somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

একটি জাতীকে নিয়ন্ত্রণের বা ধ্বংসের উপায় ( পর্ব ০৩)

১৮ ই জানুয়ারি, ২০১৬ সন্ধ্যা ৬:৪১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

পূর্বের ২ পর্বে কিভাবে মিডিয়া ব্যবহার করে একটি জাতীর চিন্তা চেতনা নিয়ন্ত্রণ করা যায় তা বলেছি। এখন আসি একটি জাতীর ভবিষ্যৎ কিভাবে ঠিক করে দেয়া যায় ভবিষ্যৎ প্রজন্মের শিক্ষা ব্যবস্থা এবং চিন্তা চেতনা নিয়ন্ত্রণ বা ধ্বংস করে দিয়ে।

So its Step2: To shape future generations, control the schools: আপনার আল্টিমেট লক্ষ্য হবে ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে দুর্বল করে ফেলা, শরীর মন এবং আত্মিক দিক থেকে দুর্বল এবং পরনির্ভরশীল করে ফেলা। কোন ভাবেই তাদের পাঠ্যপুস্তকে কোন ভাবেই সেই জাতীর প্রকৃত ইতিহাস তুলে ধরা যাবে না। তুলে ধরতে হবে ততটুকুই যতটুকু না জানালেই নয় এবং অবশ্যই মডিফাইড ইতিহাস যাতে আপনার ধ্যান ধারণা প্রচারে সুবিধে হয় এবং আপনার প্রতিপক্ষকে তাদের সামনে খারাপ ভাবে উপস্থাপন করতে সহায়ক হয়। কারন যদি একদমই না জানান তাহলে সেই বিষয়ে কিউরেসিটি থেকে যাবে যার ফলে পরবর্তীতে তারা কিউরিসিটি র প্রভাবে আসল ইতিহাস জেনে যেতে পারে। তাই জানাবেন আপনার মন মত ইতিহাস, পুরোপুরি সত্য নয়, মিথ্যে মিশিয়ে দিন, Create Delusion. যাতে তারা সবসময় কনফিউজড থাকে তাদের প্রকৃত ইতিহাস নিয়ে। এর ফলে পরবর্তীতে আপনি মিথ্যেটাই ইতিহাস হিসেবে তাদের কাছে দাড় করাতে পারবেন এবং তারা সানন্দে এটা গ্রহণ করবে কনফিউসান এড়ানোর জন্য। আপনার প্রতিপক্ষের ব্যাপারে তাদের মনে ঘৃণা তৈরি করতে হবে, বোঝাতে হবে যে তারা দেশ এবং জাতীর জন্য ক্ষতিকর, তাদের মনে ভয়ের সৃষ্টি করতে হবে প্রতিপক্ষের ব্যাপারে। ফলে পরবর্তীতে আপনি প্রতিপক্ষকে দমন করতে যত নিষ্ঠুর , অমানবিক, নৃশংস পন্থাই নেন না কেন তারা তা সমর্থন দিয়ে যাবে আকুন্ঠচিত্তে। Make them haters to your enemies. এক্ষেত্রে মিডিয়া হবে আপনার অব্যর্থ অস্ত্র ।

এবার আসি তাদের শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে। প্রত্যেক শিশুর প্রথম বিদ্যালয় হচ্ছে তার পরিবার বা ফ্যামলি। পরিবার থেকেই সে প্রথমে কথা বলা আচার আচরন ইত্যাদি শিখে, তার মস্তিস্ক চিন্তা চেতনা বিস্তৃত হতে থাকে পরিবারের মধ্যে থেকেই। তাই পারিবারিক বন্ধন যত গাড় হবে একজন শিশুর মানসিক বিকাশ তত ভালভাবে এবং দ্রুতগতিতে হবে আর এক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় ভূমিকা পালন করে মা। তাই নেপলিয়ন বলেছিলেন “আমাকে শিক্ষিত মা দাও আমি তোমাদের শিক্ষিত জাতী দেব” । তাই আপনাকে প্রথম আঘাত হানতে হবে পরিবার ব্যবস্থায়। নারী পুরুষ সমান অধিকার, সেলফডিপেন্ডেন্ট, নারীর সমধিকার , নারীর ক্ষমতায়ন ইত্যাদির মোহে মোহাবিষ্ট করে মা কে নিয়ে আসতে হবে পরিবারের বাহিরে, বন্ধন করে দিতে হবে আলগা। বাবা মা দুজনেই ব্যাস্ত , সন্তান আছে চাইল্ড কেয়ার এ। এমন অবস্থায় শিশুর মানসিক বিকাশ যথাযথ হবে না। ছোট বেলাতেই তার মনে পারিবারিক বন্ধন হালকা হয়ে যাবে, সে নিজের মা এর কাছ থেকে যতটা আগ্রহ এবং ভালোবাসা নিয়ে শিখতো তা সে কখনোই অন্য আরেকজনের কাছ থেকে শিখবে না , বা অন্য কেউ ও এত যত্ন এবং নির্ভুল করে শিখাবে না। তাই এই ব্যস্ত সময়টাই শিশুর মনে প্রভাব ফেলবে, পরিবারের প্রতি আকর্ষণ ভালোবাসা ভালো করে গড়ে উঠবে না। শিশু হয়ে পরবে বহির্মুখী , অসহায়, ভিত। যাকে ভেঙ্গে ফেলা খুব সহজ। আবার নিজের চাহিদা মত তার মোড়ালিটি গড়ে দেয়া খুব সহজ। তাকে যা দেবেন তাই সে তখন গ্রহণ করবে কারন তার মোড়াল বেইস এত শক্তিশালী না। সে সহজেই হয়ে পড়বে নেশাসক্ত এবং মোহাবিষ্ট।

