
আগামিকাল কর্নেল তাহেরের পূণঃবিচারের রায় হবে জানা গেছে. তাকে নিয়ে ব্লগে অনেক আবেগস্পর্শী পোস্ট আছে. তার বিচার প্রক্রিয়া সঠিক হয় নাই - এই বিবেচনায় তার পূণঃবিচার চলছে. তার দেশপ্রেম নিয়ে আমার কোন সন্দেহ, দ্বিধা নাই. নিজ আদর্শে অটল আস্থা ও তার জন্য আপোষহীন লড়াই ও বীরত্ব আমাদের সমাজে বিরল - এই দৃষ্টিভঙ্গিতে দেখলে তার অবস্থান অনন্য শ্রদ্ধার.
কিন্তু কর্নেল তাহের কোন বিবেচনাতেই আইনের উর্ধে নন, কোন খুনে অথচ কল্যাণকামী (!) মতবাদে বিশ্বাসী হওয়ার অজুহাতেও নন. প্রচলিত আইনেই তিনি অনেক অপরাধ করেছেন.
১. তিনি সেনাবাহিনীতে রাজনৈতিক প্রচারণা চালিয়েছেন. ব্যপক গোপন মিটিং করেছেন ও লিফলেট ছড়িয়েছেন.
২. সেনাবাহিনীর চেইন-অব-কমান্ড নষ্ট করেছেন. সেনাবাহিনীর সৈনিকদের অফিসারদের বিরুদ্ধে বিক্ষুদ্ধ করেছেন. সেনাবাহিনীতে অস্থিতিশীলতা তৈরি করেছেন. [স্মর্তব্য, 'সৈনিক-সৈনিক ভাই-ভাই, হাবিলদারের উপর অফিসার নাই' বলে স্লোগান দেয়া হয়েছিল. অশিক্ষিত সৈনিকদের নেতৃত্বে কী পেশাদারিত্বের সেনাবাহিনী হতে পারত সেটা কল্পনা করতেও ভয় হয় (তখন অধিকাংশ সৈনিক টিপসই করে বেতন তুলত). এমন সেনাবাহিনীর পরিকল্পনায় দেশরক্ষার কোন উপাদান আছে কিনা জানি না, তবে যথেচ্ছাচার করে ক্ষমতায় আরোহন ও থাকার উপাদান পুরোমাত্রায় ছিল, সেটা বোঝা যায়!]
৩. ক্যু এর সার্বিক আয়োজন করেছেন ও সৈনিকদের অফিসারদের হত্যা করতে প্ররোচিত করেছেন এবং তা ঘটিয়েছেন.
৪. ক্যু সংঘটনের মাধ্যমে সেনাবাহিনী তথা দেশের স্থিতিশীলতা, নিরাপত্তা ও সার্বভৌমত্ব ঝুঁকি ও হুমকির মধ্যে ফেলেছেন.
৫. ষড়যন্ত্র, অসাংবিধানিক ও রক্তাক্ত পন্থায় ক্ষমতা দখলের চেষ্টা করেছেন.
উপরের সবকয়টি কারণে কর্নেল তাহেরের পৃথকভাবে ফাঁসি হতে পারত, প্রচলিত আইনেই - এতগুলো কারণে তার ফাঁসি তথা দৃষ্টান্তমূলক শাস্তিই প্রাপ্য ছিল.
কিন্তু কর্নেল তাহেরের বিচারে সঠিক নিয়মনীতি অনুসরণ করা হয় নাই, জিয়া তাকে ফাঁসি দিতে চেয়েছেন আর আইনের লোকগুলো ফাঁসি ধার্য করে কিছু ন্যূনতম ফর্মালিটিস পুরা করতে চেয়েছে, আইন ও নিয়ম নীতির তোয়াক্কা করে নাই.
এখন কর্নেল তাহেরের পূণঃবিচার চলছে, ঐ সময়ের কিছু কালপ্রিট লেজুরবৃত্তি করে ক্ষমতার বলয়ের কাছে এসে নিজেদের অপকর্ম জায়েজ করার পায়তারায় আছে আর ঐদিকে জিয়াকে ডিফেম করার সরকারি এজেন্ডাও আছে - দুয়ে দুয়ে চার হল. আমি মনে করি, কর্নেল তাহেরের পূণঃবিচার নয়, নোংরা এজেন্ডা বাস্তবায়ন চলছে. একজন ভাড়াটে, মতদুষ্ট বিদেশি সাংবাদিককে এনে বক্তব্য দেয়ানো খুবই অস্বস্থির.
কর্নেল তাহেরের সঠিক পূণঃবিচার আইনের সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠার জন্যই প্রয়োজন. এতে কর্নেল তাহেরের বিচারিক প্রক্রিয়া আইনানুগ হওয়া ছাড়াও কালপ্রিটদের চিহ্ণিত করা ও শাস্তির আওতায় আনা সম্ভব হবে. এতে ইনু, ড. আনোয়াররা ক্যু-এ তাদের ভূমিকা ও দায়দায়িত্বের জন্য আইনের আওতায় আসবেন মনে করি. জিয়া বিশেষ পরিস্থিতিতে দেশের স্থিতিশীলতার স্বার্থে বিচার সংক্ষেপ করে মূল হোতা কর্নেল তাহেরকে শাস্তির আওতায় এনে একম্প্লিসদের ছাড় দেয়ার স্ট্র্যাটেজি নিয়েছিলেন হয়ত, এরা দেশের স্বার্থের জন্য ক্ষতিকর প্রমাণিত হয়েছেন, তাদের আর ইনডেমনিটি দেয়া অনুচিত হবে.
কর্নেল তাহের দেশপ্রেমিক ছিলেন, সাম্যবাদের মতবাদে দেশ গড়তে চেয়েছিলেন - সত্য. তিনি কারাগারে থেকে একটি মর্মস্পর্শী, অনুপ্রেরণামূলক কাব্যিক পত্র লিখেছিলেন, ফাঁসির মঞ্চে সাহসী ও মর্যাদাপূর্ণ আচরণ করেছিলেন - সত্য. তিনি জিয়ার সাথে ক্ষমতার দৌড়ে আউট-উইটেড হয়েছিলেন - কারও কারও জন্য অস্বস্থিকর হলেও সত্য. তিনি প্রচলিত আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল ছিলেন না - এটিও সত্য. তিনি বাস্তব-বিবর্জিত বিপ্লবী ছিলেন, এবং ভুল মতে ও বেআইনি পথে ক্ষমতার পথে হাটতে গিয়ে উষ্ঠা খেয়েছেন - এটা আরও সত্য. আমি যতদূর জানি, বাংলাভাই-শায়খ আব্দুর রহমান-সানিরাও একটি মতবাদ প্রতিষ্ঠার জন্যই বোমাবাজি করেছিলেন, তারাও আদালতে মর্যাদাপূর্ণ আচরণই করেছিলেন. এ সবে তাদের অপরাধ স্খালন হয়নি বা হতে পারে না, একইভাবে কর্নেল তাহের বা তার সহযোগীদেরও অপরাধ কোন আবেগস্পর্শী চিঠিতে বা তাদের নষ্ট প্রজন্মের মিথ্যাচারের ব্লগিং বা প্রবন্ধ বা প্রামাণ্যচিত্রে স্খালন হতে পারে না.
কর্নেল তাহের তার শাস্তি ভোগ করেছেন, এবার ইনু-আনোয়ারদের দায় শোধের পালা শুরু করা দরকার.

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




