আজ ৬ ই ডিসেম্বর ... কি যেন দিবস আজকে!!
অনেক স্মৃতি ভীড় করছে ...অবশ্য আমরা তো সে সময়ে নাদান মানুষ ছিলাম...
স্কুলে পড়তাম মাত্র ...
ইউনিভার্সিটির বাঘা নেতাও ছিলামনা ... রাজনৈতিক দলের ডাকসাইটে কেউওনা ...
কি আর ক্ষমতা ছিল?
কলোনীর গেটের কোণে দাঁড়াতাম ... পুলিশের গাড়ী দেখলে দুএকটা ইট ছুঁড়তাম হয়ত, অথবা অন্যদের ইট ছোঁড়া দেখতাম ... পুলিশের গাড়ী কাছাকাছি আসলে দিতাম ভোঁ দৌড় ... আমরা চিৎকার করতাম, স্লোগান দিতাম ... আমরা স্বপ্ন দেখতাম ... হায়রে স্বপ্ন ... এরবেশী কিছু করার সাধ্য আমাদের ছিলনা ...
তাও!!
আমাদের কাছে সেটাই ছিল এক যুদ্ধের মতো.... কারণ, আমাদের প্রজন্ম তো মুক্তিযুদ্ধ দেখেনি!
আমাদের কাছে সেটাই ছিল মুক্তিযুদ্ধের প্রোটোটাইপ ...
যেদিন আমরা জিতলাম, স্বৈরাচারের পতন হলো, গণতন্ত্র মুক্তি পেল (!!) ...
আমরা মাথায় লাল সবুজ বেঁধে কাঁধে কাঁধ রেখে দাঁড়ালাম ...
আমরা তারস্বরে চিৎকার করলাম ... "শহীদের রক্ত, বৃথা যেতে দেবনা" ...
আমরা মনে করলাম নূর হোসেনকে ...
সালাম জানালাম ড. মিলনকে ...
আমরা নাচলাম ... গাইলাম ... গদ্য করলাম... পদ্য করলাম
আরও কত হাবিজাবি ... আমাদের অনেক মজা হয়েছিলো নিশ্চয়ই!
আচ্ছা!
মিলনের কথা কি আমাদের মনে আছে?
নূর হোসেনের চামড়ায় আঁকা সাদা আঁকিবুকিগুলো কি আমরা মনে করতে পারি?
এখন নিজেকে প্রশ্ন করি?
আমাদের কি মনে আছে মিলনের সেই বাচ্চা মেয়েটির নাম ?...
যে প্রতিদিন বাবা যখন অফিসে যাবার জন্য বের হতো তখন বলত, 'বাবা কবে আসবে?' ...
তার মা শুধরে দিতেন, বলতেন, 'কবে না মা, বলো কখন আসবে?' ...
মেয়েটা হয়ত বলত, হয়ত বলতনা ... কি হবে এসব বিশ্লেষণ করে! ...
কি হবে? কি হয়? কিছু কি হয়?
আচ্ছা আমাদের কি সেই বাচ্চাটার মা'টার কথাই মনে আছে?
যে নিজের স্বামীর দেশপ্রেম নিয়ে গর্ব করত ... আমেরিকা যাবার এত সুযোগ থাকতেও তার স্বামী কি এক অজানা কারণে দেশটাকে আঁকড়ে ধরে ছিল!! ...
আচ্ছা, ড. মিলনের মায়ের নামই কি মনে আছে? ... যে নারী একাই গড়ে তুলেছিল এক সৈনিককে গণতন্ত্র এনে দেতে?
দরকার কি? ...
গণতন্ত্রেরই বা দরকার কি? ...
ক্ষমতা হলেই তো হয় ...
ক্ষমতাবানরাও তাই চায় ...
আমরাও তারা যাতে তাই পায় তারজন্য তাথৈতাথৈ নাচি ...
আমাদের নাচতে খুব ভাল লাগে ...
আমাদের নাচের তালে তালে স্মৃতির অপ্রয়োজনীয় অংশগুলো মুছে যায় ...
আচ্ছা!
সেই ছোট্ট শামা আজ কত বড় হয়েছে?
সে কি তার বাবার জন্য গর্ব করে হাঁটে, রিক্সায় চড়ে? ...
নাকি, সারাক্ষণ ভয়ে থাকে পাছে কেউ তার গর্ব দেখে ফেলে!!
মিলনের কবিতা কি এখনও দুচোখে অশ্রু আর গৌরব নিয়ে বারান্দায় বসে চা খায়? ... নাকি তাকে বদ্ধ ঘরে চা খেতে হয় যাতে তার গৌরবটুকু লোকের চোখে ধরা পড়ে না যায়!
মিলনের মা সেলিনা হোসেনকে কি রিক্সায় চড়ে বাসায় ফিরতে ফিরতে মিলনের কথা ভাবার সময় চোখের পানি লুকোতে হয়?
আহা!!
নূর হোসেন! দরিদ্র নূর হোসেন!!! ... তোমার কাছে ক্ষমা চাইবার যোগ্যতাও আমার নেই ... তোমার বাবার, মায়ের নামও আমার মনে নেই ...
আচ্ছা মনে করে দেখি নূর হোসেনের গায়ে কি লেখা ছিল ...!!!
"গণতন্ত্র নিপাত যাক"... উড়ে যাক... যাহ!
যা গণতন্ত্র, উড়ে যা পাখি হয়ে ... আর আসিসনি ফিরে ...
আমরা কিচেনের কফিনে নিপাতিত স্বৈরাচারের দেখভাল করব।
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে নভেম্বর, ২০০৮ বিকাল ৩:৩১

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



