প্রথম পর্ব
দ্বিতীয় পর্ব
তৃতীয় পর্ব
চতুর্থ পর্ব
এটা একটি অমিথ্যা গল্প। জীবিত অথবা মৃত কারো সাথে মিলে গেলে লেখক স্বয়ং দায়ী। উপযুক্ত প্রমান দিয়ে ক্ষতি পূরন আদায় করতে পারেন !
শনিবার আসে না। মংগল বার থেকে শনি বার যেন সহস্র আলোকবর্ষ দূরে চলে গেছে। যখন বহু পথ পাড়ি দিয়ে শনি বার আসলো তখন হন্তদন্ত অর্ণবের বস এসে বললো আজকে লাঞ্চের পরে অফিসে থাকবেন, ফরেন ক্লাইন্ট আসবে। অর্ণবের মাথায় শনি , মঙ্গল, বুধ , বৃহস্পতি , শুক্র সহ মহাবিশ্বে যত গ্রহ ছিল সব ভেংগে পড়লো। অর্ণব বহু কষ্টে মাথা উচু করে বসকে বলল, আমার একটা জরূরী কাজ ছিল। বস মাছি তাড়ানোর ভংগি করে বলল, রবি বার তোর ফুল ডে ছুটি , আগামীকাল জরুরী কাজ করেন। এই ক্লাইন্ট এর জন্য আমরা দুই বছর ধরে অপেক্ষা করছি। সেটা আপনি জানেন। আপনিই তো সমস্ত মেইল করোসপন্ডিং করেছেন। অর্ণব মাথা নিচু করে বলল , ঠিক আছে।
অর্ণবের অফিস আট তালায়। সে মনে মনে ভাবছে বারান্দা থেকে লাফ দিবে নাকি। একটা প্যারাসুট হলে ভালো হতো । আট তালা থেকে টুক করে নিচে নেমে উবার নিয়ে ধানমন্ডি। কি মনে করে দারাজে প্যারাসুট কিনতে পাওয়া যায় কিনা সার্চ দিলো। পেছন থেকে ইকবাল সাহেব বলল, প্যারাসুট কিনবেন নাকি। স্কাই ডাইভিং ? না ভাবছি, বারান্দা থেকে লাফ দিবো , বিরস মুখে অর্ণব উত্তর দিলো। মানে কিরে ভাই!মাথা ঠিক আছে তো !! অর্ণব চেয়ার থেকে উঠে নিরুপায় ভংগিতে বলল, নারে ভাই মাথা ঠিক নাই। আমার নাকি লাঞ্চ এর পরে থাকতে হবে। আমি দশ বছর অপেক্ষা করে একটা মিটিং ফিক্স করেছি আর বস আছে তার দুই বছরের মিটিং নিয়ে। আমি প্যারাসুট না পাইলে ছাতা নিয়ে লাফ দিবো। ইকবাল সাহেব কিছুক্ষন অর্ণবের দিকে তাকিয়ে থেকে বলল, আপনি যান , আমি বসকে ম্যানেজ করবো।
যখন অর্ণব এফ এফ সি তে পৌছালো তখন সাড়ে পাচটা বেজে গেছে। জোহরা লাল সালোয়ার কামিজ পড়ে কোনার দিকের টেবিলে বসে আছে। অর্ণবের দেখে সে বলল, আমি সারাজীবন তোমাকে এই তিরিশ মিনিটের জন্য খোটা দিবো। অর্ণব হাসতে হাসতে বলল, আমি কোনদিন তোমাকে বলবো না যে আমি তোমার জন্য দশ বছর অপেক্ষা করেছি। এই তো বলে দিলে, দুই দেশে যুদ্ধ লাগানো হাসি দিয়ে জোহরা বলল। তোমাকে তো লাল পরীর মতো লাগছে , মনে হচ্ছে এক্ষুনি উড়াল দিবা।অর্ণব কথা ঘুরানোর জন্য বলল। উড়াল দিতে পারবো না এই দেখো ডানা ফুটা বলে হাত বাড়িয়ে দিলো। অর্ণব দেখলো জামার স্লিভে বড় বড় গ্যাপ, তার ভেতর থেকে জোহরার কনুই উর্ধ উজ্জ্বল ত্বক দেখা যাচ্ছে। জানো অফিসের কলিগরা বলছিল, আপনি সালোয়ার কামিজে জানালা দরজা লাগিয়েছেন। কিন্তু এটাই এখন ট্রেন্ড। চোখের উপর থেকে চুল সরাতে সরাতে জোহরা বলল। অর্ণব তার মুগ্ধ চোখ সরিয়ে নিয়ে বলল, চলো অর্ডার করি।
বার্গারে কামড় দিয়ে জোহরা বলল, শোন তোমার সাথে আমার কিছু কথা আছে। অর্ণব মনে মনে ভাবে , তোমার কথা শোনার জন্যই আমি সাধের চাকুরি পায়ে ঠেলে এসেছি, আর একটু হলে তো আট তালা থেকে লাফ দিতাম। মুখে বলল, বলো ।
