
প্রতিকী ছবি
বছরের পর বছর, একই চিত্র। ঈদ আসলেই তৈরি পোশাক খাতের কিছু শ্রমিকদের জন্য আনন্দের বদলে বেঁচে থাকার লড়াই শুরু হয়। মালিকরা নির্দিষ্ট সময়ে বেতন-বোনাস পরিশোধ করতে ব্যর্থ হন, কারখানার সামনে শ্রমিকদের বিক্ষোভ, রাস্তা অবরোধ—এই গল্প যেন এক পুরনো ধারাবাহিক নাটকের মতোই বারবার ফিরে আসে।
সম্প্রতি টিএনজেড গ্রুপের শ্রমিকদের বকেয়া পরিশোধ নিয়ে যে অস্থিরতা সৃষ্টি হয়েছে, তা শুধু একটি কারখানার গল্প নয়; এটি পুরো পোশাক শিল্পের একটি দীর্ঘদিনের সমস্যা। কোম্পানিটি তাদের শ্রমিকদের বেতন-বোনাস দিতে ব্যর্থ হয়েছে, মালিকপক্ষ বিদেশে অবস্থান করছে, আর বাকি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা আইনের নজরদারিতে। ফলে শ্রমিকদের ঈদের খুশি বিষাদে পরিণত হয়েছে।
প্রশ্ন হলো, কেন প্রতি বছর এই একই সমস্যা দেখা দেয়? গার্মেন্টস মালিকরা কি একেবারেই অপ্রস্তুত থাকেন, নাকি শ্রমিকদের অধিকার নিয়ে তাদের আন্তরিকতার অভাব রয়েছে? অধিকাংশ কারখানা যেখানে সময়মতো বেতন-বোনাস পরিশোধ করতে পারে, সেখানে কিছু কারখানা কেন ব্যর্থ হয়? শ্রমিকদের অধিকার নিশ্চিত করার জন্য কি কোনো কার্যকরী পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে?
বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাত দেশের অর্থনীতির অন্যতম প্রধান চালিকা শক্তি। কিন্তু এই খাতের শ্রমিকরাই যখন বছরের সবচেয়ে আনন্দঘন মুহূর্তে নিজেদের পাওনা টাকা নিয়ে অনিশ্চয়তায় ভোগেন, তখন এটি পুরো ব্যবস্থাপনার একটি ভয়াবহ চিত্র তুলে ধরে। সরকার এবং বিজিএমইএ যদিও বিষয়টি সমাধানের আশ্বাস দেয়, কিন্তু শ্রমিকদের দুর্ভোগ যেন শেষ হয় না। অনেক সময় দেখা যায়, কারখানা মালিকরা ব্যর্থ হলে সরকার নিজ উদ্যোগে অর্থ বরাদ্দ দেয়, কিন্তু এটি কি টেকসই সমাধান?
শ্রমিকদের মধ্যে ক্ষোভ জমে থাকা স্বাভাবিক। তারা দিনরাত কঠোর পরিশ্রম করেন, অথচ তাদের প্রাপ্য অর্থ সময়মতো পান না। একদিকে ঈদের আনন্দ, অন্যদিকে পরিবারের চাহিদা মেটানোর চাপ—এই দ্বন্দ্ব তাদের মানসিকভাবে বিপর্যস্ত করে তোলে। টিএনজেড গ্রুপের শ্রমিকদের মতো হাজারো শ্রমিক প্রতিবছর একই সমস্যার সম্মুখীন হন। তারা ঈদের আগেও রাস্তায় বসে আন্দোলন চালিয়ে যেতে বাধ্য হন।
এই সমস্যার একটি স্থায়ী সমাধান দরকার। প্রথমত, শ্রমিকদের বেতন ও বোনাস পরিশোধের জন্য কারখানাগুলোকে কঠোর নিয়মের মধ্যে আনতে হবে। মালিকরা যেন আগেভাগেই এই খরচের ব্যবস্থা করেন, সে বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে। বিজিএমইএ এবং শ্রম মন্ত্রণালয়কে আরও কঠোর ভূমিকা পালন করতে হবে।
দ্বিতীয়ত, শ্রমিকদের ন্যায্য পাওনা পরিশোধ নিশ্চিত করার জন্য একটি কেন্দ্রীয় তহবিল গঠন করা যেতে পারে, যেখান থেকে প্রয়োজনে শ্রমিকদের বেতন পরিশোধ করা হবে এবং পরবর্তীতে তা মালিকদের থেকে আদায় করা হবে।
তৃতীয়ত, মালিকপক্ষের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে। অনেক সময় মালিকরা শ্রমিকদের পাওনা পরিশোধ না করেই বিদেশে পালিয়ে যান, যা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। মালিকদের দেশে থাকার বাধ্যবাধকতা এবং কারখানা চালানোর জন্য একটি নির্দিষ্ট অর্থ সংরক্ষণ বাধ্যতামূলক করা যেতে পারে।
শ্রমিকদের ঈদের আনন্দ ছিনিয়ে নেওয়ার এই চক্র ভাঙতে হবে। গার্মেন্টস খাতের উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করতে হলে শ্রমিকদের মৌলিক অধিকার রক্ষা করা জরুরি। যদি তারা সঠিকভাবে তাদের প্রাপ্য পায়, তবেই এই শিল্প এগিয়ে যাবে। অন্যথায়, প্রতিবছর এই অস্থিরতা চলতেই থাকবে, আর শ্রমিকদের ঈদ রাস্তায় কাটবে।
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে মার্চ, ২০২৫ রাত ৩:২৯

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




