somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মহাবিশ্বের সৃষ্টি এবং স্রষ্টার অস্তিত্ব (পর্ব০৮)

১০ ই সেপ্টেম্বর, ২০১১ রাত ১১:০৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সৃষ্টির নির্ভুল অনুপাতঃ
সৃষ্টিতত্ত্ব বিজ্ঞানীরা এ তথ্য উপলব্ধি করেছেন যে, নভোমণ্ডল ও ভূমণ্ডল জুড়ে যেখানে যা কিছু রয়েছে সে সবের মধ্যে একটি নির্ভুল অনুপাত খুজে পাওয়া যায়। এ অনুপাত নির্ধারণের মধ্যে সুপরিকল্পনা এবং বুদ্ধির বিকাস সুস্পষ্ট। পৃথিবীর ঘটনা প্রবাহের বৈশিষ্ট্যাবলী এবং আকাশমণ্ডলের দৃশ্যাবলী নির্ধারিত হয়ে থাকে পদার্থ বিজ্ঞানের কিছু নিয়মের মাধ্যমে। এ নিয়ম গুলোর মধ্যে একটি সুন্দর সূক্ষ্ম সমতা কার্যকর ভূমিকা পালন করে।
উদাহরণ স্বরূপ সৌরজগতের গ্রহ-উপগ্রহগুলোর ঘূর্ণন প্রকৃতির নিয়মের কথা ধরা যাক। বিজ্ঞানী কেপলার গ্রহউপগ্রহগুলোর সূর্যকে কেন্দ্র করে ঘূর্ণনের সুত্র তিনটি আবিষ্কার করেন। তাই সুত্র তিনটিকে Kepler’s Law বলা হয়। সুত্র তিনটি হলোঃ
১। প্রতিটি গ্রহ একটি উপবৃত্তীয় কক্ষে সূর্যকে পরিভ্রমন করে এবং এই উপবৃত্তের দুটি ফোকাসের একটিতে সূর্য অবস্থান করে।
২। সূর্য এবং গ্রহের সংযোগকারী রেখা সমান সময়ে সমান ক্ষেত্র অতিক্রম করে।
৩। যেকনো গ্রহের নাক্ষত্রকালের বর্গ তাদের সূর্যের মধ্যবর্তী দূরত্বের ঘন অনুপাতের সমান।
এসব সুত্রের বিশ্লেষণ থেকে দেখা যায়, সূর্য এবং গ্রহয়গুলোর মধ্যে একটি নির্দিষ্ট এবং নির্ভুল অনুপাত বিদ্যমান। পূর্বে (আগের পর্বগুলোতে) এ বিষয়টি উল্লেখ করা হয়েছে। পৃথিবী বর্তমানে যে অবস্থানে রয়েছে তা হতে যদি ১% সূর্যের কাছাকাছি যেত তাহলে এই পৃথিবী জ্বলে –পুড়ে শুক্র গ্রহের রূপ ধারন করতো। এখানে জীবনের সৃষ্টি হওয়া সম্ভব হতো না। আর যদি পৃথিবী ১% দূরে সরে যেত তাহলে এটি মঙ্গল গ্রহের মত তুষারাচ্ছন্ন হয়ে পড়তো।
পৃথিবীর একমাত্র উপগ্রহ চাঁদ যদি তার অবস্থান থেকে কয়েক কিঃমিঃ পৃথিবীর নিকটবর্তী হতো তাহলে নদি-সমুদ্রের পানি ভূমীকে নিমজ্জিত করে রাখতো। আর যদি চাঁদ কিছুটা দূরে সরে যেত তাহলে পৃথিবী মরুভূমিতে পরিণত হতো।
Solar System Atomic Model – থেকে আমরা দেখি সেখানে পরমাণুর নিউক্লিয়াস কে ঘিরে ইলেকট্রন ঘুরতে থাকে, আর নিউক্লিয়াস এ থাকে প্রোটন এবং নিউট্রন। চারটি মৌলিক বল, যথাঃ সবল নিউক্লীয় বল, দুর্বল নিউক্লীয় বল, মহাকর্ষ বল এবং তড়িৎ চুম্বকীয় বল পরমাণুর গঠন উপাদানগুলোর উপর সক্রিয়। সবল নিউক্লীয় বল দুটি প্রোটনকে একসঙ্গে আকর্ষণ করে। কিন্তু তড়িৎ চুম্বকীয় শক্তি তাদের এক হতে বাধার সৃষ্টি করে। যদি সবল নিউক্লীয় বল সামান্য দুর্বল হতো তাহলে সাব-এ্যাটমিক কণাগুলো একসঙ্গে সংযোজিত হয়ে পরমাণুর নিউক্লি গঠন করতে পারতোনা। আবার যদি সবল নিউক্লীয় বল কিছুটা শক্তিশালী হতো তাহলে মহাবিশ্বের সকল হাইড্রোজেন হিলিয়ামে রূপান্তরিত হতো। বিশ্বজগতে হাইড্রোজেন খুজে পাওয়া যেত না। কিন্তু হাইড্রোজেন জীব কোষ গঠনে অপরিহার্য। সূর্য এবং অন্যান্য নক্ষত্র লক্ষ লক্ষ বছর ধরে আমাদের আলো এবং তাপ দিয়ে যাচ্ছে তাও এই হাইড্রোজেন জ্বালানীর কারনে।
রসায়ন বিজ্ঞান থেকে আমরা জানি প্রত্যেকটি উপাদান নির্দিষ্ট আনুপাতিক হারে রাসায়নিক বিক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করে। দুটি হাইড্রোজেন পরমানু এবং একটি অক্সিজেন পরমাণুর বিক্রিয়ায় পানির একটি অনু গঠিত হয়। এটা ছাড়া অন্যকোনো ভাবে পানির অনু সৃষ্টি করা অসম্ভব। বাতাসে অক্সিজেন এবং নাইট্রোজেনের অনুপাত ৪:১। এ অনুপাত যদি উল্টে দেয়া হতো অর্থাৎ ৪ ভাগ অক্সিজেন এবং ১ ভাগ নিত্রজেন হতো তাহলে সামান্য ফুলকির ফলেই ভয়ানক অগ্নিকান্ড ঘটত। আর অক্সিজেনের আধিক্যের দরুন সমগ্র প্রাণী জগত নিঃশ্বাস জনিত জটিলতায় বিনাশ হয়ে যেত। অপরদিকে নাইট্রোজেনের পরিমাণ কম হলে উদ্ভিদ জগতের absorption প্রক্রিয়া ব্যাহত হতো।
সুতরাং এটি খুবই পরিষ্কার যে, আল্লাহ্ নভোমণ্ডল ও ভূমণ্ডলকে একটি সুষম আনুপাতিক ধারায় বিন্যস্ত্য করেছেন যাতে সবকিছু সঠিকভাবে চলে, যাতে এই পৃথিবী মানুষের বসবাসের উপযোগী হয়। এ সম্পর্কে কোরআনে বলা আছেঃ
তিনিই সঠিকভাবে নভোমন্ডল সৃষ্টি করেছেন। যেদিন তিনি বলবেনঃ হয়ে যা, অতঃপর হয়ে যাবে। তাঁর কথা সত্য। যেদিন শিঙ্গায় ফুৎকার করা হবে, সেদিন তাঁরই আধিপত্য হবে। তিনি অদৃশ্য বিষয়ে এবং প্রত্যক্ষ বিষয়ে জ্ঞাত। তিনিই প্রজ্ঞাময়, সর্বজ্ঞ।(৬:৭৩)
আল্লাহ যথার্থরূপে নভোমন্ডল ও ভূমন্ডল সৃষ্টি করেছেন। এতে নিদর্শন রয়েছে ঈমানদার সম্প্রদায়ের জন্যে।(২৯:৪৪)।
এবং তোমাদের সেবায় নিয়োজিত করেছেন সূর্যকে এবং চন্দ্রকে সর্বদা এক নিয়মে এবং রাত্রি ও দিবাকে তোমাদের কাজে লাগিয়েছেন। (১৪:৩৩)।
৪টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কুরসি নাশিন

