বইয়ের নামঃ নিশীথিনী
লেখকঃ হুমায়ূন আহমেদ
হুমায়ূন আহমেদের ‘দেবী’ উপন্যাস অবলম্বনে নির্মিত দেবী চলচিত্রটি দেখার পর থেকেই মনের মধ্যে অন্যরকম একটা অনুভূতি তৈরি হয়েছিলো। দেবী উপন্যাসটা পরার পরেও কেমন একটা ঘোরের মধ্য দিয়ে গেছি। তাই দেবী উপন্যাসের ২য় পর্ব নিশীথিনী টাও পড়ে ফেললাম।
দেবী থেকে কোন অংশ কম নয় নিশীথিনী উপন্যাসের প্লট। প্রায় প্রতিটি ঘটনার প্লটই ছিলো বেশ জোড়ালো। তবে দুটি আধিভৌতিক রহস্যের জট খুলার পাশাপাশি মিসির আলি তার সামাজিক দায়িত্ববোধ থেকে একটি চমৎকার রহস্য উন্মোচন করেন। সেটা হলো- তার বাড়ির ১০ বছর বয়সী কাজের মেয়ের হারানো পরিচয় খুঁজে বের করা। সে কাজটা মিসির আলি তার নিজস্ব উপায়েই করেছেন।
উপন্যাসের প্রধান যে চরিত্রটি তার নাম ফিরোজ। অপঘাতে মৃত্যু হওয়া তার বন্ধুর পূর্বপুরুষের স্বত্বার অস্থিত্ব তার মধ্যে ফুটে ওঠে বেশ ভয়ানক ভাবে। সেই রহস্যের প্যাঁচ খুলার মধ্য দিয়েই ঘটনা প্রবাহ চলতে থাকে। বেশ উৎকর্ষ তৈরি করে ফিরোজের ঘটনাটি।
তাছাড়া দেবী উপন্যাসের অন্যতম চরিত্র নিলু, মৃত রানুর চরিত্রের প্রতিনিধিত্ব করে নিজস্বভাবে।
এছাড়া উপন্যাসের শেষ কয়েকটা লাইন আমার অনুভূতিকে অনেকটা সজাগ করে তোলে। এর মধ্যে মানুষের সমসাময়িক ধর্মীয় বিশ্বাসের ব্যাপারটি স্পষ্টভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন গল্পের জাদুকর হুমায়ুন আহমেদ! এজন্যই তিনি সবার থেকে আলাদা।
ভালোলাগা কয়েকটি লাইন:
দেবী হাঁসল। চাপা ফুলের গন্ধ কী দেবীর গা থেকেই আসছে? তাকে রক্তমাংসের মানবীর মধ্যেই লাগছে। ছুঁয়ে দেখতে ইচ্ছে হচ্ছে। কী কষ্ট! কী কষ্ট!। মিসির আলি হাপাতে হাপাতে বললেন ,
'দেবী, আমার কষ্ট কমিয়ে দাও ।’
'আমাকে বিশ্বাস করছো তাহলে ?
‘না।’
‘কেন করছ না? এ জগতের সমস্তই কি যুক্তিগ্রাহ্য ? এই আকাশ, অনন্ত নক্ষত্রপুঞ্জ? তুমি কি বলতে চাও ,এর কোথাও কোনাে রহস্য নেই ? অসীম কী ?এই সামান্য প্রশ্নের জবাব কি তােমার জানা আছে ? বল, তুমি জানো?’
‘আমি জানি না, কিন্তু একদিন জানব।আমি না জানলেও আমার পরবর্তী বংশধর জানবে।’
‘মিসির আলি, তুমি বড় অদ্ভুত লােক।’
মিসির আলি কাতর কণ্ঠে কললেন,
‘আমার ব্যথা কমিয়ে দাও। অামার ব্যথা কমিয়ে দাও।’
দেবী হেঁসে উঠল, মৃদু স্বরে বলল,
‘আমায় বিশ্বাস করছ না, অথচ ব্যথা কমিয়ে দিতে বলছ ?’
সব মিলিয়ে বেশ উৎকর্ষ তৈরিকারী ‘নিশীথিনী’ উপন্যাসটি!
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ বিকাল ৩:২৫