somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মহাবিশ্বের সৃষ্টি এবং স্রষ্টার অস্তিত্ব (পর্ব১০)

২৭ শে অক্টোবর, ২০১১ দুপুর ১২:২৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সূর্য একটি গতিশীল নক্ষত্র। পূর্বে ধারণা করা হতো এটি স্থির। কিন্তু আধুনিক জ্যোতির্বিজ্ঞান এর মাধ্যমে জানা যায় যে সূর্য নিজস্ব কক্ষপথে আবর্তন করে এবং সাথে সাথে এটি গোটা সৌর পরিবার নিয়ে দৈনিক ২৫৫৬০০০০ কিমি বেগে এক অজানা দিগন্তে সন্তরণ করে চলছে। এ দিগন্তের সীমা সৌর চুড়া (Solar Apex) নামে পরিচিত। বিজ্ঞানীদের মতে সূর্য দৈনিক ২০৮৬৫৬০০০০ কিমি বেগে তার অক্ষপথে ঘুরে এবং এই কক্ষপথ একবার ঘুরে আসতে সময় লাগে ২৫০০০০০০০০ বছর। তাহলে সূর্যের কক্ষপথের ব্যাপ্তি হবে ২০৮৬৫৬০০০০ x ২৫০০০০০০০ x ৩৬৫.২৫ কিমি। মহান আল্লাহতাআলা ই ভাল জানেন এই গাণিতিক হিসাবটি কতটুকু যথার্থ। বর্তমানে সূর্যের ২ টি গতি আবিষ্কৃত হয়েছে।
১। Forward movement
২। Orbital movement

১। Forward movement :- ১৯২৭ সালে Shapley সূর্যের গতিবিধির উপর পরীক্ষা চালিয়ে একটি তত্ত্ব আবিষ্কার করেন এবং তত্ত্বটির নাম দেন “Solar Apex”। এতে তিনি বলেন “ The sun is moving towards an appointed goal” । অর্থাৎ সূর্য একটি নির্ধারিত মঞ্জিলের দিকে অগ্রসর হচ্ছে। এ তত্ত্বটি আল কোরআন ৭ম শতাব্দীতে ঐশী ভাষায় বর্ণনা করেছে।

আর সূর্য, সে তার নির্ধারিত গন্তব্যের দিকে ধেয়ে চলছে৷ এটি প্রবল পরাক্রমশালী জ্ঞানী সত্তার নিয়ন্ত্রিত হিসেব৷ ( ৩৬:৩৮)


.

২। Orbital movement:- [/sb]ছায়াপথ গ্যালাক্সিতে অবস্থিত আমাদের সূর্য ঘুরে নিজস্ব উপবৃত্তাকার কক্ষপথে। কক্ষপথে একবার ঘুরে আসতে সূর্যের মোট সময় লাগে ২৫ কোটি বছর। এই বিশাল ভ্রমণ ব্যবস্থাপনায় কোন প্রকার বিচ্যুতি ঘটবার অবকাশ নেই এবং একটি সুশৃঙ্খল নীতিমালা অনুসরণ করে সূর্য ঘুরে। আল কোরআনে সূর্যের এই Orbital movement সম্পর্কে বলা হয়েছে

তিনিই সৃষ্টি করেছেন রাত্রি ও দিন এবং সূর্য ও চন্দ্র। সবাই আপন আপন কক্ষপথে বিচরণ করে।(২১:৩৩)



সূর্য ও চন্দ্র একটি হিসেবের অনুসরণ করছে। ( ৫৫:০৫)



তাত্ত্বিক গবেষণা থেকে জানা যায় সূর্যের বর্তমান বয়স ৫০০ কোটি বছর থেকে কিছু বেশী। এটি তার প্রথম পর্বের অস্তিত্বগত বয়সের অর্ধেক। অর্থাৎ মোট ১০০০ কোটি বছর অতিক্রান্ত হলে তার প্রথম পর্ব সমাপ্ত হবে। সূর্যের ওজন নির্ণয় করা হয়েছে 2 x 1030 Kg. বর্তমান অবস্থায় এটি ওজন হারাচ্ছে ৪ মিলিয়ন টন। কেননা সূর্যে প্রতিনিয়ত হাইড্রোজেন গ্যাস দগ্ধ হয়ে হিলিয়াম গ্যাসে রূপান্তরিত হয়ে থাকে। এটি প্রতি সেকেন্ডে ৫০৮০০০ বিলিয়ন অশ্বশক্তি পরিমিত হারে বিকিরণ করে। যার মোট ওজন ৫০০০০০০ টন।

