
রমজান মাস মুসলিম সম্প্রদায়ের জন্য আত্মসংযম, ইবাদত এবং ধৈর্যের মাস। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে এই পবিত্র মাস উপলক্ষে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম কমিয়ে জনগণকে স্বস্তি দেওয়ার রীতি থাকলেও, বাংলাদেশে এর চিত্র সম্পূর্ণ ভিন্ন। বরং রমজান শুরুর আগেই বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্যবৃদ্ধির হিড়িক পড়ে যায়, যা সাধারণ ক্রেতাদের জন্য বড় ধরনের বোঝা হয়ে দাঁড়ায়।
এবারও এর ব্যতিক্রম হয়নি। বাজারে বোতলজাত সয়াবিন তেলের কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি হয়েছে, যার ফলে দাম বেড়ে গেছে। বাজার ঘুরে দেখা যায়, প্রয়োজনীয় পরিমাণ তেল আমদানি হলেও দোকানে সহজে মিলছে না, আর মিললেও অতিরিক্ত টাকা গুনতে হচ্ছে। এ অবস্থা শুধুমাত্র সয়াবিন তেলের ক্ষেত্রে নয়, অন্যান্য ভোগ্যপণ্যের ক্ষেত্রেও লক্ষ করা যাচ্ছে। মসলা, ছোলা, সবজি, মাছ-মাংসসহ প্রায় সবকিছুর দাম রমজানকে কেন্দ্র করে অস্বাভাবিক হারে বাড়ছে।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, চাহিদা অনুযায়ী সরবরাহ না থাকায় দাম বেড়েছে। কিন্তু জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের তথ্যমতে, জানুয়ারি মাসেই বিপুল পরিমাণ সয়াবিন তেল আমদানি হয়েছে, যা গত ছয় বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। তাহলে প্রশ্ন ওঠে, এই কৃত্রিম সংকট কারা তৈরি করছে? বাজারে বড় সিন্ডিকেট সক্রিয় বলে অভিযোগ উঠেছে, কিন্তু সরকারের পক্ষ থেকে কার্যকর পদক্ষেপের অভাব স্পষ্ট।
এদিকে সবজির বাজারেও অস্থিরতা বিরাজ করছে। শসা, আলু ও মসলার দাম বেড়েছে। পেঁয়াজ, রসুন ও আদার দামও আগের তুলনায় বেশি। বিশেষ করে এলাচের দাম হঠাৎ করেই অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে গেছে, যা মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত শ্রেণির জন্য চরম ভোগান্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। মাছ-মাংসের দাম স্থিতিশীল থাকলেও, মুরগির দাম কিছুটা বেড়েছে, যা নিম্নআয়ের মানুষের জন্য দুশ্চিন্তার কারণ।
একজন সচেতন নাগরিক হিসেবে এ অবস্থা সত্যিই উদ্বেগজনক। সরকারের উচিত বাজার নিয়ন্ত্রণে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া। অসাধু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে জরুরি ভিত্তিতে অভিযান চালানো দরকার। একই সঙ্গে, বাজারে পণ্যের সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেওয়া উচিত। রমজান মাস সংযমের মাস, এটি মুনাফা লোটার মাস নয়। ব্যবসায়ীদের নৈতিকতা ও দায়িত্ববোধের জায়গা থেকে ভাবতে হবে—পণ্য মজুদ করে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করা এক ধরনের অন্যায়।
বাজার নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব পুরোপুরি সরকার এবং ব্যবসায়ীদের। সাধারণ জনগণের এতে করার কিছু নেই, কারণ তারা শুধুমাত্র ভোক্তা। সরকারের উচিত কঠোরভাবে বাজার তদারকি করা এবং অসাধু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা। অন্যদিকে, ব্যবসায়ীদেরও দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে হবে, যাতে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি না হয় এবং সাধারণ মানুষ ভোগান্তির শিকার না হয়।
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ রাত ৮:৩৯

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।


