somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

শেখ হাসিনা লাশ চেয়েছিলেন

০৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০১০ রাত ১:৩১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বর্তমান নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে বিএনপি এবং আওয়ামী লীগের জোট রাজনীতির সমীকরণের প্রেক্ষাপটে ২০০৬ সালে এরশাদ এবং জাতীয় পার্টি নানামুখী কৌশল নেয়। ওই বছর ২৭ জুলাই রাতে এরশাদের প্রেসিডেন্ট পার্কের বাসভবনে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব তারেক রহমান এক রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেন। নানা রাজনৈতিক বিশ্লেষণের পর পরদিন এরশাদ চারদলীয় জোটে যোগ দেয়ার ঘোষণা দেন। এরপর তিনি বিভিন্ন সভা-সমাবেশে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা এবং ১৪ দলের শরিক বিভিন্ন দলের শীর্ষস্থানীয় নেতাদের বিরুদ্ধে নানারকম কথা বলেন। তিনি শেখ হাসিনাকে দুর্নীতিপরায়ণ হিসেবে অভিহিত করেন এবং তার ওপর নূর হোসেনের খুনের দায় চাপান। একইসঙ্গে তিনি আওয়ামী লীগ এবং ১৪ দলের নীতি-আদর্শের কঠোর সমালোচনা করেন। আর বিএনপির রাজনৈতিক আদর্শ এবং তত্কালীন দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব তারেক রহমানের ভূয়সী প্রশংসা করেন। তবে বছরের শেষদিকে জোট করা নিয়ে আওয়ামী লীগ, বিএনপি এবং দলের শীর্ষস্থানীয় নেতাদের নানামুখী চাপে একদিন সন্ধ্যায় আত্মগোপন করেন এরশাদ। প্রায় দু’দিন পর আত্মগোপন থেকে তিনি সরাসরি হাজির হন পল্টনে ১৪ দলের মহাসমাবেশে। সেখানে তিনি মহাজোট গঠনের বিষয়টি নিশ্চিত করেন।

চারদলীয় জোটে যোগ দেয়ার ঘোষণার পর ২০০৬ সালের ১৬ আগস্ট সকালে রাজধানীর হোটেল সুন্দরবনে বৃহত্তর রংপুর জেলা জাতীয় পার্টির তৃণমূল নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় সভাপতির বক্তব্যে নূর হোসেন হত্যাকাণ্ড বিষয়ে এরশাদ বলেন, আমি নূর হোসেনকে হত্যা করিনি। নূর হোসেন লাশের রাজনীতির শিকার হয়েছে। সে সময়ের রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা একটি লাশ চেয়েছিলেন। সেই লাশের রাজনীতির শিকার হয়ে নূর হোসেন মৃত্যুবরণ করেছিল। হাজার হাজার মানুষের মধ্যে শুধু নূর হোসেনের গায়ে লেখা ছিল ‘স্বৈরাচার নিপাত যাক’। এর কী উদ্দেশ্য ছিল, সেটা আজ কারও অজানা নয়। সেটা এখন সবার কাছেই স্পষ্ট হয়ে গেছে। এদিন তিনি আরও বলেন, আওয়ামী লীগ সৃষ্ট রক্ষীবাহিনী জাসদের একজন কিংবা দু’জন নয়—৩০ হাজার নেতাকর্মী হত্যা করেছিল। সেই জাসদ আজ আওয়ামী লীগের আঁচলের নিচে চলে গেছে। এখন তারা আওয়ামী লীগের আশ্রয়ে তাদের পক্ষে বড় বড় কথা বলছে। এর চেয়ে লজ্জার কথা আর কী হতে পারে। তিনি বলেন, জেল থেকে আমি আওয়ামী লীগকে সমর্থন দিয়ে ২১ বছর পর ক্ষমতায় আসার সুযোগ দিয়েছিলাম। এর বিনিময়ে তারা আমার দল ভেঙেছে, আমাকে জেলে দিয়েছে। তাই তাদের সঙ্গে জোট করার কোনো প্রশ্নই আসে না।