সূর্যের ব্যাস ১৩৮৬৪০০ কিঃমিঃ । কিন্তু এ ব্যাস ক্রমশই হ্রাস পাচ্ছে। ১৭১৫ সাল থেকে ১৯৯৯ সালের মধ্যবর্তী সময়ে পূর্ণগ্রাস- সূর্যগ্রহণ পর্যালোচনা করে দেখা গেছে ২৭৬ বছরে এর বয়স কমেছে প্রায় ০.৩৯ সেকেন্ড। এসব তথ্য থেকে সূর্যের এক অবধারিত পরিণতির ইঙ্গিত পাওয়া যায়। অবস্য সূর্যের ২য় পর্বের বয়স কত হতে পারে তা হিসাব করা সুকঠিন হলেও সকল বিজ্ঞানী একযোগে বলেছেন সূর্য পৃষ্ঠে মউজুদ সকল হাইড্রোজেন গ্যাস একদিন শেষ হবেই। তখন সে একটি নিস্প্রভ নক্ষত্রে পরিণত হবে। সূর্যের পরিণতি সম্পর্কে আল কোরআন এ বলা আছে ...

আল্লাহই আকাশসমূহ স্থাপন করেছেন এমন কোন স্তম্ভ ছাড়াই যা তোমরা দেখতে পাও৷ তারপর তিনি নিজের শাসন কর্তৃত্বের আসনে সমাসীন হয়েছে৷ আর তিনি সূর্য ও চন্দ্রকে একটি আইনের অধীন করেছেন৷ এ সমগ্র ব্যবস্থার প্রত্যেকটি জিনিস একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত চলে৷ আল্লাহই এ সমস্ত কাজের ব্যবস্থাপনা করছেন৷ তিনি নিদর্শনাবলী খুলে খুলে বর্ণনা করেন, সম্ভবত তোমরা নিজের রবের সাথে সাক্ষাতের ব্যাপারটি নিশ্চিতভাবে বিশ্বাস করবে৷ [আল কোরআন (১৩:০২)]

যখন সূর্য আলোহীন হয়ে যাবে, [আল কোরআন (৮১:০১)]



সূর্য যখন তার পরিণত দশায় উপনীত হবে তখন সে কোন এক সময়ে স্ফীত হতে থাকবে। স্ফীত হতে হতে একসময় তার আয়তন ভীষণভাবে বেড়ে যাবে। তখন তার চেহারা দেখাবে লাল রঙের অতিকায় একটি গোলকের মত। জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা এর নাম দিয়েছেন Red Giant। এরুপ দশায় উপনীত হওয়ার পর সূর্য তথা সকল নক্ষত্র তাদের নাক্ষত্রিক চরিত্র হারিয়ে ফেলবে। জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের ধারণা মহাজাগতিক গ্যাস সংকুচিত হয়ে সূর্য নামের নক্ষত্রটি তৈরি হতে সময় লেগেছিল প্রায় ৩ কোটি বছর।

কোন নক্ষত্রের গাসের জ্বলন কত কাল চলবে তা সেটা অবশ্য নির্ভর করে তার ভরের উপর। যেমন সূর্যের বর্তমান বয়স ৫০০ কোটি বছরের কিছু বেশী। তার কেন্দ্রীয় অঞ্চলে যে পরিমান হাইড্রোজেন রয়েছে তা নিয়মিত জ্বলনের পর নিঃশেষ হতে সময় লাগবে ১০০০ কোটি বছর। এভাবে হাইড্রোজেন নিঃশেষিত হওয়ার পর নক্ষত্রের কেন্দ্রীয় অঞ্চল মাধ্যাকর্ষণের প্রভাবে আবার সংকুচিত হতে থাকে। তার বাহিরের অংশ যাকে সপ্রসারিত হতে শুরু করে। দ্রুত সম্প্রসারণের দরুন তাপমাত্রা কমতে থাকে। এ অবস্থায় কেন্দ্রীয় অঞ্চলে থাকে অবশিষ্ট হাইড্রোজেন। বাহিরে হিলিয়াম। এ নিয়ে তৈরি হয় কোর। প্রচণ্ড সংকোচনের দরুন এ কোর এর তাপমাত্রা দারুনভাবে বাড়তে থাকে। ফলে বহুগুণ উজ্জ্বল হয়। এ অবস্থায় আমরা এনভেলাপ বা নক্ষত্রের বহিরাংশটিই শুধু দেখতে পাব দৈত্যাকার অবস্থায়। অভ্যন্তরের উজ্জ্বল কেন্দ্রীয় অঞ্চল আমাদের চোখের আড়ালে থাকে। সেটি তখন লাল বর্ণ ধারণ করে। তাই এ অবস্থায় নক্ষত্রটিকে বলা হয় রেড জায়ান্ট বা লাল দৈত্য।

