
সম্প্রতি বাংলাদেশে রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে নতুন করে আলোচনা শুরু হয়েছে। জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)-এর আহ্বায়ক নাহিদ ইসলামের একাধিক বক্তব্য এবং অন্যান্য রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের অভিমত থেকে বোঝা যাচ্ছে, দেশে একটি বিপ্লবী সরকার গঠনের সম্ভাবনা নিয়ে জল্পনা-কল্পনা চলছে।
নাহিদ ইসলাম তাঁর সাম্প্রতিক এক সাক্ষাৎকারে উল্লেখ করেছেন যে, বর্তমান পরিস্থিতিতে নির্বাচন আয়োজন সম্ভব নয় এবং সরকার পরিচালনায় প্রভাবশালী রাজনৈতিক শক্তিগুলো সংস্কারপ্রক্রিয়ায় আগ্রহী নয়। একই সঙ্গে তিনি বলেছেন, এনসিপি একটি দীর্ঘমেয়াদি রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে নিজেদের গড়ে তুলতে চায়, যা আগামী কয়েক দশক প্রভাব বজায় রাখবে।
এরই মধ্যে বিভিন্ন মহলে আলোচনা চলছে যে, দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি একটি পূর্বপরিকল্পিত কৌশলের অংশ কি না। কিছু বিশ্লেষকের মতে, অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতাচ্যুত সরকারের বিচার সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত নির্বাচন স্থগিত রাখা হতে পারে। সার্জিস আলমের সাম্প্রতিক মন্তব্য, যেখানে তিনি বলেছেন ‘হাসিনার বিচার শেষ না হওয়া পর্যন্ত কোনো নির্বাচন হবে না’, এটি সেই পরিকল্পনারই একটি ইঙ্গিত হতে পারে।
তবে মূল বিতর্ক তৈরি হয়েছে সম্ভাব্য বিপ্লবী সরকার নিয়ে। কিছু মহল দাবি করছে, বর্তমান সংবিধান স্থগিত করে অন্তর্বর্তী সরকার ভেঙে দিয়ে ড. ইউনূসকে প্রেসিডেন্ট করে একটি বিপ্লবী সরকার গঠনের পরিকল্পনা চলছে। ধারণা করা হচ্ছে, এই সরকার পাঁচ থেকে সাত বছর ক্ষমতায় থেকে প্রয়োজনীয় সব ধরনের সংস্কার কার্যক্রম সম্পন্ন করবে, তারপর একটি নির্বাচন আয়োজন করা হবে। এমনকি এই নির্বাচনেও ছাত্র নেতৃত্বাধীন রাজনৈতিক শক্তিকে ক্ষমতায় আনার পরিকল্পনার কথাও শোনা যাচ্ছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, যদি সত্যিই একটি বিপ্লবী সরকার গঠনের উদ্যোগ নেওয়া হয়, তবে এটি বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে একটি নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপন করবে। তবে একই সঙ্গে এটি সাংবিধানিক স্থিতিশীলতার জন্য হুমকিও হতে পারে। বিপ্লবী সরকার গঠনের পক্ষে যারা কথা বলছেন, তারা মনে করেন, এই মডেলেই কেবল বাংলাদেশ কাঙ্ক্ষিত সংস্কার ও সুশাসন অর্জন করতে পারবে। অন্যদিকে, এর বিরোধীরা বলছেন, এটি দেশে দীর্ঘমেয়াদি অনিশ্চয়তা সৃষ্টি করতে পারে এবং নতুন রাজনৈতিক অস্থিরতার জন্ম দিতে পারে।
এনসিপির সাম্প্রতিক কার্যক্রমও কিছু প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। তাদের এক সদস্যকে সমকামীদের অধিকার নিয়ে কাজ করার কারণে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে, যা তাদের ‘অন্তর্ভুক্তিমূলক’ রাজনৈতিক অবস্থানের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয় বলে অনেকে মনে করছেন।
সব মিলিয়ে বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি এক নতুন মোড় নিতে পারে। তবে এটি বিপ্লবী সরকারের মাধ্যমে হবে, নাকি একটি নতুন রাজনৈতিক সমঝোতার মধ্য দিয়ে, তা এখনো স্পষ্ট নয়। দেশের ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে রাজনৈতিক শক্তিগুলোর পরবর্তী পদক্ষেপের ওপর।
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই মার্চ, ২০২৫ সকাল ৯:৪০

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।


