somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ঈদের সেদিন এদিন

০৫ ই অক্টোবর, ২০০৮ সকাল ৯:১০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমার বাসাটা দশ তলার উপর। সেখানে বারান্দায় বসে বিকেলে সূর্য অস্ত যাওয়া দেখলে অথবা রাতের ঢাকা শহরের রাস্তা গুলোর দিকে তাকালে গাড়ীর আলো দেখে মনে হয় এ যেনো অন্য কোন শহর। দূরে বড় বড় দালান গুলোর চোখ ধাঁধানো আলো আর রাস্তার নিয়ন বাতি গুলোর নিচে বড় বেশি অন্য রকম লাগে সব কিছু। আমি একটা চেয়ার পেতে বসে সেই অচেনা ঢাকা শহর দেখতে দেখতে চিন্তার রাজ্যে হারিয়ে যাই। গাড়ীর হর্ন, ট্রেনের শব্দ, মানুষের কোলাহল সব মিলিয়ে একটা নেশা ধরানো ভাব। মনের মাঝে কোথায় যেনো সূতোর টান পড়ে। চিন্তাগুলো ডালপালা মেলে হারিয়ে যায়, টেনে নিয়ে যায় অন্য কোথাও।

আকাশে মেঘ। অনেক অভিমান নিয়ে আনাচে কানাচে জমা হয়েছে। কখনো জল ঝরায় তো কখনো জল মুছে নিয়ে যায়। ঈদের দিনটা এমন হবার কথা ছিলনা। তবু হয়ে গেল। আমি চেয়ার পেতে বারান্দায় বসে আছি। মনের মাঝে বিষন্ন একাকীত্বটা নিয়ে নাড়াচাড়া করছি আর ভাবছি আজ কি আসলেই ঈদের দিন ছিল? তাহলে মনটা এমন মরা মরা লাগছে কেন? সবুজ ঘাসগুলো ধূসর লাগছে কেন? কেন মনে হচ্ছে পৃথিবীর সবকিছুই সিলিং ফ্যানের ঝুল কালি মাখা পাখার মত ক্রমাগত একঘেয়ে আওয়াজ তুলে তুলে একই আবর্তে ঘুরছে? আশ্চর্য! অথচ ছোট বেলার ঈদ গুলো কত রঙ্গীন ছিল! কি যেন নাম দোকান টার............ সাড়ে বার টাকার দোকান। আজব নামটা রাখার কারন গাউসিয়া মার্কেটের এই দোকানটাতে সব খেলনার দাম ছিল সাড়ে বার টাকা। মায়ের হাত ধরে অল্প অল্প আলোর মাঝে দোকানটায় ঢুকলে মনে হতো আমি যেন সারা দুনিয়ার মালিক বনে গেছি। ঈদের আগে আগে সেখানে একবার যাওয়া চাইই চাই। টিনের গাড়ী, প্লাস্টিকের বাঁশি, অথবা স্প্রিং এর চাবি দেয়া হেলিকপ্টার। এখন এগুলো পাওয়া যায় বলে মনে হয়না। আমার ছেলেটাকে দেখি সারাখন শুধু MADE IN CHINA লেখা রিমোট কন্ট্রোল গাড়ী নিয়ে খেলছে। আর সেটাতে ক্লান্ত হয়ে গেলে কম্পিউটার। দিন বদলে গেছে বড্ড! আর হ্যাঁ, বাটার জূতো। নতুন জুতোর চামড়ার গন্ধটা এখনো নাকে লাগে। আর নতুন জামা প্যান্ট? সেগুলোরও কি গন্ধ ছিল? তা ছিল বৈকি। সারাটা রাত এসব পাশে নিয়েই ঘুমাতাম। আর ঈদের দিন কি কি করবো তা এক রাত আগেই স্বপ্নে দেখা শেষ! ঈদের দিনটায় পাড়ায় পাড়ায় চটপটির দোকান বসতো। এখনো সেগুলো আছে দেখি। চার আনা, আট আনায় আচার, ললিপপ কিংবা বেলুন। আর এক টাকায় সারা দুনিয়াটাই কেনা যেত মনে হয়! ওহহ...... বলতে তো ভুলেই গেছি, চাঁদ রাতের গল্পটা ছিল আরো মজার। দল বেঁধে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরতাম সবাই। সারাদিন হইচই করে ক্লান্ত; অন্য সময় হলে রাত আটটা বাজলেই ঘুম। কিন্তু ঈদের আগের রাতটায় এত উৎসাহ কোথাথেকে আসতো কে জানে! আতশ বাজী আর সোরগোলের মাঝে মাঝ রাত হয়ে যেত বড্ড তাড়াতাড়ি। তারপর বিছানায় জূতো, জামা আর খেলনা নিয়ে পরদিনের স্বপ্ন চোখে ঘুম।