২০০৬ সালের ৩১ জুলাই সকালে হোটেল সুন্দরবনে কুমিল্লা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া এবং চাঁদপুর জেলা জাতীয় পার্টির তৃণমূল নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় সভাপতির বক্তব্যে এরশাদ বলেছিলেন, শেখ হাসিনা বলেন আমি চোর। আমি চোর কিংবা দুর্নীতিবাজ নই। আমি যদি চোর হতাম, তাহলে আমার রাজপ্রাসাদ থাকত। আমি তো নিজের নামে বঙ্গভবন লিখে নেইনি। মিগ কিনে কোটি কোটি টাকার দুর্নীতি করিনি। কোটি কোটি টাকার দুর্নীতি হয়েছে মিগ কেনার মাধ্যমে। যে মিগ এখন আকাশে ওড়ে না। তিনি বলেন, শেখ হাসিনা আমাকে ১২ ঘণ্টার মধ্যে জেলে নেয়ার কথা বলেছিলেন। সে কথা আমি ভুলে যাইনি। তারা যে রাজনৈতিক আদর্শে বিশ্বাস করে, আমরা তা করি না। তারা ক্ষমতায় এলে ’৭২-এর সংবিধান কার্যকর করবে। সংবিধান থেকে বিসমিল্লাহির রহমানের রাহিম মুছে ফেলবে। আমরা এটা হতে দিতে পারি না। শেখ হাসিনার উদ্দেশে তিনি আরও বলেন, তিনি আমাকে খুনি বলেছেন। আমি খুনি বা হত্যাকারী নই। আমার হাতে কোনো রক্তের দাগ নেই। আমার বিবেক পরিষ্কার।

৩০ জুলাই (২০০৬) সকালে হোটেল সুন্দরবনে বৃহত্তর সিলেট জেলার তৃণমূল নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় সভাপতির বক্তব্যে এরশাদ জোটবদ্ধ হওয়ার বিষয়ে বলেন, আমরা বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ এবং ইসলামী মূল্যবোধে বিশ্বাসী। এটা আমাদের দলের গঠনতন্ত্রে আছে। তাই এ আদর্শের বাইরে অন্য কারও সঙ্গে জোট করা আমাদের জন্য কঠিন। এ আদর্শের ভিত্তিতে আমরা যদি জোটবদ্ধ হই—তবে এতে কারও মাথাব্যথা হওয়ার কারণ নেই। তিনি বলেন, তারেক রহমানের সঙ্গে বৈঠকের পর কয়েকটি পত্রিকা আমাকে নিয়ে এমন সমালোচনায় মেতে উঠেছে যে, যেন আমি তার সঙ্গে বৈঠক করে মহা অন্যায় করে ফেলেছি। আমি ১৪ দলে যোগ না দেয়ায় মনে হচ্ছে তাদের মাথায় আকাশ ভেঙে পড়েছে। আমি তারেক রহমানের সঙ্গে বৈঠক করে কোনো ভুল করিনি। দল এবং দলের স্বার্থ বিবেচনা করেই আমি তার সঙ্গে বৈঠক করেছি। তিনি বলেন, চারদলীয় জোটে যোগ দেয়ার সিদ্ধান্তের পর অনেকেই আমাকে ‘আনপ্রেডিক্টেবল’ হিসেবে অভিহিত করছেন; কিন্তু তাদের জানা উচিত আমি একজন সৈনিক—আমরা কখনও আনপ্রেডিক্টেবল থাকি না। আমরা সিদ্ধান্ত নেই এবং তা বাস্তবায়ন করি।

অন্যদিকে এদিন দৈনিক আমার দেশকে দেয়া এক বিশেষ সাক্ষাত্কারে তারেক রহমান সম্পর্কে এরশাদ বলেন, রাজনীতিতে তারেক নবাগত হলেও রাজনীতিক হিসেবে তাকে আমার অত্যন্ত পরিপকস্ফ বলে মনে হয়েছে। খুব মেপে কথা বলেন। তার কথাবার্তার মধ্যে কোনো অপ্রাসঙ্গিকতা নেই, কারও প্রতি কটূক্তি করেন না। এভাবে এগিয়ে যেতে থাকলে বাংলাদেশের রাজনীতিতে তিনি স্থান করে নিতে পারবেন। রাজনীতিতে তার একটি সম্ভাবনা আছে। পৃথিবী এখন বদলে গেছে। এখন মানুষ তরুণ নেতৃত্ব চাচ্ছে। আমি মনে করি উনি যদি নিজেকে তৈরি করতে পারেন, তাহলে তিনিই ভবিষ্যতে দেশের নেতৃত্ব দেবেন।

