somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

একজন সুফিয়ার কাঙালিনী হয়ে উঠার গল্প

২৪ শে জানুয়ারি, ২০১২ রাত ১:২৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ছোটবেলায় যেখানেই বায়োস্কোপ হত সেখানেই ছুটে চলে যেতেন তা উপভোগ করতে। বায়োস্কোপ, সিনেমা, যাত্রা ইত্যাদির শিল্পীদের দেখলে তার খুব হিংসে হত। মনে হত যদি তাদের মত হতে পারতেন তাহলে কতই না ভালো হত! সিনেমাতে গান গাওয়ার শখ সে ছোটবেলা থেকে ছিল। মাত্র ১৪ বছর বয়স থেকে গানের হাতে খড়ি। পরিবারের অন্য কেউ গান করতেন না। সেই সময়ের কথা যখন মেয়েদের এত স্বাধীনতা ছিল না। সমাজ, পরিবারের সকল বাধা অতিক্রম করে যে মেয়েটি মাত্র ১৪ বছর বয়সে সুফিয়া নামে গান গাওয়া শুরু করেছিলেন তিনি আজ সবার কাছে কাঙ্গালিনী সুফিয়া নামে পরিচিত। লোরক সোসাইটির আমন্ত্রণে কিছুদিন আগে তিনি এসেছিলেন আমাদের প্রিয় প্রাঙ্গনে। তার সাথে আলাপচারিতার মাধ্যমে আমরা জানতে পারি তার কাঙ্গালিনী সুফিয়া হয়ে উঠার গল্প। চলুন জেনে নেই সেই আলাপচারিতার কিছু চুম্বক অংশ। আলাপচারিতাটি তুলে ধরেছেন- তারেকুল ইসলাম এবং ছবি এঁকেছেন- রাশেদ মাহমুদ


একনজড়েঃ
নামঃ কাঙ্গালিনী সুফিয়া
বয়সঃ আনুমানিক ৭৫-৭৭
জন্মস্থানঃ রামদিয়া, রাজবাড়ি
ভাই-বোনঃ এক বোন, এক ভাই (মোট ৩ জন)
প্রিয় খাবারঃ কাঁটা ছাড়া মাছ, বিরানী
প্রথম উপার্জনঃ ১০০০-২০০০ টাকা
যাঁর গান ভালো লাগেঃ লালন ফকির, আব্দুল আলীম
গুরুঃ দেবেন থাপা, গৌর মোহন্ত
নিজের গাওয়া প্রিয় গানঃ বুড়ি হইলাম তোর কারণে, কোন বা পথে নিতাই গঞ্জে যাই, আমার ভাঁটি গাঙের নাইয়া।
গান গাওয়া শুরুঃ ১৪ বছর বয়স থেকে
মোট রচিত গানঃ প্রায় ৫০০
প্রথম সিনেমার গানঃ রাজ সিংহাসন
ভ্রমণকৃত দেশঃ যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, দক্ষিণ কোরিয়া, থাইল্যান্ড, চীন, ভারত।
বর্তমান নিবাসঃ জয়পাড়া, সাভার, ঢাকা।


আলাপচারিতাঃ
লোরকঃ কেমন আছেন?
কা সুফিয়াঃ আছি ঐ মোটামুটি। কিন্তু ঐ খাদ্যখানা খাইতে পারি না। ভাত বেন্ডারে দিয়ে জুস করে খাই।

লোরকঃ আপনার নাম কাঙ্গালিনী সুফিয়া হল কিভাবে?
কা সুফিয়াঃ কাঙ্গালিনী সুফিয়া এখন জাতীয় পর্যায়ে চলে গেছে। ছোটবেলায় ডাকনাম ছিল সুফিয়া। শিল্পকলা একাডেমী থেকে নামটা এসেছে।

লোরকঃ আপনি মূলত কোন ধরনের গান করেন?
কা সুফিয়াঃ লালন গীতি, বাউল গান, নিজের লেখা গান।

লোরকঃ একজন মেয়ে হয়ে গান গাইতেন কোন সমস্যা হয় নাই?
কা সুফিয়াঃ সিনেমাতে গান গাইতে খুব মনে চাইত। নিজের মন থেকে গান গাইতে আইছি। শুরুতে ভয় করি নাই, এখন আর কিসের ভয়?

