পৃথিবী সৃষ্টির পর্যায় সমুহঃ
বিগ ব্যাং সংগঠিত হওয়ার পর ঘটনা বহুল পক্রিয়ায় মহাবিশ্বের উন্মেষ ঘটে। বিস্তীর্ণ মহাকাশ ( Heavens) ও আকাশী বস্তুসমুহ( Celestial Bodies) যেভাবে সৃষ্টি হয়েছে সৃষ্টি তত্ত্ববিদরা দুটি পর্বে এবং চার অধিযুগে বিভক্ত করেছেন।
প্রথম পর্বঃ-
সৃষ্টির প্রারম্ভে মহাজগৎ এমন দ্রুত সম্প্রসারণ হতে থাকে যার ফলে মহাকর্ষীয় শক্তি অপর তিনটি শক্তি ( সবল নিউক্লীয়, দুর্বল নিউক্লীয় এবং বিদ্যুৎ চুম্বকীয়) থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। হাইড্রোজেনের ও হিলিয়াম গ্যাসের বিরাট মেঘমালা মহাকর্ষীয় ভাঙ্গনের ফলে বস্তুপিণ্ডে পরিণত হয়। এসব গ্যাস গঠিত বস্তুপিণ্ড স্থানান্তরিত হতে থাকে যা প্রকারান্তরে নক্ষত্র রুপ ধারণ করে। নক্ষত্র সমূহ মহাকর্ষীয় শক্তির তানে কখনো গোলাকার, কখনো শঙ্কিল, কখনো উপবৃত্তাকার গ্যালাক্সি গঠন করে। এ পর্বে সৃষ্টি সমূহ সম্পন্ন হতে প্রায় ২৫০ মিলিয়ন সময় অতিবাহিত হয় এবং এটাকে গ্যালাক্সি গঠনের পর্বও বলা হয়।
দ্বিতীয় পর্বঃ-
নক্ষত্রের আভ্যন্তরীণ চাপ গ্যাসীয় বস্তুর cracking system – কে ত্বরান্বিত করে। কোন কোন নক্ষত্রে ব্যাপক বিস্ফোরণ ঘটে এবং ভারী মৌলিক পদার্থ ছিটকে চতুর্দিকে ছড়িয়ে পড়ে, যা থেকে নেবুলা গঠিত হয়। নেবুলাগুলো মহাকাশে ইতস্ততঃ ভ্রমণ শুরু করে এবং পরস্পরের কাছাকাছি আসলে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। যার দরুন ভারী পদার্থ বিচ্যুত হয়ে অবশেষে তা গ্রহ, উপগ্রহে পরিণত হয়। গ্রহ উপগ্রহ গুলো নির্দিষ্ট নক্ষত্রের চারপাশে ঘুরতে থাকে এবং নক্ষত্রের দ্বারা আকৃষ্ট হয়ে একটি সংগঠন গড়ে তোলে। এভাবেই আমাদের সৌর জগত গঠিত হয়েছে। সৃষ্টির এ পর্যায়কে ২য় পর্ব হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।
উপরোক্ত ২ পর্বের মাধ্যমে আমাদের পৃথিবী গঠিত হয়। বিজ্ঞানীদের গবেষণার মাধ্যমে জানা গেছে যে, পৃথিবীর আভ্যন্তরীণ সমূদয় সৃষ্টি চার পর্বে সমাপ্ত হয়েছে। এ সকল পর্বকে ভূতাত্ত্বিক অধিযুগ বা Geological Eras হিসেবে বিবৃত করা হয়েছে।
১ম অধিযুগঃ- এ অধিযুগ শুরু হয়েছিল ৪.২৫ বিলিয়ন বছর পূর্বে এবং এর স্থায়িত্ব ছিল ৩.৬৫ বিলিয়ন বছর। এ সময় পৃথিবীর ধারাবাহিক রূপান্তর ঘটতে থাকে। এ সময় বিভিন্ন গ্যাস মিশ্রিত উত্তপ্ত গ্যাসীয় মণ্ডল পৃথিবী জুড়ে বিস্তৃত ছিল। ক্রমান্বয়ে তাপ বকিরনের ফলে তা তরল পদার্থে পরিণত হয় এবং এদের মধ্যে ক্রিয়া বিক্রিয়ার এক পর্যায়ে H2 ও O2 এর রাসায়নিক বিক্রিয়ায় জলীয় বাষ্প গঠিত হয়। তাপমাত্রা আরও হ্রাস পেলে বাষ্প কণা জল কণায় পরিণত হয়ে বৃষ্টিধারায় তা মাটিতে নেমে আসে। এভাবে ১০০ কোটি বছরের মধ্যে বায়ু মণ্ডলের উন্নতি ঘটে। যার ফলে পৃথিবীতে একাধারে বৃষ্টিপাতের ঘটনা ঘটে এবং সাগর মহাসাগর নদ নদি ইত্যাদি সৃষ্টি হয়। সৃষ্টির এই পর্যায়কে বলা হয় Proterozoic Era.
