পেয়াজ-লবনের মূল্যবৃদ্ধির ইস্যুকে নিয়ে ঠাট্টাতামাসা তামাশা বন্ধ করার সময় এসেছে।
আমি ছোট্ট একটি হিসাব দিচ্ছি একটু মিলিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করুন-
২০১১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী দেশে প্রতি পরিবারের গড় সদস্য সংখ্যা ৪.৪ জন। সহজেই অনুমেয় যে ২০১৯ সালে সেই সংখ্যাটি ৫ বা তার অধিক। যাইহোক, আমি হিসাবের সুবিধার্থে ধরে নিলাম পরিবার প্রতি লোকসংখ্যা ৪ জন।
৪ সদস্যের একটি পরিবারে প্রতি মাসে পেয়াজের চাহিদা ২-৩ কেজি। এখন, প্রতি কেজি পেয়াজের স্বাভাবিক মূল্য যদি ৪৫ টাকা করে ধরি, তাহলে প্রতি মাসে পেয়াজের জন্য খরচ হবে ১৩৫ টাকা। এই হারে ১ বছরে পেয়াজের পেছনে খরচ দাড়ায় ১৬২০ টাকা। কিন্তু, বর্তমান বাজার দর যেটা নিয়ে আমরা ঠাট্টাতামাসা করছি, সে হিসাবে ২৫০ টাকা কেজি দরে পেয়াজের পেছনে মাসিক খরচ দাড়াবে ৭৫০ টাকা এবং বার্ষিক খরচ হবে মাত্র ৯০০০ টাকা!
আবার, ৪ সদস্যের একটি পরিবারে যদি ন্যূনতম ২ কেজি লবনের চাহিদা থাকে তবে ৩৫ টাকা দরে মাসিক খরচ ৭০ টাকা, আর বার্ষিক খরচ দাড়াবে ৮৪০ টাকা।
কিন্তু, গুজবে কান দিয়ে আমরা ১০০ টাকা দরে যে লবন ক্রয় করছি তাতে মাসিক খরচ পড়বে ২০০ টাকা, আর বর্ষিক ২৪০০ টাকা।
একবার ভাবুন, এভাবে কি চলতে দেয়া যাবে?
২০১৮ সালের বিশ্বব্যাংকের এক রিপোর্ট অনুযায়ী বাংলাদেশের প্রায় ১ কোটি ৬২ লাখ মানুষের দৈনিক আয় মাত্র ১৪৮ টাকারও কম। এক্ষেত্রে তাদের মাসিক আয় দাড়ায় মাত্র ৪৪৪০ টাকা।
চিন্তা করুন- কৃত্রিমভাবে সৃষ্ট চলমান সংকটে আপনার আমার মতো উচ্চবিত্ত কিংবা মধ্যবিত্তরা বেঁচে গেলেও, হতদরিদ্র জনগোষ্ঠী কি রক্ষা পাবে?
দেশের উত্তরাঞ্চলের মঙ্গা পীড়িত জনগোষ্ঠীর অধিকাংশই তিন বেলা ঠিক মতো আহার যোগাড় করতে পারে না। অনেকের ই শেষ ভরসা পান্তা ভাতের সাথে ১ টা পেয়াজ আর ১টা মরিচ।
এখন, শত শত কেজি পেয়াজ-লবন কিনে অসাধু ব্যবসায়ীদের তৈরি সংকটকে বেগবান করে গরীবের পেটে লাথি মারাটা কতটুকু যৌক্তিক হবে ? প্রশ্ন করুন নিজের বিবেকের কাছে!!
আসুন সচেতন হই এবং অন্যদেরকেও সচেতন করি।
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে নভেম্বর, ২০১৯ রাত ১:০৬