চিন্তায় ছেদ পড়ল। একটা ট্রেন আসছে অনেক দূরে। গেইট ম্যান ব্যারিয়ারটা নামিয়ে দিয়েছে আগে আগেই। এত জলদি আটকানোর জন্য রাস্তায় ত্বারস্বরে চেঁচাচ্ছে একজন সি এন জি ড্রাইভার। আচ্ছা সি এন জ়ি-র রংটা এমন ধূসর লাগছে কেন? ওটার রঙ তো সবুজ হবার কথা। কেন মনে হচ্ছে এই ট্রেনটা চলে গেলে আরেকটা ট্রেন আসবে, তারপর আরেকটা, তারপর আরেকটা। ঘুরে ঘুরে আসতেই থাকবে। রাস্তার পিচগলা কালো শরীরটার উপর দিয়ে গাড়ী চলতেই থাকবে। আমিও ভাবতে থাকবো লাগামহীন আবোলতাবোল ভাবনা। আর হ্যাঁ, ঈদের খুশিটাও দিন দিন কমতে থাকবে। কমতে কমতে একদিন নিঃশেষ হয়ে যাবে। তখনো আমি ভাবতে থাকবো কি অসম্ভব সুন্দর ছিল ঈদের দিন গুলো! খুব খুব ভালো ব্যাপারগুলো কেন এতো তাড়াতাড়ি শেষ হয়ে যায়?

আকাশের আনাচে কানাচে মেঘগুলো বড্ড অভিমানী। কখনো জল ঝরায় তো কখনো জল মুছে দিয়ে যায়। ঝাপ্‌সা চোখের প্রতিসরণে রাস্তার নিয়ন আলো গুলো তরল দেখায়। মনে হয় চোখের জলগুলো সব কষ্টের আগুন হয়ে ঝরছে!
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই অক্টোবর, ২০০৮ সকাল ১০:৩৪
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জামাত কি দেশটাকে আবার পূর্ব পাকিস্তান বানাতে চায়? পারবে?

লিখেছেন ঋণাত্মক শূণ্য, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৭:২৮

অন্য যে কোন সময়ে জামাতকে নিয়ে মানুষ যতটা চিন্তিত ছিলো, বর্তমানে তার থেকে অনেক বেশী চিন্তিত বলেই মনে করি।



১৯৭১ এ জামাতের যে অবস্থান, তা নিঃসন্দেহে বাংলাদেশের অস্তিত্বের বিরুদ্ধে... ...বাকিটুকু পড়ুন

১৯৭১ সালে পাক ভারত যুদ্ধে ভারত বিজয়ী!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯


দীর্ঘ ২৫ বছরের নানা লাঞ্ছনা গঞ্জনা বঞ্চনা সহ্য করে যখন পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বীর বাঙালী অস্ত্র হাতে তুলে নিয়ে বীরবিক্রমে যুদ্ধ করে দেশ প্রায় স্বাধীন করে ফেলবে এমন সময় বাংলাদেশী ভারতীয়... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইন্দিরা গান্ধীর চোখে মুক্তিযুদ্ধ ও বাংলাদেশ-ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক: ওরিয়ানা ফলাচির সাক্ষাৎকার

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:৫৫


১৯৭২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ইতালীয় সাংবাদিক ওরিয়ানা ফলাচি ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর সাক্ষাৎকার নেন। এই সাক্ষাৎকারে মুক্তিযুদ্ধ, শরনার্থী সমস্যা, ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক, আমেরিকার সাম্রাজ্যবাদী পররাষ্ট্রনীতি এবং পাকিস্তানে তাদের সামরিক... ...বাকিটুকু পড়ুন

=যাচ্ছি হেঁটে, সঙ্গে যাবি?=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:০৬


যাচ্ছি হেঁটে দূরের বনে
তুই কি আমার সঙ্গি হবি?
পাশাপাশি হেঁটে কি তুই
দুঃখ সুখের কথা ক'বি?

যাচ্ছি একা অন্য কোথাও,
যেখানটাতে সবুজ আলো
এই শহরে পেরেশানি
আর লাগে না আমার ভালো!

যাবি কি তুই সঙ্গে আমার
যেথায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

আগামী নির্বাচন কি জাতিকে সাহায্য করবে, নাকি আরো বিপদের দিকে ঠেলে দিবে?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:১২



আগামী নির্বচন জাতিকে আরো কমপ্লেক্স সমস্যার মাঝে ঠেলে দিবে; জাতির সমস্যাগুলো কঠিন থেকে কঠিনতর হবে। এই নির্বাচনটা মুলত করা হচ্ছে আমেরিকান দুতাবাসের প্রয়োজনে, আমাদের দেশের কি হবে, সেটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

×