স্কুলের পাঠ চক্রে এবং পাঠ্যপুস্তকে কিছু বিষয় বেশী হাইলাইট করতে হবে যাতে শিশু অবচেতন মনেই তা গ্রহণ করে। তাকে নিজের বিবেকবোধ ব্যবহারে বাঁধা দিতে হবে, বোঝাতে হবে “natural aggression is wrong and docile submission is right”। এই বিষয়টা তার মস্তিষ্কে ঢুকিয়ে দিতে হবে। তাকে বোঝাতে হবে যে কোন নৈতিকতার ভিত্তি যেমন ধর্ম, ধর্মগ্রন্থ , ধর্মীয় নিয়ম নীতি ইত্যাদি Backdated, dark ages, unapplicable in this modern world. তাকে বোঝাতে হবে ধর্মীয় রীতিনীতি শুধু উন্নতির জন্য বাঁধা স্বরূপ। ধর্ম এবং ধর্মীয় রীতিনীতি সম্পর্কে তার মধ্যে অনীহা, বিতৃষ্ণা সৃষ্টি করতে হবে। তাকে এমনভাবে গড়ে তুলতে হবে যাতে সে আপনার ধ্যান ধারণা কে বেশী মূল্যবান মনে করে। তাকে দেখাতে হবে উচ্ছল উদ্যাম , বাধাহীন, নিয়ম নীতি হীন , যা ইচ্ছে তা করার মত কপট স্বপ্ন , তাকে করতে হবে মোহাবিষ্ট । তাদের “দেশপ্রেম মানেই ভাল খারাপ বিবেচনা না করে আপনার কাজকে সমর্থন করা” এই মোহে মোহাবিষ্ট করে রাখতে হবে। সহনশীলতার দোহাই দিয়ে তাদের মধ্যে ধর্মীয় রীতিনীতি, সামাজিক নিয়ম নীতি ইত্যাদি অগ্রাহ্য করার শিক্ষা দিতে হবে। তাদের কে এত কিছু যখন দেবেন তখন খেয়াল রাখতে হবে তারা যাতে এসব বিষয় নিয়ে গভিরভাবে চিন্তার সময় সুযোগ না পায়।সময় সুযোগের অভাবে তারা এসব অন্ধের মত গ্রহণ করবে। তাদের দৈনন্দিন জীবন যাপন হতে হবে নিয়ন্ত্রিত। যখন শিশু ভাবতে শিখবে তখন তাকে পড়ালেখার অত্যাধিক চাপের মধ্যে রাখতে হবে যাতে সে ভাবার সময় না পায়। তার পরিপূর্ণ মানসিক বিকাশে ব্যাঘাত ঘটানোর জন্য তাকে করে ফেলতে হবে গৃহবন্ধী, যাতে সে অন্যদের সাথে মেশার খুব সুযোগ না পায়, পড়ালেখার বাহিরে তার ধ্যান ধারণা চিন্তা চেতনা করতে হবে একমুখী এবং নিয়ন্ত্রিত। কার্টুন, গেমস ইত্যাদি দিয়ে তার ভাবনার সময়টাকে যথাসম্ভব সঙ্কুচিত করতে হবে। গেমসের মাধ্যমে তাকে ভায়লেন্স সিনে ইউজ টু করতে হবে, কারন এদের মধ্যে অনেকে আপনার প্রতিপক্ষ ঘায়েল করার অস্ত্র হিসেবে কাজ করবে। কার্টুনের মাধ্যমে শিখাতে হবে কিভাবে সামাজিক ধর্মীয় রীতিনীতির বিরুদ্ধে যাওয়া যায়। প্রচলিত সব কিছুর বিপক্ষে যাওয়া মানেই ফ্রিডম, ফ্রি থিংকিং, এই ধারণা তাদের মাথায় গেঁড়ে দিতে হবে।