আমি যখন বিবিএ তে ভর্তি হয়, তখন একটা ছেলের সাথে আমার রিলেশন হয়। বুঝতেই পারছো , তখন আমার চোখে দুনিয়া রঙ্গিন। সেই ছেলেকে আমি ভালোবেসে ফেলি, শুধু ভালোবেসে ফেলি বললে ভুল হবে । খুব খুব ভালোবেসে ফেলি। তার সুখের জন্য আমার সাধ্যের সবকিছু করেছি। তার মুখে এক টুকরো হাসি দেখার জন্য আমার মনে হতো আমি জীবন দিতে পারতাম। আমার আব্বার দ্বীতিয় বিয়ে, সংসারে নিত্য দিনকার অশান্তি, বড় ভাইদের স্বার্থপরতা সবকিছু পাশ কাটিয়ে এই ছেলেকে আমি ভালো করে ভালোবেসিছিলাম। সবকিছু ঠিকঠাক ই চলছিল। হঠাৎ আমার হাতে একটি ভিডিও ক্লিপ আসে । আমার বান্ধবী আমাকে দেখায়। বলে, দেখ যার জন্য তোর প্রান উষ্ঠাগত সে কি করেছে। সেই ভিডিও ক্লিপে কি ছিল, তা তুমি অনুমান করে নাও অর্ণব। আর মেয়েটি আমি ছিলাম না। দুই মাস আমি কোন কিছুই বলি নাই তাকে । শুধু অবজার্ভিশনে রেখেছি । তার সঙ্গে আমি কথা বলা কমিয়ে দিয়েছিলাম। এবং তাতে তার মনে হয় কিছুই যায় আসে নাই। সে কখনো আমাকে জিজ্ঞাসাও করেনি যে তুমি এমন করছো ক্যান। কি হয়েছে তোমার । সে ধরেই নিয়েছিল যে আমি কোনদিন কোন কারনেই তাকে ছেড়ে যাবো না অথবা তাকে ছাড়া বাচবো না। দুই মাস পরে আমি যখন তাকে চার্য করলাম তখন সে সম্পুর্ন অস্বীকার করলো। অথছ তুমি বিশ্বাস করো অর্ণব , সে ক্লিপে তার চেহারা স্পষ্ট । আমি তার সাথে সমস্ত যোগাযোগ বন্ধ করে দিলাম। তার সাথে যোগাযোগ বন্ধ করা এক অর্থে নিজের সাথেই যোগাযোগ বন্ধ করা। তবু আমি দাতে দাত চেপে রেখে সময় পার করছিলাম। সারা সময় সে আমাকে নক দিতো , আমার বন্ধুদের মাধ্যমে যোগাযোগের চেষ্টা করতো। আমি শেষ পর্যন্ত বললাম, ও যদি সব স্বীকার করে তাহলে আমি আবার ফিরে যাবো। ভালো তো বাসতাম। ফিরে যাওয়ার জন্য নিজে নিজেই নানা অজুহাত খুজতাম।
আমার সমস্ত কাছের বন্ধুদের সামনে ওকে নিয়ে আসা হলো। সে কিছুই স্বীকার করলো না তখন। আমার সারা পৃথীবি বালির মতো ঝুর ঝুর করে ঝরে পড়লো। আমি টলোমলো পায়ে ওর দিকে এগিয়ে যেয়ে কষে চড় মারলাম।
ওকে ছাড়া যে আমার বেচে থাকতে হবে তা আমিও কখনো ভাবিনি। ওকে কোনভাবে ভুলতে পারতাম না। ওকে ভোলার জন্য পার্টি তে যাওয়া শুরু করলাম , ড্রিংক্স করা শুরু করলাম। রাত হলে আমি কুকড়ে যেতাম । সারা রাত ওকে মাথার আর মনের ভেতর নিয়ে আমি একটার পর একটা সিগারেট খেতাম। কোন কোন দিন কষ্ট সহ্য করতে না পেরে ব্লেড চালিয়ে দিতাম হাতে। মনে হতো শরীরের সমস্ত রক্ত বেরিয়ে গেলে ও হয়তো আমার মন থেকে চলে যাবে। ও যেতো না। ঘাপটি মেরে আমার মগজে বসে থাকতে আর স্মৃতী দিয়ে আমাকে কষ্ট দিতো। পৃথীবির কোন কিছুই আর আমাকে তখন স্পর্ষ করতো না। দিনের পর দিন ঘুমের ঔষধ খেয়ে শুয়ে থাকতাম। আমার ঘুম আসতো না। সে সময় আসলো মামুন
অর্ণবের কফি ঠান্ডা হয়ে গেছে। রেস্টুরেন্টের আধো আলো ছায়াতে অর্ণব মাথা নিচু করে বসে আছে । তার মনে হচ্ছে, জোহরার সমস্ত কষ্টের ভেতরে দিয়েই সে নিজে গেছে। জোহরার প্রতিটা ঘুম না হওয়া রাতের কষ্ট, মখমলি চামড়া ছিন্নভিন্ন করার যন্ত্রনা সে পাচ্ছে। অর্ণব মাথা তুলে বলল, সেই ছেলেটার নাম কি ?
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে মে, ২০১৯ রাত ১১:৪৯