা যাচ্ছে নিউইয়র্কে আগামী ২৮ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিতব্য জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনের সময় প্রেসিডেন্ট ওবামার সঙ্গে নেতানিয়াহুর বৈঠকের ইচ্ছা প্রকাশ করলে হোয়াইট হাউজ তাতে অস্বীকৃতি জানায়। ওবামার পরিবর্তে পররাষ্ট্র মন্ত্রী হিলারি ক্লিনটনের সাথে দেখা করার জন্য তাকে অনুরোধ করা হয়েছে। তবে এমনটিও সোনা যাচ্ছে প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ওবামার সাথে সাক্ষাতের ব্যাপারে কোন অনুরোধই করেন নাই। সেটা হয়তো শুধু মাত্র নেতানিয়াহুর মুখ রক্ষার কৌশল মাত্র।
ইসরাইল সরকার কর্তিত প্রায় দুই আড়াই বছর পূর্বেই আমেরিকার প্রতি এই অভিযোগ তোলা হয়েছিল যে ওবামা প্রশাসন ইসরাইলের শত্রু মুসলিম দেশ গুলোকে শুধু শক্তিশালীই করে যাচ্ছেন। ইরাক থেকে সকল সৈন্য ফিরিয়ে আনা আর আফগানিস্তান থেকে ধীরে ধীরে সকল সৈন্য ফিরিয়ে আনার ঘোষণা যুক্তরাষ্ট্রের জন্য অত্যাবশ্যকীয় হয়ে উঠেছিল শুধু মাত্র অর্থনৈতিক দুরবস্থার জন্য। বুস প্রশাসনের অযৌক্তিক ইরাক আক্রমণে ৩ ট্রিলিয়ন ডলার খরচ, আফগানিস্তানে তালেবানদের সাথে অসম্ভব ব্যয়বহুল ও দীর্ঘস্থায়ী যুদ্ধের কারণে আমেরিকার অর্থনীতি পুরো নড়বড়ে হয়ে উঠেছিল। সে অবস্থান থেকে ওবামা সরকার দেশকে ধীরে ধীরে স্থিতিশীল করার প্রাণান্তকর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। তার উপর একটি বিশাল দেশের আভ্যন্তরীণ শত শত সমস্যা নিয়ে সরকারকে প্রচুর সময় দিতে হয়।
সেই সাথে চীনের উত্থান আমেরিকারে ভাবিয়ে তুলছে। এসবের মধ্যে ইসরাইলের ছোটভাই সুলভ সব অবান্তর আবদার রক্ষা করতে হয়। তার উপর আমেরিকার সাথে ইসরাইলের সম্পর্কের ধারাবাহিকতা রক্ষার জন্য ওবামা প্রশাসনকে অনেক কিছু বাধ্য হয়েই যেন করতে হচ্ছে।
২০১১ সালের প্রথম থেকে আরব বসন্ত নামে একে একে তিউনিসিয়া, ইয়েমেন, ইজিপ্ট, লিবিয়া ও সিরিয়াতে আমেরিকার প্রত্যক্ষ আর পরোক্ষ ভাবে জড়িত হওয়া সেতো ইসরাইলের শত্রুকে দুর্বল করার স্বার্থেই ঘটে চলছে। এসব দেশ গুলোকে অর্থনৈতিক ও সামরিক ভাবে পঙ্গু করতে পারা আমেরিকার পররাষ্ট্র নীতি আর ইসরাইলের চাওয়া পাওয়ার হিসাব অনুযায়ীই চলছে। এত কিছুর পরেও ইসরাইল যেন কিছুতেই ওবামা সরকারের উপর খুশী হতে পারছে না। তারা ইরানে হামলা করে তাদের মিশন কমপ্লিট করতে চায়। কিন্তু আমেরিকা তাদের জন্য আর কত করবে? এত কিছুর পরেও ইসরাইল মিট রমনিকে সমর্থন করে যাচ্ছে। মিট রমনির প্রেসিডেন্ট হবার পূর্বেই ইসরাইল থেকে ঘুরে আসা আর ওবামা প্রেসিডেন্ট হিসাবে তার মেয়াদ প্রায় পূর্ণ হওয়ার পথে অথচ তিনি এপর্যন্ত ইসরাইল সফরে না যাওয়াটাকে মিট রমনি নির্বাচনী কৌশল কে সুযোগ করে দিচ্ছে ইসরাইল। এসব ব্যাপারগুলো ওবামাকে ইসরাইলের প্রতি অভিমানী করে তুলেছে।
এটা ঠিক যে আমেরিকান রিজার্ভের ব্যাংক, মিডিয়া, ব্যবসা বাণিজ্যের সকল ক্ষেত্রে যেভাবে যুগ যুগ ধরে ইসরাইলীরা যেভাবে নিয়ন্ত্রণ করছে তাতে আমেরিকা যেন ইসরাইল কর্তিত অষ্টেপৃষ্ঠে বাঁধা পড়ে আছে তাই ইসরাইলের বিরুদ্ধাচরণ করার কোন শক্তিই যেন তাদের নেই। মনে হয় যেন কুকুর নয় বরং লেজই কুকুর নাড়াচ্ছে।
এত কিছুর পরেও মন্দের ভাল হিসাবে ওবামাকে সমর্থন যাওয়া ছাড়া মুসলিম বিশ্বের আর কোন উপায় নেই বলেই বিশ্ব রাজনৈতিক বোদ্ধারা মনে করছেন। উগ্রপন্থীরা তালেবানরা বা যারাই এই ন্যক্কারজনক আক্রমণ করে থাকুক না কেন এটা যে কি পরিমাণ মুসলিম বিশ্বের ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে তা হামলাকারীদের জানা তো নেই-ই এই মুহূর্তের লিবিয়া, মিশরের মত যে সব অস্থিতিশীলতায় প্রকম্পিত মুসলিম সরকার গুলো আছে তারাও অনুধাবন করতে পারছেন কি-না সেটিও ভাববার বিষয়। তবে এটা ঠিক যে ইসরাইল হল এমন একটি দেশ যাকে বিশ্বাস করার কোন কারণ নেই। ওবামাকে অকার্যকর প্রমাণ করার জন্য ইসরাইল এই হামলার সাথে জড়িত আছে সেই সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেওয়া যায় না।
মোদ্দা কথা, এই আক্রমণ ওবামার নির্বাচনী প্রতিদ্বন্দ্বী রমনিকে অনেকটাই শক্তিশালী করবে সেটিই হল মূল চিন্তার বিষয়।

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




