somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বাংলা সিনেমা

০৬ ই ডিসেম্বর, ২০১৬ রাত ১:৩০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


আগের দিনের বাংলা ছবিগুলো বেশ মজার ছিল।প্রতি শুক্রবার বিটিভিতে বিকাল তিনটার দিকে একটি করে ছবি হত।মানুষ সেগুলোই অনেক মজা নিয়ে দেখত। তখন বাংলা ছবিতে নায়িকা বড়লোকের মেয়ে হলে নায়কের গরীবের ছেলে হওয়া বাধ্যতামূলক ছিল। নায়কের মাকে আবার বিধবা হতে হবে। দিন আনে দিন খায় টাইপ সংসার হতে হবে।
আবার নায়ক যদি লন্ডনে পড়ুয়া বড়লোকের ছেলে হয়, তবে নায়িকার সুরত হতে হবে ফকিন্নি টাইপের। সেসব ছবিতে আবার নায়িকাদের মাটির কলসী নিয়ে ঘোরা বাধ্যতামূলক ছিল। কারন ছবির এক পর্যায়ে নায়কের ধাক্কা ব্যবহার করে কলসী ভাঙ্গা হবে। নায়ক নায়িকা দুজনই তখন মাটিতে লুটিয়ে পড়বে। তারপর চোখে চোখ। বিটিভিতে এরকম ক্লাইম্যাক্স মোমেন্টে আবার দুই গোলাপ ফুলে টোকা দেওয়ার দৃশ্য দেখাতো। পরে দেখাতো গান। এক গানেই কক্সবাজারে দৌড়!
যেসব ছবিতে নায়িকা বড়লোকের মেয়ে থাকে সেগুলোর কাহিনী সাধারনত কেমন হয় একটু দেখা যাক।
বেশীরভাগ ছবিতেই ববিতা থাকে বড়লোকের মেয়ে।ইয়া বড় বড় রঙ্গিন গ্লাসওয়ালা চশমা পড়ে ডিসকো গানের তালে তালে অমিতাভ বচ্চন আমলের গাড়ি চালাতে চালাতে রাস্তার বাদামওয়ালা তরকারীওয়ালা সবাইকে ঢিস দিতে দিতে তিনি এগিয়ে যান। ঢিস দিতে দিতে গাড়ির কি যেন সমস্যা ধরা পড়ে হঠাৎ। চোখ থেকে কালার টিভি মার্কা চশমাটা নামিয়ে "ওহ শিট!" বলে গাড়ি থেকে বের হয়ে আসেন তিনি ।ইঞ্জিনের উপড়ের ঢাকনা খুলে এটাওটা খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখেন।
এমন সময় একটা সাদা মাইক্রোবাস তার সামনে হার্ডব্রেক করে থামে।ভেতর থেকে হকিস্টিক নিয়ে একদল গুন্ডা নেমে ববিতাকে টেনেহিঁচরে মাইক্রোবাসে তোলে। সবগুলো গুন্ডার পায়ে আবার আগের দিনের সাদা কালারের পেগাসাস কেডস। সব গুন্ডাগুলো "মুহাহাহাহাহাহাহাহাহাহা!!! " করে হাসতে থাকে সে সময়ে ।
ফুল স্পিডে মাইক্রোবাস ছুটতে থাকে "জাম্বু" ভিলেনের আস্তানার দিকে।ববিতা তখন চিতকার করেই যান "কে আছ বাচাও! বাচাও!!" বলে।ঠিক তখনই মাঝ রাস্তায় কাউবয় হ্যাট মাথায় দিয়ে ভুড়ি নাচাতে নাচাতে হাজির হন আমাদের একশন হিরো জসিম।
মাইক্রোবাসের পিছনে দৌড়িয়ে অত ক্যালরি খরচ না করে উনার হাতের রশিটা তিনি মাইক্রোবাসটিকে লক্ষ্য করে ছুড়ে মারেন।একদম নিখুঁতভাবে সেটা মাইক্রোবাসের কোথাও না কোথাও আটকে যায় (যদিও মাইক্রোবাসের কোন বাম্পার নেই )।
মূহুর্তের মধ্যেই মাইক্রোবাস একদম ইন্সট্যান্ট ব্রেক হয়ে যায় ওই জায়গায়। গুণ্ডারা গাড়ির গিয়ার বাড়ায়।কিন্তু জসিমের হর্স পাওয়ার গাড়ির চেয়ে বেশী ।তাই গাড়ি উল্টো দিকে এগুতে থাকে।গুণ্ডারা আর মারামারি করার রিস্ক নেয়না। "তোকে আমরা দেখে নেব" বলে পালিয়ে যায়।
এবার একটু রোমান্টিকতা। আহ্লাদে গদগদ হয়ে ববিতা বলে "আপনাকে যে কি বলে ধন্যবাদ দেব "।জসিম তার গায়ের কোটটা খুলে ববিতাকে পড়িয়ে দেন।এরপরই চোখে চোখ! । এক সেকেন্ডের মধ্যেই আবারো কক্সবাজারে দৌড়! ধুম ধারাক্কা গান! গানে গানেই প্রেম...
ছবির পরিচালকদের সাথে কিছু কিছু মানুষদের আবার চুক্তিই থাকতো যে তারা ছবির প্রথমেই মারা যাবে। পুরা ছবি করার ধৈর্য্য নাই। প্রবীর মিত্র ছিলেন সেরকম একজন অভিনেতা। বেশীরভাগ ছবিতেই তিনি মারা যান ছবির প্রথমেই গুন্ডার ছুরিকাঘাতে। গুন্ডারা না আসলে তিনি একা একাই নিজ দায়িত্বে "চৌধুরী সাহেব" এর কটু কথা সহ্য করতে না পেরে হার্ট এটাক করে মরতেন। ডলি জহুর হয়ে পড়তেন বিধবা।কবরের মাটি ছুঁয়ে প্রতিজ্ঞা করে জসিম সে হত্যার প্রতিশোধ নিতো বিশ বছর পর....
জসিমের মৃত্যুর পর দেশে সেরকম কোন একশন হিরো আসেনি। একশন হিরোইন এসেছেন। বিশাল এক জলহস্তী মার্কা শরীর থাকলেও তার নাম নাকি ময়ূরী। টিভির স্ক্রিনে ডান্সের তালে তিনি একবার ঘুরান্টি দিলে টিভির স্ক্রিন কাঁপতে কাঁপতে ভেঙ্গে যাবার উপক্রম হত । উনার ডান্স এতটাই ধ্বংসাত্বক ছিল , যে কোথাও কোন ভূমিকম্প হলে অনেক এলাকায় "ময়ূরী ডান্স দিসে রে..." বলে ছুটে নাকি বিল্ডিং থেকে বেরিয়ে আসতো...
হাহ..! এই বাংলা ছবি যে কি পরিমান মজা দিতো সে সময়ে, বলার বাহিরে ছিলো... কিন্তু আফসোস, আমরা তখনো বুঝে উঠতে পারিনি যে সেটি আসলে বাংলা ছবি ছিল না... কমেডি শো ছিল...
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই ডিসেম্বর, ২০১৬ রাত ১:৩১
৪টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কিভাবে বুঝবেন ভুল নারীর পিছনে জীবন নষ্ট করছেন? - ফ্রি এটেনশন ও বেটা অরবিটাল এর আসল রহস্য

