somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

শনিবার সন্ধ্যা (কি কথা তাহার সাথে)

২৬ শে মে, ২০১৯ বিকাল ৪:০২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


প্রথম পর্ব
তৃতীয় পর্ব
চতুর্থ পর্ব
পঞ্চম পর্ব
এটা একটি অমিথ্যা গল্প। জীবিত অথবা মৃত কারো সাথে মিলে গেলে লেখক স্বয়ং দায়ী। উপযুক্ত প্রমান দিয়ে ক্ষতি পূরন আদায় করতে পারেন



জোহরা এসে দাড়ালো অর্ণবের সামনে। এই দিনটির অপেক্ষায় দশ বছর ধুয়ে গেছে সময়ের স্রোতে। সময় যেন থমকে গেলো অর্ণবের সামনে । অর্ণবের মনে হলে, ঠিক এই মহুর্তে সামনে জোহরা ছাড়া এই বিশ্বব্রম্মান্ডে আর কিছুই নেই। সমস্ত পার্থীব জগতের সমস্ত বিষয় লুপ্ত, তুচ্ছ হয়ে গেছে জোহরার সামনে। অর্ণব উঠে দাড়ালো। জোহরা বলল, দেখছো তোমাকে ঠিক আমি চিনতে পেরেছি। খুব একটা বদলাও নাই। কিন্তু জোহরা জানেনা, তাকে দেখা সাথে সাথে পুরো পৃথীবি অর্ণবের কাছে তুমুল পালটে গেছে। জোহরা কি বুঝতে পারছে, কি তুমুল তোলপাড় চলছে তার বুকের ভেতরে। সে কি বুঝতে পারছে, পৃথীবির সমস্ত আলো ঠিকরে পড়ছে তার সামনে। আর সে আলোই পুড়ে যাচ্ছে অর্ণবের চোখ আর হৃদয়। সে কি বুঝতে পারছে, অর্ণবের বুকের ভেতর শুরু হয়ে গেছে তুমুল হইচই, রক্তের বান ডেকেছে হৃদপিন্ডে।
অর্ণব লিটারেলি বুকে হাত দিয়ে বসে পড়লো। হেসে বলল, আমার মনে হচ্ছে আমার হার্টস্টক হয়ে যাবে। জোহরাও হেসে ফেললো।

কেমন আছো বলো। কফি শপের উজ্জ্বল আলোকে আরে উদ্ভাসিত করে দিয়ে বলল জোহরা। এই সাধারন প্রশ্নের কি উত্তর দিবে বুঝতে পারছিল না।সে কি বলবে , তোমাকে ছাড়া এই দ্বীর্ঘ দিবস রজনী পাড়ি দিতে আমার অনেক কষ্ট হয়েছে, আমি ভালো নেই। নাকি সে বলবে কবিতার ভাষায়, কিছু ভাংচুর আর তোলপাড় নিয়ে আমি ভালোই আছি। জোহরা বলল, চুপ করে আছো কেন, বল!
কফি শপের মৃদু গুঞ্জনকে তছনছ করে দিয়ে অর্ণব বলল, আমি ভালো আছি, তুমি ? জোহরা বলল, আমিও ভালো আছি।
অর্ণব বলল, আমার এখনো বিশ্বাস হচ্ছে না যে তুমি আমার সামনে বসে আছো , মনে হচ্ছে আমার স্বপ্নের ভেতর আছি। আমার হাতে চিমটি দাও , স্বপ্ন ভংগ হোক। সেই কথা শুনে জোহরা যে হাসি দিলো, সে হাসির বিনিময়ে চাদটাকে এক ঝটাকায় পেড়ে আনা যায়, দুনিয়ার সমস্ত গোলাপ দিয়ে ঢাকা শহর ঢেকে ফেলা যায়।
জোহরা বলল, স্বপ্ন ভংগ হওয়ার দরকার নাই, তুমি স্বপ্নেই আছো , স্বপ্নেই থাকো। আমার হাত স্পর্ষ করলেই তুমি জেনে যাবা এই পৃথীবির কড়া বাস্তবতা, মানুষ কি নিদারুন ভাবে বাচে ! আমাকে স্পর্শ করলেই তুমি জেনে যাবা, কতটা না চাওয়া মুহুর্তরা আমার সময়কে কুড়ে কুড়ে খেয়েছে। অর্ণব মনে মনে ভাবে , আমি জানতে চাই তোমার গত দশ বছরের সমস্ত মুহুর্ত, তোমার আনন্দ, হাসি, কান্না , দুঃখগাথা । কিন্তু মুখে বলে আচ্ছা বাদ দাও।
জোহরা বলে বিয়া করো না কেন, বলতো ! মেয়ে পাও নাই ! চোখে দুষ্টুমি খেলে। অর্ণব সেসব পাত্তা না সিরিয়াস মুখ করে বলে , এইবার বিয়া করবো , পাত্রি পেয়ে গেছি। তোমার কি খবর, প্রেম ট্রেম করো। জোহরা আয়েসি ভঙ্গিতে কফিতে চুমুক দিতে দিতে বলে , দেড় বছর আগে করেছিলাম, প্রেম হলো প্যারা। ভালোবেসে ফেললেই সমস্যা। অর্ণব জানে ভালোবাসলে কি সমস্যা । জোহরা বলে, তুমি করো নাই প্রেম! অর্ণব হেসে বলে , প্রেম করি নাই, অপ্রেম করেছি কিছু। জোহরা বলে, সেই কিছু অপ্রেমের কি খবর। অর্নব কফিতে সুগার কিউব দিতে দিতে বলে, তাহারা মৃদু এবং অপ্রতুল স্রোতে ভেসে গেছে। জোহরা তার ঈশৎ লালচে চুল ঝাকিয়ে বলে , খারাপ লাগে নাই!
অর্ণব তার অযত্নে বড় হয়ে যাওয়া চুল চোখের সামনে থেকে সরাতে সরাতে বলে, খারাপ লাগা সরিয়ে রেখেছি।

