
বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন মাত্রা যোগ করেছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। গণ-অভ্যুত্থানের নেতৃত্ব দেয়া ছাত্রদের দলটি আনুষ্ঠানিক আত্মপ্রকাশের আগ থেকেই নির্বাচনী কৌশল নির্ধারণে সক্রিয় ছিল। বিভিন্ন রাজনৈতিক শক্তির সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি নিজেদের অবস্থান সুদৃঢ় করাই ছিল তাদের প্রাথমিক লক্ষ্য। বর্তমানে দলটি বিএনপিসহ চারটি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে নির্বাচনী জোট নিয়ে আলোচনায় রয়েছে।
প্রাথমিক সূত্রগুলো জানিয়েছে, বিএনপি এনসিপিকে তাদের নির্বাচনী জোটে অন্তর্ভুক্ত করতে চায় এবং ২০-২৫টি আসন দিতে পারে। অন্যদিকে, জামায়াত ইসলামি এবং তাদের সমমনা দলগুলো এনসিপিকে নিজেদের জোটে যুক্ত করার চেষ্টা করছে। তবে এনসিপি’র একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ জামায়াতের সঙ্গে কোনো আনুষ্ঠানিক জোট গড়তে অনিচ্ছুক। তারা তুলনামূলকভাবে বিএনপিসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে জোট গঠনে আগ্রহী।
বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে এই নতুন দলটি একটি পাওয়ার ফ্যাক্টর হয়ে উঠতে পারে। শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অধীনে রাজনৈতিক কাঠামোতে পরিবর্তনের সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছে। সরকারের পরিকল্পনা অনুযায়ী আগামী ডিসেম্বর থেকে মার্চের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি বিবেচনায় ধরে নেওয়া যায়, আগামী সংসদ একটি ঝুলন্ত সংসদ হতে পারে যেখানে কোনো দল একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করতে পারবে না। এই বাস্তবতায় এনসিপি’র ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে।
বিশ্লেষকদের মতে, বিএনপি যদি এনসিপিকে প্রয়োজনীয় নিশ্চয়তা দেয়, বিশেষ করে আন্দোলনে নেতৃত্ব দেয়া ছাত্রদের ভবিষ্যৎ নিরাপত্তা নিশ্চিত করে, তাহলে দুই দল একত্রিত হয়ে সরকার গঠনের সম্ভাবনা রয়েছে। বিএনপির জন্য এটি একটি কৌশলগত সুযোগ, কেননা তারা ছাত্রদের ওপর নির্ভরশীল এবং তাদের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখার চেষ্টা করে আসছে।
অন্যদিকে, জামায়াত ইসলামি নিজস্ব সমর্থকগোষ্ঠী নিয়ে একটি বৃহৎ জোট গঠনের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। যদিও তারা এনসিপিকে নিজেদের সঙ্গে আনতে চায়, তবে এনসিপির ভেতরে থাকা কিছু অংশ তাদের সঙ্গে জোট বাঁধতে রাজি নয়। যদি এনসিপি জামায়াত ছাড়া বিএনপির সঙ্গে একত্রিত হয়, তাহলে এটি দেশের রাজনৈতিক ভারসাম্যে বড় পরিবর্তন আনতে পারে।
রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন, এনসিপি একাধিক দলের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাওয়ার মাধ্যমে নিজেদের কৌশলগত অবস্থান শক্তিশালী করছে। তাদের লক্ষ্য সরকার গঠনের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করা।
সামগ্রিকভাবে, বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে এনসিপির আবির্ভাব এবং তাদের সম্ভাব্য জোট গঠন একটি নতুন রাজনৈতিক সমীকরণ তৈরি করেছে। আগামীর দিনগুলোতে এনসিপি কী সিদ্ধান্ত নেয় এবং তারা শেষ পর্যন্ত কোন জোটে যুক্ত হয়, সেটিই হবে গুরুত্বপূর্ণ। তবে একটি বিষয় স্পষ্ট—এনসিপি বর্তমান রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে চলেছে এবং আগামী সংসদ নির্বাচনে তারা একক সংখ্যা না পেলেও নির্ধারক শক্তি হিসেবে আবির্ভূত হতে পারে।
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা মার্চ, ২০২৫ দুপুর ২:১১

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।


