
২০২৫ সালের অন্তবর্তীকালীন সরকার, বিএনপি ও অন্যান্য রাজনৈতিক দলের অবস্থান, এবং জাতীয় নির্বাচন ঘিরে সম্ভাব্য রাজনৈতিক কৌশল নিয়ে একটি বিশ্লেষণধর্মী ব্লগ। জানুন ঈদের পর বাংলাদেশের রাজনীতিতে কী ঘটতে পারে।
২০২৫ সালের জুন মাস। গরমে ঝলসে ওঠা এই সময়ে বাংলাদেশের রাজনীতিও যেন উত্তপ্ত বাতাসে ঝলকাচ্ছে। গত ০২ জুন, দেশের অন্তবর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস এক দফা বড় পদক্ষেপ নিলেন। তিনি সরাসরি দেশের ২৬টি রাজনৈতিক দলের সাথে বসেছিলেন। উদ্দেশ্য – একটি জাতীয় নির্বাচন নিয়ে সংলাপ। কিন্তু এই সংলাপ শেষ হতে না হতেই রাজনৈতিক অঙ্গনে শুরু হয়ে গেছে তীব্র আলোড়ন।
এই বৈঠকে দেখা গেলো, ২৬টি দলের মধ্যে ২৩টি দল (এর মধ্যে বিএনপি অন্যতম) চাচ্ছে ডিসেম্বর ২০২৫ বা তার আগেই জাতীয় নির্বাচন হোক। অপরদিকে, মাত্র তিনটি দল ভিন্নমত পোষণ করেছে। এর মধ্যে অন্যতম এনসিপি (যা ড. ইউনূসের নিজ দলের নাম) এবং জামায়াতে ইসলামি। জামায়াত বলছে, তারা এপ্রিল ২০২৬-এর মধ্যে নির্বাচন চায়। আর এনসিপি বলছে, তারা 'জুলাই চার্টার' ঘোষণা করে তারপর নির্বাচন চায়।
এই বৈঠকের আগে জাপান সফরকালে এক আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে প্রধান উপদেষ্টা মন্তব্য করেছিলেন, “শুধু একটি দল (বিএনপি) ডিসেম্বর মাসে নির্বাচন চায়, অন্যরা আগ্রহী নয়।” এই বক্তব্যে রাজনীতির পালে আগুন লেগে যায়। বিএনপি নেতা মির্জা আব্বাস পাল্টা বলেন, “বর্তমানে শুধু একজন ব্যক্তি নির্বাচন চান না, তিনি হলেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস।”
এখন প্রশ্ন হলো, সরকার কি ২৩টি দলের দাবিকে সম্মান জানাবে, নাকি নিজেদের ‘সংস্কার-এজেন্ডা’ বাস্তবায়নের নামে সময়ক্ষেপণ করবে?
সরকার ও এনসিপির সামনে এখন কিছু সম্ভাব্য পথ খোলা আছে – যেগুলোর প্রত্যেকটি বাংলাদেশের রাজনীতিকে আরও জটিল ও অনিশ্চিত করে তুলতে পারে। নিচে সংক্ষেপে কিছু বিশ্লেষণ তুলে ধরা হলো:
১. জুলাই চার্টার এবং বিপ্লবী সরকার গঠনের ছক:
সরকার একটি ‘বিপ্লবী সরকার’ গঠন করতে পারে। এতে করে নির্বাচন দীর্ঘ সময় পিছিয়ে যাবে, বর্তমান সংবিধান অকার্যকর হয়ে পড়বে এবং তারা নতুন রাষ্ট্রপতি, এমনকি সেনাপ্রধানও পরিবর্তন করতে সক্ষম হবে।
২. স্থানীয় সরকার নির্বাচনের মাধ্যমে সময়ক্ষেপণ:
এনসিপি হয়তো ঈদের পর স্থানীয় সরকার নির্বাচন নিয়ে মাঠে নামবে। এতে একদিকে জাতীয় নির্বাচন ইস্যু চাপা পড়ে যাবে, অন্যদিকে এনসিপি স্থানীয় পর্যায়ে ক্ষমতা কুক্ষিগত করার সুযোগ পাবে।
৩. নির্বাচন কমিশন ইস্যু ঘিরে নাটক:
বর্তমান নির্বাচন কমিশনকে ‘পক্ষপাতদুষ্ট’ আখ্যা দিয়ে সরকার হয়ত নতুন কমিশন গঠনের প্রক্রিয়া শুরু করতে পারে – যা আরও সময় নেবে এবং ডিসেম্বর নির্বাচন বাস্তবায়ন অসম্ভব হয়ে উঠবে।
৪. মামলার ফাঁদ ও চাপ সৃষ্টি:
২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার আপিল অনুমোদনের মাধ্যমে তারেক রহমানসহ বিএনপি নেতাদের উপর চাপ সৃষ্টি করা হতে পারে। এতে করে বিএনপি শেষ পর্যন্ত সমঝোতায় বাধ্য হতে পারে।
৫. জামায়াতকে ‘নিরপেক্ষ’ করে রাখা:
দলীয় প্রতীক ফিরে না পাওয়ায় জামায়াত এখনো সরকারের বিরুদ্ধে যায়নি। সরকার এই ‘নির্বল’ অবস্থা কাজে লাগিয়ে জামায়াতকে নিজেদের ছাতার নিচে রাখতে চাইবে।
এই মুহূর্তে বাংলাদেশের রাজনীতি যেন দাবার এক জটিল খেলা। প্রতিটি পক্ষ নিজেদের চাল ঠিক করতে ব্যস্ত। সাধারণ মানুষ হিসেবে আমরা বুঝতে পারছি, সামনে হয়তো দুটি বড় দৃশ্যপট দেখা যাবে:
প্রথমত, সরকার রাজনৈতিক চাপের মুখে ডিসেম্বরের মধ্যে জাতীয় নির্বাচনের ঘোষণা দেবে।
দ্বিতীয়ত, সরকার নিজেদের সংস্কার ও বিচার-এজেন্ডা বাস্তবায়নের অজুহাতে নির্বাচন দীর্ঘদিন পিছিয়ে দেবে এবং রাজনৈতিক মাঠকে আরো ঘোলাটে করে তুলবে।
বাংলাদেশের ইতিহাস বলে, যখন একপক্ষ ক্ষমতা আঁকড়ে ধরতে চায় এবং অপরপক্ষ তীব্র আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়ে—তখন জনসাধারণের দুর্ভোগ বাড়ে, রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলো চাপের মুখে পড়ে এবং সমাজে বিভাজন গভীর হয়।
ঈদের পরের সময়টা রাজনৈতিক দিক থেকে চরম গুরুত্বপূর্ণ হতে চলেছে। আমরা যারা সাধারণ মানুষ, তারা এখনো অপেক্ষা করছি—এই গরমের পর রাজনীতির আকাশে কি শান্তির বৃষ্টি নামবে, নাকি উঠবে নতুন কোনো ঘূর্ণিঝড়?

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।


