
বাংলাদেশে সাম্প্রতিক সময়ে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি উদ্বেগজনকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। সাধারণ জনগণের মধ্যে এক ধরনের আতঙ্ক বিরাজ করছে, কারণ প্রতিদিনই কোথাও না কোথাও চুরি, ডাকাতি, হত্যাকাণ্ড কিংবা রাজনৈতিক সহিংসতার ঘটনা ঘটছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী চেষ্টা করেও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পারছে না, বরং তাদের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন উঠছে। জনগণের মধ্যে ক্ষোভ বাড়ছে, এবং স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার পদত্যাগের দাবিও জোরালো হচ্ছে।
আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির এই অবনতির পেছনে নানা কারণ রয়েছে। অপরাধের মাত্রা বেড়ে গেছে, বিশেষ করে সন্ত্রাসী কার্যক্রম, চাঁদাবাজি এবং সংঘবদ্ধ অপরাধের হার আশঙ্কাজনকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের মধ্যেও দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে, যা পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলছে। অনেক ক্ষেত্রেই অপরাধীরা রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় থেকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাত থেকে রক্ষা পাচ্ছে। এর ফলে সাধারণ জনগণের মধ্যে পুলিশের কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে এবং তারা নিজেদের নিরাপত্তাহীন মনে করছে।
বিচারহীনতার সংস্কৃতি অপরাধ বাড়ার অন্যতম কারণ। অনেক অপরাধের বিচার হয় না, কিংবা বিচার প্রক্রিয়া এত দীর্ঘ যে অপরাধীরা আইনের ফাঁকফোকর গলিয়ে বেরিয়ে আসে। অপরাধীরা যদি শাস্তি না পায়, তবে তারা আরও বেপরোয়া হয়ে ওঠে এবং একই ধরনের অপরাধের পুনরাবৃত্তি ঘটে। সাধারণ নাগরিকরা যখন দেখে যে অপরাধীরা নির্বিঘ্নে ঘুরে বেড়াচ্ছে, তখন তারা হতাশ হয়ে পড়ে এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতি তাদের আস্থা কমে যায়।
সামাজিক ও অর্থনৈতিক বৈষম্যও অপরাধ বৃদ্ধির অন্যতম কারণ। বেকারত্ব ও দারিদ্র্যের কারণে অনেক তরুণ অপরাধের দিকে ঝুঁকছে। সহজে টাকা উপার্জনের লোভে তারা চাঁদাবাজি, মাদক ব্যবসা কিংবা সন্ত্রাসী কার্যক্রমে যুক্ত হচ্ছে। সরকারের পক্ষ থেকে কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং তরুণদের জন্য উন্নয়নমূলক কার্যক্রম পরিচালিত না হলে এই সমস্যা আরও ঘনীভূত হবে।
জনগণের ক্ষোভের বড় একটি কারণ হলো সরকারের ব্যর্থতা। বিশেষ করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিরা যখন আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়নে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থ হন, তখন তাদের প্রতি জনগণের আস্থা নষ্ট হয়। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার ব্যর্থতার কারণেই বর্তমানে তার পদত্যাগের দাবি উঠেছে। জনগণ চায়, প্রশাসনের উচ্চপর্যায়ের ব্যক্তিরা যদি আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে না পারেন, তবে তাদের পদ থেকে সরে যাওয়া উচিত।
এই সংকট মোকাবিলায় দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে, যাতে তারা কোনো ধরনের দুর্নীতি কিংবা অনিয়মে জড়িত না হয়। অপরাধীদের দ্রুত ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে, যাতে অপরাধপ্রবণতা কমে আসে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ওপর রাজনৈতিক প্রভাব বন্ধ করতে হবে, যাতে তারা স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারে। জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সরকারকে আরও কঠোর অবস্থান নিতে হবে এবং দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা করতে হবে।
বর্তমান পরিস্থিতি শুধু আইনশৃঙ্খলার অবনতির বিষয় নয়, এটি সামগ্রিকভাবে দেশের নিরাপত্তা, অর্থনীতি ও সামাজিক স্থিতিশীলতার জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। যদি অবিলম্বে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া না হয়, তবে অপরাধ আরও বাড়বে এবং জনগণের মধ্যে ক্ষোভ তীব্রতর হবে। সরকারের উচিত দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়ন নিশ্চিত করা, যাতে জনগণের আস্থা ফিরে আসে এবং দেশের সামগ্রিক স্থিতিশীলতা বজায় থাকে।
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ রাত ১০:৩৫

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।


