নিজের দেশ ছেড়ে বিদেশ থাকার যে কি কষ্ট সেটা যে না বিদেশ থাকে তারা কখনো বুঝবে না।ব্যাপারটা এমন যেনো আপনি নিজের বাসায় না ঘুমিয়ে অন্য কারো বাসায় আশ্রিত।আপনার সব আছে আবার কিছুই নাই।নিজের পরিবার ভাই বোন মা বাবা বন্ধুবান্ধব সবাইকে তো মিস করি। সে যাই হোক বিদেশে এসে বাংলাদেশের যেই কমন ব্যাপারগুলো মিস করি এটা নিয়া হবে আমার আজকের এই পোস্ট।
লোডশেডিং : পোলাপাইন দেখি ফেসবুক স্ট্যাটাসে প্রায় এটা নিয়া লিখে।আহারে এই ইউরোপে লোডশেডিংটা মিস করি খুব।এখানে এসে কোনোদিন এই জিনিসটা পাইলাম না লোডশেডিং হলে মোমবাতি জ্বালিয়ে পড়ার সেই দিন গুলোর কথা মনে পড়ে যায়।গরমের দিনে রাতে লোডশেডিং হলে ছাদে উঠে আড্ডা দেওয়ার সেই দিন গুলি ভুলি কি করে?এমন মরার দেশে থাকি ছাদে উঠার কোনো ব্যাবস্থা নাই।
সিগারেট: বাংলাদেশে থাকতে ৫৫৫ খাইতাম ।সুইজারল্যান্ডে এসে দেখি এই সিগারেটই নাই।নট ইভেন গোল্ডলিফ।সেই থেকে শুরু হলো মার্লবরো।যেহেতু স্টুডেন্ট ছিলাম টাকা পয়সা কম।বাংলাদেশের মতো পান দোকান থেকে ১ টা ১০ টা ভেংগে কিনার কোনো চান্স নাই।কিনলে পুরো প্যাকেট কিনতে হবে।বাংলাদেশের মোড়ে মোড়ে রেস্টুরেন্টের সামনের এই পান দোকানগুলি ও মিস করি।এইখানে যদি থাকতো সেরকম দোকানগুলো।
খাবার: সব চেয়ে বেশি মিস করি বাংলাদেশি খাবার।সপ্তাহের অন্যদিন গুলিতে হোস্টেলের ক্যান্টিনে খেতাম।সব সুইস ট্রাডিশনাল ফুড না হয় ইউরোপিয়ান কন্টিনেন্টাল ফুড।কিন্তু সানডে তে হতো প্রব্লেম।ব্রেকফাস্ট আর লান্চ মিলিয়ে দেওয়া হতো ব্রান্চ।এরপর ফুটবল খেলে এসে ২/৩ র দিকে যা ক্ষুদা লাগতো।বন্ধুরা কেউই পারিনা রান্না করতে।তখন বুঝেছি ভাতের কষ্টে মানুষ কেমন সাফার করে।এখন অবশ্য নিজেই রাধঁতে পারি।তবে নিজের প্লেট নিজে ধোয়া সব কিছু নিজে করতে হয়।ব্যাপারটা পেইনফুল হাজীর বিরিয়ানী স্টার কাবাবের কাবাব বেইলি রোডের ফাস্ট ফুড পুরান ঢাকার ফালুদা বোরহানী চটপটি ফুচকা কত দিন খাইনা।রাত ১২টায় ওয়াল টপকে জোনাকি হলের সামনের রাস্তার বানানো পরোটা ডাইল ভাজি ।আহা সেই যে আমার নানান রংগের দিন গুলি
ক্রিকেট: সবচেয়ে মিস করি ক্রিকেট খেলা।না পারি খেলতে না পারি মাঠে বসে বাংলাদেশের খেলা দেখতে।যদিও ফুটবল খেলছি মাগার ক্রিকেট খেলার কোন চান্সই নাই।আর খেলা দেখার একমাত্র উপায় হলো ইন্টেরনেট।
জন কোলাহল ঢাকা শহরের এতো মানুষের ভীড় দেখে বড় হলাম।ইউরোপে এসে দেখি পুরাই খালি।মনে হয় মানুষজনই নাই।২ জন মানুষও এক সাথে হাটে না।চারিদিকে ফাঁকা ফাঁকা লাগে।রাজনৈতিক দলের মিছিল চিল্লা ফাল্লা মানে শ্লোগান এসব দেখি না অনেকদিন।
যানবাহন: রিকশায় চড়ে ঢাকা শহরে ঘুরে বেড়ানোর মজাই আলাদা।সেটাও খুব মিস করি।বাস টেম্পু সব কিছু মিস করি।আমগো দেশে বাসে ছড়ে কন্ডাক্টারকে ভাড়া পরিশোধ করতাম আর এখানে আগেই টিকেট কিনে উঠো।কোনো কন্ডাক্টর নাই।মাগার টিকেট কেটে না উঠলে যদি একবার টিকেট চেকারের হাতে পড়ে জীবনে সেটা একটা দাগ হয়ে থেকে যাবে।
কোলবালিশ ও আমার কোলবালিশ: পোস্ট লেখার আগে একজনরে কইছিলাম কোলবালিশের কথা বাট পোস্ট লিখার সময় ভুলে গেছি।লাস্ট ঈদে আম্মু কইলো কি লগবে তোর আমি কইলাম একটা পান্জাবি আর একটা খেতা দিও।খেতার স্বাদ পুরুন হইছে কোলবালিশ এখনো বাকি।নিচে আরেকটা কথা কইলো বিডি আইডল ভ্রাতা সেটা হলো বদনা :লজ্জায় লিখি নাই
কৃ্ষ্ণকলি আমি তারেই বলিকালো? তা সে যতই কালো হোক...
দেখেছি তার কালো হরিণ চোখ।এই দেশে দেখি কত সাদা গোলাপী, হলুদ,লাল ড্যাম স্মার্ট ললনা। তবে মিস করি সেই আমার দেশের শ্যামা বরণ লাজুক লাজুক বঙ্গললনাদেরকেই। টিন এজ কালের ভালোলাগা পাশের বাড়ির বড় আপু, বাড়ির সামনে দিয়ে হেঁটে যাওয়া চোখাচোখি স্কুল ফেরতা মায়াবিনী। মিস করি বইমেলা পহেলা ফাল্গুনে ঝাঁকে ঝাঁকে হেঁটে যাওয়া আগুন রঙা শাড়ীপরা ললনাদেরকে। আরও আরও কত কত কাজল নয়না হরিণীদেরকে মিস করি। বর্ষাকালে ছাদে ভেজা ছাদকন্যা। নাহ তাদের কথা মনে করে আর মনে ব্যাথা বাড়াইতে চাইনা। তবে ফেসবুকের কল্যানে দুধের স্বাদ ঘোলে মেটাচ্ছি ইদানিং
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে জানুয়ারি, ২০১৩ রাত ১:১৪