"গবেষনা এবং একটি শিশুর মৃত্যু" (প্রথম পর্ব)
৫"
কিৎ-এর সাথে অনেকদিন ভাল ভাবে কথা হয় না।সেদিন ভাবছিলাম কি নিয়ে ওর সাথে কথা বলব।আগে ওর সাথেই সব কথা বলতাম।এখন মনে হয় একটা যন্ত্রের সাথে কি কথা বলব? যদিও কিৎ এর মন আর মানুষের মনের মধ্যে তেমন কোন পার্থক্য নেই।
অনেক ভেবে তুয়িফকে নিয়েই শুরু করলাম,
-আচ্ছা কিৎ,'তুয়িফ' নামটা কি তোমার দেয়া?
-জী স্যার।
-তুয়িফ নাম কেন দিলে?
-আমি অনেক খুঁজে 'তুয়িফ' নামটি ঠিক করেছি।এর অর্থ প্রাচীন আকাশ।আপনি নিশ্চয়ই জানেন প্রাচীন আকাশ কেমন ছিল?
কোন যন্ত্র কবে আবিষ্কার হয়েছে তা জানতে চাইলে আমি খুব সহজেই বলে দিতে পারব।কিন্তু প্রাচীন পরিবেশ সম্পর্কে আমার ধারণা খুবই কম।আমি বললাম,
-খুব বেশি জানি না।তুমি নিশ্চয়ই বিস্তারিত জেনেছ?
-জী,স্যার রোসা।প্রাচীন আকাশ ছিল খুবই সুন্দর।আশ্চর্যের ব্যপার হল সেই আকাশের রঙ ছিল নীল।আর সেখানে যে মেঘ উড়ে বেড়াত তার রঙ ছিল সাদা।
আমি চোখ বন্ধ করে কিৎ-এর দেয়া বর্ণনা অনুযায়ী মনে মনে সেই আকাশের একটা ছবি এঁকে ফেললাম।আসলেই খুব সুন্দর ছিল সেই আকাশ।আমরা প্রতিক্ষণ হলোগ্রাফিক স্ক্রীনে যে নীলচে-সবুজ আকাশটাকে দেখি তা সেই নীল আকাশের সৌন্দর্যের তুলনায় কিছুই না।
-স্যার রোসা,আপনি কি ঘুমিয়ে পড়েছেন?
-না।প্রাচীন আকাশটাকে দেখছিলাম মনে মনে।
-আমি আপনার নামের অর্থও খুঁজে দেখেছি।
-তাই? কি অর্থ?
-গোলাপ।
-ও...।'কিৎ' অর্থ দেখেছ?
-হ্যাঁ । কিৎ অর্থ প্রজাপতি।অনেক আগে ছোট ছোট নানা রঙের পতঙ্গ উড়ে বেড়াত।ওরা ফুলের ওপর বসে ফুল থেকে মিষ্টি স্বাদের এক ধরনের তরল পদার্থ শোষন করত।একে মধু বলা হত।স্যার রোসা, আপনি আমার নাম 'কিৎ' রাখলেন কেন?
-আমি রাখিনি।তোমাকে যার কাছ থেকে কেনা হয়েছে সেই এই নাম রেখেছে।তুমি এত কিছু কি করে জানলে?
-আমি মূল তথ্যকেন্দ্র থেকে এসব তথ্য জেনেছি।
-ভালই লাগল।
-আপনি চাইলে আমি আরো তথ্য জানবো।
-প্রাচীন কালে আর কী কী ছিল জেনে এসো।
প্রাচীন কালের প্রসঙ্গ শেষ।আবার কী নিয়ে কথা বলব? তাই তুয়িফকে নিয়েই শুরু করলাম;
-আচ্ছা কিৎ,তুমি তুয়িফকে আমার কাছে আসতে দাও না কেন?
এই প্রশ্ন করার সাথে সাথে কিৎ-এর চোখ দুটি উজ্জ্বল হয়ে উঠল।সে তার যান্ত্রিক পায়ে হন হন করে হেঁটে চলে গেল।ওর চলে যাওয়া দেখে আমার খুব হাসি পেল।ইদানিং ওর কাজ দেখে আমার খুব হাসি পায়।এই হাসি আনন্দের হাসি।কারণ আমার পরীক্ষা শেষ হতে চলেছে।আমার ধারণা তা বেশ সফল ভাবেই শেষ হবে।এখন শুধু দেখতে হবে যে কিৎ-এর মধ্যে যে মানবিক সত্ত্বা গুলো জেগে উঠছে সেগুলো কতটুকু প্রবল।সেটা বোঝা যাবে আমার প্রতি কিৎ-এর ভালবাসা কতটুকু বা তুয়িফের প্রতি কিৎ-এর হিংসা কতটুকু তা বুঝলেই।কয়েক দিনের মধ্যেই হয়ত তা বুঝে যাব।যদি এই আবেগ গুলো প্রবল হয় তাহলে বুঝব আমার পরীক্ষা সফল হয়েছে।আর যদি তা প্রবল না হয় তাহলে সেগুলো কিভাবে আরো প্রবল করা যায় সে বিষয়ে একটু ভাবতে হবে।কিন্তু মনে হয় তার আর দরকার হবে না।
৬''
-তুয়িফ! তুয়িফ!
-স্যার রোসা,আপনার খাবার সময় হয়েছে।খেতে বসুন।
-তুয়িফ কোথায়? ও খাবে না?
-স্যার রোসা,আপনি খেতে বসুন।আমি কাল আপনার কথা মত আরো তথ্য জেনে এসেছি।আপনি কি শুনতে আগ্রহী?
আমি চুপ করে রইলাম।কিন্তু তারপরও কিৎ ওর পাওয়া তথ্যগুলো একে একে বলতে লাগল।ওর কথাগুলো ভাল লাগছিল না।তুয়িফকে ছাড়া সকালের খাবার খেতে আমার একদমই ভাল লাগে না।
-কিৎ,তুয়িফ কোথায়?
-স্যার রোসা,সেই সময় রাতে একটা বিশেষ ধরনের পতঙ্গ উড়ে বেড়াত।একে জোনাকী বলা হত।এর দেহ থেকে বিশেষ ধরনের আলো বের হত.........
-কিৎ,তুয়িফ কোথায়?
৭''
তুয়িফকে হত্যার অপরাধে কিৎ-কে ধরে নিয়ে যাচ্ছে নিরাপত্তাকর্মীরা।কিৎ-এর চোখ দুটি নিষ্প্রভ।ও দুঃখিত নাকি লজ্জিত ঠিক বোঝা যাচ্ছে না।আমার দীর্ঘদিনের সঙ্গী চলে যাচ্ছে চিরদিনের জন্য।চলে যাওয়ার সময় ও শুধু একবার তাকাল আমার দিকে।ওর সেই দৃষ্টি আমার হৃদয়কে ভেঙ্গে চুরমার করে দিল।কিৎ চলে যাওয়ার সাথে সাথে একাকীত্ব গ্রাস করল আমাকে।
কিন্তু তারপরই আমার মনে আশ্চর্য এক পরিবর্তন ঘটল।আনন্দে নেচে উঠল আমার মন।আমি চিৎকার করে বললাম,
-আমার গবেষনা সফল হয়েছে!!!...
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই জুন, ২০১১ সকাল ১১:৪৫