somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মহাবিশ্বের সৃষ্টি এবং স্রষ্টার অস্তিত্ব (পর্ব০৯)

১৪ ই সেপ্টেম্বর, ২০১১ রাত ৯:৫০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

দুই পর্বে সপ্ত আকাশ সৃষ্টিঃ-
১৯২৯ সালে G. Lemaiter এবং Hubble আবিষ্কার করেন যে, মহাকাশের সাতটি স্তর এবং জ্যোতিষ্ক সমূহ দুটি পর্বে সৃষ্টি হয়েছে। বিগ ব্যাং এর পর আদি অগ্নিবল বিস্ফোরিত হয়ে দ্রুত প্রসারিত হতে থাকে এবং শীতল হয়ে ইলেকট্রন, প্রোটন ও নিউট্রন কণাগুলো গ্যাস মেঘের সৃষ্টি করে। প্রথম দিকে বিকিরণের চাপের দ্বারা স্বাভাবিক বিস্তৃতি বজায় ছিল। কিন্তু পরবর্তী পর্যায়ে কিছু হিলিয়াম সহ হাইড্রোজেন পরমানু দ্বারা বস্তু কেন্দ্রীভূত হতে থাকে। গ্যাসের এ কেন্দ্রীভূত পিণ্ড বিচ্ছিন্নভাবে একে অপর থেকে দূরত্ব বজায় রেখে ছুটে বেড়ায়। এ সময় দুটি বিপরীত শক্তি এই পিণ্ডের উপর ক্রিয়া করে। Force of Gravitation যা সঙ্কুচিত করার চেষ্টা করে এবং Force of Expansion, যা দূরত্ব সৃষ্টি করে।

কিন্তু সম্প্রসারণ শক্তির উন্মক্ত গতিবেগের জন্য সংকোচনশীল গ্যাসপিন্ড (Gas Blob) বিভিন্ন আকৃতি ধারন করে। যথা- বৃত্তাকার, উপবৃত্তাকার ও সর্পিলাকার বা পেঁচানো ইত্যাদি। এগুলোর নাম গ্যালাক্সি গঠিত হয় এবং আকাশ সৃষ্টির কাজ সম্পন্ন হয়। সৃষ্টির এ পর্বে প্রায় ১৫০ মিলিয়ন বছর সময় অতিবাহিত হয়। কোরআনে এ ১৫০ মিলিয়ন বছর সময়ের ব্যাপ্তিকে ‘ইওম’ বলা হয়েছে। অর্থাৎ ১ দিন।

২য় পর্যায়ে গ্যালাক্সিপুঞ্জ বা সংকোচনশীল গ্যাস বলয়গুলো ভেঙ্গে গিয়ে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অংশে বিভক্ত হয়ে পড়ে। এ অংশগুলো যতবেশী সংকোচিত হলো তত দ্রুতগতিতে আবর্তিত হতে লাগল। এভাবে আবর্তিত হতে হতে চ্যাপ্টা আকার ধারন করলো এবং জমাট বেঁধে আরও ছোট ছোট বলয়ে বিভক্ত হয়ে পড়লো। ধীর গতিতে পরিবর্তনের মাধ্যমে নক্ষত্র ও সৌরজগত গঠিত হলো। গ্যস এবং ধূলিকণার গোলাকার মেঘপুঞ্জকে বলা হয় নীহারিকা। নীহারিকাসমূহ ঘূর্ণন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সংকুচিত হতে লাগল এবং তাদের পশ্চাতে রেখে গেল গোলাকার বস্তুপিণ্ড। এ বস্তুপিণ্ড গুলো অবশেষে গ্রহ, উপগ্রহ ও গ্রহাণুতে পরিণত হলো। সুতরাং সৌরমণ্ডল, গ্রহ-উপগ্রহগুলো ২য় পর্বে সৃষ্টি হয়েছিল এবং এরপর মহাবিশ্বের গোলাকার আবেষ্টনীতে আকাশের সাতটি বলয় গড়ে উঠল। সৃষ্টির ২য় পর্বে সময় লেগেছিল ১ বিলিয়ন বছর। ২ পর্বের সময়কালকে কোরআনের আয়াতে বলা হয়েছে ‘ইউমাইনে’

তারপর তিনি দু’দিনের মধ্যে সাত আসমান বানালেন এবং প্রত্যেক আসমানে তিনি তাঁর বিধান নির্দিষ্ট করলেন।
( ৪১:১২)

