প্রতিদিনই ভাবি লিখব। অনেক কথা মনের মাঝে জমা হয়ে আছে কিন্তু ঠিকভাবে গুছিয়ে উঠতে পারি না। কখনো কখনো একরকম কিছু একটা চিন্তা করি যে এভাবে লিখব। কিন্তু শেষ পর্যন্তু আর হয়ে ওঠে না। এর একটা কারণ অবশ্য আমি বের করেছি যে কেন এমন হয়....আসলে কষ্টের কথা বলতে কারোরই ভালো লাগে না।
অনেক কষ্ট আমার.....এতটা যে মাঝে মাঝে মনে হয় আত্মহত্যা করি কিন্তু সাহস নেই। সর্বশেষ কবে যে আমি হেসে উঠেছিলাম তাও ভুলে গিয়েছি। জন্ম থেকেই শুনে এসেছি যে তিন ভাইয়ের পর আমি এক বোন হয়েছি তাই অনেক সুখী হবো। হ্যাঁ....ভাইদের ভালবাসা পাইনি তা বলব না; তবে ওদের জন্যই আজ আমার এ অবস্থা এটাও তেমনি সত্যি। আমি এখন প্রতি পদে পদে অপমানিত হই ওদের জন্য। আচ্ছা....এটা কেমন কথা....আমার ভাইরা লেখাপড়া করেনি এটা তো আমার দোষ হতে পারে না..আমি ভেবে পাইনা। মেয়ে হয়ে জন্মেছি তাই অনেক কিছু মেনে নিতেই হবে এটা ভাবি। আমার নিজের অনার্স নামক একটি মোটামুটি মানের ডিগ্রী থাকলেও সেটা কোন কাজে আসে না কারণ আমার ভাইরা কেউ পড়ালেখা করে নি। তাই বিয়ের জন্য প্রস্তাব আসলেও আমি এখন আর আগ্রহ দেখাই না কারন জানি সব জানার পর তারা না করে দেবে। পাঠক হয়তো ভাবতে পারেন যে আমার বিয়ে হচ্ছেনা তাই ইনিয়ে বিনিয়ে এসব বলার চেষ্টা করছি। সত্যি বলতে আমার সেরকম কোন উদ্দেশ্য ও নেই। আমি বলতেও চাইনি। কিন্তু আমার পরিচিত একজন বলল এই ব্লগ এর কথা এবং তারই উৎসাহে এখানে একাউন্ট খুললাম। হয়তো আপনাদের মন্তব্য জেনে মনটা একটু হালকা হবে।
আমি আমার জন্মের পর থেকে যেসব কষ্ট নিয়ে বড় হয়েছি সেসব যদি লিখতে যাই তাহলে পাতার পর পাতা শেষ হয়ে যাবে কিন্তু আমার লেখা হয়তো শেষ হবে না। আর আপনাদের ও ধৈর্য্যে কুলোবে না। তাই সেকথা লিখতেও চাইনা। প্রাপ্তি আর অপ্রাপ্তির হিসাব যদি করতে যাই তাহলে দেখা যাবে অপ্রাপ্তির পাত্রটা এত ভারী যে তার তুলনায় প্রাপ্তির পাত্রটা কিছুই না। আগের লেখা পড়ে মনে হয় যেন আমি আমার ভাইদের উপর খুব রাগ বা ক্ষোভ নিয়ে আছি আসলে সেটা ঠিক নয়। আমি আসলে এই সমাজের মানুষের উপর ক্ষোভ নিয়ে কথা গুলো বলেছি যারা মেয়ে দেখতে গিয়ে শেষ পর্যন্তু দেখে তার বংশ পরিচয়, বাড়ি, সামাজিক প্রতিপত্তি এবং সর্বোপরি তার আত্মীয় স্বজন কে কি করে ইত্যাদি ইত্যাদি। মেয়ের যোগ্য হলেও যদি তার কোন কাছের আত্মীয়ের কোন সমস্যা থাকে সেটার জন্য ওই মেয়েকে ভুগতে হয়। বিশেষ করে যদি হয় সে মেয়ের ভাই বা বোন।
একসময় আমাদের অর্থনৈতিক অবস্থা বেশ ভালো ছিল। বাবা সরকারী চাকরি করতেন। খুব বেশি না হলেও কখনো অভাব নামক বস্তুটির সাথে পরিচয় হয়নি। তিন বেলা ঠিকমত খাওয়া আর মোটামুটি মানের কাপড় খুব ভালোই চলে যেত। একসময় ভাইয়েরা ব্যবসা শুরু করলে অবস্থা আরও খানিকটা ভালো হলো। খাবারদাবারের সংগে কাপড়চোপড় এর মানের আরও কিছুটা উন্নতি ঘটল। আমার বড় ভাই খানিকটা সৌখিন লোক। বাজারে কোন কাপড়টা খুব ভালো সেটা বোনের জন্য আনা চাই এমন একটা অবস্থাও ছিল একসময়। কিন্তু তার কখনোই টাকা জমানোর দিকে খেয়াল ছিল না । শুধু খরচ করতে জানত। আমার বাবাও খানিকটা এই প্রকৃতির মানুষ। অবসরে যাবার পর যা পেয়েছেন তা দিয়ে ছেলেদের ব্যবসা করতে দিয়েছেন। মেয়ের জন্য আলাদা করে কিছু রাখতে হবে সেটা কখনো তার মাথায় আসে নি। যাই হোক....ধীরে ধীরে ব্যবসায় ধ্বস নামে। সেটা নামতে নামতে এমন একটা পর্যায় এ এসে পড়েছে যে ভাবার বাইরে। আমি কখনো ভাবি নি যে এই অবস্থায় আমাদেরকে কোনদিন থাকতে হবে। সেই কথা না হয় আর নাই বা বললাম।
ভেবেছি যাই হোক....লেখাপড়া শিখেছি যা হোক কিছু একটা করে নিজে চলতে পারব। এই আশায় চাকরীর চেষ্টা চালাচ্ছি। কিন্তু সরকারী চাকরী??? সে তো সোনার হরিণ। আর মান সম্মান বাচিয়ে চলতে পারব এমন একটা চাকরীর চেষ্টা করে যাচ্ছি। দোয়া করবেন যাতে হয়ে যায়।
হয়তো আমার লেখা আপনাদের বিরক্ত করেছে। বেশ দীর্ঘও হয়ে গেছে। তাই ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি। আগামীতে হয়তো আবার লিখব। ভালো থাকবেন সবাই।

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।