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৯ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:১৫


সুলতানি বা মোগল আমলে এদেশে মানুষকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছিল৷ আশরাফ ও আতরাফ৷ একমাত্র আশরাফরাই সুলতান বা মোগলদের সাথে উঠতে বসতে পারতেন৷ এই আশরাফ নির্ধারণ করা হতো উপাধি... ...বাকিটুকু পড়ুন

বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন আর আদর্শ কতটুকু বাস্তবায়ন হচ্ছে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৯ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩৭

তার বিশেষ কিছু উক্তিঃ

১)বঙ্গবন্ধু বলেছেন, সোনার মানুষ যদি পয়দা করতে পারি আমি দেখে না যেতে পারি, আমার এ দেশ সোনার বাংলা হবেই একদিন ইনশাল্লাহ।
২) স্বাধীনতা বৃথা হয়ে যাবে যদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

কৃষ্ণচূড়া আড্ডার কথা

লিখেছেন নীলসাধু, ১৯ শে মে, ২০২৪ দুপুর ১:০২



গতকাল পূর্ব নির্ধারিত কৃষ্ণচূড়ায় আড্ডায় মিলিত হয়েছিলাম আমরা।
বছরের একটি দিন আমরা গ্রীষ্মের এই ফুলটির প্রতি ভালোবাসা জানিয়ে প্রকৃতির সাথে থাকি। শিশুদের নিয়ে গাছগাছালি দেখা, ফুল লতা পাতা চেনাসহ-... ...বাকিটুকু পড়ুন

সকাতরে ঐ কাঁদিছে সকলে

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৩:২৯

সকাতরে ওই কাঁদিছে সকলে, শোনো শোনো পিতা।

কহো কানে কানে, শুনাও প্রাণে প্রাণে মঙ্গলবারতা।।

ক্ষুদ্র আশা নিয়ে রয়েছে বাঁচিয়ে, সদাই ভাবনা।

যা-কিছু পায় হারায়ে যায়,... ...বাকিটুকু পড়ুন

বসন্ত বিলাসিতা! ফুল বিলাসিতা! ঘ্রাণ বিলাসিতা!

লিখেছেন নাজনীন১, ১৯ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৪:০৯


যদিও আমাদের দেশে বসন্ত এর বর্ণ হলুদ! হলুদ গাঁদা দেখেই পহেলা ফাল্গুন পালন করা হয়।

কিন্তু প্রকৃতিতে বসন্ত আসে আরো পরে! রাধাচূড়া, কৃষ্ণচূড়া এদের হাত ধরে রক্তিম বসন্ত এই বাংলার!

ঠান্ডার দেশগুলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

×