রাতের খাওয়া দাওয়া শেষ করে আমার স্ত্রীকে কাছে ডেকে বললাম, শুনো আমাদের ভবিষ্যত সন্তানদের নাম আমি ঠিক করে রেখেছি। আমার স্ত্রী বিস্ময়ে আমার মুখের দিকে তাকিয়ে বললো, এখনও তো সন্তান হওয়ার লক্ষন নেই, অথচ তুমি নাম রেডি করে রেখেছো? ভালোই তো ভালো না। আমি আদুরী কণ্ঠে বললাম, শুনো পৃথিবীর সব স্বামী-স্ত্রী সন্তান জন্ম নেওয়ার আগেই নাম ঠিক করে রাখে, নাম নির্বাচনের ক্ষেত্রে নিজেদের সাথে সাথে তোমার আমার ফ্যামিলিতেও আনন্দের জোয়ার বয়ে যাবে। আমার স্ত্রী বললো থাক থাক বুঝছি, তোমার সাথে কথায় পারবো না। বলো কি নাম নির্বাচিত করে রেখেছো। আমি আরেকটু তার কাছে ঘেষে বসলাম এবং কানের কাছে ফিসফিস করে বললাম, জাতি এবং বঙ্গ। নাম শুনে আমার স্ত্রী লাফ দিয়ে উঠে আমার কাছ থেকে ২ হাত দুরে গিয়ে বললো, কি নাম বললা তুমি? জাতি এবং বঙ্গ এগুলো কোন নাম হলো? এই তোমার রুচি। আমি তার হাত ধরে আমার কাছে নিয়ে এসে বসালাম এবং বললাম এতো রাগছো কেন? আমি যে নাম রেখেছি সেগুলো আসলেই সুন্দর নাম এবং এই নামের কারনে আমরা দুইজন বিখ্যাত এবং অমর হয়ে থাকতে পারবো। সে বললো কিভাবে ব্যাখ্যা করো। আমি ব্যাখ্যা করতে শুরু করলাম “ধরো আমার এক সন্তানের নাম জাতি, তাহলে এলাকাবাসী, পাড়া-প্রতিবেশী, আত্মীয়-স্বজনরা আমাকে ডাকবে জাতির পিতা হিসাবে, ধরো আমি বাজার থেকে বাজার নিয়ে ফিরছি, তখন জাতির বন্ধু বান্ধবরা আমাকে দেখিয়ে একজন আরেকজনকে বলবে দেখো জাতির পিতা বাজার নিয়ে যাচ্ছে। আবার ধরো আমি রাতে কোন স্বপ্ন দেখলাম, তুমি কোন হুজুর বা স্বপ্নবিশারদের কাছে গিয়ে স্বপ্নের ব্যাখ্যা চেয়ে বলবে, জাতির পিতা একটি স্বপ্ন দেখেছে, এই স্বপ্নটি সত্যি হবে কিনা হুজুর বলেন তো? হুজুর হয়তো উত্তর দিবে, জাতির পিতার এই স্বপ্নটি এখন পূরণ হবে না, ভবিষ্যতে হতে পারে এবং এই স্বপ্নটি পূরণ করবে আপনার সন্তান জাতি অর্থাৎ জাতির পিতার স্বপ্ন পূরণ করবে জাতি” এইটুকু শুনে আমার স্ত্রী বললো বুঝছি, এবার বলো বঙ্গ নামের মাহাত্য। আমি আবার শুরু করলাম “এখন তোমাকে ডাকি তোমার নাম ধরে, যখন সন্তান হবে তখন ডাকবো সন্তানের নাম ধরে, যেমন ধরো আমি ডাকলাম বঙ্গমাতা কোথায় গেলা বা বঙ্গমাতা আমাকে এক গ্লাস পানি দাও তো। আবার ধরো কেউ ফোনে তোমাকে চাচ্ছে তখন আমি তখন তাকে উত্তরে বললাম, বঙ্গমাতা রান্নাঘরে রান্না করছে, বঙ্গমাতা ফিরে আসলে আপনার নাম্বারে ফোন ব্যাক করা হবে”। এইটুকু শুনেই আমার স্ত্রী বললো, বুঝছি আমার এই নাম পছন্দ হয়নি, আমার মা সুন্দর একটি নাম রেখেছে, সেটাই রাখবো বলে আমি মনে মনে ঠিক করে রেখেছি। আমি একটি দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললাম “আমি জাতির পিতা হইতে পারলাম না আর তুমিও বঙ্গমাতা হইতে পারলানা”।
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই জানুয়ারি, ২০১৪ দুপুর ২:৪৮