আরবি ‘ইওম’ অর্থ দিন। এ আয়াতে দ্বিবচন ‘ইওমাইনে’ ব্যবহৃত হয়েছে। কিন্তু যে আয়াতে সৃষ্টি তত্ত্ব আলোচনা করা হয় সেখানে পৃথিবীর নিজ অক্ষে আবর্তনকালের সময়কালকে নির্দেশ করেনা। যেমন, সূরা হজ্বের ৪৭ নং আয়াতে বলা হয়েছে ১ দিন = ১০০০০ বছর। সূরা মা’আরেজের ৪ নং আয়াতে ১ দিন = ৫০০০০০ বছর বলা হয়েছে। এসব থেকে বুঝা যায় যে আল্লাহতাআলার নিকট ১ দিনের অর্থ একটি সময়কাল। এ সময়কাল দীর্ঘ হতে পারে ক্ষুদ্রও হতে পারে। অর্থাৎ একটি সৃষ্টিকর্মকে পূর্ণতা দান করতে যতটুকু সময় লাগে ‘দিন’ বলতে তিনি সে সময়কে বুঝিয়েছেন। তাই ‘ইওম’ এর আরও অনেক অর্থ হতে পারে, যেমন দিন, কাল, কালের ব্যাপ্তি, phase, Era ইত্যাদি।

মহাকাশের পরিনতিঃ

বিজ্ঞানীদের ধারনা অনুযায়ী, এমন একটি সময় আসবে যখন মহাকাশের সম্প্রসারণ গতি ক্রমান্বয়ে থেমে যাবে এবং মহাকর্ষ শক্তির প্রাবল্য বৃদ্ধি পাবে। এ প্রসঙ্গে যতগুলো তাত্ত্বিক ধারনা উপস্থাপন করা হয়েছে তার মধ্যে একটি হচ্ছে গ্রহ উপগ্রহ সমূহের ওজন বৃদ্ধি এবং নক্ষত্র সমূহের ওজন হ্রাস। যেমন পৃথিবীতে মানুষের সংখ্যা বাড়ছে। সংখ্যা বাড়া মানেই ওজন বৃদ্ধি পাওয়া । ২০০০ সালে পৃথিবীতে লোকসংখ্যা ছিল ৬০০ কোটি এবং বর্তমানে প্রায় ৭০০ কোটি। লোকসংখ্যা বৃদ্ধির এ হার অব্যাহত থাকলে ৫০০০ সালে মানুষের ওজন পৃথিবীর ওজনের সমান হবে।
আবার প্রতি মুহূর্তে পৃথিবী ও অন্যান্য গ্রহ উপগ্রহে মহাজাগতিক ধূলিকণা (Cosmic Dust) এসে পড়ছে। বিজ্ঞানীদের সমীক্ষায় জানা গেছে যে পৃথিবীতে প্রতিবছর ১০ হাজার টন মহাজাগতিক ধূলিকণা পতিত হয়। তাতে খুব স্বাভাবিক ভাবে পৃথিবীসহ অন্যান্য গ্রহের ওজন বেড়েই চলছে। এভাবে যত ওজন বাড়বে মহাকর্ষ শক্তিও তত প্রবল হবে। অপরপক্ষে নক্ষত্রগুলোর হাইড্রোজেন গ্যাস পুড়ে হিলিয়ামে রূপান্তরিত হওয়ার ফলে এদের ওজন হ্রাস পাচ্ছে। যেমন আমাদের সূর্য প্রতি সেকেন্ডে ৪ মিলিয়ন টন ওজন হারাচ্ছে। এভাবে সকল নক্ষত্র একটি পরিণত দশায় এগিয়ে যাচ্ছে।

অতএব, মহাকাশের স্বতাড়িত সম্প্রসারণ গতি সংকোচনের দিকে ধাবিত হওয়ার জন্য মহাজাগতিক বস্তুর গর ঘনত্ব বৃদ্ধি পাচ্ছে। যার ফলে আকাশী বস্তুগুলোর(Celestial Body) মহাকর্ষ শক্তি ক্রমান্বয়ে বাড়ছে। একসময় এরা একে অপরের কাছাকাছি এসে গেলে মহাকাশের সাতটি অঞ্চল ভেঙ্গে একাকার হয়ে যাবে এবং গ্রহ, নক্ষত্রের মধ্যে পারস্পরিক সংঘর্ষ শুরু হবে।
মহাকাশের পরিণতি সম্পর্কে আল কোরআন এর মাধ্যমে আল্লাহ্‌ বহু তথ্য আমাদের অবহিত করেছেন। তার মধ্যে নিন্মে কয়েকটি উল্লেখ করা হল,