২য় অধিযুগ (2nd Era) :- এটাকে পরজীবীয় (Paleozoic) অধিযুগ বলা হয়। এ সময়ে ক্রমাগত ধারায় ভূপৃষ্ঠের রুপান্তর ঘটতে থাকে। মৎস্য প্রাণী উভচর প্রাণী এবং সরীসৃপ প্রাণী এ অধিযুগে আবির্ভূত হয়। এ অধিযুগ শুরু হয়েছিল ৬০০ মিলিয়ন বছর পূর্বে এবং স্থায়িত্বকাল ছিল প্রায় ৩৮০ মিলিয়ন বছর।
৩য় অধিযুগ(3rd Era):- এ পর্যায়ের নামকরণ করা হয়েছে মধ্যজীবীয় অধিযুগ ( Mesozoic Era) । এ সময় মাটির উর্বরতা সৃষ্টি হয়। মরুভূমি, বনাঞ্চল, পর্বতমালা এবং সামুদ্রিক অঞ্চল সপ্রসারিত হতে থাকে। স্তন্যপায়ী জীব প্রথমবারের মত আবির্ভূত হয় এবং বিরল প্রাণী ডাইনোসর এ কালে আবির্ভূত হয়ে প্রাধান্য বিস্তার করে। এ যুগের স্থায়ী কাল ছিল প্রায় ১৫০ মিলিয়ন বছর।
৪র্থ অধিযুগ (4th Era):- এ পর্বের নাম Cenozoic Era বা নবজীবীয় অধিযুগ। এতি এমন একটি কাল যা শুরু হয়েছে প্রায় ৭০ মিলিয়ন বছর পূর্বে এবং তা এখনো অব্যাহত রয়েছে। ডাইনোসর বিলুপ্ত হয়েছে এ যুগে এবোঞ মোহাণ আল্লাহতালা সর্বশ্রেষ্ঠ সৃষ্টি ‘মানুষ’ এ যুগে সৃষ্টি হয়েছে।
হে নবী, এদের বলো , তোমরা কী সেই আল্লাহর সাথে কুফরী করছো এবং অন্যদেরকে তাঁর সাথে শরীক করছো যিনি দুদিনে পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন ? তিনিই বিশ্ব জাহানের সবার রব৷ তিনি (পৃথিবীকে অস্তিত্ব দানের পর) ওপর থেকে তার ওপর পাহাড় স্থাপন করেছেন এবং তাতে বরকত দান করেছেন৷ আর তার মধ্যে সব প্রার্থীর জন্য প্রত্যেকের চাহিদা ও প্রয়োজন অনুসারে সঠিক পরিমাপে খাদ্য সরবরাহ করেছেন৷ এসব কাজ চার দিনে হয়েছে৷ [[ আল কোরআন (৪১:৯,১০)]
আল্লাহই আকাশ মণ্ডলী ও পৃথিবী এবং এদের মাঝখানে যা কিছু আছে সব সৃষ্টি করেছেন ছয় দিনে এবং এরপর আরশে সমাসীন হয়েছেন ৷ তিনি ছাড়া তোমাদের কোন সাহায্যকারী নেই এবং নেই তার সামনে সুপারিশকারী, তারপরও কি তোমরা সচেতন হবে না ? [ আল কোরআন (৩২:০৪)]
(আরবি ‘ইওম’ অর্থ দিন। এ আয়াতে দ্বিবচন ‘ইওমাইনে’ ব্যবহৃত হয়েছে। কিন্তু যে আয়াতে সৃষ্টি তত্ত্ব আলোচনা করা হয় সেখানে পৃথিবীর নিজ অক্ষে আবর্তনকালের সময়কালকে নির্দেশ করেনা। যেমন, সূরা হজ্বের ৪৭ নং আয়াতে বলা হয়েছে ১ দিন = ১০০০০ বছর। সূরা মা’আরেজের ৪ নং আয়াতে ১ দিন = ৫০০০০০ বছর বলা হয়েছে। এসব থেকে বুঝা যায় যে আল্লাহতাআলার নিকট ১ দিনের অর্থ একটি সময়কাল। এ সময়কাল দীর্ঘ হতে পারে ক্ষুদ্রও হতে পারে। অর্থাৎ একটি সৃষ্টিকর্মকে পূর্ণতা দান করতে যতটুকু সময় লাগে ‘দিন’ বলতে তিনি সে সময়কে বুঝিয়েছেন। তাই ‘ইওম’ এর আরও অনেক অর্থ হতে পারে, যেমন দিন, কাল, কালের ব্যাপ্তি, phase, Era ইত্যাদি।)
এসব তথ্য আমরা বিজ্ঞানের অগ্রগতির সাথে সাথে জানতে পেরেছি কিছু বছর আগে। কিন্তু পবিত্র কোরআনে তা বলা হয়েছে ১৪০০ বছর পূর্বে। এসব জিনিস ই প্রমান করে যে আল কোরআন মহান আল্লাহতাআলা এর বানী যা মানুষের জন্য একটি দিক নির্দেশক। এই মহবিশ্ব, পৃথিবী, জীব জন্তু, মানুষ ইত্যাদি সবকিছুই আল্লাহর সৃষ্টি এবং তাঁর বেঁধে দেয়া নিয়ম অনুসারে চলমান। কোন দুর্ঘটনা বা coincidence এর মাধ্যমে এই মহাবিশ্বের সৃষ্টি হতে পারে না। যদি তাই হত তাহলে সবকিছু এত নিয়ম মাফিক হতো না। এই মহাবিশ্ব আপনাআপনি সৃষ্টি হয়নি। এটাকে সৃষ্টি করা হয়েছে। এটি মহান আল্লাহতাআলার সৃষ্টি এবং তিনিইএর পরিচালক।