ঝোপঝাড় ঘেড়া প্রকান্ড বাড়িটি কিনতে বাবার প্রায় কয়েক লাখ টাকা খরচ করতে হয়েছিলো। আমার জন্মলগ্নে ক্রয়কৃত বাড়িটি কয়েক দশক ধরে তার মর্যাদা বজায় রেখে এখনো বাবার স্মৃতিচিহ্ন স্বরুপ দাড়িয়ে আছে। যদিও তার দেওয়ালে ফাঁটল ধরেছে।সেই ফাঁটলের মধ্য দিয়ে সূর্যের তীক্ষ্ণ আলো পড়লো আমার চোখে।কিছু বুঝে উঠার আগেই উঠে বসলাম। তাছাড়া এটা আমার অভ্যাসও বলা চলে।ছোটবেলা থেকেই ছিলাম খুব চঞ্চল।একবার ঘুম ভেঙ্গে গেলে মুহূর্তের মধ্যে বিছানা ত্যাগ করতাম; এখনো তাই করি।ছেলেবেলার অভ্যাসটা এখনো বজায় রেখেছি।
,
,
ঘড়ির কাটায় এখন সকাল ৬টা। আশ্চর্য ব্যাপার, এখনো কারো ঘুম ভাঙ্গেনি! অথচ, দিন কয়েক আগেও সকাল বেলা এই সময়ে বাড়িতে মহা ধুমধামের সহিত রান্না-বান্না চলতো। বাড়িটা কেমন যেনো শোকের ছায়ায় আবৃত- অন্তত আমার চোখে।
,
,
যাহোক, নিস্তব্ধতা ভাঙার আগেই সদর দরজা খুলে বাড়ি থেকে বেরিয়ে গেলাম। পথের ধারের ঘাসগুলোর উপর শিশিরফোটা চকচক করছে।
এদের স্থায়ীত্ব বেশিক্ষন নয়; বেলা বাড়ার সাথে সাথেই এরা মিলিয়ে যাবে। খালি পায়ে নরম ঘাসের উপর হাঁটাতে ভালোই লাগছে। কোনো এক মহানুভব বলেছিলেন,"শিশিরের জলে পা ভেজালে স্বর্গীয় অনুভূতি অনুভব করা যায়!"
সেই মহানুভবকে কাছে পেলে আজ আমি তাকে পুরষ্কৃত করতাম। পুরস্কার হিসেবে দিতাম- ৫টা টকটকে লাল রঙের পদ্মফুল!
,
,
সূর্যের অবস্থানের কিছুটা পরিবর্তন ঘটেছে।রোদের তীব্রতা কিছুটা টের পাচ্ছি। পড়নে আলখাল্লা-মাথায় টুপি একদল মধ্যবয়স্ক লোককে দেখা যাচ্ছে।আমাকে দেখেও তাদের মধ্যে কোনোরূপ পরিবর্তন দেখলাম না; যেনো তারা আমাকে দেখেও না দেখার ভান করছে। দ্রুতপদবিক্ষেপে হেটে চলেছেন তারা; ব্যাপারটা এমন-অসীম দূর পাড়ি দিতে হবে তাদের!
আমিও হাটছি তাদের পিছুপিছু। কিছুদূর হাটার পর থমকে দাড়ালাম। পথের ধারের ডোবায় গোটাকতক কলমীফুল দেখা যাচ্ছে। ছোটো বেলায় অমন ফুল অনেক দেখেছি।এখন আর ওসব চোখে পড়ে না।
,
,
আমাদের পাশের গ্রামের আকবর চাচার সঙ্গে দেখা। দেখা হতেই সালাম দিলাম। কোনো উত্তর না পেয়ে বললাম, "চাচা কেমন আছেন? "
কোনো উত্তর নেই!
আশ্চর্য! সেদিনের কথা, শহর থেকে ফেরার পর উনিই তো চাচিকে দিয়ে এক সের দুধ পাঠিয়েছিলেন আমার জন্য।
চাচিকে বলেছিলেন,
"অনেক দিন পর গায়ে এসেছে মিরু; যাও গিয়ে কাজলা গাই টার এক সের দুধ দিয়ে এসো ওদের বাড়ি। শুনেছি শহরে খাঁটি দুধ পাওয়া দায়!"
সেই চাচাই আজ আমাকে চিনতে পারলেন না; নাকি চিনেও না চেনার ভান করলেন!?
কিছুই বুঝলাম না...
ডেইলি মিররের এক গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, হৃদযন্ত্র বন্ধ হওয়া অর্থাৎ মৃত ঘোষণার পরও মানুষের মস্তিষ্ক সচল থাকে। তাই কোনো মানুষ তার মৃত্যু ঘোষণাও শুনতে পারে। আমার সাথে তেমনটা ঘটছে না তো!
পরক্ষণেই ভাবলাম- আমি তো বেশ হাঁটাচলা করছি ; মরে গেলে তো তা পারতাম না!
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে ডিসেম্বর, ২০১৭ সন্ধ্যা ৬:১৭