
রাত যত গভীর হয়, ঢাকার গলিঘুপচি ততই রহস্যময় হয়ে ওঠে। আধিপত্য বিস্তার, চাঁদাবাজি, প্রতিশোধ, এমনকি সামান্য ধাক্কা লাগার মতো ঘটনাও রক্তক্ষয়ের কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে। শহরের অলিগলিতে এখন আর শুধু ছুরি বা চাপাতির খেলা নয়, গুলির শব্দই যেন পরিচিত সুর হয়ে উঠেছে।
গত কয়েক মাসে একের পর এক গোলাগুলির ঘটনায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে নগরজীবনে। মিরপুর, যাত্রাবাড়ী, বনশ্রী, হাতিরঝিল— রাজধানীর এমন কোনো কোণ নেই যেখানে এই ভয়াবহতা পৌঁছেনি। একেকটি ঘটনা যেন ভিন্ন ভিন্ন গল্প বলে, কিন্তু প্রতিটিই আন্ডারওয়ার্ল্ডের অদৃশ্য চক্রের ইঙ্গিত দেয়।
গত ২৫শে ফেব্রুয়ারি রাতে সুতি খালপাড় এলাকায় মোহাম্মদ জাহিদকে গুলি করা হয়। একদল ছিনতাইকারী তাকে লক্ষ্য করে গুলি ছুড়েছিল। আবার মিরপুরে, জসিম উদ্দিন ও তার বোন শাহিনুর বেগম শুধুমাত্র সোহাগ নামে এক কুখ্যাত অপরাধীকে ধরিয়ে দেওয়ার কারণেই প্রতিশোধের শিকার হন। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওয়ার্ডগুলিতে গুলিবিদ্ধদের আর্তনাদ যেন অপরাধের এক নীরব সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়েছে।
গোলাগুলির এই প্রবণতা কি হঠাৎ করেই শুরু হলো? মোটেও না। বিশ্লেষকরা বলছেন, এটি একটি দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার অংশ। অবৈধ অস্ত্রের প্রবাহ বাড়ছে, এবং শহরের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বিভিন্ন গ্যাং নিজেদের নিয়ন্ত্রণ কায়েম করতে মরিয়া হয়ে উঠেছে। মাদক, চাঁদাবাজি, এবং স্থানীয় ব্যবসার দখল নিয়ে লড়াইয়ের পাশাপাশি, রাজনৈতিক মদদপুষ্ট বাহিনীও এই সংঘাতকে উস্কে দিচ্ছে।
ঢাকার আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও হাত গুটিয়ে বসে নেই। চেকপোস্ট বসানো, পেট্রোলিং জোরদার, এবং গোয়েন্দা নজরদারি আরও শক্তিশালী করা হয়েছে। একইসঙ্গে ‘অপারেশন ডেভিল হান্ট’ নামের একটি বিশেষ অভিযান চালানো হচ্ছে, যেখানে সেনাবাহিনী, র্যাব, ডিবি পুলিশ একত্রে কাজ করছে। তবে প্রশ্ন থেকেই যায়, এত কিছুর পরও কেন এই তাণ্ডব থামছে না?
সাধারণ মানুষের জীবন এখন আতঙ্কের বেড়াজালে আটকে আছে। দিনের আলোয় ব্যস্ত রাস্তা, অফিস ফেরত মানুষের ভিড়, কিংবা মধ্যরাতের জনশূন্য গলি— কোথাও নিরাপত্তা নিশ্চিত নয়। গুলি চলার শব্দ যেন ঢাকার রাতের অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে উঠছে।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে আরও তৎপর হতে হবে। শুধু চেকপোস্ট বসানো বা টহল জোরদার করাই যথেষ্ট নয়, সন্ত্রাসীদের নেটওয়ার্ক চিহ্নিত করে তাদের সম্পূর্ণভাবে ভেঙে দিতে হবে।
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা মার্চ, ২০২৫ বিকাল ৫:১১

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।