অর্ণবের কথা বলার প্যাটার্ন হচ্ছে জাপানি ইঞ্জিনের মতো, স্টার্ট করতে সময় লাগলেও তারপর আর সমস্যা নাই। কফি মেশিনের ঘড় ঘড় শব্দ, পাশের টেবিলে কাপলদের ঝগড়া, অপরিচিত ইংলিশ গান সমস্ত কিছু ছাপিয়ে অর্নব কথা বলে যাচ্ছে অনর্গল। তার মনে হচ্ছে এই দশ বছরের জমা হয়ে যাওয়া সমস্ত কথা, ঘটনা , আনন্দ, হতাসা, অর্জন সব বলে দিতে হবে। এটা তার দায়।
কথা বলতে বলতে হঠাৎ সে খেয়াল করলো জোহরার বাম হাতে অনেকগুলো কাটা দাগ । অর্নব জিজ্ঞাসা করলো হাত কাটছে কিভাবে।
জোহরা হাত লুকাতে গিয়েও কি মনে করে অর্ণবের সামনে হাত মেলে ধরলো। বললো, এখানে বারোটা কাটা দাগ আছে। এই বারো বার আমার মনে হয়েছে আমি মরে যায়। কিন্তু মরতে পারি নাই।

অর্ণব জোহরাকে আজীমপুর পৌছিয়ে দিতে যাচ্ছে। সারাপথ একটা কথাও বলে নাই সে। শাহবাগে এসে দশটা গোলাপ কিনে জোহরাকে দিলো। মুহুর্তে জোহরার চোখে রাজ্যের আনন্দ চলে এলো। অর্নবের মনে হলো জোহরার চোখে এই আনন্দ দেখার জন্য সে দুই একশ মানুষকেও খুন করতে পারে। বুকের কাছে গোলাপ নিয়ে জোহরা বলল, আমার খুব পছন্দের ফুল।

গাড়ি শাহাবাগ থেকে রাজু ভাস্কর্য পার হয়েছে। অর্ণবের কেন যেন খুব কাদতে ইচ্ছে করছে। অর্নব জোহরার দিকে তাকাচ্ছে না। মনে হচ্ছে তাকালেই চোখের জল আটকাতে পারবে না। সে চাই না জোহরা তার চোখের জল দেখুক । জোহরা বলে উঠলো , কবি কথা বল ! অর্ণব মনে মনে বলল--

কে যেন বলেছিলো একদিন দেখা হবে পথে
একদিন সব প্রতীক্ষার রাত ছিড়ে মুখরিত হবে তুমি,
সেই মিলন মোহনার পথ কোথায় কতো দূর কেউ জানিনা,
আকাশ জানে। (রুদ্র মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্)
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে মে, ২০১৯ রাত ১০:২২
১৩টি মন্তব্য ১১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে মুক্তিযোদ্ধাদের মুমিনী চেহারা ও পোশাক দেখে শান্তি পেলাম

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৯:৫৮



স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে স্টেজে উঠেছেন বত্রিশ মুক্তিযোদ্ধা তাঁদের চব্বিশ জনের দাঁড়ি, টুপি ও পাজামা-পাঞ্জাবী ছিলো। এমন দৃশ্য দেখে আত্মায় খুব শান্তি পেলাম। মনে হলো আমাদের মুক্তিযোদ্ধা আমাদের মুমিনদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

দু'টো মানচিত্র এঁকে, দু'টো দেশের মাঝে বিঁধে আছে অনুভূতিগুলোর ব্যবচ্ছেদ

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১২:৩৪


মিস ইউনিভার্স একটি আন্তর্জাতিক সুন্দরী প্রতিযোগিতার নাম। এই প্রতিযোগিতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সুন্দরীরা অংশগ্রহণ করলেও কখনোই সৌদি কোন নারী অংশ গ্রহন করেন নি। তবে এবার রেকর্ড ভঙ্গ করলেন সৌদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দুই টাকার জ্ঞানী বনাম তিনশো মিলিয়নের জ্ঞানী!

লিখেছেন সাহাদাত উদরাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ২:৫৯

বিশ্বের নামীদামী অমুসলিমদের মুসলিম হয়ে যাওয়াটা আমার কাছে তেমন কোন বিষয় মনে হত না বা বলা চলে এদের নিয়ে আমার কোন আগ্রহ ছিল না। কিন্তু আজ অষ্ট্রেলিয়ার বিখ্যাত ডিজাইনার মিঃ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×