প্রথম পর্ব
দ্বিতীয় পর্ব
চতুর্থ পর্ব
পঞ্চম পর্ব
এটা একটি অমিথ্যা গল্প। জীবিত অথবা মৃত কারো সাথে মিলে গেলে লেখক স্বয়ং দায়ী। উপযুক্ত প্রমান দিয়ে ক্ষতি পূরন আদায় করতে পারেন !
জোহরার আজ খুসি খুসি লাগছে। হাত ভর্তি লাল গোলাপ নিয়ে যখন সে বাসায় গেলো তখন রাত নয়টা । নভেম্বরের আসি আসি শীতের রাত। অসংখ্য মানুষ আর বিল্ডিং এ ঠাসাঠাসি করা আতস খান লেনে সেই শীত আসতে আরো অনেক দিন বাকি। জোহরার হাতে হঠাৎ গোলাপ দেখে তার মা বলল, গোলাপ কই পেলি। ভ্রু কিঞ্চিত কোচকানো। সে কোচকানো ভ্রু কে অগ্রাহ্য করে জোহরা বলল, আজ খুব গোলাপ কিনতে ইচ্ছা করছিল , তাই কিনে ফেললাম। তোর যতসব আজগুবি ইচ্ছা, রাত দুপুরে এক গাদা মরা মরা গোলাপ কিনে বাড়ি ফিরেছিস। তুই বড় হবি কবে! জোহরা গোলাপের দিকে তাকিয়ে বলল, গোলাপ মোটেই মরা মরা না । আজ গোলাপের মন ভালো। জোহরার মা পানি গরম করার জন্য চুলার উপর দিতে দিতে বলল, পানি গরম হলে গোসল করে নিও। চেহারা দেখার কায়দা নাই।
চেহারার কি অবস্থা তা দেখার জন্য জোহরা ড্রেসিং টেবিল এর সামনে গেলো। এইটা হলো মেয়েদের কমন বৈশিষ্ট । যদি বলা হয় , বাহ খুব সুন্দর লাগছে, তাদের মনের ভেতর আকুপাকু করা শুরু করবে নিজেকে একটু দেখার জন্য। আবার যদি বলা হয় , আজকে একটু ডাল লাগছে তাহলে সত্যি খারাপ লাগছে কিনা দেখার জন্য তারা মোটামুটি বাসের লুকিং গ্লাসও ইউজ করতে পারে । এখন অবশ্য এতো কষ্ট করা লাগে না, মোবাইলের ফ্রন্ট ক্যামেরা ওপেন করলেই হয়। এইসব কথা ভাবতে ভাবতে সে আশ্চর্য হলো। আশ্চর্য হলো এই ভেবে যে একটা ছেলে এতো বছর তাকে মনে রেখে খুজে বের করেছে, এখন নিতান্ত কৃতজ্ঞতা স্বরুপ হলেও সেই ছেলের কথা তার ভাবা উচিত কিন্তু তার কথা না ভেবে সে ভাবছে বাসের লুকিং গ্লাসের কথা !!
অর্ণবের কথা ভাবার অবসর পাই নি জোহরা অথবা ভাবতে চাই নি।অর্ণবের সাথে যখন কথা হয় তখন জোহরা চনমনে ষোল বছরের কিশোরী। আদি পুরান ঢাকার না হলেও তার দাদা এবং বাবার জন্ম আতস খান লেনে। প্রায় ক্ষ্যাত একটা ছেলের সাথে মজা করে কথা বলা বা দেখা করা যায় কিন্তু তার সাথে কোন হৃদয় ঘটিত সম্পর্কে জড়ানো যায় কিনা জোহরা সেই সময় ভাবতে পারে নাই। আর তখন তার সামনে এবং পেছনে অসংখ্য ছেলের আনাগানো। জোহরার মা পেছনে এসে বলে , সেই কখন থেকে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে আছিস! পানি গরম হয়ে গেছে , গোসল কর, দশটা বাজে, । কখন খাবি আর কখন ঘুমাবি আবার সকাল থেকে তো আবার অফিস শুরু।
জোহরা ওয়াশ রুমে ঢোকে । এই জায়গায় তার মনে হয় সবচেয়ে নিরাপদ। এখানে বিকাশ গাড়ির খারাপ কন্ডাক্টর নেই, অফিসের মিজান সাহেব নেই যে কিনা সুযোগে থেকে থেকে একদিন হাত ধরে বলেছিল , চলেন একটু ঘুরে আসি, জীবনডা তো ইনজয় করার জন্য, কি বলেন ! নেই কোন টিকে থাকার কষ্ট। জোহরা শাওয়ার ছেড়ে দেই। পানি জোহরার চুল থেকে পায়ের পাতা স্পর্শ করে। জোহরার মনে হয় এমন আরামের গোসন সে অনেকদিন করে নাই। জীবনের যত কালিমা , হতাসা , না পাওয়া , ভুল মানুষকে ভালোবাসা এই জলে ভেসে যাচ্ছে সূদুরে।
গোসলের পরে এতো জোহরাকে স্নিগ্ধ লাগে মনে হয় সবুজ পাতার উপর কিছুক্ষন আগে বৃষ্টি পড়েছে। চোখ জুড়িয়ে যায়। ভেজা চুলে চিরুনী দিতে দিতে জোহরা ভাবে এই ফেব্রুয়ারীতে আমার বয়স হবে আমার ছাব্বিশ তাহলে অর্ণবের বত্রিশ। এতো বছরেও বিয়া করে নাই ছেলেটা । বেচেরা ! খেতে আয় ! ড্রয়িং রুম থেকে গলা উচিয়ে ডাকে জোহরাকে তার মা। তার যে এলার্জির সমস্যা তা বাড়ির লোকের মনে থাকে না। আজো চিংড়ি! তোমরা কি আর কোন মাছ চোখে দেখো না, চিংড়ি নিতে নিতে জোহরা বলে। তোর আব্বার পছন্দ , আমি কি করবো ! কাচুমাচু করে জোহরার মার বলে। তোরে আরেকটা কথা বলি , এই মাসের বাড়ি ভাড়াটা বাকি পড়েছে, তুই কি কালকে টাকাটা দিতে পারবি ? জোহরা এক লোকমা ভাত মুখে নিতে নিতে থেমে যায়। সে যে চার মাস বেতন পায় না। সেটা বাড়ির মানুষ কেউ জানেনা, তাদের জানার প্রয়োজনও নেই। একটু খানি যে সেভিংস ছিল তা দিয়ে এই কয়মাস কোন রকম চলছে। জোহরা বলে, কালকে দিবো।
ঘুমাতে যাওয়ার সময় ড্রেসিং টেবিলের উপরে রাখা গোলাপের দিকে জোহরার চোখ গেলো। কি মনে করে জোহরা গোলাপ গুলো বালিশের পাশে রাখলো। ঘর অন্ধকার করে দশ বছরে শরীর আর মনে বদলে যাওয়া জোহরা শুয়ে আছে , পাশে দশটা গোলাপ। জোহরার ঘুম আসছে না তার সাথে জেগে আছে আতস খান রোডের নিয়ন আলো, রিকসার টুংটাং , গাড়ির হর্ণ , মানুষের কোলাহল। জোহরার ফোন বেজে উঠলো।
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে মে, ২০১৯ রাত ১০:১২