বলা হয়েছে এমন দশা আমাদের সূর্যের ক্ষেত্রে অবশ্যই ঘটবে। অন্তত ৫০০ কোটি বছর পর তার কেন্দ্রীয় অঞ্চলের ঔজ্জ্বল্য বেড়ে দাঁড়াবে এখনকার চেয়ে ১০০০ গুন বেশী। ঐ অবস্থায় পৃথিবীর তাবৎ জীবজগত ভস্মীভূত হয়ে যাবে। বর্তমানে সূর্যের বাইরের অংশের তাপমাত্রা ৬০০০ ডিগ্রি k. তখন তার তাপমাত্রা হ্রাস পেয়ে দাঁড়াবে ৩০০০ ডিগ্রি এবং ব্যাসার্ধ এখনকার চেয়ে প্রায় ১০০ গুন বেশী হবে। এ অবস্থায় সে বুধ ও শুক্র গ্রহকে গিলে ফেলবে। তারপর ২য় পর্যায়ে সূর্যের কেন্দ্রীয় অঞ্চলের হিলিয়াম সংযোজনের দরুন যখন নিঃশেষিত হতে থাকবে, তার বহিরাংশের আয়তন আরো বেড়ে যাবে। তখন এগিয়ে আসবে পৃথিবীর দিকে।

যেদিন আকাশ বিদীর্ণ হবে তখন সেটি রক্তবর্ণে রঞ্জিত চামড়ার মত হয়ে যাবে। [আল কোরআন (৫৫:৩৭)]



এসব তথ্য আমরা বিজ্ঞানের অগ্রগতির সাথে সাথে জানতে পেরেছি কিছু বছর আগে। কিন্তু পবিত্র কোরআনে তা বলা হয়েছে ১৪০০ বছর পূর্বে। এসব জিনিস ই প্রমান করে যে আল কোরআন মহান আল্লাহতাআলা এর বানী যা মানুষের জন্য একটি দিক নির্দেশক। এই মহবিশ্ব, পৃথিবী, জীব জন্তু, মানুষ ইত্যাদি সবকিছুই আল্লাহর সৃষ্টি এবং তাঁর বেঁধে দেয়া নিয়ম অনুসারে চলমান। কোন দুর্ঘটনা বা coincidence এর মাধ্যমে এই মহাবিশ্বের সৃষ্টি হতে পারে না। যদি তাই হত তাহলে সবকিছু এত নিয়ম মাফিক হতো না। এই মহাবিশ্ব আপনাআপনি সৃষ্টি হয়নি। এটাকে সৃষ্টি করা হয়েছে। এটি মহান আল্লাহতাআলার সৃষ্টি এবং তিনিইএর পরিচালক।
৬টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কুরসি নাশিন

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৯ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:১৫


সুলতানি বা মোগল আমলে এদেশে মানুষকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছিল৷ আশরাফ ও আতরাফ৷ একমাত্র আশরাফরাই সুলতান বা মোগলদের সাথে উঠতে বসতে পারতেন৷ এই আশরাফ নির্ধারণ করা হতো উপাধি... ...বাকিটুকু পড়ুন

বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন আর আদর্শ কতটুকু বাস্তবায়ন হচ্ছে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৯ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩৭

তার বিশেষ কিছু উক্তিঃ

১)বঙ্গবন্ধু বলেছেন, সোনার মানুষ যদি পয়দা করতে পারি আমি দেখে না যেতে পারি, আমার এ দেশ সোনার বাংলা হবেই একদিন ইনশাল্লাহ।
২) স্বাধীনতা বৃথা হয়ে যাবে যদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

কৃষ্ণচূড়া আড্ডার কথা

লিখেছেন নীলসাধু, ১৯ শে মে, ২০২৪ দুপুর ১:০২



গতকাল পূর্ব নির্ধারিত কৃষ্ণচূড়ায় আড্ডায় মিলিত হয়েছিলাম আমরা।
বছরের একটি দিন আমরা গ্রীষ্মের এই ফুলটির প্রতি ভালোবাসা জানিয়ে প্রকৃতির সাথে থাকি। শিশুদের নিয়ে গাছগাছালি দেখা, ফুল লতা পাতা চেনাসহ-... ...বাকিটুকু পড়ুন

সকাতরে ঐ কাঁদিছে সকলে

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৩:২৯

সকাতরে ওই কাঁদিছে সকলে, শোনো শোনো পিতা।

কহো কানে কানে, শুনাও প্রাণে প্রাণে মঙ্গলবারতা।।

ক্ষুদ্র আশা নিয়ে রয়েছে বাঁচিয়ে, সদাই ভাবনা।

যা-কিছু পায় হারায়ে যায়,... ...বাকিটুকু পড়ুন

বসন্ত বিলাসিতা! ফুল বিলাসিতা! ঘ্রাণ বিলাসিতা!

লিখেছেন নাজনীন১, ১৯ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৪:০৯


যদিও আমাদের দেশে বসন্ত এর বর্ণ হলুদ! হলুদ গাঁদা দেখেই পহেলা ফাল্গুন পালন করা হয়।

কিন্তু প্রকৃতিতে বসন্ত আসে আরো পরে! রাধাচূড়া, কৃষ্ণচূড়া এদের হাত ধরে রক্তিম বসন্ত এই বাংলার!

ঠান্ডার দেশগুলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

×