সেদিন আকাশ মেঘমালাসহ বিদীর্ণ হবে এবং সেদিন ফেরেশতাদের নামিয়ে দেয়া হবে,(২৫:২৫)
অতএব আপনি সেই দিনের অপেক্ষা করুন, যখন আকাশ ধূয়ায় ছেয়ে যাবে। (৪৪:১০)

এ কথার অর্থ হল আকাশে গ্যাসীয় মেঘ দেখা দেবে এবং ঐ গ্যাসীয় মেঘে সূর্য ঢাকা পড়ে যাবে। আমরা জানি দুটি বিপরীত সূর্য তথা নক্ষত্রসমূহের উপর কাজ করছে। একটি হলো অভিকর্ষ বল এবং অপরটি বিকিরন চাপের দরুন প্রসারন বল। বর্তমানে এ দুটি শক্তির মধ্যে সাম্যাবস্থা রয়েছে যার কারনে নক্ষত্র সমূহ ভারসাম্যতা লাভ করেছে। যখন সূর্যের মোট হাইড্রোজেনের ১০% তখন সূর্যের ভেতরের সাম্যাবস্থা বিঘ্নিত হবে। বিকিরণ চাপের আধিক্যের ফলে সূর্যের বহিঃগ্যাসীয় অংশ বিরাট আকারে বিস্তার লাভ করবে এবং ধুম্ররাশিতে ঢাকা পড়ে যাবে আকাশের বিশাল অংশ।

রেফারেন্সঃ
১। A chain of miracles by Harun Yahya.
২। আল কোরআন দ্য চ্যালেঞ্জ মহাকাশ পর্ব - ১ ও ২ – কাজি জাহান মিয়া।
৩। বিজ্ঞান্ময় কোরআন- মুহাম্মদ আবু তালেব।
১৭টি মন্তব্য ৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কুরসি নাশিন

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৯ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:১৫


সুলতানি বা মোগল আমলে এদেশে মানুষকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছিল৷ আশরাফ ও আতরাফ৷ একমাত্র আশরাফরাই সুলতান বা মোগলদের সাথে উঠতে বসতে পারতেন৷ এই আশরাফ নির্ধারণ করা হতো উপাধি... ...বাকিটুকু পড়ুন

বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন আর আদর্শ কতটুকু বাস্তবায়ন হচ্ছে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৯ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩৭

তার বিশেষ কিছু উক্তিঃ

১)বঙ্গবন্ধু বলেছেন, সোনার মানুষ যদি পয়দা করতে পারি আমি দেখে না যেতে পারি, আমার এ দেশ সোনার বাংলা হবেই একদিন ইনশাল্লাহ।
২) স্বাধীনতা বৃথা হয়ে যাবে যদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

কৃষ্ণচূড়া আড্ডার কথা

লিখেছেন নীলসাধু, ১৯ শে মে, ২০২৪ দুপুর ১:০২



গতকাল পূর্ব নির্ধারিত কৃষ্ণচূড়ায় আড্ডায় মিলিত হয়েছিলাম আমরা।
বছরের একটি দিন আমরা গ্রীষ্মের এই ফুলটির প্রতি ভালোবাসা জানিয়ে প্রকৃতির সাথে থাকি। শিশুদের নিয়ে গাছগাছালি দেখা, ফুল লতা পাতা চেনাসহ-... ...বাকিটুকু পড়ুন

সকাতরে ঐ কাঁদিছে সকলে

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৩:২৯

সকাতরে ওই কাঁদিছে সকলে, শোনো শোনো পিতা।

কহো কানে কানে, শুনাও প্রাণে প্রাণে মঙ্গলবারতা।।

ক্ষুদ্র আশা নিয়ে রয়েছে বাঁচিয়ে, সদাই ভাবনা।

যা-কিছু পায় হারায়ে যায়,... ...বাকিটুকু পড়ুন

বসন্ত বিলাসিতা! ফুল বিলাসিতা! ঘ্রাণ বিলাসিতা!

লিখেছেন নাজনীন১, ১৯ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৪:০৯


যদিও আমাদের দেশে বসন্ত এর বর্ণ হলুদ! হলুদ গাঁদা দেখেই পহেলা ফাল্গুন পালন করা হয়।

কিন্তু প্রকৃতিতে বসন্ত আসে আরো পরে! রাধাচূড়া, কৃষ্ণচূড়া এদের হাত ধরে রক্তিম বসন্ত এই বাংলার!

ঠান্ডার দেশগুলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

×