নির্বাচনের ভোটের অংকে এরশাদের কোনো অবস্থান নেই। এরশাদ
চারদলীয় জোটে গেলেও ১৪ দলীয় জোটের কোনো ক্ষতি হবে না। ওয়ার্কার্স পার্টি সভাপতি রাশেদ খান মেনন এবং জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনুর এ বক্তব্যের প্রেক্ষিতে সাক্ষাত্কারে এরশাদ বলেন, আমার মনে হয় তাদের নিজের চরকায় তেল দেয়া উচিত। এটাই তাদের জন্য মঙ্গল হবে। অন্যের চরকায় তেল দিয়ে তাদের কোনো লাভ হবে না। এতকিছুর পরও ওই বছর ৬ নভেম্বর বোল পাল্টান এরশাদ। এদিন দলীয় সংসদ সদস্যদের সঙ্গে আলোচনা শেষে তিনি বলেন, কয়েকদিন আগে চারদলে যোগ দেয়া নিয়ে আমার সিদ্ধান্ত ভুল ছিল। আজ আমার সেই ভুল ভেঙেছে। তাই আর চার দলে যাচ্ছি না। আপাতত এককভাবে নির্বাচন করার কথা ভাবছি। এরপর জোট করা নিয়ে আওয়ামী লীগ, বিএনপি এবং নিজ দলের শীর্ষস্থানীয় নেতাদের নানামুখী চাপে ১৭ ডিসেম্বর সন্ধ্যার পর থেকে নিখোঁজ হন এরশাদ। এ ব্যাপারে জাতীয় পার্টির শীর্ষস্থানীয় নেতারা জানান, অসুস্থতার কারণে তিনি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন; কিন্তু কোন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন—তা কেউ বলতে পারেননি। স্ত্রী রওশন তার খোঁজে সিকদার মেডিকেলে যান কিন্তু পাননি। এসময় তিনি ছিলেন আওয়ামী লীগ নেতা শেখ হেলালের বাড়িতে। প্রায় দু’দিন পর ১৮ ডিসেম্বর তার খোঁজ মেলে। আত্মগোপন থেকে তিনি সরাসরি হাজির হন পল্টনে ১৪ দলের মহাসমাবেশে। সেখানে বক্তৃতায় তিনি বলেন, এতদিন আমি ছিলাম শৃঙ্খলিত। এবার এ সমাবেশে সেই শৃঙ্খল ভেঙে ফেললাম। সমাবেশে জনগণের কাছে তিনি ক্ষমা চান তার কৃতকর্মের জন্য। বলেন, তিনি একজন সৈনিক। তাই মৃত্যুকে ভয় পান না তিনি। সমাবেশে যোগ দিয়ে তিনি মহাজোট গঠনের বিষয়টি নিশ্চিত করেন।

Source: Click This Link
১০টি মন্তব্য ১০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মুসলিম কি সাহাবায়ে কেরামের (রা.) অনুরূপ মতভেদে লিপ্ত হয়ে পরস্পর যুদ্ধ করবে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সকাল ৯:৪৯




সূরাঃ ৩ আলে-ইমরান, ১০৫ নং আয়াতের অনুবাদ-
১০৫। তোমরা তাদের মত হবে না যারা তাদের নিকট সুস্পষ্ট প্রমাণ আসার পর বিচ্ছিন্ন হয়েছে ও নিজেদের মাঝে মতভেদ সৃষ্টি করেছে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

মসজিদে মসজিদে মোল্লা,ও কমিটি নতুন আইনে চালাচ্ছে সমাজ.

লিখেছেন এম ডি মুসা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সকাল ১০:২৩

গত সপ্তাহে ভোলার জাহানপুর ইউনিয়নের চরফ্যাশন ওমরাবাজ গ্রামের এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। লোকটি নিয়মিত মসজিদে যেত না, মসজিদে গিয়ে নামাজ পড়েনি, জানা গেল সে আল্লাহর প্রতি বিশ্বাসী ছিল, স্বীকারোক্তিতে সে... ...বাকিটুকু পড়ুন

গল্পঃ অনাকাঙ্ক্ষিত অতিথি

লিখেছেন ইসিয়াক, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ দুপুর ১:১২

(১)
মাছ বাজারে ঢোকার মুখে "মায়া" মাছগুলোর উপর আমার  চোখ আটকে গেল।বেশ তাজা মাছ। মনে পড়লো আব্বা "মায়া" মাছ চচ্চড়ি দারুণ পছন্দ করেন। মাসের শেষ যদিও হাতটানাটানি চলছে তবুও একশো কুড়ি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগে বিরোধী মতের কাউকে নীতি মালায় নিলে কি সত্যি আনন্দ পাওয়া যায়।

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১৮

ব্লগ এমন এক স্থান, যেখানে মতের অমিলের কারণে, চকলেটের কারণে, ভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শের কারণে অনেক তর্কাতর্কি বিতর্ক কাটা কাটি মারামারি মন্তব্যে প্রতিমন্তব্যে আঘাত এগুলো যেনো নিত্য নৈমিত্তিক বিষয়। ব্লগটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগার'স ইন্টারভিউঃ আজকের অতিথি ব্লগার শায়মা

লিখেছেন অপু তানভীর, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ১১:০৫



সামুতে ব্লগারদের ইন্টারভিউ নেওয়াটা নতুন না । অনেক ব্লগারই সিরিজ আকারে এই ধরণের পোস্ট করেছেন । যদিও সেগুলো বেশ আগের ঘটনা । ইন্টারভিউ মূলক পোস্ট অনেক দিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×