লোরকঃ বিদেশী গান আমাদের জন্য হুমকি স্বরূপ কিনা?
কা সুফিয়াঃ আমি তো দেখছি অনেক গান আধুনিক গানে চলে গেছে। ব্যান্ডেও চলে গেছে। শোনেন, গুণ যার আছে, গুণ তার ডোবে না। কেউ লালনের গান একতারা দিয়েও শোনে আবার কেউ গীটার দিয়েও শোনে। এটাতে গুণ কমে যায় না। লালন বিশ্ব পর্যায়ে চলে গেছে। তিনি বিরাট ওলীর মত।

লোরকঃ এখনকার ছেলে-মেয়েরাতো লোকসঙ্গীত শুনতে চায় না, তারা বিদেশী গানের প্রতি ঝুকে যাচ্ছে। আপনার মতামত কি?
কা সুফিয়াঃ তাতো হবেই। কলিযুগ না? তবে হ্যাঁ, যে শোনবার সে এমনিতেই শুনবে। তার কাছে লালন গাইলেও ভালো লাগবে, ভাবতত্ব গাইলেও ভালো লাগবে।

লোরকঃ আপনি কি মুক্তিযুদ্ধ দেখেছিলেন?
কা সুফিয়াঃ আমি নিজেই তো মুক্তিযুদ্ধের সময় মুক্তির গান গাইছি। আমার ভাই ৭১-এ মারা গেছে। তবে আমি মুক্তিযুদ্ধের সার্টিফিকেট পাই নাই। আমি সার্টিফিকেট আনতে যাই নাই, তাই পাই নাই।

লোরকঃ আপনিতো মাঝখানে অনেক অসুস্থ ছিলেন?
কা সুফিয়াঃ হুম, এখনো অসুস্থ। গলায় সমস্যা। খাদ্য খানা খাইতে পারি না। বারবারতো মানুষের কাছে চাওয়া যায় না। তবে কাঙ্গালিনী সুফিয়ারে মানুষ এখনো ভালোবাসে। মাঝখানে যখন বঙ্গবন্ধু হাসপাতালে ভর্তি ছিলাম তখন আমেরিকা থেকে আমার এক ভক্ত ১৩,০৫০ টাকা পাঠাইছিল।

লোরকঃ আপনার গলায় সমস্যা, গান গাইতে সমস্যা হয় না?
কা সুফিয়াঃ না, গান আমার অন্তরের সাথে মিশে আছে। এই গান গাইয়া মরবার চাই।

লোরকঃ আপনার ছোটবেলার স্বপ্ন কি ছিল?
কা সুফিয়াঃ ছোটবেলায় সিনেমার নায়িকাদের দেখলে মনে হত- আহারে! আমি যদি তাদের মত হইতে পারতাম তাইলে কতই না ভালো হইত। আমার সিনেমাতে গান গাওয়ার খুব শখ ছিল। তবে সেই শখ আমার পুরণ হইছে। আমার প্রথম সিনেমার গান রাজ সিংহাসন। সেখানে আমি এই গানটা গাই-
‘এই ঘুমতো সেই ঘুম না,
উঠো প্রভাতে জাগিয়া...’

লোরকঃ আপনি সর্বশেষ কোন ছবিতে গাও করেছেন?
কা সুফিয়াঃ সর্বশেষ যে ছবিতে গান করেছি তার নাম হল-‘আমার বুকের ভেতর আগুন জ্বলে’

লোরকঃ আমরা লোকসংস্কৃতি প্রসারে লোকসংস্কৃতি রক্ষা করি (লোরক) সোসাইটি নামে সংগঠন প্রতিষ্ঠা করেছি। আমরা লোক শিল্পীদের পাশে থাকতে চাই। আমাদের সম্পর্কে কিছু বলুন?

