চে গুয়েভারা আর তার বন্ধু মোটর সাইকেল নিয়ে পুরো নর্থ আমেরিকা চষে বেড়িয়েছিল। তারপর লিখেছিল দ্যা মোটর সাইকেল ডাইরী।
আমি বাইসাইকেল নিয়েও ভ্রমন করেছি, সেটা দিয়া বাড়ি পর্যন্ত। এতটুকু ভ্রমন করে নিশ্চয় আর যাইহোক ডাইরী লেখা যায় না। কিন্তু বাই সাইকেল নিয়ে আমার স্মৃতীর ভ্রমন পুরো নর্থ আমেরিকা থেকেও বিস্তৃত।সেই সব কথা লিখতে বসেছি।
আমি জীবনে যে সাইকেল চালানো শিখতে পারবো একথা আমার আব্বা বিশ্বাস করতো না। তিনি ঘোষনা দিলেন সাইকেল চালানো তোর কম্ম না, তুই বড়জোর সাইকেল মেকানিকের সেকেনড হেল্পার হতে পারবি। মনে জেদ চেপে গেলো।
আমাদের বাসার লজিং মাষ্টারের সাইকেল নিয়ে এক পা এক প্যাডালের উপর দিয়ে আর এক পা দিয়ে ঠেলে ঠেলে সাইকেল নিয়ে স্কুলের ফিল্ডে অবিরাম চক্কর দেয়া শুরু করলাম । একসময় দেখলাম আমি তিন রডের মাঝখানে পা ঢুকিয়ে হাফ প্যাডেল মারতে পারছি। তারপরে রডে। সিটে বসতে পারতাম না।সিটে বসলে প্যাডাল আর পায়ে থাকতো না।
তারপর একটু বড় হলাম আব্বা একটা সাইকেল কিনে দিল। সাইকেলের নাম হারকিউলিস। সেই সাইকেলে চড়ে আমার শুধু উড়তে বাকি ছিল বাকি সব ই করা হয়ে গিয়েছিল। মফস্বল শহরের প্রতিটি ওলিগলি সাইকেলের চাকায় পিষ্ট নিষ্পেষিত। বন্ধুদের মধ্যে অবস্থা যাদের একটু ভালো তার চলতো মোটা চাকার ছোট সাইকেল। বলতো, এই দেখ আমার গিয়ারওয়ালা সাইকেল।মনে মনে ভাবতাম সাইকেলের গিয়ার থাকে কেমনে ! আমার সামনে এসে যখন ক্যাক করে হাইড্রলিক ব্রেক চাপতো, আমার বুকের মধ্যে ক্যাক করে ব্যাথা লাগতো।
সে ব্যাথা বুকের মধ্যে নড়াচড়া করেছে বহু বছর। বাড়িতে একবার বললাম , আমার মোটা চাকার সাইকেল কিনে দেন। আব্বা উদাস নয়নে বলল, তার চেয়ে বরং ট্রাক কিনে দি, ট্রাক চালা, ট্রাকেরও মোটা চাকা।
মোটা দাগে যখন এইসব স্মৃতী বুকের মধ্যে যখন গেথে গেছে ততদিন আমি বড় হয়ে গেছি।চাকরী এবং বাকরী করি।এইতো সেদিন কিনে ফেললাম মোটা চাকার দ্বিচক্রযান। দোকান্দারকে বললাম, প্রথমে আমাকে বুঝান গিয়ার কি জিনিস, হাইড্রলিক কি জিনিস। আমি সাইকেলের আর কিছু বুঝতে চাই না।
সাইকেল কেনার পর মোটামুটি একটুকরা শৈশব আমার পাশে গুটিশুটি হয়ে চলতে শুরু করলো। আমাদের রোডের দোকানদার শাহিন মামা বলতো, মামা সাইকেল একটু আস্তে চালান। আমি তার সামনে ক্যাক করে ব্রেক চেপে বলতাম ভয় পাইয়েন না , লাগামু না । সে বলতো আপনার বুড়া বয়সে ভীমরতি ধরেছে।
সুখবর হচ্ছে , অসময়ের ভীমরতি খতম হয়েছে। সাইকেল তালা ভেঙ্গে চুরি হয়েছে আজ রাত আট ঘটিকায়। ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাহির রাজেউন।
সুখবর আরো আছে, এই দেশে প্রতিদিন আমি সুস্থ মানুষ ঘর থেকে থেকে বের হয়ে যে সুস্থ ভাবে ফিরে আসছি, কেউ এখনো পাজর ভেঙ্গে দিচ্ছে না। এই ভেবে আনন্দে চোখে পানি চলে আসছে ।বলেন সুবহানাল্লাহ।
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই অক্টোবর, ২০১৮ বিকাল ৩:৪৮