প্রথম পর্ব
দ্বিতীয় পর্ব
তৃতীয় পর্ব
পঞ্চম পর্ব
এটা একটি অমিথ্যা গল্প। জীবিত অথবা মৃত কারো সাথে মিলে গেলে লেখক স্বয়ং দায়ী। উপযুক্ত প্রমান দিয়ে ক্ষতি পূরন আদায় করতে পারেন !
শহুরে রাত প্রলম্বিত হতে হতে একসময় সকাল হয়। কিন্তু কারো কারো বুকের ভেতর যে রাত থেকে সে রাত কখনো সকালের মুখ দেখে না। সে রাত শুধু দ্বীর্ঘ থেকে দ্বীর্ঘায়িত হয়। বুকের ভেতর যে রাত থাকে সেখানে হায়েনারা ওৎ পেতে বসে থাকে তাদের ধারালো থাবা নিয়ে। সেই হায়েনাদের কথা পৃথীবি জানতে না পারলেও জোহরা জানে খুব ভালো ভাবে। তাদের ছবি তার চোখের ঘুম কেড়ে নেই নিমিষে । চোখ বুজলেই মাথার মধ্যে তাদের বিচরন শুরু হয়। জোহরা ঘুমাতে পারে না।
ফোন বাজে , একবার, দুইবার , তিনবার। সে ফোনের দিকে তাকিয়ে থাকে , ফোন ধরে না। অর্ণব ফোন দিচ্ছে। এই জটিলতায় ভরা জীবনের সাথে অর্ণবের কি পরিচয় করিয়ে দিবে নাকি আরো দশ বছর অথবা সারা জীবনের জন্য হারিয়ে যাবে । জোহরা ভাবতে থাকে।
ফোন বাজে , ফোন বাজে, ফোন বাজে। জোহরা ফোন ধরে। ওপাশ থেকে অর্ণবের কন্ঠে হাহাকার সে বুঝতে পারে। ঘুমিয়ে পড়েছিলে ? খাইছো? শরীর ভালো তো? একসাথে অনেকগুলো প্রশ্ন করে ফেলে অর্ণব। নিকষ অন্ধকারের দিকে তাকিয়ে জোহরা শুধু বলে , অর্ণব, আমার খুব হ্যাপী লাগছে। বছরের শেষটা যে এত ভালো কাটবে আমি ভাবি নাই। অর্ণব খুশিতে চনমন করে ওঠে। সে বলে দাঁড়াও তোমাকে একটা গান শোনায়। জোহরা অন্ধকারে ট্রাফিক পুলিশের মত হাত উচিয়ে বলে , থামো, তোমার যে কন্ঠ , গান গাওয়া শুরু করলে আতস খান লেনের সব রোড লাইট বিরহে ফিউজ হয়ে যাবে ! অর্ণব বলে , গান কেউ কন্ঠ দিয়ে গায় না, মন দিয়ে গায়। আইছে আমার মন বিশারদ এতো দিন পরে ! জোহরা খিল খিল করে হাসে। এই হাসি অর্ণবের কাছে পৃথীবির সবচেয়ে মিষ্টি , আকাংখিত শব্দ। অর্ণব বলে , আরো হাসো। জোহরা আড়মোড় ভাংতে ভাংতে আজকের জন্য এইটুকুন হাসি , কালকে অফিস আছে , ঘুমায়।
জোহরা ফোন রাখে , কিন্তু ঘুমায় না। অর্ণব জানেনা এই দশ বছরে তার জীবনে কি কি ঘটেছে। যার কারনে সে এক উচ্ছল তরুনী থেকে নিস্পৃহ পাথর হয়েছে। অর্ণব কে বলতে হবে তুমি যার জন্য ঢেউ গোনার ধৈর্য নিয়ে অপেক্ষা করেছো। তোমার কাছে যে পৃথীবির সবচেয়ে কাংখিত নারী, সে অন্য কারো বিরহে ব্যাকুল হয়েছে। সে তোমার কথা ভাবেনি। অর্ণব কে বলতে হবে , তুমি ভুল মানুষের জন্য এত দিন অপেক্ষা করেছো। আর সেই ভুল মানুষ আরেকটা ভুল মানুষের বিরহে পুড়েছে। কি যাতনায় আমি পাথর হয়েছি , কি কারনে সহস্র ভালোবাসার কথা শুনলেও আমার মন তা আর বিশ্বাস করতে পারে না। কি কারনে প্রতিটা দিনের শেষে মনে হয়, আজকে মরে গেলে ভালো হতো। সব অর্ণব কে বলবো।
কাক ডাকা ভোর আসে শহুরে রাস্তায়,আকাশে। সারা রাত আধো ঘুমে , আধা জাগরনে কেটেছে জোহরার। ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে দেখলো সাত টা বেজে গেছে। চোখে কোন রকম কাজল নিয়ে অফিসের উদ্দেশ্যে বাসা থেকে বের হলো। আজিমপুর বাস স্ট্যান্ডের ওপর পাশে যে মসজিদ আছে তার সামনে দৌড়ে এসে দাড়ালো। বিকাশ কিংবা ভি আই পি , যে কোন একটা পেলেই উঠে পড়বে। কিছুক্ষনের মধ্যে বাস আসলো। বাসের উঠতে যাওয়ার সময় টের পেল ,পেছনে মামুন। জোহরা যেখানে বসলো, তার সামনে সিটে এসে সে বসলো। জোহরা কিছুটা ভয় আর বিরক্তি নিয়ে বনানীতে আসার অপেক্ষা করতে লাগলো। সেই সময় অর্ণব টেক্সট করলো। শনিবার সন্ধ্যায় দেখা করতে পারবা! জোহরা লিখলো, এফ এফ সি, ধানমন্ডি।অর্ণব লিখলো, আমি থাকি তোমার প্রহরী, তোমাকে যতক্ষন দেখি তার চেয়ে বেশি দেখি যখন দেখিনা। জানালা দিয়ে আসা মৃদু বাতাস জোহরারা চুল উড়িয়ে দিচ্ছে, জোহরা ঠোটের কোনে্র হাসির রেখা মিলেয়ে দিয়ে মনে মনে বলল, কবি !
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে মে, ২০১৯ রাত ১০:১৩