কা সুফিয়াঃ এই বিষয়ে কাজ করার লোকের বড় অভাব। আপনারা কাজ করতে চান খুশি হলাম। মাঝে মাঝে গানের অনুষ্ঠান করতে হবে, আমাদের ডাকতে হবে। আমাদের গান গাইতে না ডাকলে কেমনে চলমু?

লোরকঃ আপনি এত দূর থেকে এখানে শুধু সাক্ষাৎকার দেবার জন্য এসেছেন, এরজন্য আপনাকে ধন্যবাদ।

কা সুফিয়াঃ ধন্যবাদের কি আছে? আমি তো আপনাদেরই লোক। যেমন ধরেন সিলেট থেকে এক এমপি তার মেয়ের বিয়েতে গান গাইতে ডেকেছে। আমি না করি নাই। আমার না নাই। অসুস্থ শরীর নিয়া গান গাইতে চইলা গেছি।



বয়সের ভারে ন্যুজ এই শিল্পী এখনো বেশ হাসিখুশি এবং তার ব্যবহার এখনও শিশুসুলভ। কাঙ্গালিনী সুফিয়া আরো অনেকদিন বেঁচে থেকে আমাদের গান শোনান সেই কামনা করি।
(তার গলার চিকিৎসার জন্য কেউ যদি এগিয়ে আসতে চান তাহলে লোরক সোসাইটির সাথে যোগাযোগ করুন)
৮টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

Grameen Phone স্পষ্ট ভাবেই ভারত প্রেমী হয়ে উঠেছে

লিখেছেন অপলক , ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ২:৪৯



গত কয়েক মাসে GP বহু বাংলাদেশী অভিজ্ঞ কর্মীদের ছাটায় করেছে। GP র মেইন ব্রাঞ্চে প্রায় ১১৮০জন কর্মচারী আছেন যার ভেতরে ৭১৯ জন ভারতীয়। বলা যায়, GP এখন পুরোদস্তুর ভারতীয়।

কারনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

কম্বলটা যেনো উষ্ণ হায়

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:৫৭


এখন কবিতার সময় কঠিন মুহূর্ত-
এতো কবিতা এসে ছুঁয়ে যায় যায় ভাব
তবু কবির অনুরাগ বড়- কঠিন চোখ;
কলম খাতাতে আলিঙ্গন শোকাহত-
জল শূন্য উঠন বরাবর স্মৃতির রাস্তায়
বাঁধ ভেঙ্গে হেসে ওঠে, আলোকিত সূর্য;
অথচ শীতের... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইউনুস সাহেবকে আরো পা্ঁচ বছর ক্ষমতায় দেখতে চাই।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১:৪৪


আইনশৃংখলা পরিস্থিতির অবনতি পুরো ১৫ মাস ধরেই ছিলো। মব করে মানুষ হত্যা, গুলি করে হত্যা, পিটিয়ে মারা, লুট হওয়া অস্ত্র উদ্ধার করতে না পারা, পুলিশকে দূর্বল করে রাখা এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদির যাত্রা কবরে, খুনি হাসছে ভারতে...

লিখেছেন নতুন নকিব, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৬

হাদির যাত্রা কবরে, খুনি হাসছে ভারতে...

শহীদ ওসমান বিন হাদি, ছবি অন্তর্জাল থেকে নেওয়া।

হ্যাঁ, সত্যিই, হাদির চিরবিদায় নিয়ে চলে যাওয়ার এই মুহূর্তটিতেই তার খুনি কিন্তু হেসে যাচ্ছে ভারতে। ক্রমাগত হাসি।... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদিকে মারল কারা এবং ক্রোধের আক্রশের শিকার কারা ?

লিখেছেন এ আর ১৫, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:০৩

হাদিকে মারল কারা এবং ক্রোধের আক্রশের শিকার কারা ?


হাদিকে মারল জামাত/শিবির, খুনি নাকি ছাত্রলীগের লুংগির নীচে থাকা শিবির ক্যাডার, ডাকাতি করছিল ছেড়ে আনলো জামাতি আইনজীবি , কয়েকদিন হাদির সাথে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×