লিখেছেন সাজ্জাদ হোসেন বাংলাদেশ, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৪

ফ্রি এটেনশন না দেয়া এবং বেটা অরবিটার


(ভার্সিটির দ্বিতীয়-চতুর্থ বর্ষের ছেলেরা যেসব প্রবলেম নিয়ে টেক্সট দেয়, তার মধ্যে এই সমস্যা খুব বেশী থাকে। গত বছর থেকে এখন পর্যন্ত কমসে কম... ...বাকিটুকু পড়ুন

সম্পর্ক

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৪২


আমারা সম্পর্কে বাঁচি সম্পর্কে জড়িয়ে জীবন কে সুখ বা দুঃখে বিলীন করি । সম্পর্ক আছে বলে জীবনে এত গল্প সৃষ্টি হয় । কিন্তু
কিছু সম্পর্কে আপনি থাকতে চাইলেও থাকতে পারবেন... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রতিদিন একটি করে গল্প তৈরি হয়-৩৭

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৫১




ছবি-মেয়ে ও পাশের জন আমার ভাই এর ছোট ছেলে। আমার মেয়ে যেখাবে যাবে যা করবে ভাইপোরও তাই করতে হবে।


এখন সবখানে শুধু গাছ নিয়ে আলোচনা। ট্রেনিং আসছি... ...বাকিটুকু পড়ুন

একাত্তরের এই দিনে

লিখেছেন প্রামানিক, ০১ লা মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৬


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

আজ মে মাসের এক তারিখ অর্থাৎ মে দিবস। ১৯৭১ সালের মে মাসের এই দিনটির কথা মনে পড়লে এখনো গা শিউরে উঠে। এই দিনে আমার গ্রামের... ...বাকিটুকু পড়ুন

হুজুররা প্রেমিক হলে বাংলাদেশ বদলে যাবে

লিখেছেন মিশু মিলন, ০১ লা মে, ২০২৪ রাত ৯:২০



তখন প্রথম বর্ষের ছাত্র। আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে আমাদের আরেক বন্ধুর জন্মদিনের উপহার কিনতে গেছি মৌচাক মার্কেটের পিছনে, আনারকলি মার্কেটের সামনের ক্রাফটের দোকানগুলোতে। একটা নারীর ভাস্কর্য দেখে আমার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×