তাদের নিজস্ব সংস্কৃতি থেকে যথাসম্ভব দূরে রাখার চেষ্টা করতে হবে, আপনার তৈরি সংস্কৃতির প্রতি আকৃষ্ট করতে হবে মিডিয়া ব্যবহার করে। যাতে সে আস্তে আস্তে আপনার তৈরি সংস্কৃতি কেই সেরা মনে করে এবং আনন্দের সাথে গ্রহণ করে। যখন তার মানসিক বিকাশের সময় তখন প্রচন্ড চাপে রাখতে হবে এবং যখন সে আস্তে আস্তে বড় হবে এবং চাপ নেয়ার ক্ষমতা অর্জন করতে থাকবে তখন পড়ালেখাটাকে করে দিতে একদম সহজ, যাতে সহজেই সে পরীক্ষায় সর্বোচ্চ স্থান লাভ করতে পারে। এর ফলে তার মধ্যে গড়ে উঠবে ফেইক কনফিডেন্স যা সামান্য ঝরেই ভেঙ্গে পড়বে। আর সর্বোচ্চ স্থান শুধু এক দুজন নয় অনেক জন কে দিতে হবে যাতে মেধার যাচাই সঠিক ভাবে না হয়। আর প্রশ্ন ফাঁস নকল ইত্যাদি দিয়ে কত সহজে অল্প পরিশ্রমে ডিগ্রি অর্জন করা যায় তা শেখাতে হবে। এখানেই হবে দুর্নীতির হাতে খড়ি। এই শিক্ষাব্যবস্থার মাধ্যমে তৈরি হবে এমন যুব সমাজ যারা গভীর চিন্তায় অক্ষম,নিজের উপর আস্থাহীন, পরনির্ভরশীল, ভীত,ভঙ্গুর এবং নিয়ন্ত্রিত।
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই জানুয়ারি, ২০১৬ রাত ১০:৫১
২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

রাজত্ব আল্লাহ দিলে রাষ্ট্রে দ্বীন কায়েম আমাদেরকে করতে হবে কেন?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০৮ ই মে, ২০২৪ ভোর ৬:০৬



সূরাঃ ৩ আলে-ইমরান, ২৬ নং আয়াতের অনুবাদ-
২৬। বল হে সার্বভৈৗম শক্তির (রাজত্বের) মালিক আল্লাহ! তুমি যাকে ইচ্ছা ক্ষমতা (রাজত্ব) প্রদান কর এবং যার থেকে ইচ্ছা ক্ষমতা (রাজত্ব) কেড়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তির কোরাস দল

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ০৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:২৫



ঘুমিয়ে যেও না !
দরজা বন্ধ করো না -
বিশ্বাস রাখো বিপ্লবীরা ফিরে আসবেই
বন্যা ঝড় তুফান , বজ্র কণ্ঠে কোরাস করে
একদিন তারা ঠিক ফিরবে তোমার শহরে।
-
হয়তো... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাইডেন ইহুদী চক্তান্ত থেকে বের হয়েছে, মনে হয়!

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৪৮



নেতানিয়াহু ও তার ওয়ার-ক্যাবিনেট বাইডেনকে ইরান আক্রমণের দিকে নিয়ে যাচ্ছিলো; বাইডেন সেই চক্রান্ত থেকে বের হয়েছে; ইহুদীরা ষড়যন্ত্রকারী, কিন্তু আমেরিকানরা বুদ্ধিমান। নেতানিয়াহু রাফাতে বোমা ফেলাতে, আজকে সকাল থেকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আজ ২৫শে বৈশাখ। ১৬৩তম রবীন্দ্র জন্মজয়ন্তী উপলক্ষে আমার গাওয়া কয়েকটি রবীন্দ্রসঙ্গীত শেয়ার করলাম। খুব সাধারণ মানের গায়কী

লিখেছেন সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই, ০৮ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৩:০৫

আপনারা জানেন, আমি কোনো প্রফেশনাল সিঙ্গার না, গলাও ভালো না, কিন্তু গান আমি খুব ভালোবাসি। গান বা সুরই পৃথিবীতে একমাত্র হিরন্ময় প্রেম। এই সুরের মধ্যে ডুবতে ডুবতে একসময় নিজেই সুর... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিশ্ব কবি

লিখেছেন সাইদুর রহমান, ০৮ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৩:২৭

বৈশাখেরি পঁচিশ তারিখ
কবি তোমার জনম
দিন,
বহু বছর পার হয়েছে
আজও হৃদে, হও নি
লীন।

কবিতা আর গল্প ছড়া
পড়ি সবাই, জুড়ায়
প্রাণ,
খ্যাতি পেলে বিশ্ব জুড়ে
পেলে নভেল, পেলে
মান।

সবার ঘরেই গীতাঞ্জলী
পড়ে সবাই তৃপ্তি
পাই,
আজকে তুমি নেই জগতে
তোমার লেখায় খুঁজি
তাই।

যখন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×